সিলেটের গ্রামে ১৮০ দল নিয়ে লড়াই, রাত জেগে দেখেন হাজারো ফুটবলপ্রেমী
Published: 22nd, February 2025 GMT
মাঠের চারপাশে কয়েক হাজার দর্শনার্থী। ভেতরে দুই দল ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখিয়ে জয় লাভের জন্য মরিয়া। খেলোয়াড়েরা বল নিয়ে যখন গোলরক্ষকের কাছাকাছি চলে যাচ্ছেন, তখন সবাই ‘গোল’ ‘গোল’ বলে সমস্বরে চিৎকার করছেন। দর্শনার্থীদের এমন হর্ষধ্বনি রাতের আকাশ ভেদ করে বহুদূর পর্যন্ত যাচ্ছে।
দুই মাস ধরে রাতের বেলা এভাবেই ফুটবল-আনন্দে মেতে আছেন সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল কহাইগড় গ্রামবাসী। জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১৮০টি দলের অংশগ্রহণে এখানে চলছে ফুটবল প্রতিযোগিতা। আর এ আয়োজন দেখতে প্রতিদিন আশপাশের গ্রাম ও উপজেলা থেকে হাজারো ফুটবলপ্রেমী জড়ো হচ্ছেন।
আয়োজকেরা বলেন, চিকনাগুল কহাইগড় গ্রামের হাজী হাসিম মার্কেট-সংলগ্ন মাঠে গত ২৭ ডিসেম্বর ‘কহাইগড় তৃতীয় নাইট মিডবার ফুটবল প্রতিযোগিতা ২০২৫’-এর উদ্বোধন হয়। গ্রামের যুবসমাজের উদ্যোগে এ প্রতিযোগিতা চলছে। দলপ্রতি এক হাজার টাকা দিয়ে ১৮০টি দল নিবন্ধন করে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে।
অংশগ্রহণকারী দলগুলো ব্যক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া-মহল্লাবাসীর উদ্যোগে গঠিত হয়েছে। বিশেষত জেলার জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকেই বেশি দল নিবন্ধন করেছে।
কহাইগড় গ্রামের মানসুরুল হাসান বলেন, প্রতিদিন রাত সাড়ে ৯টায় খেলা শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। গ্রামবাসীর পাশাপাশি আশপাশের এলাকার মানুষ খেলা দেখতে মাঠে চলে আসেন। খেলাকে ঘিরে এমন আনন্দ-আয়োজন বিরল। কয়েক হাজার দর্শনার্থী প্রতিদিন নির্মল আনন্দে এখানে মেতে ওঠেন। এর আগে ২০১৮ ও ২০২২ সালে একই রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছেন।
আয়োজকেরা বলেন, খেলা নকআউট পদ্ধতি ও মিডবার নিয়ম অনুযায়ী চলছে। প্রত্যেক দলে ছয়জন করে খেলোয়াড় খেলছেন। চূড়ান্তভাবে বিজয়ী দল যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মো.
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলার তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে চলতি মাসেই ফাইনাল খেলা হবে। প্রতিযোগিতা পরিচালনায় উপদেষ্টামণ্ডলীর পাশাপাশি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া আয়োজনে সহযোগিতায় আছেন কানাডা, কাতার, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সৌদিপ্রবাসী সাতজন। প্রতিযোগিতার সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে আছেন ফয়জুল ইসলাম, শামছুজ্জামান চৌধুরী, আশিক উদ্দিন, ময়নুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম ও সামছ উদ্দিন।
গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁশকে অস্থায়ীভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটি বানিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ আনা হয়েছে। মাঠের চারপাশে সাঁটানো এসব খুঁটিতে ঝুলানো হয়েছে উচ্চ ওয়াটের বাল্ব। সে আলোয় চলছে দ্বৈরথ। খেলা দেখতে মাঠের চারপাশে ভিড় করেছেন লোকজন। মঞ্চের পাশ থেকে একজন ধারাভাষ্যকার খেলার ধারা বর্ণনা করছেন। মাঠের আশপাশে বসেছে বাহারি সব খাবারের দোকান। সেসব দোকানে মানুষ খাচ্ছেন আর আড্ডা–গল্পে আনন্দময় সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে চা আর পানের দোকানেও ভিড় জমিয়েছেন।
সেই রাতে কোয়ার্টার ফাইনালের দুটি ম্যাচ হয়। রাত সাড়ে ৯টায় কহাইগড়ের ওল্ড জেনারেশন বনাম জৈন্তাপুরের হরিপুরের শাহরিয়ার একাদশের খেলা হয়। এ সময় বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে কিছু সময় খেলা বন্ধ ছিল। রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত ওল্ড জেনারেশন ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল। এ ম্যাচের পরে ‘হঠাৎ আক্রমণ কহাইগড়’ বনাম ‘কান্দি একাদশ’-এর মধ্যে ম্যাচ হয়। ২৪ অথবা ২৫ ফেব্রুয়ারি ফাইনাল খেলার সম্ভাব্য তারিখ ধরে আয়োজকেরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
খেলা দেখতে সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব আফতাব হোসেন কহাইগড় গ্রামের মাঠে গিয়েছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবসরে গ্রামের মানুষ নানা উপলক্ষে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন, এটা অনেকটা ঐতিহ্য ও রীতি। এ ফুটবল খেলাও তেমনই এক আনন্দ আয়োজনের অংশ। হাজার হাজার মানুষ কোনো ধরনের মনোমালিন্য ছাড়া একসঙ্গে ফুটবল উপভোগ করছেন, বিষয়টি ভাবতেই ভালো লাগে। তাঁরা কয়েক বন্ধু মিলে খেলা দেখতে এসেছেন। ফাইনাল খেলা দেখার ইচ্ছার কথাও জানালেন তিনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ইন ল খ ল ফ টবল উপজ ল আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটের গ্রামে ১৮০ দল নিয়ে লড়াই, রাত জেগে দেখেন হাজারো ফুটবলপ্রেমী
মাঠের চারপাশে কয়েক হাজার দর্শনার্থী। ভেতরে দুই দল ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখিয়ে জয় লাভের জন্য মরিয়া। খেলোয়াড়েরা বল নিয়ে যখন গোলরক্ষকের কাছাকাছি চলে যাচ্ছেন, তখন সবাই ‘গোল’ ‘গোল’ বলে সমস্বরে চিৎকার করছেন। দর্শনার্থীদের এমন হর্ষধ্বনি রাতের আকাশ ভেদ করে বহুদূর পর্যন্ত যাচ্ছে।
দুই মাস ধরে রাতের বেলা এভাবেই ফুটবল-আনন্দে মেতে আছেন সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল কহাইগড় গ্রামবাসী। জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১৮০টি দলের অংশগ্রহণে এখানে চলছে ফুটবল প্রতিযোগিতা। আর এ আয়োজন দেখতে প্রতিদিন আশপাশের গ্রাম ও উপজেলা থেকে হাজারো ফুটবলপ্রেমী জড়ো হচ্ছেন।
আয়োজকেরা বলেন, চিকনাগুল কহাইগড় গ্রামের হাজী হাসিম মার্কেট-সংলগ্ন মাঠে গত ২৭ ডিসেম্বর ‘কহাইগড় তৃতীয় নাইট মিডবার ফুটবল প্রতিযোগিতা ২০২৫’-এর উদ্বোধন হয়। গ্রামের যুবসমাজের উদ্যোগে এ প্রতিযোগিতা চলছে। দলপ্রতি এক হাজার টাকা দিয়ে ১৮০টি দল নিবন্ধন করে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে।
অংশগ্রহণকারী দলগুলো ব্যক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া-মহল্লাবাসীর উদ্যোগে গঠিত হয়েছে। বিশেষত জেলার জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকেই বেশি দল নিবন্ধন করেছে।
কহাইগড় গ্রামের মানসুরুল হাসান বলেন, প্রতিদিন রাত সাড়ে ৯টায় খেলা শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। গ্রামবাসীর পাশাপাশি আশপাশের এলাকার মানুষ খেলা দেখতে মাঠে চলে আসেন। খেলাকে ঘিরে এমন আনন্দ-আয়োজন বিরল। কয়েক হাজার দর্শনার্থী প্রতিদিন নির্মল আনন্দে এখানে মেতে ওঠেন। এর আগে ২০১৮ ও ২০২২ সালে একই রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছেন।
আয়োজকেরা বলেন, খেলা নকআউট পদ্ধতি ও মিডবার নিয়ম অনুযায়ী চলছে। প্রত্যেক দলে ছয়জন করে খেলোয়াড় খেলছেন। চূড়ান্তভাবে বিজয়ী দল যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মো. তরিক উদ্দিনের সৌজন্যে একটি মোটরসাইকেল এবং রানার্সআপ দল চিকনাগুল এলাকার সামছ উদ্দিনের সৌজন্যে একটি ফ্রিজ পাবে। এ ছাড়া আছে বেশ কিছু আকর্ষণীয় পুরস্কার। পাশাপাশি প্রত্যেক খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ যিনি হচ্ছেন, তাঁকেও পুরস্কৃত করা হচ্ছে।
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলার তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে চলতি মাসেই ফাইনাল খেলা হবে। প্রতিযোগিতা পরিচালনায় উপদেষ্টামণ্ডলীর পাশাপাশি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া আয়োজনে সহযোগিতায় আছেন কানাডা, কাতার, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সৌদিপ্রবাসী সাতজন। প্রতিযোগিতার সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে আছেন ফয়জুল ইসলাম, শামছুজ্জামান চৌধুরী, আশিক উদ্দিন, ময়নুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম ও সামছ উদ্দিন।
গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁশকে অস্থায়ীভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটি বানিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ আনা হয়েছে। মাঠের চারপাশে সাঁটানো এসব খুঁটিতে ঝুলানো হয়েছে উচ্চ ওয়াটের বাল্ব। সে আলোয় চলছে দ্বৈরথ। খেলা দেখতে মাঠের চারপাশে ভিড় করেছেন লোকজন। মঞ্চের পাশ থেকে একজন ধারাভাষ্যকার খেলার ধারা বর্ণনা করছেন। মাঠের আশপাশে বসেছে বাহারি সব খাবারের দোকান। সেসব দোকানে মানুষ খাচ্ছেন আর আড্ডা–গল্পে আনন্দময় সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে চা আর পানের দোকানেও ভিড় জমিয়েছেন।
সেই রাতে কোয়ার্টার ফাইনালের দুটি ম্যাচ হয়। রাত সাড়ে ৯টায় কহাইগড়ের ওল্ড জেনারেশন বনাম জৈন্তাপুরের হরিপুরের শাহরিয়ার একাদশের খেলা হয়। এ সময় বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে কিছু সময় খেলা বন্ধ ছিল। রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত ওল্ড জেনারেশন ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল। এ ম্যাচের পরে ‘হঠাৎ আক্রমণ কহাইগড়’ বনাম ‘কান্দি একাদশ’-এর মধ্যে ম্যাচ হয়। ২৪ অথবা ২৫ ফেব্রুয়ারি ফাইনাল খেলার সম্ভাব্য তারিখ ধরে আয়োজকেরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
খেলা দেখতে সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব আফতাব হোসেন কহাইগড় গ্রামের মাঠে গিয়েছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবসরে গ্রামের মানুষ নানা উপলক্ষে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন, এটা অনেকটা ঐতিহ্য ও রীতি। এ ফুটবল খেলাও তেমনই এক আনন্দ আয়োজনের অংশ। হাজার হাজার মানুষ কোনো ধরনের মনোমালিন্য ছাড়া একসঙ্গে ফুটবল উপভোগ করছেন, বিষয়টি ভাবতেই ভালো লাগে। তাঁরা কয়েক বন্ধু মিলে খেলা দেখতে এসেছেন। ফাইনাল খেলা দেখার ইচ্ছার কথাও জানালেন তিনি।