মাঠের চারপাশে কয়েক হাজার দর্শনার্থী। ভেতরে দুই দল ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখিয়ে জয় লাভের জন্য মরিয়া। খেলোয়াড়েরা বল নিয়ে যখন গোলরক্ষকের কাছাকাছি চলে যাচ্ছেন, তখন সবাই ‘গোল’ ‘গোল’ বলে সমস্বরে চিৎকার করছেন। দর্শনার্থীদের এমন হর্ষধ্বনি রাতের আকাশ ভেদ করে বহুদূর পর্যন্ত যাচ্ছে।

দুই মাস ধরে রাতের বেলা এভাবেই ফুটবল-আনন্দে মেতে আছেন সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল কহাইগড় গ্রামবাসী। জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১৮০টি দলের অংশগ্রহণে এখানে চলছে ফুটবল প্রতিযোগিতা। আর এ আয়োজন দেখতে প্রতিদিন আশপাশের গ্রাম ও উপজেলা থেকে হাজারো ফুটবলপ্রেমী জড়ো হচ্ছেন।

আয়োজকেরা বলেন, চিকনাগুল কহাইগড় গ্রামের হাজী হাসিম মার্কেট-সংলগ্ন মাঠে গত ২৭ ডিসেম্বর ‘কহাইগড় তৃতীয় নাইট মিডবার ফুটবল প্রতিযোগিতা ২০২৫’-এর উদ্বোধন হয়। গ্রামের যুবসমাজের উদ্যোগে এ প্রতিযোগিতা চলছে। দলপ্রতি এক হাজার টাকা দিয়ে ১৮০টি দল নিবন্ধন করে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে।

অংশগ্রহণকারী দলগুলো ব্যক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া-মহল্লাবাসীর উদ্যোগে গঠিত হয়েছে। বিশেষত জেলার জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকেই বেশি দল নিবন্ধন করেছে।

কহাইগড় গ্রামের মানসুরুল হাসান বলেন, প্রতিদিন রাত সাড়ে ৯টায় খেলা শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। গ্রামবাসীর পাশাপাশি আশপাশের এলাকার মানুষ খেলা দেখতে মাঠে চলে আসেন। খেলাকে ঘিরে এমন আনন্দ-আয়োজন বিরল। কয়েক হাজার দর্শনার্থী প্রতিদিন নির্মল আনন্দে এখানে মেতে ওঠেন। এর আগে ২০১৮ ও ২০২২ সালে একই রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছেন।

আয়োজকেরা বলেন, খেলা নকআউট পদ্ধতি ও মিডবার নিয়ম অনুযায়ী চলছে। প্রত্যেক দলে ছয়জন করে খেলোয়াড় খেলছেন। চূড়ান্তভাবে বিজয়ী দল যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মো.

তরিক উদ্দিনের সৌজন্যে একটি মোটরসাইকেল এবং রানার্সআপ দল চিকনাগুল এলাকার সামছ উদ্দিনের সৌজন্যে একটি ফ্রিজ পাবে। এ ছাড়া আছে বেশ কিছু আকর্ষণীয় পুরস্কার। পাশাপাশি প্রত্যেক খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ যিনি হচ্ছেন, তাঁকেও পুরস্কৃত করা হচ্ছে।

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলার তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে চলতি মাসেই ফাইনাল খেলা হবে। প্রতিযোগিতা পরিচালনায় উপদেষ্টামণ্ডলীর পাশাপাশি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া আয়োজনে সহযোগিতায় আছেন কানাডা, কাতার, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সৌদিপ্রবাসী সাতজন। প্রতিযোগিতার সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে আছেন ফয়জুল ইসলাম, শামছুজ্জামান চৌধুরী, আশিক উদ্দিন, ময়নুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম ও সামছ উদ্দিন।

গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁশকে অস্থায়ীভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটি বানিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ আনা হয়েছে। মাঠের চারপাশে সাঁটানো এসব খুঁটিতে ঝুলানো হয়েছে উচ্চ ওয়াটের বাল্ব। সে আলোয় চলছে দ্বৈরথ। খেলা দেখতে মাঠের চারপাশে ভিড় করেছেন লোকজন। মঞ্চের পাশ থেকে একজন ধারাভাষ্যকার খেলার ধারা বর্ণনা করছেন। মাঠের আশপাশে বসেছে বাহারি সব খাবারের দোকান। সেসব দোকানে মানুষ খাচ্ছেন আর আড্ডা–গল্পে আনন্দময় সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে চা আর পানের দোকানেও ভিড় জমিয়েছেন।

সেই রাতে কোয়ার্টার ফাইনালের দুটি ম্যাচ হয়। রাত সাড়ে ৯টায় কহাইগড়ের ওল্ড জেনারেশন বনাম জৈন্তাপুরের হরিপুরের শাহরিয়ার একাদশের খেলা হয়। এ সময় বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে কিছু সময় খেলা বন্ধ ছিল। রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত ওল্ড জেনারেশন ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল। এ ম্যাচের পরে ‘হঠাৎ আক্রমণ কহাইগড়’ বনাম ‘কান্দি একাদশ’-এর মধ্যে ম্যাচ হয়। ২৪ অথবা ২৫ ফেব্রুয়ারি ফাইনাল খেলার সম্ভাব্য তারিখ ধরে আয়োজকেরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।

খেলা দেখতে সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব আফতাব হোসেন কহাইগড় গ্রামের মাঠে গিয়েছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবসরে গ্রামের মানুষ নানা উপলক্ষে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন, এটা অনেকটা ঐতিহ্য ও রীতি। এ ফুটবল খেলাও তেমনই এক আনন্দ আয়োজনের অংশ। হাজার হাজার মানুষ কোনো ধরনের মনোমালিন্য ছাড়া একসঙ্গে ফুটবল উপভোগ করছেন, বিষয়টি ভাবতেই ভালো লাগে। তাঁরা কয়েক বন্ধু মিলে খেলা দেখতে এসেছেন। ফাইনাল খেলা দেখার ইচ্ছার কথাও জানালেন তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ইন ল খ ল ফ টবল উপজ ল আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

আমার কোনো আফসোস নেই: বাঁধন

লাক্স তারকা থেকে রুপালি পর্দা, তারপর বিশ্ব মঞ্চ ও বলিউডে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তার এই চলার পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। কারণ পেশাগত নানা সংকটের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও সংগ্রামটা একাই করতে হয়েছে তাকে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঁধন দারুণ সক্রিয়। সমকালীন নানা বিষয় নিয়ে ফেসবুকে নিজের মত প্রকাশ করে থাকেন। তবে হঠাৎ এ মাধ্যমে তার কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। বলা যায়, গত কয়েক মাস ধরে অনেকটা আড়ালে এই অভিনেত্রী। পহেলা বৈশাখে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি জানান, সোশ্যাল মিডিয়া ছেড়ে অনেকটা ভালো আছেন।

এ লেখায় নিজের অবস্থান জানিয়ে আজমেরী হক বাঁধন বলেন, “শুধু এটা বলতে চাই, আমি এখনো এখানে আছি। মায়ের বাড়িতে থাকি, বাবার গাড়িতে চড়ি। বাইরে থেকে জীবন সহজ। কিন্তু ভেতরে–ভেতরে নীরবে তা বদলাতে থাকে। আমি কিছুদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে ছিলাম এবং সত্যি বলতে এটা আমাকে শান্তি দিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

পলকের সঙ্গে প্রেম নিয়ে যা বললেন সাইফের পুত্র ইব্রাহিম

রেকর্ড গড়ল অজিতের সিনেমা

বাঁধনের জীবনের জার্নিটা সহজ ছিল না। তা জানিয়ে এ অভিনেত্রী বলেন, “আমি নিজের খেয়ালখুশি মতো চলছি। তবে যে পথ পার করে এসেছি, তা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু আমার মতো করেই পথ চলেছি। আমার ভুল আমি মেনে নিই, একই সঙ্গে বেড়ে ওঠার প্রতিও আমি সম্মান জানাই। জীবনে যত সাফল্য পেয়েছি, সবই আমি অর্জন করেছি। কারো মতামত আমাকে নাড়াতে পারে না, আমি জানি, কে আমি এবং এতটা পথ আসতে আমার কী কী করতে হয়েছে।” 

জীবন নিয়ে কোনো আফসোস নেই বাঁধনের। বরং নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছেন। এ অভিনেত্রীর ভাষায়, “কোনো আফসোস নেই। প্রতিটি অভিজ্ঞতা আমার জন্য একটি শিক্ষা। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ একেকটা গল্প, যা আমাকে আজকের আমি হিসেবে তৈরি করেছে। একই সঙ্গে আমি আমাকে আমার মতো করে গুছিয়েছি। এখনো তা চলমান এবং তা আমি চালিয়ে যাব।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ