‘বিএনপি নেতা’ পরিচয়ে মেঘনার শাখা খাল থেকে অবাধে বালু উত্তোলন
Published: 22nd, February 2025 GMT
নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীর ভরাট হয়ে যাওয়া চরে দুই একর জমি বন্দোবস্ত পেয়েছিলেন ভূমিহীন বিবি মরিয়ম (৫০)। জমির এক পাশে লাগিয়েছেন কলাগাছ। লক্ষ্য ছিল জমিটি ভরাট করে সেখানে বসতি গড়বেন। তবে চরের সঙ্গে লাগোয়া মেঘনার শাখা খাল থেকে ড্রেজার দিয়ে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু। এতে মরিয়মের বসতি গড়ার স্বপ্ন এখন ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে মেঘনার এই শাখা খাল থেকে অবাধে বালু তুলছে ১৪ থেকে ১৫ জনের একটি চক্র। তাঁরা নিজেদের বিএনপির নেতা পরিচয় দেন। যদিও কারও কোনো পদ-পদবি নেই বলে স্থানীয় বিএনপির নেতারা নিশ্চিত করেছেন।
বিবি মরিয়ম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বন্দোবস্ত পাওয়া চর থেকেও বালু তোলার খবর পেয়ে তিনি বাধা দিয়েছিলেন। এ সময় তাঁর ওপর হামলা করেন বালু তোলায় জড়িত ব্যক্তিরা। পরে বালু তুলবেন না জানিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকাও আদায় করা হয়েছে; তবু বালু তোলা বন্ধ হয়নি। এ বিষয়ে নানা জায়গায় অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা মিলছে না। এ ঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে হাতিয়া থানা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান বিবি মরিয়ম।
গত রোববার সরেজমিনে হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন লেংড়ার দোকান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে মরিয়মের বন্দোবস্ত পাওয়া জমিসহ আশপাশের এলাকায় মেঘনার ওই শাখা খাল থেকে বালু তোলা হচ্ছে। সাংবাদিক এসেছেন খবর পেয়ে আরিফ নামের এক ব্যক্তি বালু তোলায় ব্যবহৃত ড্রেজারের পাম্পটি বন্ধ করে দেন। খালে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলায় ব্যস্ত থাকা মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ঘন র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার লোকজন খাজনা ওঠাবে, বাধা দিলে ভয়াবহ পরিণতি’
নীল পাঞ্জাবি পরা একজন সবার সামনে। তার পেছনে একদল লোক। তাদের মাথাসহ মুখ লাল গামছায় বাঁধা। কারও হাতে রামদা, কারও হাতে বাঁশের লাঠি। ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দিয়ে পাঞ্জাবি পরা লোকটির নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। আতঙ্কে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে সাধারণ মানুষ।
আজ শনিবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার এমসি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। অস্ত্রের মহড়ায় নেতৃত্বে দেওয়া নীল পাঞ্জাবি পরিহিত লোকটি শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। শুধু মহড়া নয়, প্রকাশ্যে বাজারের দোকানিদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা-পয়সা লুট করে তার লোকজন। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। এভাবে অস্ত্রের মহড়া ও চাঁদাবাজির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনা জানাজানির পর গতকালই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, শ্রীপুরের তেলিহাটী ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে তার নেতৃত্বে অর্ধশত সন্ত্রাসী এমসি বাজারে সশস্ত্র মহড়া দেয়। মাঝে মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শুনতে পাওয়া যায়। তখন আতঙ্কে সাধারণ মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে যান।
১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, মহাসড়কের ওপর চেয়ারে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইক নিয়ে কথা বলছেন জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। তাঁর লোকজনের ‘জাহাঙ্গীর ভাইয়ের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান থামলে তিনি বলেন, ‘প্রিয় দোকানদার ভাইয়েরা, আমি জেল থেকে এসে ঘোষণা দিয়েছিলাম, এমসি বাজারটাকে আমি আমার নিজস্ব লোক ও আপনাদের সহযোগিতার সুন্দরভাবে পরিচালনা করব। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য আমি পারি নাই। আজকে লোকজন নিয়ে এসেছি। আজকের পর থেকে আমি জাহাঙ্গীর যত দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তত দিন পর্যন্ত আমার নিয়ন্ত্রণে চলবে এমসি বাজার এবং আপনাদের দয়া করে বলছি, এখন এই মুহূর্তে আমার লোকজন খাজনা ওঠানো শুরু করবে। কেউ বাধা দেবেন না। বাধা দিলে ভয়াবহ পরিণতি হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের এক নেতা জানান, মহড়া দিয়ে পুরো এমসি বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে পিন্টু। অন্তত ১০০ দোকান থেকে চাঁদা আদায় করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের কাছে বিদেশি পিস্তলও ছিল। তবে গুলি ছোড়েনি।
আব্দুল লতিফ নামে বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, বিকেলে হঠাৎ লোকজন নিয়ে এসে বক্তব্য দেয় পিন্টু। এর কিছুক্ষণ পর রামদার ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। সন্ত্রাসীরা ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রের মহড়া দিল, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখলাম না।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু বলেন, ‘আমি টেহা পয়সা উঠাইনি। এগুলো আমাকে হেয় করার জন্য করা হয়েছে। যারা আমার বাড়ি ভাঙচুর করছিল, অফিস ভাঙচুর করছিল, তাদের খুঁজতে গেছিলাম। না পেয়ে চলে আসছি।’
জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লাহ সমকালকে জানান, ঘটনার পরপরই যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষরে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, যুবদল নেতার বক্তব্য ও মহড়ার ভিডিও পেয়েছি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।