মিয়ানমারজুড়ে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে জান্তা বাহিনী। স্কুল, বাস্তুচ্যুত মানুষের শিবির, হাসপাতাল, ধর্মীয় স্থানসহ বিভিন্ন স্থানে চালানো নির্বিচার এ হামলায় গত ১০ দিনে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহত সবাই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অনেকে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের জান্তার বিমান হামলায় ১০ দিনে অন্তত ৫৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং আরও ৮০ জন আহত হয়েছেন। ফাইটার জেট, ওয়াই১২ বিমান, হেলিকপ্টার ও মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডাররা গত ১০ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল, বাস্তুচ্যুত শিবির, হাসপাতাল, ধর্মীয় স্থানসহ বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে কমপক্ষে ৩৫টি আক্রমণ পরিচালনা করেছে।

ম্যাগওয়ে, সাগাইং, মান্দালয় ও তানিনথারি অঞ্চল এবং রাখাইন, কাচিন, শান, মন এবং কারেনি (কায়া) প্রদেশে বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি বুধবার রাতে নাওংকিওতে আবাসন ও একটি সরকারি হাসপাতালে বিমান হামলার কথা জানিয়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় শান প্রদেশের এ শহরটি ওই সশস্ত্র গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করছে।

টিএনএলএ জানিয়েছে, বিমান হামলায় তিনজন বেসামরিক লোক নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন। এর আগে এই সপ্তাহে টিএনএলএ ইউনান প্রদেশের কুনমিং-এ চীনা-মধ্যস্ততায় শান্তি আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বাসিন্দাদের বিমান হামলার বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সতর্ক করেছিল, কারণ সরকার বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা করছে।

এছাড়া গত শনিবার জান্তা বাহিনীর হারবিন ওয়াই ১২ বিমান নাউনঘকিও শহরের একটি গ্রামে ৩৮টি বোমা ফেলেছিল বলে টিএনএলএ জানিয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি উত্তর মান্দালয় অঞ্চলের টিএনএলএ-অধিকৃত রুবি শহর মোগোকে প্রায় ২০টি বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল। এতে পাঁচজন বেসামরিক লোক নিহত এবং আরও ১৯ জন আহত হয়েছিলেন।

এদিকে, মিয়ানমারের থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী এলাকার অবৈধ স্ক্যাম চক্রে হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের মানব পাচারবিরোধী সংস্থার প্রধান পুলিশ জেনারেল থাচাই পিটানিলাবুট। তিনি জানান, ৩০ থেকে ৪০টি চীনা অপরাধী গোষ্ঠী পরিচালিত এসব কেন্দ্রে আনুমানিক ১০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি এসব নির্মূলে সীমান্তবর্তী এলাকায় বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে থাইল্যান্ড। এর পরপরই মিয়ানমারের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ২৬০ জন স্ক্যাম কর্মীকে মুক্তি দিয়েছে, যাদের মধ্যে ফিলিপাইন, ইথিওপিয়া, ব্রাজিল, নেপাল ও থাইল্যান্ডের নাগরিকও রয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, শত শত মানুষ পাচারের শিকার হয়ে এসব চক্রের ফাঁদে পড়ে। প্রতারণার মাধ্যমে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের এসব কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনলাইন স্ক্যামে কাজ করানো হয়। খবর ইরাবতী ও দ্য গার্ডিয়ানের।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ন ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইমোতে প্রেম: চট্টগ্রামে তরুণী খুন, প্রেমিক গ্রেপ্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক সন্তানের জননী টুম্পা আক্তারের সাথে ইমো অ্যাপে প্রেম গড়ে ওঠে চট্টগ্রামে বসবাসকারী বেকার ইব্রাহিম হাওলাদারের। এই প্রেমের সূত্র ধরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রামে চলে যান টুম্পা। বিয়ে না করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন নগরীর বন্দর থানার কলসিদীঘি এলাকায়। 

তবে সুখের হয়নি সে জীবন। অন্য পুরুষের সাথে টুম্পার সম্পর্ক থাকতে পারে। সবসময় এমন সন্দেহ করতেন ইব্রাহিম। সেই সন্দেহ থেকেই একদিন টুম্পার গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে ইব্রাহিম। 

সম্পুর্ণ ক্লু লেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে ঘাতক ইব্রাহীমকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ। 

শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুরে নগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন উপ-কমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান।

মাহবুব আলম খান জানান, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় বন্দর থানার ওয়াসিম চৌধুরী পাড়া পেলাগাজীর বাড়ি আলী সওদাগরের বিল্ডিংয়ের নিচ তলার একটি বাসা থেকে এক অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপরই ঘটনার ছায়াতদন্ত শুরু করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। বাড়ির মালিকের কাছে ভাড়াটিয়ার তথ্য না থাকায় তাৎক্ষণিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে একই এলাকার একটি দোকানের ক্যাশমেমো থেকে পাওয়া নম্বর ধরেই এগোয় তদন্ত। এরপরই শনাক্ত হয় ইব্রাহিম; যিনি চট্টগ্রাম থেকে বাগেরহাট যাচ্ছিলেন।

পুলিশ জানায়, ইব্রাহিমকে রাজধানীর পোস্তগোলা ব্রিজ এলাকায় বাসের ভেতর থেকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করতে সক্ষম হয়। তারপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে উদঘাটিত হয় খুনের রহস্য।

পুলিশ জানায়, ইমোতে প্রেমে সম্পর্কের সূত্র ধরে টুম্পা ও ইব্রাহীম বিয়ে ছাড়াই স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার করছিলেন। ভিকটিম টুম্পা আক্তার একজন গার্মেন্টসকর্মী। তার পরিচয় মূলত ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তারের পরই জানতে পারি। তারা বন্দর এলাকার ওই বাসায় লিভ টুগেদার করত। কাগজে-কলমে তাদের বিয়ে হয়নি। দুজন ব্যক্তিকে স্বাক্ষী রেখে তাদের মুখে মুখে বিয়ে হয়।
টুম্পা আক্তার যখন কর্মস্থলে যেতেন ইব্রাহিম মোবাইল নিয়ে যেতে দিতেন না। মোবাইল বাসায় রেখে যেতেন। বাসায় রাখার পর অনেকসময় তার ফোনে পুরুষ কণ্ঠে কল আসত। ইব্রাহিমের সন্দেহ হয় তার কথিত স্ত্রীর আরও কয়েকজনের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে। এই সন্দেহের জেরে তাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। 

ঘটনার দিন এই বিষয় নিয়েই তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে ইব্রাহিমের মাথার কাছে একটি শেলফে থাকা রশি দিয়ে টুম্পার গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ওই সময় টুম্পার বাচ্চাটি পাশের রুমে ঘুমাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটি ঘুম থেকে উঠলে তাকে একজন মহিলার কাছে দিয়ে ইব্রাহিম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

এ হতাকাণ্ডের ঘটনায় বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

ঢাকা/রেজাউল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ