যখন গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট বিশেষ কোনো খাতে থাকে, অন্য খাতে সরবরাহ কিছুটা কমিয়ে সামাল দেওয়া যায়। কিন্তু সংকটটা সব খাতে বিস্তৃত থাকলে আর সামাল দেওয়ার সুযোগ থাকে না। বহু বছর ধরেই দেশে গ্যাসের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ফলে এক খাতে সরবরাহ কমিয়ে অন্য খাতে বাড়ানোর কৌশল নিয়েছিল সরকার। বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে কোনো হিসাব-নিকাশই মিলছে না।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। এখন সরবরাহ হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৬৫ কোটি ঘনফুট। পবিত্র রমজান মাসে এটি বেড়ে ২৮০ থেকে ২৮৫ কোটি ঘনফুট হতে পারে। শীতের মৌসুমে বাসাবাড়ি ও দাপ্তরিক কাজে বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকায় শিল্প খাতে সরবরাহ কিছুটা বাড়ানো গিয়েছিল। কিন্তু গরম শুরু হতেই বাসাবাড়ি ও সরকারি–বেসরকারি দপ্তরে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবে শিল্পে সরবরাহ কমিয়ে আনতে হবে, যদি না বাইরে থেকে আমদানি বাড়ানো যায়।

চলতি বছর শীতের পুরো সময়টা বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংকট ছিল। অনেক এলাকায় দিনের বেলা গ্যাস পাওয়া যেত না। রাতে রান্না করতে হতো। এই পটভূমিতে মার্চের শুরুতেই পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। এ সময় গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট থাকলে ইফতার ও সাহ্‌রির সময় মানুষের ভোগান্তি বাড়তে পারে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো.

রেজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রমজান মাসে এলএনজির একটি কার্গো বাড়তি আনা হচ্ছে। এতে আবাসিক খাতে সরবরাহ কিছুটা বাড়তে পারে। অন্যদিকে তিতাস গ্যাসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর তেমন সুযোগ নেই। প্রতিদিন গড়ে ১৯৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের চাহিদা দিয়েছে তিতাস। প্রকৃত চাহিদা আরও বেশি।

সে ক্ষেত্রে বাসাবাড়িতে গ্যাসের দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। প্রতিবছরই গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন কমছে। জনজীবন ও অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, দেশে একসময় দিনে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হতো। ২০১৮ সালের পর থেকে উৎপাদন কমতে থাকে। ঘাটতি পূরণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এলএনজি আমদানি করে। অথচ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা নতুন গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করেনি।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও জ্বালানি খাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের জ্বালানি নীতি বাতিল করলেও চুক্তিগুলো বহাল রেখেছে। জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বক্তব্যে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এসি না চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি, এসি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হলে কিছুটা বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। কিন্তু তাতে রোজায় যে বাড়তি বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে, সেটা পূরণ হবে কি?

গ্যাস-বিদ্যুৎ নিয়ে অতীত সরকারের ভুল নীতি থেকে বেরিয়ে এসে অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকার বাসাবাড়িতে গ্রাহকেরা নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও কেন গ্যাস পাচ্ছেন না, সেই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজতে হবে। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও গ্যাস অপচয় রোধে জোরালো ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার আসে, সরকার যায়, কিন্তু ঢাকা শহরের বিদ্যুৎ ও গ্যাসের গ্রাহকদের প্রি–পেইড মিটার চালুর কাজটি এখনো শেষ করা যায়নি। একই পরিমাণ গ্যাস–বিদ্যুৎ খরচ করে কাউকে বেশি, কাউকে কম বিল পরিশোধ করতে হয়। ঢাকা শহরের কয়েক লাখ গ্রাহকের প্রিয় মিটার চালু করতে কত বছর লাগে?

রোজায় মানুষের ভোগান্তি যাতে না হয়, সে জন্য বাসাবাড়িতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরবর হ ক রমজ ন সরক র ঘনফ ট উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

রোহিঙ্গা শিবিরে পানির সংকট তীব্র: এমএসএফ

কক্সবাজারে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১০ লিটার করে পানি পাচ্ছেন। এই পরিমাণ পানি জীবনধারণের প্রয়োজনের অর্ধেক। সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বলেছে, পানি সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে।

আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) টেকনাফে চলমান এই সংকটের কথা বলেছে। পাশাপাশি এমএসএফ জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এসএমএফ বলেছে, উদ্বেগজনক হারে সংরক্ষণব্যবস্থা কমে আসায় পানির সংকট আরও কঠিন হয়েছে। টেকনাফ মূলত মজুদকৃত পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই বছর আশঙ্কাজনক হারে মজুদকৃত পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশে এমএসএফ-এর মিশন প্রধান আন্তোনিও কারাডোনা বলেন, ‘পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। টেকনাফে প্রতিদিন জনপ্রতি ১০ লিটার পানি পাওয়া যায়, যা একজন মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ক্যাম্পজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নানা রোগের ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব থেকেই এই সংকটের তীব্রতা স্পষ্ট।’

নূর আলম নামের একজন রোহিঙ্গা তাঁর কষ্টের কথা এমএসএফকে শুনিয়েছেন। নূর আলম বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে পানিসংকট তীব্র হতে দেখছি, এখানে সাহায্য–সহযোগিতাও অনেক সীমিত। অনেককেই বাধ্য হয়ে অনেক দূরে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনতে হয়, যা অনেক বেশি সময়সাপেক্ষও।’

এমএসএফ বলেছে, জরুরি সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চলমান থাকা, প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহব্যবস্থা আরও উন্নত ও দ্রুত করার সুযোগ আছে। কলেরার মতো পানিবাহিত রোগসহ নানাধরনের চর্ম রোগের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি হ্রাস এবং ক্রমবর্ধমান অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

এমএসএফ একটি বোরহোল, একটি পানি সংরক্ষণ ও সরবরাহ সেবা শুরু করেছে এবং ক্যাম্পে ট্রাকের মাধ্যমে পানি সরবরাহ সেবা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এই জরুরি পদক্ষেপগুলো যদিও এ সংকটের সাময়িক সমাধান দেয়, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী ও পর্যাপ্ত নয়।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ও দাতাসংস্থাগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে টেকসই পানি সরবরাহে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এমএসএফ। পাশাপাশি দায়িত্বশীল অংশীদারদের কাছে জবাবদিহি ও সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা বলেছে তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা চলমান থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • চট্টগ্রাম ওয়াসায় চাকরি, বেতন ছাড়াও আছে সার্বক্ষণিক গাড়ির সুবিধা
  • ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা সরবরাহের নির্দেশ
  • ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের
  • রোহিঙ্গা শিবিরে পানির সংকট তীব্র: এমএসএফ
  • ‘নিউজ মিডিয়া মনিটরিং সেবা’ চালু করবে বিএসইসি
  • সরবরাহ চুক্তিতে না আসায় শাস্তির মুখে চালকল মালিক
  • দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল জীবন, অবশেষে অভিশাপমুক্ত হলেন রিয়া
  • জি এম কাদের ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন ও স্থানান্তর স্থগিত
  • দিন-রাত ব্যস্ততা সেমাইপল্লিতে