জার্মানিতে নির্বাচন রোববার, জোট ছাড়া বিকল্প থাকছে না
Published: 22nd, February 2025 GMT
জার্মানিতে পার্লামেন্টের ২১তম নির্বাচন হবে রোববার। দেশটির ফেডারেল পরিসংখ্যান কার্যালয় জানিয়েছে, প্রায় সাড়ে আট কোটি মানুষের দেশ জার্মানিতে এ বছর মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ৯২ লাখ। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৬ লাখ। আর পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২ কোটি ৮৬ লাখ।
এবারের নির্বাচনে জার্মান পার্লামেন্টে ৬৩০টি আসনের জন্য ২৯টি দল মোট ৪ হাজার ৫০৬ জন প্রার্থী দিয়েছে। রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রগুলো খোলা থাকবে।
জার্মানিতে ১৯৪৯ সালের পর থেকেই গণতান্ত্রিক প্রথায় নির্বাচন হচ্ছে। জার্মানির রাজনীতিতে সরকার গঠনের ঐতিহ্য হলো, জোট বেঁধে সরকার গঠন। কারণ, সরকার গঠনের মতো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট কোনো দলই পায় না। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটছে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই সরকার গঠন করতে গেলে জোট বাঁধা ছাড়া বিকল্প থাকছে না।
নির্বাচনের প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই এবং সর্বশেষ নানা জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রথমে রয়েছে ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন দল, তারপর রয়েছে কট্টরবাদী জার্মানির জন্য বিকল্প দলটি, এরপর রয়েছে বর্তমানের ক্ষমতাসীন জোট সরকারের বড় দল সামাজিক গণতান্ত্রিক দল এবং চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে পরিবেশবাদী সবুজ দল।
নির্বাচনী জরিপের হিসাবে, ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন দলটির নেতা ফ্রিডরিখ মের্ৎসকে সম্ভাব্য আগামী চ্যান্সেলর হিসেবে দেখা হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে বড় চমক জার্মানির কট্টর রক্ষণশীল অভিবাসীবিদ্বেষী দল হিসেবে পরিচিত অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলটি। নির্বাচনী জরিপে এই দল দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
নির্বাচনের আগে থেকেই জার্মানিজুড়ে কট্টর রক্ষণশীল অভিবাসীবিরোধী অল্টানেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। দলটির বিরুদ্ধে জার্মানির বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভকারীরা জার্মানির গণতান্ত্রিক দলগুলোকে নব্য নাৎসিদের দল অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ডের সঙ্গে সহযোগিতা বা জোট গঠন না করতে আহ্বান জানিয়েছে।
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ এবং তার জোট সরকার করোনা–পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা গ্রহণ এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বেশ কয়েকটি কারণে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। আর তা হলো, অর্থনৈতিক সমস্যা ও মুদ্রাস্ফীতি, তিন দলের ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে বিরোধ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দৃঢ়তার অভাব, জলবায়ু নীতি ও অভিবাসন বিতর্ক এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ। এসব মিলিয়ে ওলাফ শলৎজের জোট সরকার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে।
জার্মানির সম্ভাব্য আগামী চ্যান্সেলর ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন দলটির নেতা ফ্রিডরিখ মের্ৎস নির্বাচনের পর জার্মান অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে ৩টি মূল বিষয়ের সমাধানের কথা নির্বাচনী সভাগুলোতে বলেছেন। আর তা হলো, নাগরিক ভাতাকে একটি নতুন মৌলিক নিরাপত্তা দিয়ে প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা, কর্মরত পেনশনভোগীদের জন্য করমুক্ত অতিরিক্ত আয় এবং করবিষয়ক সংস্কার।
রোববারের নির্বাচনে সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন দলটির নেতা ফ্রিডরিখ মের্ৎসকে সম্ভাব্য চ্যান্সেলর হিসেবে দেখানো হলেও সরকার গঠন করতে সামাজিক গণতান্ত্রিক দল বা পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট বাঁধতে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র গঠন র জন য দলট র
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানের সময় নিহত সুমাইয়ার বাড়িতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ
ছাত্রজনতার আন্দোলনে গত বছরের ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদিতে ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান গার্মেন্টসকর্মী সুমাইয়ার আক্তার। তার পরিবার ও শিশু সুয়াইবার সঙ্গে ঈদুল ফিতরের দিন (সোমবার) দেখা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুলাহ আল আমিন, তামিম আহমেদ ও দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত জামিল। এ সময় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম শহীদ সুমাইয়ার মায়ের হাতে ঈদ উপহার ও আর্থ সহায়তা করেন।
সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদিতে গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্রজনতার গণআন্দোলনে ঘরের বরান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা গার্মেন্টর্কমী সুমাইয়া আক্তার (২০) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছিলেন। মারা যাওয়ার সময় সুমাইয়া আড়াই মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান রেখে যান। মা হারা সেই সুয়াইবার প্রথম ঈদ কাটলো আজ। এখন সুয়াইবার বয়স প্রায় ১০ মাস।
সুয়াইবার বাবা জাহিদও তার কোনো খোঁজখবর নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন সুমাইয়ার পরিবার। এজন্যই মা-বাবাহীন সুয়াইবার ঈদ কাটছে নানি-খালা-মামার স্নেহ ভালবাসায়। দেশব্যাপী ছাত্র-জনতা যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় কাঁচপুর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদিতে বাবা মায়ের কাছে বেড়াতে এসেছিলেন সুমাইয়া তার শিশু সুয়াইবাকে নিয়ে। আন্দোলনের সময় বাড়ির চার তলায় শিশু সুয়াইবাকে ঘুম পাড়িয়ে ২০ জুলাই বিকেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আন্দোলনের দৃশ্য দেখছিলেন সুমাইয়া। হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া একটি গুলি বারান্দার গ্রিল দিয়ে ঢুকে তার মাথায় বিদ্ধ হয়। এ সময় রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন সুমাইয়া। তাৎক্ষণিক পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সড়কেই মৃত্যু হয় সুমাইয়ার।