সবে ঢাকায় এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। কম্পিউটারবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে প্রযুক্তি দুনিয়ার খোঁজখবর রাখি। সেই সূত্র ধরেই ২০১৬ সালে প্রথম আলোর প্রযুক্তি পাতায় প্রদায়ক হিসেবে আমার লেখাজোখা শুরু।

এই কাজ করতে করতেই একদিন ফিচার বিভাগের সে সময়ের যুগ্ম সম্পাদক পল্লব মোহাইমেন বললেন, ‘শাওন, তোমাকে ধানমন্ডিতে যেতে হবে। একজন মুখে বলবেন, তুমি শুনে শুনে লিখে আনবে।’

মুঠোফোনে নাম-ঠিকানা পাঠিয়ে দিলেন পল্লব ভাই, ‘কাওসার আহমেদ চৌধুরী.

..।’

মাথায় সবুজ টুপি, চোখে খয়েরি চশমা, রঙিন শার্ট, কালো দাড়ি—কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে অনেকের মতো পত্রিকা মারফত আমিও অতটুকুই চিনতাম। ২০১৬ সালের সেই সন্ধ্যায় মনের মধ্যে মানুষটার এই চিত্র নিয়েই তাঁর ধানমন্ডির বাসায় পৌঁছালাম।

কলিবেল বাজাতেই এক কিশোর দরজা খুলল। পরিচয় দিলাম। ভেতরে গিয়ে বসতে বলল। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর শোবার ঘর থেকে ডাক এল। একটু ভয় ভয় মন নিয়ে ভেতরে গেলাম। পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি পড়ে শুয়ে আছেন বয়স্ক এক মানুষ। খুবই গম্ভীর। আমাকে দেখে মিষ্টি বাংলায় বললেন, ‘এসেছ, বসো। আমি কাওসার আহমেদ চৌধুরী, তোমার নাম কী?’

কাওসার আহমেদ চৌধুরীর অপ্রকাশিত লেখা: যখন ঋত্বিক

প্রাথমিক পরিচয়ের পর সাদা কাগজ আর কলম নিয়ে লেখা শুরু করলাম, ‘রাশিফল, শনিবার। মেষ…।’ কাওসার আহমেদ চৌধুরী বলে গেলেন, আমি লিখে গেলাম। লেখা শেষে তিনি হাতে নিলেন কাগজটা, অনেক ভুল ছিল আমার লেখায়। শুধরে দিলেন।

দরজা যে খুলে দিয়েছিল, তার নাম আল আমিন। কাওসার আহমেদ চৌধুরীর সেবক। তার সঙ্গেও কথা হলো।

সেই শুরু। পরের তিনটি বছর প্রতি বুধবার কাওসার আহমেদ চৌধুরীর শ্রুতিলেখক হিসেবে কাজ করেছি। কাওসার আহমেদ চৌধুরী তাঁর লেখা প্রতিটি শব্দ নিয়ে খুবই খুঁতখুঁতে ছিলেন। আর একদম তাঁর সময়মতো হাজির হওয়াটা অনেকের জন্যই চ্যালেঞ্জিং। এসব কারণে অনেকেই তাঁর শ্রুতিলেখকের দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারেননি। তবে তাঁর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধের কারণে দীর্ঘদিন তাঁর সান্নিধ্যলাভের সৌভাগ্য পেয়েছিলাম।

এমন প্রায়ই হয়েছে, আমি ছয়টার আগে পৌঁছে গেছি। তখন বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ঘড়িতে যেই ছয়টা বাজত, অমনি কলবেল চাপতাম। এ জন্য তিনি সব সময় বলতেন, ‘শাওন তোমার সময়জ্ঞান খুবই ভালো।’

সারা সপ্তাহ যা–ই করি না কেন, আমার বুধবার দিনটি থাকত তাঁর জন্য বরাদ্দ। কতটা বরাদ্দ, এ বিষয়ে একটি ঘটনা বলি।

কাওসার আহমেদ চৌধুরী এখন ছবির মানুষ

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে বললাম, ‘আজ আপনার কাছে হেলিকপ্টারে করে এসেছি’

সবে ঢাকায় এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। কম্পিউটারবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে প্রযুক্তি দুনিয়ার খোঁজখবর রাখি। সেই সূত্র ধরেই ২০১৬ সালে প্রথম আলোর প্রযুক্তি পাতায় প্রদায়ক হিসেবে আমার লেখাজোখা শুরু।

এই কাজ করতে করতেই একদিন ফিচার বিভাগের সে সময়ের যুগ্ম সম্পাদক পল্লব মোহাইমেন বললেন, ‘শাওন, তোমাকে ধানমন্ডিতে যেতে হবে। একজন মুখে বলবেন, তুমি শুনে শুনে লিখে আনবে।’

মুঠোফোনে নাম-ঠিকানা পাঠিয়ে দিলেন পল্লব ভাই, ‘কাওসার আহমেদ চৌধুরী...।’

মাথায় সবুজ টুপি, চোখে খয়েরি চশমা, রঙিন শার্ট, কালো দাড়ি—কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে অনেকের মতো পত্রিকা মারফত আমিও অতটুকুই চিনতাম। ২০১৬ সালের সেই সন্ধ্যায় মনের মধ্যে মানুষটার এই চিত্র নিয়েই তাঁর ধানমন্ডির বাসায় পৌঁছালাম।

কলিবেল বাজাতেই এক কিশোর দরজা খুলল। পরিচয় দিলাম। ভেতরে গিয়ে বসতে বলল। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর শোবার ঘর থেকে ডাক এল। একটু ভয় ভয় মন নিয়ে ভেতরে গেলাম। পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি পড়ে শুয়ে আছেন বয়স্ক এক মানুষ। খুবই গম্ভীর। আমাকে দেখে মিষ্টি বাংলায় বললেন, ‘এসেছ, বসো। আমি কাওসার আহমেদ চৌধুরী, তোমার নাম কী?’

কাওসার আহমেদ চৌধুরীর অপ্রকাশিত লেখা: যখন ঋত্বিক

প্রাথমিক পরিচয়ের পর সাদা কাগজ আর কলম নিয়ে লেখা শুরু করলাম, ‘রাশিফল, শনিবার। মেষ…।’ কাওসার আহমেদ চৌধুরী বলে গেলেন, আমি লিখে গেলাম। লেখা শেষে তিনি হাতে নিলেন কাগজটা, অনেক ভুল ছিল আমার লেখায়। শুধরে দিলেন।

দরজা যে খুলে দিয়েছিল, তার নাম আল আমিন। কাওসার আহমেদ চৌধুরীর সেবক। তার সঙ্গেও কথা হলো।

সেই শুরু। পরের তিনটি বছর প্রতি বুধবার কাওসার আহমেদ চৌধুরীর শ্রুতিলেখক হিসেবে কাজ করেছি। কাওসার আহমেদ চৌধুরী তাঁর লেখা প্রতিটি শব্দ নিয়ে খুবই খুঁতখুঁতে ছিলেন। আর একদম তাঁর সময়মতো হাজির হওয়াটা অনেকের জন্যই চ্যালেঞ্জিং। এসব কারণে অনেকেই তাঁর শ্রুতিলেখকের দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারেননি। তবে তাঁর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধের কারণে দীর্ঘদিন তাঁর সান্নিধ্যলাভের সৌভাগ্য পেয়েছিলাম।

এমন প্রায়ই হয়েছে, আমি ছয়টার আগে পৌঁছে গেছি। তখন বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ঘড়িতে যেই ছয়টা বাজত, অমনি কলবেল চাপতাম। এ জন্য তিনি সব সময় বলতেন, ‘শাওন তোমার সময়জ্ঞান খুবই ভালো।’

সারা সপ্তাহ যা–ই করি না কেন, আমার বুধবার দিনটি থাকত তাঁর জন্য বরাদ্দ। কতটা বরাদ্দ, এ বিষয়ে একটি ঘটনা বলি।

কাওসার আহমেদ চৌধুরী এখন ছবির মানুষ

সম্পর্কিত নিবন্ধ