প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে সাত কোটি বই এখনো ছাপা হয়নি
Published: 22nd, February 2025 GMT
শিক্ষাবর্ষের ১ মাস ২১ দিন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু দেশের সব শিক্ষার্থী সব পাঠ্যবই এখনো হাতে পায়নি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য বলছে, প্রায় সাত কোটি বই ছাপা হওয়া বাকি, যার অধিকাংশই মাধ্যমিক পর্যায়ের।
শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে এবার শিক্ষা বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, বই পেতে কিছুটা দেরি হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেকটা দেরি হয়ে যাচ্ছে। ছাপার যে পরিস্থিতি, তাতে এ মাসেও সব শিক্ষার্থী সব বই পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বই দিতে যত দেরি হচ্ছে, পড়াশোনাও তত ব্যাহত হচ্ছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সূত্রমতে, নতুন শিক্ষাবর্ষে চার কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৪০ কোটি ১৫ লাখ বই ছাপানোর আয়োজন করা হয়েছিল। তবে পরে এসে দেখা যায়, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চাহিদা জানানো হয়েছে। নতুন করে হিসাব করে দেখা যায়, মোট বই ছাপতে হবে আসলে ৩৯ কোটি ৬০ লাখের মতো। এর মধ্যে সাত কোটি ছাপা হওয়া বাকি।
ছাপার যে পরিস্থিতি, তাতে এ মাসেও সব শিক্ষার্থী সব বই পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বই দিতে যত দেরি হচ্ছে, পড়াশোনাও তত ব্যাহত হচ্ছে।মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) বই লাগবে প্রায় ৩০ কোটি ৫০ লাখ। ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিকের প্রায় ২৩ কোটি ৬৭ লাখের মতো বই ছাপা হয়েছে। অবশ্য সরবরাহ হয়েছে ১৮ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজারের বেশি পাঠ্যবই। এই হিসাবে ১১ কোটি ৭৫ লাখের মতো পাঠ্যবই এখনো সরবরাহ করা হয়নি।
ছাপার পর বই নির্ধারিত মান অনুযায়ী হয়েছে কি না, তা যাচাই করে সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়। ফলে ছাপা হলেও সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠানো যায় না, একটু সময় লাগে। আবার ছাপার পর তা বাঁধাইয়ের কাজেও দেরি হয়।
প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবই ৯ কোটি ১৯ লাখের বেশি। এর মধ্যে ছাপা হয়েছে ৮ কোটি ৯৬ লাখ ৪৪ হাজারের মতো। অবশ্য এর মধ্যে ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৬১ হাজারের বেশি বই সরবরাহের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এখনো প্রায় ৫৪ লাখ বই সরবরাহ হয়নি, যা মোট বইয়ের প্রায় ৬ শতাংশ।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বই সরবরাহ করতে। গত বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেসব পাঠ্যবইয়ের পরীক্ষা হয়, সেগুলো এ মাসেই চলে যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন। বাকি থাকবে মূলত সেই সব বই, যার পরীক্ষা হয় না এবং সেগুলো অতিরিক্ত চাহিদার।
ছাপার পর বই নির্ধারিত মান অনুযায়ী হয়েছে কি না, তা যাচাই করে সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়। ফলে ছাপা হলেও সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠানো যায় না, একটু সময় লাগে। আবার ছাপার পর তা বাঁধাইয়ের কাজেও দেরি হয়।সরেজমিনরাজধানীর মগবাজারের ইস্পাহানী বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন। বিদ্যালয়টির অফিসকর্মীরা জানান, চাহিদার চেয়ে সামান্য কম হলেও প্রাথমিকের প্রায় বিষয়ের বই পাওয়া গেছে। তবে নবম শ্রেণিতে এখন পর্যন্ত তিনটি বিষয় হাতে এসেছে। সেগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি ও গণিত। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে চারু ও কারুকলা, গার্হস্থ্যবিজ্ঞানের মতো দু-একটি বিষয়ের বই ছাড়া বাকি বিষয়ের বই পাওয়া গেছে। আর দশম শ্রেণির সব বিষয়ের বই এসেছে।
দুপুরের দিকে রাজধানীর নীলক্ষেত হাইস্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের বই পাওয়া গেছে। সপ্তম ও অষ্টম এবং দশম শ্রেণির সব বিষয়ের বই পেয়েছেন। আর নবম শ্রেণির সাতটি বই পাওয়া গেছে।
গ্রামের বিদ্যালয়গুলোর কী অবস্থা তা জানতে খোঁজ নেওয়া হয় নেত্রকোনা শহরের আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখানে প্রধান শিক্ষক লুৎফর হায়দার ফকির প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির কৃষিশিক্ষা, উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞান পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, পৌরনীতি, সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ের ঘাটতি রয়েছে।
আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষকেরা এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ ডাউনলোড করে পড়াচ্ছেন। তবে সব শিক্ষার্থীর হাতে পিডিএফ সংস্করণ নেই। ফলে যেসব বিষয়ের বই পৌঁছায়নি, সেসব বিষয়ে পড়াশোনা তেমন একটা হচ্ছে না।জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, জেলায় সব শ্রেণির বই মোটামুটি পাওয়া গেছে। তবে ঘাটতি রয়েছে নবম শ্রেণির বইয়ের। নবম শ্রেণির বইয়ের চাহিদা ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩২২। এর মধ্যে পাওয়া গেছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৫৫৪টি।
আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষকেরা এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ ডাউনলোড করে পড়াচ্ছেন। তবে সব শিক্ষার্থীর হাতে পিডিএফ সংস্করণ নেই। ফলে যেসব বিষয়ের বই পৌঁছায়নি, সেসব বিষয়ে পড়াশোনা তেমন একটা হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট বিষয় পাঠদান হচ্ছে না বললেই চলে।
এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তাঁরা প্রথমে সব শ্রেণির তিনটি বিষয়ের (বাংলা, ইংরেজি ও গণিত) বই দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এরপর এসএসসি পরীক্ষার্থী হিসেবে দশম শ্রেণির বই ছাপার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপার কাজ প্রায় শেষ। এখন নবম শ্রেণিসহ মাধ্যমিকের অন্যান্য শ্রেণির অবশিষ্ট বই ছাপায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, জেলায় সব শ্রেণির বই মোটামুটি পাওয়া গেছে। তবে ঘাটতি রয়েছে নবম শ্রেণির বইয়ের। নবম শ্রেণির বইয়ের চাহিদা ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩২২। এর মধ্যে পাওয়া গেছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৫৫৪টি।এবার শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই ছাপিয়ে বিতরণ করা হচ্ছে। পাঠ্যবই পরিমার্জনের কারণে বই ছাপার কাজ দেরি হবে, তা অনুমেয় ছিল। কিন্তু দরপত্র, অনুমোদন, চুক্তির মতো কাজগুলোও যথাসময়ে না করায় এবং কাগজ ও আর্ট কার্ডের সংকটের কারণে আরও বেশি দেরি হচ্ছে। এখন যে পরিস্থিতি চলছে তাতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দিতে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
জানতে চাইলে বই ছাপার কাজ পাওয়া একটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কাগজের সংকটের কারণে সব বই পেতে মার্চের অনেকটা সময় চলে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, নেত্রকোনা]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সব শ ক ষ র থ এনস ট ব র বই ছ প র ছ প র পর পর স থ ত বইয় র প প ঠ যবই সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গা শিবিরে পানির সংকট তীব্র: এমএসএফ
কক্সবাজারে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১০ লিটার করে পানি পাচ্ছেন। এই পরিমাণ পানি জীবনধারণের প্রয়োজনের অর্ধেক। সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বলেছে, পানি সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে।
আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) টেকনাফে চলমান এই সংকটের কথা বলেছে। পাশাপাশি এমএসএফ জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এসএমএফ বলেছে, উদ্বেগজনক হারে সংরক্ষণব্যবস্থা কমে আসায় পানির সংকট আরও কঠিন হয়েছে। টেকনাফ মূলত মজুদকৃত পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই বছর আশঙ্কাজনক হারে মজুদকৃত পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে এমএসএফ-এর মিশন প্রধান আন্তোনিও কারাডোনা বলেন, ‘পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। টেকনাফে প্রতিদিন জনপ্রতি ১০ লিটার পানি পাওয়া যায়, যা একজন মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ক্যাম্পজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নানা রোগের ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব থেকেই এই সংকটের তীব্রতা স্পষ্ট।’
নূর আলম নামের একজন রোহিঙ্গা তাঁর কষ্টের কথা এমএসএফকে শুনিয়েছেন। নূর আলম বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে পানিসংকট তীব্র হতে দেখছি, এখানে সাহায্য–সহযোগিতাও অনেক সীমিত। অনেককেই বাধ্য হয়ে অনেক দূরে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনতে হয়, যা অনেক বেশি সময়সাপেক্ষও।’
এমএসএফ বলেছে, জরুরি সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চলমান থাকা, প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহব্যবস্থা আরও উন্নত ও দ্রুত করার সুযোগ আছে। কলেরার মতো পানিবাহিত রোগসহ নানাধরনের চর্ম রোগের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি হ্রাস এবং ক্রমবর্ধমান অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এমএসএফ একটি বোরহোল, একটি পানি সংরক্ষণ ও সরবরাহ সেবা শুরু করেছে এবং ক্যাম্পে ট্রাকের মাধ্যমে পানি সরবরাহ সেবা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এই জরুরি পদক্ষেপগুলো যদিও এ সংকটের সাময়িক সমাধান দেয়, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী ও পর্যাপ্ত নয়।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ও দাতাসংস্থাগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে টেকসই পানি সরবরাহে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এমএসএফ। পাশাপাশি দায়িত্বশীল অংশীদারদের কাছে জবাবদিহি ও সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা বলেছে তারা।