Samakal:
2025-02-22@16:35:11 GMT

গবেষণা ও অনুবাদে অনেকটাই পিছিয়ে

Published: 22nd, February 2025 GMT

গবেষণা ও অনুবাদে অনেকটাই পিছিয়ে

মাতৃভাষার চর্চা ও প্রসারে কয়েক দশক ধরে কাজ করছে বাংলা একাডেমি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। বাংলাসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, গবেষণা এবং দেশি-বিদেশি গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে প্রচারের লক্ষ্যে কাজ করছে প্রতিষ্ঠান দুটি। অথচ মাত্র চারজন নিজস্ব ‘গবেষণা কর্মকর্তা’ আছেন দুই প্রতিষ্ঠানে। বাজেট স্বল্পতাও প্রকট। তাই ভাষা চর্চায় গবেষণা, গ্রন্থ প্রকাশ, সমীক্ষাসহ নানা উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে তারা। বিভিন্ন দিবস পালন, গ্রন্থমেলা, পুরস্কার প্রদানের মধ্যেই তাদের পরিচিতি তৈরি হয়েছে। 
১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমি প্রতি বছর বইমেলা আয়োজনের পাশাপাশি ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান করে থাকে। তবে পুরস্কার ঘোষণা করে বাতিলের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি বিতর্কিত হয়েছে। বইমেলায় স্টল বরাদ্দ এবং পুরস্কারের জন্য ব্যক্তি বাছাইয়েও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অনেক। প্রকাশিত বইয়ের পুনর্মুদ্রণের অভাব, অনুবাদ ও গবেষণায় অপ্রতুল বরাদ্দ, জনবল নিয়োগে দুর্নীতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে দুই যুগ ধরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট বিশ্বে কীভাবে ভূমিকা রাখছে তা দৃশ্যমান নয়। প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ খণ্ডে বহুভাষী পকেট অভিধান প্রকাশ করলেও তার ব্যাপ্তি কার্যালয়ের মধ্যেই ‘সীমাবদ্ধ’। দেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীদের ভাষা নিয়ে ২০১৬ সালে ক্ষেত্রসমীক্ষা সম্পন্ন হলেও তা প্রকাশ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। আট বছরে ১০ খণ্ডের মধ্যে মাত্র একটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রত্যাশা পূরণ থেকে অনেকটাই দূরে প্রতিষ্ঠান দুটি। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সমকালকে বলেন, পাকিস্তান আমলে বাংলা ভাষার গবেষণা ও অনুবাদ প্রকাশের জন্য বাংলা একাডেমি এবং প্রকাশনার জন্য বাংলা উন্নয়ন বোর্ড সৃষ্টি হয়েছিল। বোর্ড মূলত পাঠ্যপুস্তকসহ সব ধরনের প্রকাশনার কাজ করত। 

কিন্তু এক পর্যায়ে এই বোর্ডে যিনি পরিচালক ছিলেন তিনি মহাপরিচালক হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তখন দুটি প্রতিষ্ঠান একীভূত হয়। ফলে স্বাধীনতার পর বাংলা একাডেমি তার মূল লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে গেছে। বইমেলা আয়োজন একাডেমির কাজ হতে পারে না। এটি প্রকাশনার কাজ হওয়া উচিত। তাছাড়া বাংলা একাডেমির প্রকাশনাও রাজনৈতিক বা ব্যক্তি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এটিও একাডেমিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অনুবাদও যথাযথ মানে হচ্ছে না। 
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে স্বাধীন বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা উচিত মন্তব্য করে প্রবীণ এই অধ্যাপক বলেন, ‘মাতৃভাষার স্বার্থরক্ষা এবং বিপন্ন ভাষা রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ও কার্যক্রম এখনও স্পষ্ট নয়। যোগ্য নেতৃত্ব ও ব্যবস্থপনা দরকার।’

বাংলা একাডেমি
১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর গবেষণা ও অনুবাদ শাখা নিয়ে বাংলা একাডেমির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫২ সালের মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি অমর একুশে গ্রন্থমেলা তথা বাইমেলার আয়োজক হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। শিক্ষা-ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান ইত্যাদি চর্চায়ও এর কার্যক্রম রয়েছে। তবে দেশি-বিদেশি মূল্যবান গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা সংগ্রহের মাধ্যমে এটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষকদের অন্যতম প্রধান ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে। দৌলত উজির বাহরাম খাঁর ‘লাইলী মজনু’ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত প্রথম বই। প্রকাশিত বিভিন্ন গ্রন্থের মধ্যে আঞ্চলিক ভাষার অভিধান, আধুনিক বাংলা অভিধান, বাংলা একাডেমি বাংলা বানান-অভিধান উল্লেখযোগ্য। লোকসংস্কৃতি নিয়েও গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। আছে দুষ্প্রাপ্য পুঁথি ও বইয়ের সংগ্রহ। কিন্তু জনবল ও অর্থ সংকটের কারণে নানা সমস্যায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। 

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলা একাডেমি গত ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬ হাজার ৫০৫টি বই ও পত্রিকা প্রকাশ করেছে। বর্তমানে এর মধ্যে ১ হাজার ৫৯৭টি বই ও সাতটি পত্রিকা বিক্রয়যোগ্য তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ চার ভাগের এক ভাগ বইয়ের মুদ্রণ বন্ধ। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বই অনুবাদ হলেও গত ৬ বছরে অনুবাদ হয়েছে ৩০টির মতো। গত ১৫ বছরে নিজস্ব গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে মাত্র ২০টি।
বাংলা একাডেমির ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ৪০ কোটি ২১ লাখ টাকা। তবে গবেষণায় বরাদ্দ মাত্র ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থাৎ মোট বরাদ্দের দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর প্রকাশনায় বরাদ্দ ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। প্রতিষ্ঠানটিতে ৩৭৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও গবেষণা কর্মকর্তা মাত্র তিনজন। অনুবাদকও তিনজন। নীতিমালা অনুযায়ী বাইরের গবেষক ও অনুবাদক দিয়ে গ্রন্থ প্রকাশনার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে প্রতিষ্ঠাটি। এর পরও বাংলা একাডেমি যেসব কাজ করে থাকে তা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। কয়েক বছর ধরে সাহিত্য অঙ্গনের সবচেয়ে বড় পুরস্কারটি যথেষ্ট কলুষিত হয়েছে। বাংলা একাডেমিতে চাকরিরত অবস্থায় তিন লেখক বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ায় এই বিতর্ক দেখা দেয়। একাডেমির সাবেক পরিচালক ড.

আমিনুর রহমান সুলতান ২০২১ সালে, ২০২৩ সালে পরিচালক ড. তপন কুমার বাগচী এবং ২০১৯ সালে উপপরিচালক ড. সাইমন জাকারিয়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। চলতি মাসেও ২০২৪ সালের পুরস্কার ঘোষণার পর তিন লেখককে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তারা হলেন– মোহাম্মদ হাননান, ফারুক নওয়াজ ও সেলিম মোরশেদ। 

বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলা আয়োজন নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। বিগত সরকারের আমলের মতো চলতি বছরও স্টল বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে। বইমেলার নীতিমালা অনুযায়ী মেলায় অংশ নিতে হলে প্রত্যেক প্রকাশনীর কমপক্ষে ২৫টি মানসম্পন্ন বই থাকার কথা। কিন্তু এবারও ১০ থেকে ১২টি নিজস্ব বই আছে এমন প্রকাশনীকেও মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। 
জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘গবেষণা ও অনুবাদের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির গ্রন্থ প্রকাশনা কম নয়। তবে এর গুণ ও মান নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কারণ এ জন্য যে কাঠামো এবং বাজেট বরাদ্দ দরকার সেটি খুবই সীমিত। এ ব্যাপারে সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আলোচনা শুরু হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, গবেষণা ও অনুবাদের জন্য নিজস্ব গবেষক ও অনুবাদক প্রয়োজন। বাংলা একাডেমিতে সেটি প্রয়োজন অনুযায়ী না থাকায় নীতিমালা অনুযায়ী বাইরে থেকে গবেষক ও অনুবাদকদের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট
ভাষা আন্দোলনের ৪৭ বছর পর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা-ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ওই বছরই সরকার দেশে-বিদেশে বাংলাসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষার প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপনের ঘোষণা দেয়। তবে মূল কার্যক্রম শুরু হয় ২০১০ সালে। ১২তলা ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও নির্মিত হয়েছে ৭তলা পর্যন্ত। বিশ্বের সব মাতৃভাষা নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি ভাষা প্রমিতকরণ, বিপন্ন বা বিলুপ্ত ভাষার গবেষণা ও সংরক্ষণ এবং শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থাসহ ২৩টি বিষয়ে আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির কাজ করার কথা। তবে জনবল ও বাজেট সংকটের পাশাপাশি যথাযথ পরিকল্পনা না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি লক্ষ্য অর্জন থেকে পিছিয়ে রয়েছে। প্রতিষ্ঠান কাঠামোতে ৯৮টি পদ থাকলেও ৭১টি পদই শূন্য। মাত্র একজন গবেষণা কর্মকর্তা রয়েছেন।   অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ প্রায় ৯ কোটি টাকা। এর ৭৫ শতাংশ টাকা বেতন-ভাতা ও পরিচালন ব্যয় বাবদ খরচ হয়। 

দেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালে ক্ষেত্রসমীক্ষার কাজ শুরু করে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। সমীক্ষায় বাংলাসহ ৪১টি ভাষা শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে ১৬টির নিজস্ব লিপি রয়েছে। বাকি ২৫টি ভাষা লিপিহীন। দেশে পাওয়া ৪১টি ভাষার মধ্যে খাড়িয়া, কোডা, সৌরা, মুন্ডারি, খুমি, পাংখোয়াসহ ১১টি ভাষা বিপন্নপ্রায়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যেই হয়তো এই ভাষাগুলো হারিয়ে যাবে। বাংলাদেশে ইউনেস্কোর বিপন্ন তালিকায় থাকা কয়েকটি ভাষার অবস্থা এতই শোচনীয় যে, নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ২ থেকে ১২ জন প্রবীণ শুধু ওই ভাষাগুলোতে কথা বলে থাকেন।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, লিপিহীন ভাষাগুলোর জন্য লিপি প্রবর্তন করাসহ ক্ষেত্রসমীক্ষার ফলাফল নিয়ে ১০ খণ্ডে বই প্রকাশ করার কথা। ২০১৬ সালে এ কাজ শেষ হলেও গত আট বছরে একটি মাত্র খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৬টি ভাষায় ৫ খণ্ডের বহুভাষী পকেট অভিধান তৈরির পাশাপাশি ৪১টির মধ্যে ৩টি ভাষার ডকুমেন্টেশন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষার ইতিহাস, উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে ইংরেজি ও বাংলায় ৫ খণ্ডের ‘মাতৃভাষা বিশ্বকোষ’ প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুনে ইনস্টিটিউট এক  হাজার পকেট অভিধান প্রকাশ করেছিল। এগুলো এখনও বিক্রি হয়নি। চাহিদা থাকলেও প্রচারণা না থাকায় দেশে-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে এই অভিধান এখনও পৌঁছেনি। প্রতিটি অভিধানে বাংলা ও ইংরেজি শব্দের সঙ্গে রয়েছে আরও তিনটি করে ভাষায় নির্দিষ্ট শব্দটির অনুবাদ, ব্যবহার। যেমন– একটি খণ্ডে বাংলা, ইংরেজির সঙ্গে ওই নির্দিষ্ট শব্দের ফরাসি, ইতালি ও পোর্তুগিজ শব্দ আছে। আরেক খণ্ডে বাংলা, ইংরেজির সঙ্গে জার্মান, রুশ এবং স্পেনীয় ভাষায় শব্দ রয়েছে। মাতৃভাষা পিডিয়া ১০ খণ্ডে প্রকাশের কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত ৫ খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। অনুবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটির তেমন সফলতা নেই। মাত্র ছয়টি বাংলা ভাষী বই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় ভাষান্তর করা হয়েছে। 

মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে দুটি জাদুঘর রয়েছে। এর একটি ভাষা জাদুঘর এবং অন্যটি ভাষার লিখনরীতি আর্কাইভ। ইনস্টিটিউটে স্থাপিত ভাষা জাদুঘরে পৃথিবীর ১৯৩টি দেশের ভাষার নমুনা, জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত ও ছবি রয়েছে। জাদুঘরটি সবার জন্য উন্মুক্ত। এ ছাড়া ভাষার লিখনরীতি আর্কাইভে বিশ্বের ১৫২টি ভাষার লিখনরীতির বিস্তারিত বর্ণনা সংরক্ষণ করা হয়েছে। এটা পৃথিবীর একটি অনন্য আর্কাইভ।  

ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান সমকালকে বলেন, ‘এটি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বর্তমানে একজন গবেষক কর্মরত আছেন। এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। গবেষকসহ ৭১টি পদে নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে যদি পুরোদমে কাজে লাগাতে হয় তাহলে অবশ্যই পদগুলো পূরণ করতে হবে। আর বাজেটেও বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তা না হলে প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক হয়ে উঠবে না। বাজেট বরাদ্দ পাওয়া গেলে বাংলা ভাষা চর্চার পাশাপাশি বিপন্ন ভাষা রক্ষা এবং ইনস্টিটিউটের কর্মকাণ্ড বহিবিশ্বে ছড়ানো সম্ভব হবে।’
এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান সমকালকে বলেন, ২০০৬ সালে প্রণীত সাংস্কৃতিক নীতি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বাংলা একাডেমি ও মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে আরও গতিশীল করা হবে। এ ছাড়া তরুণ লেখক-সাহিত্যিক সৃষ্টিরও পরিকল্পনা রয়েছে। ৯০ দশকে নতুন লেখক-সাহিত্যিক সৃষ্টির জন্য তাদের কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করা হতো। পরে এটি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা শিগগির এই কার্যক্রম শুরু করব। এটি শুরু হলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়বে। গবেষণা ক্ষেত্রেও এর সুদূরপ্রসারী ভূমিকা থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট বর দ দ ও অন ব দ এক ড ম র জনগ ষ ঠ র জন য থ কল ও ক জ কর অন য য় ত হয় ছ বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ হউক বহুপক্ষীয়

বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা নহে; জাতিসত্তা রক্ষার আন্দোলনেও অমর দিবসরূপে দেদীপ্যমান। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বুকের তাজা রক্ত ঢালিয়া দিয়া ভাষাশহীদগণ কেবল দেশপ্রেমের অনন্য উদাহরণই সৃষ্টি করেন নাই; দিবসটি বাংলা ছাপাইয়া সকল ভাষার মর্যাদার স্মারক হইয়া উঠিয়াছে। একুশের চেতনা দেশ-কাল-পাত্রভেদে অধিকার আদায়ে প্রেরণার উৎসরূপে ক্রিয়াশীল। আমরা দেখিয়াছি, অধিকার আদায়ে বাঙালি ভাষা আন্দোলনের যেই সংগ্রাম রচনা করিয়াছিল, সেই পথপরিক্রমায়ই সূচিত হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। অকুতোভয় বাঙালি জনগোষ্ঠী এই ভূখণ্ডের অপরাপর জাতিগোষ্ঠীকে লইয়া দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জন করে স্বাধীনতা। স্বাধীনতার পরও যুগ যুগ ধরিয়া আন্দোলনের প্রেরণা হইয়া রহিয়াছে ভাষা আন্দোলন। এমনকি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানও উহার বাহিরে নহে। বায়ান্নতে ছাত্র-জনতা মুখের ভাষা রক্ষায় সোচ্চার হইয়া আন্দোলনে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও তাহারা প্রেরণা হইয়া উঠিয়াছিল। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দেয়ালে দেয়ালে মায়ের ভাষায় লিখিত গ্রাফিতি মানুষকে উজ্জীবিত করিয়াছিল। মাতৃভাষায় উচ্চারিত স্লোগান যে কতটা শক্তিশালী হইয়া উঠিতে পারে; যুগে যুগ দাবি আদায়ের আন্দোলনে উহা প্রমাণিত। যেই কারণে ঐতিহাসিক দিবসটি সাত দশক অতিক্রম করিলেও উহার চেতনা চিরঅমলিন।

আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রধান দুইটি দাবি ছিল– রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন। ১৯৫৪ সালেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় তৎকালীন পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা রাষ্ট্রভাষারূপে স্বীকৃতির মাধ্যমে প্রথম দাবি পূরণ হইলেও দ্বিতীয় দাবিটি এখনও প্রত্যাশিত মাত্রায় পূরণ হয় নাই। সর্বত্র বাংলা প্রচলনের প্রশ্নটা আমরা ফি বৎসরই করিয়া আসিতেছি। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিটা পর্যায়ে, প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাদের মাতৃভাষার প্রচলন কতটা হইয়াছে? যেই জাতির মানুষ ভাষার তরে জীবন দিয়াছে, সেই জাতির কোটি কোটি মানুষের পড়িতে ও লিখিতে না পারিবার বিষয় বেদনাদায়কই বটে। একই সঙ্গে মাতৃভাষা এখনও আমাদের সর্বত্র শিক্ষার বাহন হইয়া উঠিতে পারে নাই। উচ্চশিক্ষার পুস্তকসহ অনেক বিষয় আমরা এখনও বাংলায় করিতে পারি নাই। মাতৃভাষারূপে বাংলার দাপ্তরিক ব্যবহার বৃদ্ধি পাইয়াছে সত্য, কিন্তু আদালতের কর্মকাণ্ড এখনও ইংরাজিনির্ভর। 

তবে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঘোষণায় বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার ভাবমূর্তিই কেবল উজ্জ্বল হয়নি, একই সঙ্গে বিশ্বের সব মাতৃভাষাই বিশেষ মর্যাদা ও মনোযোগ লাভ করিয়াছে। জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষারূপে বাংলাও আবির্ভূত হউক। আমরা বিশ্বাস করি, সকলের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করিবার বিষয়ও একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা। অমর একুশে আমাদের জাতিসত্তা রক্ষার আন্দোলনরূপেও দেখিয়া আসিয়াছি। আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইহা প্রেরণার বাতিঘরস্বরূপ ক্রিয়াশীল। তজ্জন্য দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটেও পথ দেখাইতে পারে একুশের চেতনা।
আমরা জানি, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমাদের চ্যালেঞ্জ দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ। তজ্জন্য অবাধ-সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করিয়াছেন। এখন প্রয়োজন নির্বাচন ও অন্যান্য সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য। বিশেষত রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ঐকমত্য জরুরি।
আমরা প্রত্যাশা করিব, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দেশবাসী বায়ান্ন সালের ন্যায় দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হইবে। আমরা জানি, একুশে ফেব্রুয়ারি মানে বহুপাক্ষিকতা ও সকলের যথাযোগ্য মর্যাদার প্রশ্ন। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যেই পথ আমাদের সম্মুখে উন্মুক্ত, উহা সকলের জন্য অবারিত হউক। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরও ৬ জিম্মিকে ফেরত দিল হামাস
  • সুরক্ষিত বন্দরের পথে এখনও চার বাধা
  • ‘রক্তাক্ত কুয়েট’ হামলাকারিরা চিহ্নিত!
  • আমরা কারও দাবার ঘুঁটি হব না: জামায়াত আমির
  • গ্রামে ঋণ পেতে ব্যাংকের চেয়ে এনজিওতে ভরসা
  • বাংলাদেশ হউক বহুপক্ষীয়
  • অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে, পিটুনির শিকার দুই কিশোর এখনও প্রিজন সেলে
  • তিন মাসের সুমাইয়ার পৃথিবীজুড়ে শূন্যতা
  • দ্বন্দ্ব, বিবাদে এখনও উত্তপ্ত রাজনগর বিএনপি