গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়
Published: 22nd, February 2025 GMT
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এর দৃষ্টান্ত রয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে গুণগত মানের প্রতিষ্ঠান জরুরি, যেটির দুর্বলতা এখন বেশ প্রকট। এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সংস্কার দরকার। বাণিজ্য-সম্পর্কিত সংস্কার প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এ-সম্পর্কিত দুর্বলতায় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের চেয়ে পিছিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়া।
গতকাল শুক্রবার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনের আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সানেম অ্যানুয়াল ইকোনমিস্ট কনফারেন্স-২০২৫’ নামের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিনের আলোচনা হয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। আজ শনিবার থেকে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এ সম্মেলনের বাকি অধিবেশনগুলো হবে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার: ভঙ্গুরতা থেকে স্থায়িত্বের দিকে অগ্রসর হওয়া’।
প্রথম দিনের আলোচনায় সঞ্চালনা করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড.
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত হওয়া ছাড়া যে প্রকৃত উন্নয়ন হতে পারে না, সেটি আমরা অতীতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই দেখেছি। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য প্রতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে গুণগত মান ভালো থাকা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সংস্কার করে কেবল সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে চাপ এলে। উদাহরণ হিসেবে রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর ক্রেতাদের চাপে দেশের পোশাক কারখানার উন্নতির কথা উল্লেখ করেন তিনি।
বহুপক্ষীয় বাণিজ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এখন অনেকটা পক্ষাঘাতগ্রস্থের মতো হয়ে গেছে। তার পরও কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর চীন ডব্লিউটিওতেই গেছে। উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্যও গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্য নিয়ে সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি থাকার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তিনি।
‘দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ভূ-অর্থনৈতিক বিভাজনের প্রভাব’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে ড. ফ্রানজিসকা ওহনসোর্গে বলেন, ভূরাজনৈতিক বিভাজন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমায়। তবে এর প্রভাবের ক্ষেত্রে মিশ্র প্রবণতা দেখা যায়। উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির অনেক দেশ তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কসহ নানা ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে এ-সম্পর্কিত ঝুঁকি কমাতে পেরেছে। দক্ষিণ এশিয়ার রপ্তানি ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) উৎসগুলো ভূরাজনৈতিকভাবে বৈচিত্র্যময়। তবে দেশগুলোর মোট বাণিজ্য ও এফডিআই প্রবাহ খুবই কম। যেটি এ-সম্পর্কিত বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে বা এর পুনর্গঠনের সুবিধা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
ড. শান্তায়ানান দেবরাজন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত নিজেদের মধ্যে এবং বাকি বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো। এ জন্য প্রয়োজন বাণিজ্য উদারীকরণের। তাঁর মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমানে যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়, তার ১০ গুণ হওয়া উচিত। বিশ্ব বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো যখন বেশি শুল্ক আরোপ শুরু করে, তখন ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর সর্বোত্তম কৌশল হওয়া উচিত বাণিজ্য উন্মুক্ত করা। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের সুবিধা তারা কীভবে নিতে পারে, সেটিও ভাবা উচিত।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সংস্কার কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর মূল কারণ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। বাণিজ্য উদারীকরণ না করার বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়া এখন পাঠ্যপুস্তকের উদাহরণে পরিণত হয়েছে।
ড. দীপক মিশ্র বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাজনৈতিক সম্পর্কের অংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এটা খুব বেশি। অথচ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এমনটি দেখা যায় না। ফলে ওই দেশগুলো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে সংস্কারের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি করতে পারলে দক্ষিণ এশিয়া হবে বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় অঞ্চল।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমাদের রাজনীতিতে ভুল ছিল বলেই চব্বিশ ঘটেছে’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ছিলেন। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে কখনো আপস করেননি। দুঃসময়েও তিনি গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দৃঢ়তার সঙ্গে অবস্থান নিয়েছিলেন। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছিলেন। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় সমাজকল্যাণ ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ এভাবেই স্মৃতিচারণা করেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সবার ভেতর আলো জ্বেলেছেন—এমন মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীন হলো। কিন্তু এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। তাঁদের সুস্থ করতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের খালি হাতে খালি পায়ে গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছিল। দেশটাও গত ৫০ বছরে গড়েই উঠল না। গণতন্ত্র, সাম্য, সমাজতন্ত্র, ন্যায়বিচার—সবই আড়ালে থেকে গেল। আমাদের রাজনীতি নিশ্চয় ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সেই রাজনীতি ভুল ছিল বলেই চব্বিশ ঘটেছে।’
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সংস্কৃতি বিরাজমান, সেটির পরিবর্তন ঘটেনি। তরুণদের এই শিক্ষাটা মাথায় রাখতে হবে। পেছনের পচে যাওয়া প্রথাগুলো গ্রহণ করে রাজনৈতিক দল গড়তে চাইলে ভুল হবে। আদর্শের জায়গায় দাঁড়াতে হবে। এ জন্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পথ অনুসরণ করতে হবে।
চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে ওই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এই সভার মাধ্যমে গতকাল সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমাদের হৃদয়ে বিচিত্র রেখা এঁকে গেছেন। তিনি ছিলেন আমাদের বটবৃক্ষ। দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন। এই বিষয়টি তরুণ প্রজন্মের কাছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে অক্ষয় অমর করে রাখবে।’
স্মরণসভায় বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম