গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এর দৃষ্টান্ত রয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে গুণগত মানের প্রতিষ্ঠান জরুরি, যেটির দুর্বলতা এখন বেশ প্রকট। এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সংস্কার দরকার। বাণিজ্য-সম্পর্কিত সংস্কার প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এ-সম্পর্কিত দুর্বলতায় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের চেয়ে পিছিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়া।

গতকাল শুক্রবার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনের আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সানেম অ্যানুয়াল ইকোনমিস্ট কনফারেন্স-২০২৫’ নামের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিনের আলোচনা হয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। আজ শনিবার থেকে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এ সম্মেলনের বাকি অধিবেশনগুলো হবে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার: ভঙ্গুরতা থেকে স্থায়িত্বের দিকে অগ্রসর হওয়া’। 

প্রথম দিনের আলোচনায় সঞ্চালনা করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড.

সেলিম রায়হান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফ্রানজিসকা ওহনসোর্গে। আলোচক হিসেবে ছিলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. শান্তায়ানান দেবরাজন এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশন্স (আইসিআরআইইআর) পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. দীপক মিশ্র।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত হওয়া ছাড়া যে প্রকৃত উন্নয়ন হতে পারে না, সেটি আমরা অতীতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই দেখেছি। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য প্রতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে গুণগত মান ভালো থাকা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সংস্কার করে কেবল সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে চাপ এলে। উদাহরণ হিসেবে রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর ক্রেতাদের চাপে দেশের পোশাক কারখানার উন্নতির কথা উল্লেখ করেন তিনি। 

বহুপক্ষীয় বাণিজ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এখন অনেকটা পক্ষাঘাতগ্রস্থের মতো হয়ে গেছে। তার পরও কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর চীন ডব্লিউটিওতেই গেছে। উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্যও গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্য নিয়ে সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি থাকার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তিনি। 
‘দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ভূ-অর্থনৈতিক বিভাজনের প্রভাব’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে ড. ফ্রানজিসকা ওহনসোর্গে বলেন, ভূরাজনৈতিক বিভাজন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমায়। তবে এর প্রভাবের ক্ষেত্রে মিশ্র প্রবণতা দেখা যায়। উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির অনেক দেশ তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কসহ নানা ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে এ-সম্পর্কিত ঝুঁকি কমাতে পেরেছে। দক্ষিণ এশিয়ার রপ্তানি ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) উৎসগুলো ভূরাজনৈতিকভাবে বৈচিত্র্যময়। তবে দেশগুলোর মোট বাণিজ্য ও এফডিআই প্রবাহ খুবই কম। যেটি এ-সম্পর্কিত বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে বা এর পুনর্গঠনের সুবিধা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। 

ড. শান্তায়ানান দেবরাজন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত নিজেদের মধ্যে এবং বাকি বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো। এ জন্য প্রয়োজন বাণিজ্য উদারীকরণের। তাঁর মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমানে যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়, তার ১০ গুণ হওয়া উচিত। বিশ্ব বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো যখন বেশি শুল্ক আরোপ শুরু করে, তখন ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর সর্বোত্তম কৌশল হওয়া উচিত বাণিজ্য উন্মুক্ত করা। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের সুবিধা তারা কীভবে নিতে পারে, সেটিও ভাবা উচিত। 
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সংস্কার কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর মূল কারণ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। বাণিজ্য উদারীকরণ না করার বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়া এখন পাঠ্যপুস্তকের উদাহরণে পরিণত হয়েছে।   
ড. দীপক মিশ্র বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাজনৈতিক সম্পর্কের অংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এটা খুব বেশি। অথচ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এমনটি দেখা যায় না। ফলে ওই দেশগুলো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে সংস্কারের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি করতে পারলে দক্ষিণ এশিয়া হবে বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় অঞ্চল।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণতন ত র র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

‘আধিপত্যবাদী শক্তি ষড়যন্ত্র করে আসছে মহল বিশেষের তাবেদারির জন্য’

দেশ স্বাধীন হলেও নতুন করে নানাভাবে আধিপত্যবাদী শক্তি আমাদের ভাষা, সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন চালানোর ষড়যন্ত্র করে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

তারেক রহমান বলেন, “দেশ স্বাধীন হলেও নতুন করে নানাভাবে আধিপত্যবাদী শক্তি আমাদের ভাষা, সংস্কৃতির ওপর  আগ্রাসন চালানোর ষড়যন্ত্র করে আসছে মহল বিশেষের তাবেদারির জন্য, যাতে আমরা বিশ্ব সমাজে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে না পারি। কিন্তু এদেশের মানুষ সবসময় স্বৈরাচার এবং দেশি-বিদেশি কুচক্রীদের অদম্য সাহসে প্রতিহত করে এসেছে।”

তিনি বলেন, “দেশের মানুষকে যাতে আটকিয়ে রাখতে না পারে এজন্য ন্যায়বিচার, মানবিক সাম্য তথা প্রকৃত গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও চিরস্থায়ী করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গণতন্ত্রকে যাতে আর কেউ কঠিন শৃঙ্খলে বন্দি করতে না পারে সেজন্য স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শক্তিকে সার্বক্ষণিক সজাগ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে একুশের অম্লান চেতনা আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করবে।” 

ভাষা শহীদদের স্মরণ করে তিনি লেখেন, “একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের অবিস্মরণীয় একটি অধ্যায়। আমি এই দিনে সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। রক্তরাঙ্গা ২১ ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষা’র মর্যাদা রক্ষার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এ দিনেই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাদের এই মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে রচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রথম সোপান।” 

তারেক রহমান বলেন, “২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এখন বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। বায়ান্ন সালের ২১’শের রক্তাক্ত পথ ধরেই এদেশের সকল গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীকারের সংগ্রাম তীব্র হয়ে অর্জিত হয়েছে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা। জনগণ শৃঙ্খলমুক্ত হয়, ফিরে পায় একটি স্বাধীন ভূখণ্ড।” 
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয়তাবাদ ও ঐক্যের অনুভূতি জাগ্রত করে। আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করায় গোটা বিশ্বে মাতৃভাষা’র মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মহান ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আমি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের আয়োজিত নানাবিধ কর্মসূচির সাফল্য কামনা করছি।”

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউরোপে বিভক্তি তৈরির মার্কিন চেষ্টা
  • যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র রক্ষায় রাজপথে থাকতে হবে
  • গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার
  • ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল
  • মানুষ অবিলম্বে ভোট দেওয়ার জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখতে চায়
  • যে কারণে আমেরিকানরা গণতন্ত্র প্রত্যাখ্যান করলেন
  • অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে কি না, তা মানুষের ‘রাডারে’ রয়েছে: মঈন খান
  • ‘আধিপত্যবাদী শক্তি ষড়যন্ত্র করে আসছে মহল বিশেষের তাবেদারির জন্য’
  • নীতি নির্ধারণে নাগরিকের অংশগ্রহণ