বাবার লাশ পাওয়া গিয়েছিল বিলের পানিতে। চার মাস পর শুক্রবার দুপুরে ছেলেকে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনা ঘটেছে ঢাকার ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের কুশিয়ারায়।

নিহত বাবুল হোসেন (৫২) কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য এবং মাখুলিয়া গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে। জমি নিয়ে বিরোধে এই খুন হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম।

এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনের কাছ থেকে জানা গেছে, বাবুল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে বাড়ি থেকে অর্ধকিলোমিটার দূরে কুশিয়ারায় তার জমিতে সরিষা মাড়াই করছিলেন। এ সময় একই এলাকার কয়েকজন তাকে ঘিরে এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। তার একটি চোখ উপড়ে ফেলা হয় ও পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। এ সময় স্ত্রীর চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয়রা জানান, আকশীরনগর হাউজিংয়ের জমি নিয়ে এলাকায় বিরোধ আছে। তিনি এর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান পাল্টিয়েছেন। নিহত বাবুল বিএনপি করতেন বলে শোনা গেলেও তা নাকচ করে দিয়েছেন দলটির ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি শাহজাহান মিঞা।

নিহতের আত্মীয় আসিফ হোসেন জানান, খুনিদের পা ধরে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন স্ত্রী। কিন্তু খুনিদের মন গলেনি।

নিহতের চাচাতো ভাই সাইদুর রহমান জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে একই এলাকার শওকত আলী, মনির, রাজিব, আফসান, আনোয়ার হোসেন, আরশেদ, শরিফসহ কয়েকজন মিলে বাবুল হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে। কী নিয়ে শত্রুতা, তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেনি। চার মাস আগে একই এলাকার বিলের পানিতে ভাসমান গলিত অবস্থায় নিহত বাবুল হোসেনের বাবা ইদ্রিস আলীর লাশ পাওয়া গিয়েছিল। এর আগে তিনি ১১ দিন নিখোঁজ ছিলেন।

স্থানীয় নাসির উদ্দিন জানান, চার-পাঁচদিন আগে হামলাকারীরা বাবুলের সন্তান ইভা ও ইয়ামিনকে মারধর করতে চেয়েছিল। কী কারণে মারতে চেয়েছিল, তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি।

ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, আরশেদের সঙ্গে জমি নিয়ে বাবুলের বিরোধ ছিল। আরশেদ ও তার ছেলে শরীফ ও সৈকত মিলে তাকে হত্যা করেছে। অভিযুক্তদের ধরার জন্য পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

এস আলম দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

এক হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে আলাদা মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান মামলা দুটি করেন। পরে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দুটি করা হয়েছে।’

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ২৪ আগস্ট ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের অবৈধ সম্পদের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

মামলায় সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে ভোগদখল করে আসছেন তিনি। এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান একজন পাবলিক সার্ভেন্ট। আয়কর নথি অনুযায়ী করবর্ষ ২০১০-১২ এর রিটার্ন দাখিলের আগ পর্যন্ত তাঁর আগের সঞ্চয় ছিল ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার ৭ টাকা।

২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত অতীত সঞ্চয়সহ সাইফুল ইসলামের গ্রহণযোগ্য আয় ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৫ টাকা। এ সময় তাঁর মোট ব্যয় ৯৭ কোটি ৩২ লাখ ৭ হাজার ৯৪০ টাকা।

অনুসন্ধানে দুদক দেখতে পেয়েছে, সাইফুল আলম ৯৫৫ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ব্যয়সহ তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ১ হাজার ৩৯৯ টাকা। গ্রহণযোগ্য আয় বাদ দিলে তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৪ টাকা।

অন্যদিকে, সাইফুল আলমের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ, তিনি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ফারজানার স্থাবর-অস্থাবর, ব্যয়সহ মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৫৯ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৩ টাকা। তাঁর অতীত সঞ্চয়সহ গ্রহণযোগ্য আয় ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। বাকি ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৪৫৩ টাকার সম্পদের বৈধ কোনো উৎস নেই, যা তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর নামে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্পদ রয়েছে। সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আয়কর নথিতে তা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এ সম্পদকে পাচার বলছে দুদক। বিদেশে সম্পদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার ওপর নির্ভর করে মামলার তদন্তে তা যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ