বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় পাঁচজন, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাসচাপায় দু’জন এবং পটুয়াখালীর দশমিনায় ট্রলি-অটোরিকশা সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন। কুমিল্লার লালমাই, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, মানিকগঞ্জের ঘিওর, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও মাগুরার মহম্মদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে সাতজনের। রাজধানীতে পৃথক দুর্ঘটনায় হাতিরঝিলে এক স্কুলছাত্র, গুলিস্তান এলাকায় বঙ্গভবনের সামনে এক অটোচালক ও বেইলি রোডে অজ্ঞাত একজন মারা গেছেন।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানের পাঁচ যাত্রী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে নওগাঁ-বগুড়া আঞ্চলিক সড়কের মেইল বাসস্ট্যান্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, শাখা সড়ক থেকে মূল সড়কে ওঠার সময় ভ্যানের এক্সেল ভেঙে যায়। এ সময় নওগাঁ থেকে বগুড়াগামী গরুবাহী একটি দ্রুতগামী ট্রাক ভ্যানকে ধাক্কা দিলে হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– দুপচাঁচিয়া উপজেলার বানিয়াদিঘী গ্রামের মোজাহার (৬০) ও সাফিকুল ইসলাম (৪৫), আদমদীঘি উপজেলার বড় আকিড়া এলাকার শহিদুল ইসলাম (৬০), দুপচাঁচিয়ার মাঝিপাড়া গ্রামের মেজবাহ (৩২) ও ডিপুইল গ্রামের অটোরিকশাচালক ময়েন সরদার (৫৫)।

রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় শুক্রবার বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক স্কুলছাত্র মারা গেছে। তার নাম রাইয়ান জাবির (১৬)। রাইয়ান বনশ্রী মডেল হাই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বিকেলে গুলিস্তান এলাকায় বঙ্গভবনের সামনের সড়কে বাসের ধাক্কায় এক ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম রাজীব হাওলাদার (৩৫)। এ ছাড়া গতকাল রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গাড়ির ধাক্কায় অজ্ঞাত এক যুবক (২৫) মারা গেছেন।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রাস্তা পারাপারের সময় ট্রাকের ধাক্কায় মনোয়ারা বেগম (৬০) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন।

এদিকে সন্ধ্যায় কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে লালমাই উপজেলার সৈয়দপুর এলাকায় দলীয় সভা থেকে ফেরার পথে বাসের চাপায় জসীম উদ্দিন (৫০) নামে এক জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছেন।

পটুয়াখালীর দশমিনার পশ্চিম লক্ষ্মীপুরে শুক্রবার দুপুরে ট্রলি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে এক গৃহবধূসহ দু’জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন গৃহবধূ তানজিলা বেগম (৩০) ও ট্রলিচালক রাকিব হোসেন (৩০)। তানজিলা উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়াডের্র মধ্য আরজবেগী গ্রামের জিয়ার হোসেন হাওলাদারের স্ত্রী। ট্রলিচালক রাকিব হোসেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের মন্নান খানের ছেলে।

ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চালা গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে বাসচাপায় অটোভ্যানের চালক রনি ইসলাম (৩৫) ও যাত্রী ফারুক হোসেন (৩০) নিহত হয়েছেন। ভ্যানটি সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় থেকে উল্লাপাড়ায় আসছিল। বাসটি পাবনা থেকে যাচ্ছিল কক্সবাজার। শুক্রবার সকালে কোচের চালককে আটক করে পুলিশ।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বাইখির বনচাকী নামক স্থানে শুক্রবার ইটভর্তি ট্রলি উল্টে চালক নিহত হয়েছেন। নিহত হামীম মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার চরজাংলিয়া গ্রামের মো.

সাবুর ছেলে। চালক গাড়ির নিচে চাপা পড়েন। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ভটভটিতে হাটে গরু বিক্রি করতে যাওয়ার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গরুর মালিক হাবিবুর রহমান (৩৮) নিহত, চালকসহ দু’জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় ছয়টি গরু গুরুতর জখম হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হাবিবুরের বাড়ি আড়গাড়াহাট বিনোদনগর গ্রামে।

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নোহাটা ইউনিয়নের চাকুলিয়া গ্রামে শুক্রবার সকালে নিজ বাড়ির পাশে ইঞ্জিনচালিত নছিমনের ধাক্কায় বাইসাইকেলচালক তোবারেক মোল্লা (৪৮) নিহত হয়েছেন।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে শুক্রবার সকালে ট্রাকচাপায় সোহাগ (২৫) নামে এক পথচারী নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। সোহাগ বানিয়াজুরী গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে। সকালে আরিচাগামী ট্রাক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ডিমভর্তি ভ্যানগাড়িকে ধাক্কা দিলে কয়েকজন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক সোহাগকে মৃত ঘোষণা করেন।

ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে গাড়িচাপায় রফিকুল ইসলাম (২৮) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলার বটতলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। রফিকুল শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কুরুয়া গ্রামের জমর উদ্দিনের ছেলে।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকাল প্রতিবেদক এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন দ র ঘটন উপজ ল র ব দ র ঘটন এল ক য় ইসল ম বগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

পলাতক আওয়ামী দোসরদের তালিকা প্রকাশ ছাত্রজনতার

জুলাই গণহত্যার পর পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও দোসর রাজনৈতিক দলগুলোর মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপিদের ফ্যাসিবাদী ঘোষণা করে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ফ্যাসিবাদ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে গণঅবস্থানকারী ছাত্রজনতা এ তালিকা প্রকাশ করেন। গণঅবস্থানের দশম দিন উপলক্ষে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা ঘোষণা করেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফজলুর রহমান।

তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদ বিলোপে আমরা এ গণঅবস্থান থেকে পাঁচ দফা দাবি পেশ করেছি। এর তৃতীয় দফার আলোকে আমরা আজ ফ্যাসিবাদী মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপিদের তালিকা প্রকাশ করছি। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী রেজিমের সব মন্ত্রীসভার সদস্য ও উপদেষ্টাদের ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী ঘোষণা করছি। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার ও ফ্যাসিস্ট হিসেবে ৭-১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার দাবি জানাই।”

তিনি আরো বলেন, “যারা উগ্র ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী ছিলেন, তাদের ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিতে হবে। যারা বিতর্কিত নয় এবং তুলনামুলকভাবে কম খারাপ, তারা স্রেফ হাসিনার মন্ত্রীসভার সদস্য হওয়ায় কারণে সাত বছরের কারাদণ্ড ভোগ করবেন। এরা কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। জনপরিসরে, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে বক্তৃতা করতে পারবেন না।”

ফজলুর রহমান বলেন, “তালিকায় যেসব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও উপদেষ্টার নাম রয়েছে, আমরা তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানাই।”

ফ্যাসিবাদীদের তালিকা প্রকাশের সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সাংগঠনিক প্রধান মো. শফিউর রহমান, সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান ও আব্দুস সালাম, সদস্য মাহমুদুল হাসান ফয়সাল, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম, সদস্য সচিব মো. ফরহাদ আহমদ আলী প্রমুখ। 

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই নেতা মো. ওমর ফারুক ও আবু সাঈদের অনশনের মধ্য দিয়ে রাজু ভাস্কর্যের চলমান কর্মসূচি শুরু হয়। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনশনে যোগ দেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি উত্তরার শহীদ রানা তালুকদারের পরিবার এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালানোর আহ্বান জানান। তার অনুরোধে অনশন ভেঙে লাগাতার গণঅবস্থান শুরু হয়।

পরে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ। দাবিগুলো হলো- ⁠গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, তাদের মিত্র ১৪ দল এবং এসব দলের সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে; ⁠সব ফ্যাসিবাদী দল, তাদের কার্যালয় ও সব সম্পদ রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিগ্রহণ করে তা ফ্যাসিবাদী আমলে নির্যাতিত অসহায় মজলুমদের পুনর্বাসনে ব্যবহার করতে হবে।

অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-⁠ ⁠২০০৯-২০২৫ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট সরকারগুলোর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সব মন্ত্রীপরিষদ সদস্য, এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যকে ডেজিগনেটেড ফ্যাসিস্ট ঘোষণা করে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে;⁠ ⁠ফ্যাসিবাদ ধারণ করে গড়ে ওঠা নব্য ফ্যাসিবাদী বা একই চরিত্রের যেকোনে দল ও সংগঠনকেও নিষিদ্ধ করতে হবে;  ⁠ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিধান সংবিধানে সংযুক্ত করতে হবে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ