চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও সুরক্ষিত ও গতিশীল করতে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। কেনা হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। সংস্কার করা হচ্ছে জেটিও। কিন্তু পাঁচটি বিষয় এতদিন বড় বাধা হয়েছিল এই উদ্যোগের পথে। এর একটি বাধা সম্প্রতি দূর করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমদানি ও রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের জন্য বন্দরের গেট সিস্টেমকে পুরোপুরি অনলাইন করেছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে বন্দরে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় পণ্য ও কনটেইনারবাহী যানবাহনগুলোকে এখন আর বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না। এতে সময় সাশ্রয় হবে। বাড়বে বন্দরের গতিও। 
গুরুত্বপূর্ণ আরও চারটি বাধা এখনও রয়ে গেছে গতি বাড়ানোর এই পথে। বন্দরে আসা পণ্য ইয়ার্ডের বাইরে নিয়ে খালাসের উদ্যোগ এখনও বাস্তবায়ন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অথচ পৃথিবীর উন্নত কোনো বন্দরের ইয়ার্ডের ভেতরে এভাবে  পণ্য খালাসের সুযোগ নেই। প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। আইএসপিএস কোড অনুযায়ী, বন্দর পরিচালনা করতে হলে বাইরের অবাঞ্ছিত কোনো মানুষ প্রবেশ করতে পারবে না বন্দরে। পণ্য খালাসের সুযোগ থাকায় এখন প্রতিদিন সুরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করছে সাত থেকে আট হাজার গাড়ির ড্রাইভার কিংবা হেলপার। এতে ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য খালাস হয়ে যাচ্ছে। আসছে মাদক ও অস্ত্রের মতো চালানও। পর্যাপ্ত স্ক্যানার ও দক্ষ জনবল না থাকায় পরিস্থিতি সামালও দিতে পারছে না বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বেসরকারি আইসিডিগুলোও তাদের সক্ষমতা বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না কার্যকর ভূমিকা। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বন্দরকে আরও সুরক্ষিত ও গতিশীল করতে হলে দ্রুত দূর করতে হবে এসব বাধা। 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘পণ্য আমদানি-রপ্তানি কাজে নিয়োজিত সব ভেহিক্যাল, ড্রাইভার, হেল্পারের ডেটাবেজ চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে। অনলাইন গেটপাসের মাধ্যমে বন্দর স্টেকহোল্ডারদের ভেহিক্যাল ট্রেকিং, মনিটরিং ব্যবস্থা আরও সহজ হবে, যানজট কমবে। বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার হবে এবং অপারেশনাল কাজে গতিশীলতা বাড়বে। এতে কম সময়ে বেশি পণ্য হ্যান্ডল করা যাবে, সামগ্রিক ব্যয় কমবে।’ নতুন নিয়মে বন্দরের টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেমের (টিওএস) মাধ্যমে ওয়েবসাইটে গিয়ে বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে গেটপাস সংগ্রহ করা যাবে বলে জানান তিনি।
অন্যান্য বাধা প্রসঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দরকে সুরক্ষিত ও গতিশীল করতে হলে ইতিবাচক ভূমিকা লাগবে বন্দর ব্যবহারকারীদের। তারা স্বাগত জানালে অনেক সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে পারি আমরা। এফসিএল পণ্য বাইরে খালাস করতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এতে আপিত্ত তুলেছে বিজিএমইএ। আইসিডির সক্ষমতা বাড়াতে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি এনবিআরকে। তাদের ছাড়া এখানে কোনো কিছু করার সুযোগও নেই আমাদের। এসব কারণে কিছু সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। তবে কার্যক্রম চলমান আছে।’ 

পণ্য বাইরে খালাস সম্পর্কিত বাধা 
বন্দরকে গতিশীল করতে আমদানি করা সব পণ্য অফডকে (বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) খালাসের সুপারিশ করে একাধিকবার এনবিআরে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেসব চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বের অন্য উন্নত বন্দরে সব এফসিএল কনটেইনারের পণ্য আমদানিকারকের চত্বরে বা অফডকে খালাস করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা কনটেইনারের ২০-২২ শতাংশ অফডকে খালাস হয়। বাকি ৭০-৭৫ শতাংশ বন্দরের ভেতরে খুলে খালাস করা হয়। ফলে প্রতিদিন বন্দরের অভ্যন্তরে কয়েক হাজার ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান প্রবেশ করে। তাতে কনটেইনার জট, বন্দরের উৎপাদনশীলতা হ্রাস, রপ্তানি কার্যক্রমে ধীরগতিসহ সার্বিক নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হচ্ছে। এনবিআর থেকে ৩৮টি আইটেমের পণ্য অফডকে খালাসের অনুমতি রয়েছে। পর্যায়ক্রমে আইটেমের সংখ্যা বাড়িয়ে সম্পূর্ণ ডেলিভারি কার্যক্রম আমদানিকারকের চত্বর বা অফডকে স্থানান্তর করা গেলে সমস্যার সমাধান হবে। বন্দরের গতিশীলতাও বাড়বে। বড় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর আপত্তির কারণে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি এনবিআর। বন্দর কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও, বাস্তবায়ন করতে পারেনি তাদের ইচ্ছা। বেসরকারি আইসিডিগুলোর দক্ষতা নিয়ে এনবিআরের সন্দেহ থাকায় তারাও সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে না এতে। আবার আইসিডিগুলোর সক্ষমতা বাড়াতেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না এনবিআর। এতে করে বিষয়টি বছরের পর বছর ঝুলে থাকছে। অন্যদিকে বন্দরের গতিশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।  

আইসিডির সক্ষমতা না বাড়ালে বিঘ্নিত হবে নিরাপত্তা 
বর্তমানে ১৯টি আইসিডির মধ্যে ১৮টি সচল আছে। এসব আইসিডিতে ৩৮টি আইটেমের পণ্য খালাস হয়। তার মধ্যে আছে কাঁচা তুলা, ওয়েস্ট পেপার, ছোলা, সাদা মটর, খেজুর, পশুখাদ্য, পশুখাদ্যের কাঁচামাল, সোডা অ্যাশ, পেঁয়াজও। নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চায় বেসরকারি ১৯ আইসিডি কর্তৃপক্ষও। নতুন আরও আমদানিপণ্য খালাসে সক্ষমতা আছে বলেও দাবি করছে তারা। নতুন পণ্য পেলে তাদের লোকসানও কমবে বলে মনে করছেন এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা। এখন ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য ও শতভাগ রপ্তানি পণ্য খালাস হয় আইসিডিতে। 
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আইসিডি মালিকরা ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী হলেও দক্ষতা বাড়াতে মনোযোগী নন। পর্যাপ্ত আধুনিক যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল নেই বেশির ভাগ আইসিডিতে। পণ্য খালাসের ভাড়াও সেখানে বেশি। তাই আইসিডিতে পণ্য খালাস না করে বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে আগ্রহী তারা। 
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বেশির ভাগ আইসিডিতে দক্ষ জনবল নেই। নেই অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিও। এখন রপ্তানি পণ্যের শতভাগ সেখানে খালাস হচ্ছে। এর সঙ্গে শতভাগ আমদানি পণ্য যুক্ত হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না তারা। তাই তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বন্দর ও এনবিআরের।’ তিনি জানান, বেসরকারি আইসিডিতে খরচ বেশি। এ জন্য সেখান থেকে পণ্য খালাসে অনীহা প্রকাশ করেছেন তারা। এ কারণে ইয়ার্ডে পণ্য খালাস করায় গতি কমে যাচ্ছে বন্দরের। বিঘ্নিত হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। পণ্য আনতে গিয়ে প্রতিদিন বন্দরে প্রবেশ করছে সাত থেকে আট হাজার বাইরের মানুষ। পণ্য ডেলিভারির সময় এখন ইয়ার্ডে জট তৈরি হয়। এটিকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে অপব্যবহার করছে অপরাধীরা। তারা মিথ্যা ঘোষণায় একের পর এক চালান আনছে। আবার অস্ত্র ও মাদক আসার মতো ঘটনাও ঘটছে চট্টগ্রাম বন্দরে। 

১৭ মাসেও বসেনি চার স্ক্যানার
চীন থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চারটি কনটেইনার স্ক্যানার আমদানি করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বাড়ানো ও মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য খালাস রোধ করতে এসব স্ক্যানার আনা হয়। স্ক্যানারগুলো অপারেশনের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছিল ১০ বছর। এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ১৭ মাস। অথচ এখনও একটিও স্ক্যানার বসেনি চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে একটি স্ক্যানার বসানোর প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও বাকি সব স্ক্যানার কবে বসবে, তা অনিশ্চিত। এসব স্ক্যানার দ্রুত বসানোর উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির ঘটনা বেড়েছে। এ জন্য ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি নতুন স্ক্যানার বসাতে চীনের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি হয়। তারা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে চারটি স্ক্যানার আনে। চুক্তি অনুযায়ী স্ক্যানারগুলো স্থাপনের পরবর্তী পাঁচ বছর সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করার কথা রয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠানটির। 

চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে ১২টি গেটে ৯টি স্ক্যানার রয়েছে। এর মধ্যে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ১ নম্বর গেট, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ৩ নম্বর গেট, সিপিএআর গেট ও ৪ নম্বর গেটে রয়েছে এফএস ৬০০০ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ২, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে আছে একটি করে এফএস ৩০০০ মডেলের ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। এ ছাড়া সিসিটি-২ ও জিসিবি-২ নম্বর গেটে রয়েছে একটি করে মোবাইল স্ক্যানার। 
বন্দরে আছে বিস্ফোরণ ঝুঁকিও 
রাসায়নিক পদার্থের বিস্ফোরণের ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ২১৮টি কনটেইনারে সালফিউরিক এসিড এবং সোডিয়াম ও পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইডের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। ১৫-২০ বছরের পুরোনো এসব রাসায়নিক কনটেইনার ভেঙে বাইরে গড়িয়ে পড়ছে। ফলে বিস্ফোরণের আশঙ্কা করছে খোদ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গত বছর চারটি কনটেইনারে থাকা ১৪ বছরের পুরোনো তরল রাসায়নিক ইয়ার্ড থেকে খালাস করা হলেও এখনও চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং ওভারফ্লো ইয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে ২১৮টি কনটেইনার রয়ে গেছে। এসব কনটেইনার অনেকগুলো ভাঙা, কোনোটিতে পাউডার জাতীয় রাসায়নিক, আবার কোনোটিতে তরল রাসায়নিক রয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ ল স কর খ ল স হয় ব যবস য় আইস ড ত ব সরক র ব যবস থ আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ হউক বহুপক্ষীয়

বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা নহে; জাতিসত্তা রক্ষার আন্দোলনেও অমর দিবসরূপে দেদীপ্যমান। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বুকের তাজা রক্ত ঢালিয়া দিয়া ভাষাশহীদগণ কেবল দেশপ্রেমের অনন্য উদাহরণই সৃষ্টি করেন নাই; দিবসটি বাংলা ছাপাইয়া সকল ভাষার মর্যাদার স্মারক হইয়া উঠিয়াছে। একুশের চেতনা দেশ-কাল-পাত্রভেদে অধিকার আদায়ে প্রেরণার উৎসরূপে ক্রিয়াশীল। আমরা দেখিয়াছি, অধিকার আদায়ে বাঙালি ভাষা আন্দোলনের যেই সংগ্রাম রচনা করিয়াছিল, সেই পথপরিক্রমায়ই সূচিত হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। অকুতোভয় বাঙালি জনগোষ্ঠী এই ভূখণ্ডের অপরাপর জাতিগোষ্ঠীকে লইয়া দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জন করে স্বাধীনতা। স্বাধীনতার পরও যুগ যুগ ধরিয়া আন্দোলনের প্রেরণা হইয়া রহিয়াছে ভাষা আন্দোলন। এমনকি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানও উহার বাহিরে নহে। বায়ান্নতে ছাত্র-জনতা মুখের ভাষা রক্ষায় সোচ্চার হইয়া আন্দোলনে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও তাহারা প্রেরণা হইয়া উঠিয়াছিল। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দেয়ালে দেয়ালে মায়ের ভাষায় লিখিত গ্রাফিতি মানুষকে উজ্জীবিত করিয়াছিল। মাতৃভাষায় উচ্চারিত স্লোগান যে কতটা শক্তিশালী হইয়া উঠিতে পারে; যুগে যুগ দাবি আদায়ের আন্দোলনে উহা প্রমাণিত। যেই কারণে ঐতিহাসিক দিবসটি সাত দশক অতিক্রম করিলেও উহার চেতনা চিরঅমলিন।

আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রধান দুইটি দাবি ছিল– রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন। ১৯৫৪ সালেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় তৎকালীন পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা রাষ্ট্রভাষারূপে স্বীকৃতির মাধ্যমে প্রথম দাবি পূরণ হইলেও দ্বিতীয় দাবিটি এখনও প্রত্যাশিত মাত্রায় পূরণ হয় নাই। সর্বত্র বাংলা প্রচলনের প্রশ্নটা আমরা ফি বৎসরই করিয়া আসিতেছি। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিটা পর্যায়ে, প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাদের মাতৃভাষার প্রচলন কতটা হইয়াছে? যেই জাতির মানুষ ভাষার তরে জীবন দিয়াছে, সেই জাতির কোটি কোটি মানুষের পড়িতে ও লিখিতে না পারিবার বিষয় বেদনাদায়কই বটে। একই সঙ্গে মাতৃভাষা এখনও আমাদের সর্বত্র শিক্ষার বাহন হইয়া উঠিতে পারে নাই। উচ্চশিক্ষার পুস্তকসহ অনেক বিষয় আমরা এখনও বাংলায় করিতে পারি নাই। মাতৃভাষারূপে বাংলার দাপ্তরিক ব্যবহার বৃদ্ধি পাইয়াছে সত্য, কিন্তু আদালতের কর্মকাণ্ড এখনও ইংরাজিনির্ভর। 

তবে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঘোষণায় বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার ভাবমূর্তিই কেবল উজ্জ্বল হয়নি, একই সঙ্গে বিশ্বের সব মাতৃভাষাই বিশেষ মর্যাদা ও মনোযোগ লাভ করিয়াছে। জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষারূপে বাংলাও আবির্ভূত হউক। আমরা বিশ্বাস করি, সকলের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করিবার বিষয়ও একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা। অমর একুশে আমাদের জাতিসত্তা রক্ষার আন্দোলনরূপেও দেখিয়া আসিয়াছি। আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইহা প্রেরণার বাতিঘরস্বরূপ ক্রিয়াশীল। তজ্জন্য দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটেও পথ দেখাইতে পারে একুশের চেতনা।
আমরা জানি, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমাদের চ্যালেঞ্জ দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ। তজ্জন্য অবাধ-সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করিয়াছেন। এখন প্রয়োজন নির্বাচন ও অন্যান্য সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য। বিশেষত রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ঐকমত্য জরুরি।
আমরা প্রত্যাশা করিব, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দেশবাসী বায়ান্ন সালের ন্যায় দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হইবে। আমরা জানি, একুশে ফেব্রুয়ারি মানে বহুপাক্ষিকতা ও সকলের যথাযোগ্য মর্যাদার প্রশ্ন। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যেই পথ আমাদের সম্মুখে উন্মুক্ত, উহা সকলের জন্য অবারিত হউক। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গবেষণা ও অনুবাদে অনেকটাই পিছিয়ে
  • ‘রক্তাক্ত কুয়েট’ হামলাকারিরা চিহ্নিত!
  • আমরা কারও দাবার ঘুঁটি হব না: জামায়াত আমির
  • গ্রামে ঋণ পেতে ব্যাংকের চেয়ে এনজিওতে ভরসা
  • বাংলাদেশ হউক বহুপক্ষীয়
  • অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে, পিটুনির শিকার দুই কিশোর এখনও প্রিজন সেলে
  • তিন মাসের সুমাইয়ার পৃথিবীজুড়ে শূন্যতা
  • দ্বন্দ্ব, বিবাদে এখনও উত্তপ্ত রাজনগর বিএনপি