অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথ মসৃণ নয়। তাতে আসে বিভিন্ন ধরনের সংকট ও ধাক্কা। উচ্চ মূল্যস্ফীতি পথের কাঁটা হয়ে উঠেছে আবার। অনেক দেশ মধ্যম আয়ের স্তরে আটকে থাকছে দীর্ঘদিন। বিশ্বায়ন নিয়ে অসন্তোষ দীর্ঘকালের। এখন উন্নত দেশের দক্ষিণপন্থিরাও অসন্তুষ্ট– যদিও ভিন্ন কারণে। এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলোকে নতুনভাবে দেখা এবং পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এ কাজ করা হয়েছে ড.

রিজওয়ানুল ইসলামের সদ্য প্রকাশিত বই উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন-এ (প্রকাশক: বাতিঘর)। 

আলোচ্য বইটির শুরুতেই বলা হয়েছে, উন্নয়নের নির্দেশক হিসেবে শুধু জিডিপির প্রবৃদ্ধি অথবা মাথাপিছু আয়ের দিকে তাকালে চলবে না। কারণ অনেক দেশেই প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় থেকে যাচ্ছে অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশে আয়ের দিকে থেকে নিচের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের জীবনমান নড়বড়ে; তারা খাদের তলায় পড়ে যায় সামান্য ধাক্কায়। যেমনটি হয়েছিল কভিড মহামারির সময়। এখন আবার হচ্ছে মূল্যস্ফীতির ধাক্কায়।
ড. ইসলাম মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মূল্যস্ফীতি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সুতরাং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধেও বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করতে হয়। বিশ্বব্যাপী সুদহার বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই যে, শুধু এর মাধ্যমেই যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায়। তিনি মনে করেন, বাস্তব অবস্থা আমলে নিয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সেখানে চাহিদা কমানোর পাশাপাশি সরবরাহ বাড়ানোর এবং ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। তা ছাড়া সুদের হার বাড়ানোর ফলে বিনিয়োগ, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে এবং অর্থনীতি ক্র্যাশ ল্যান্ডিংয়ের দিকে যাচ্ছে কিনা, তা-ও দেখতে হবে। 

বইটিতে মধ্যম আয়ের স্তর থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এ চ্যালেঞ্জ দুই ধাপের– নিম্নমধ্যম থেকে উচ্চমধ্যমে এবং সেখান থেকে উচ্চ আয়ের পর্যায়ে ওঠা। লাগাতারভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রয়োজন শুধু বিনিয়োগের পরিমাণ নয়; প্রযুক্তিগত দক্ষতা, শ্রমের দক্ষতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর নৈপুণ্য। সব শর্ত পূরণ করে বার্ষিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারলে বাংলাদেশ আগামী দশ বছরে উচ্চমধ্যম আয়ের পর্যায়ে উঠতে পারবে। এবং উচ্চ আয়ের স্তরে পৌঁছাতে লাগবে আরও প্রায় ২২ বছর– অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় ৩২ বছর! 
বইটিতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে, যেখানে কর্মসংস্থানের ওপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির প্রভাব আলোচনা করা হয়েছে। তার মূল উপসংহার এই যে সার্বিকভাবে কর্মসংস্থান না কমলেও কাজের ধরন বদলাবে। সে অনুযায়ী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ না দেওয়া হলে অনেকেই পিছিয়ে পড়বেন। 
বিশ্বায়ন সম্পর্কে বইটিতে দুটি অধ্যায় রয়েছে। একটিতে আলোচনা করা হয়েছে শ্রম ও শ্রমিকের ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব, আর অন্যটি বিশ্বায়নকে নতুনভাবে সাজানোর বিষয়। বিশ্বায়ন নিয়ে অসন্তোষের মূল কারণ সুফলের বণ্টনে অসাম্য। তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে, অনেক দেশেই মোট উৎপাদনে শ্রমের ভাগ কমেছে এবং শ্রমিককে মোকাবিলা করতে হচ্ছে কষ্টের জীবন। কর্মপরিবেশ অনেক ক্ষেত্রেই নিম্নমানের। মৌলিক অধিকার থেকে তারা থাকে বঞ্চিত। অভিবাসী শ্রমিককে বিভিন্ন ধরনের অন্যায় আচরণ এমনকি প্রতারণার শিকার হতে হয়। 
রক্ষণশীলরা মনে করছেন, বিশ্বায়নের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে চীনের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। চীনকে ঠেকানোর জন্য শুরু হয়েছে বাণিজ্যযুদ্ধ। ড. ইসলাম মনে করেন, এটি চলতে থাকলে বিশ্বায়নের মৃত্যুঘণ্টা বাজবে। তিনি বিশ্বায়নকে নতুনভাবে দেখার এবং রিগ্লোবালাইজেশনের পক্ষে। তবে তাঁর মতে,  ডব্লিউটিও যেসব সংস্কারের কথা বলছে সেগুলো অপর্যাপ্ত। কর্মসংস্থান এবং শ্রমের বিশ্বায়নের কথা কেউ বলছে না। বিশ্ব বাণিজ্য ও পুঁজির প্রবাহ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি দৃষ্টি দিতে হবে শ্রমিকের জীবনমান, কর্মপরিবেশ ও অধিকারের দিকে। 
উপসংহারে বইটিতে বলা হয়েছে, উন্নয়ন কৌশলকে দেখতে হবে নতুনভাবে, যেখানে প্রবৃদ্ধি হবে মাধ্যম, মূল লক্ষ্য হবে মানুষের জীবনমান। ড. রিজওয়ানুল ইসলামের বইটিতে রয়েছে উন্নয়নের সমসাময়িক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ। তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে করা এই বিশ্লেষণ থেকে ছাত্র-শিক্ষক-গবেষক ছাড়াও একটি বড় পাঠকগোষ্ঠী উপকৃত হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ওপর বইট ত ইসল ম ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির রাজনীতির মূললক্ষ্য জনগণ ও দেশ: তারেক রহমান

সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এখন অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু একমাত্র বিএনপি স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আড়াই বছর আগে দেশ পুনর্গঠনের কথা বলেছে, ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। বিএনপির রাজনীতির মূললক্ষ্য জনগণ ও দেশ। তাই ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকে গঠন বিএনপির পক্ষেই সম্ভব। জনগণের ভোটে বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে সবার আগে পুনর্গঠন করা হবে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান।

তারেক রহমান বলেন, জনগণের সমর্থন নেই এমন কোনো কাজ বিএনপি করে না। বিএনপিই একমাত্র দল যেটি নিজ দলের দোষী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।

তিনি বলেন, বিভ্রান্ত হয়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই বিএনপির বিরুদ্ধে কারো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। বিএনপি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না।

বিএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ