হোটেল ও রেস্তোরাঁ খাতে শ্রমিক-কর্মচারীদের মাসিক নিম্নতম মজুরি হারের খসড়া গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে নিম্নতম মজুরি বোর্ড। এতে শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য ১৩ হাজার ৫০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবছর শ্রমিক-কর্মচারীদের মূল মজুরি ৫ শতাংশ হারে বাড়ানোরও সুপারিশ করেছে নিম্নতম মজুরি বোর্ড। গত ২৯ জানুয়ারি এ গেজেট প্রকাশ করে এ বিষয়ে অংশীজনের কোনো মতামত, পরামর্শ বা আপত্তি থাকলে তা জানাতে বলা হয়।

গত বছরের ১৫ জানুয়ারি নিম্নতম মজুরি বোর্ডে হোটেল ও রেস্তোরাঁ শিল্প খাতে মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য নিয়োগ করা হয়। পরে এ খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণের কার্যক্রম গ্রহণের জন্য বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানানো হয়। এরপর নিম্নতম মজুরি হারের সুপারিশ প্রণয়নের জন্য বোর্ডের একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোড ও চকবাজার এলাকায় হোটেল-রেস্তোরাঁ শিল্পের তিনটি এবং টাঙ্গাইল সদরের চারটি প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় গিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। সেখানে সংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন তারা। 
বোর্ডের সভায় সংশ্লিষ্ট শিল্পের মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি এবং শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া স্মারকলিপি, মজুরি প্রস্তাব ও পরিদর্শন প্রতিবেদনসহ শ্রম আইন অনুসারে শ্রমিকদের জীবনযাপন ব্যয়, জীবনযাপনের মান, উৎপাদন খরচ, উৎপাদনশীলতা, উৎপাদিত দ্রব্যের দাম, মূল্যস্ফীতি, কাজের ধরন, ঝুঁকি ও মান, ব্যবসায়িক সামর্থ্য, দেশের ও সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সরকারের কাছে নিম্নতম মজুরির হার নির্ধারণ সম্পর্কিত সুপারিশ করা হয়েছে। 

হোটেলের নিম্নতম মজুরি: নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সুপারিশে বলা হয়, এক তারকা হোটেলগুলোর ডিসওয়াশ বয়, ডোরম্যানসহ গ্রেড-৩ এর শ্রমিকরা সর্বনিম্ন মজুরি পাবেন প্রতি মাসে ১৩ হাজার ৫০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৭ হাজার ৫শ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৭৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার টাকা ও যাতায়াত ভাতা ৮০০ টাকা। দুই তারকা হোটেলগুলোর গ্রেড-৩ এ থাকা জুনিয়র ওয়েটারসহ শ্রমিকরা প্রতি মাসে ন্যূনতম ১৩ হাজার ৬৫০ টাকা ন্যূনতম মজুরি পাবেন। এই গ্রেডে থাকা তিন তারকা হোটেলের শ্রমিকরা পাবেন মাসিক ন্যূনতম ১৪ হাজার ৭শ টাকা। একই গ্রেডের মাসিক সর্বনিম্ন মজুরি চার তারকার ক্ষেত্রে ১৫ হাজার ৭৫০ টাকা এবং পাঁচ তারকার ক্ষেত্রে ১৬ হাজার ৮শ টাকা। 
এতে গ্রেড-২-এর শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মাসিক মজুরির যে সুপারিশ করা হয়েছে তা হচ্ছে এক তারকা হোটেলে ১৮ হাজার ৪৫০ টাকা, দুই তারকা হোটেলে ২০ হাজার ২৫০ টাকা, তিন তারকা হোটেলে ২২ হাজার ৫০ টাকা, চার তারকা হোটেলে ২৩ হাজার ৮৫০ টাকা ও পাঁচ তারকা হোটেলে ২৫ হাজার ৬৫০ টাকা। 
নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সুপারিশে বলা হয়, শ্রমিকদের গ্রেড-১ এর ক্ষেত্রে নিম্নতম মাসিক মজুরি হবে এক তারকা হোটেলের ক্ষেত্রে ৩‌১ হাজার ৮শ টাকা, দুই তারকা হোটেলে ৩৩ হাজার ৩শ টাকা, তিন তারকা হোটেলে ৩৪ হাজার ৮শ টাকা, চার তারকা হোটেলে ৩৭ হাজার ৮শ টাকা এবং পাঁচ তারকা হোটেলে ৪০ হাজার ৮শ টাকা। 

হোটেলগুলোর কর্মচারীদের জন্য নিম্নতম মজুরি কাঠামোর সুপারিশে বলা হয়, গ্রেড-৩ এর কর্মচারীরা সর্বনিম্ন মাসিক মজুরি পাবেন এক তারকা হোটেলে ১৩ হাজার ৫০ টাকা, দুই তারকা হোটেলে ১৩ হাজার ৬৫০ টাকা, তিন তারকা হোটেলে ১৪ হাজার ৭শ টাকা, চার তারকা হোটেলে ১৫ হাজার ৭৫০ টাকা এবং পাঁচ তারকা হোটেলে ১৬ হাজার ৬৫০ টাকা। গ্রেড-২ এর কর্মচারীরা পাবেন এক তারকায় ১৮ হাজার
৪৫০ টাকা, দুই তারকায় ২০ হাজার ২৫০ টাকা, তিন তারকায় ২২ হাজার ৫০ টাকা, চার তারকায় ২৩ হাজার ৮৫০ টাকা এবং পাঁচ তারকায় ২৫ হাজার ৬৫০ টাকা। গ্রেড-১ এর কর্মচারীরা পাবেন এক তারকায় ২৭ হাজার ৩শ, দুই তারকায় ২৯ হাজার ১শ, তিন তারকায় ৩০ হাজার ৯শ, চার তারকায় ৩২ হাজার ৭শ এবং পাঁচ তারকায় ৩৪ হাজার ৫শ টাকা। 
রেস্তোরাঁয় নিম্নতম মজুরি: নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সুপারিশে বলা হয়েছে, গ্রেড-৪ এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি হবে ডি শ্রেণির রেস্তোরাঁয় ১৩ হাজার ৫০ টাকা, সি শ্রেণির রেস্তোরাঁয় ১৩ হাজার ৬৫০ টাকা, বি শ্রেণির রেস্তোরাঁয় ১৪ হাজার ৭শ টাকা এবং এ শ্রেণির রেস্তোরাঁয় ১৫ হাজার ৭৫০ টাকা। গ্রেড-৩ এর ক্ষেত্রে ডি, সি, বি এবং এ শ্রেণিতে এটি নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ১৫ হাজার ৭৫০ টাকা, ১৩ হাজার ৬৫০ টাকা, ১৪ হাজার ৭শ এবং ১৬ হাজার ৬৫০ টাকা। 
গ্রেড-২ এর ক্ষেত্রে এটি যথাক্রমে ১৬ হাজার ৬৫০, ১৮ হাজার ৪৫০, ২০ হাজার ২৫০ ও ২২ হাজার ৫০ টাকা। গ্রেড-১ এর এটি যথাক্রমে ৩০ হাজার ৩শ, ৩১ হাজার ৮শ, ৩৩ হাজার ৩শ ও ৩৪ হাজার ৮শ টাকা।
রেস্তোরাঁয় কর্মচারীদের জন্য যে সুপারিশ করা হয়েছে তাতেও সর্বনিম্ন মজুরি ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি পাবেন এ শ্রেণির রেস্তোরাঁয় গ্রেড-১ এর কর্মচারীরা। তাদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম মাসিক মজুরি ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৫০ টাকা। এ ছাড়া সব ধরনের হোটেল-রেস্তোরাঁয় শিক্ষানবিশ শ্রমিকরা মাসে ৯ হাজার ৩শ টাকা পাবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র ড ১ এর স প র শ কর ন য নতম ম ন ম নতম ম ১৬ হ জ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদে লম্বা ছুটি ঢাকা ছাড়বে পৌনে দুই কোটি মানুষ

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বৃহত্তর ঢাকা ছাড়বে। তারা রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ মহানগরসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার স্থায়ী-অস্থায়ী বাসিন্দা। ঈদে ঘরমুখো এই বিপুল সংখ্যক মানুষের ৬০ শতাংশ যাবেন সড়কপথে। বাকি ৪০ শতাংশ নৌ ও রেলপথে যাবে। এ হিসাবে, এবার সড়কপথে ঈদযাত্রীর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে মোট ১ কোটি ৩ লাখ ৬২ হাজার। নৌপথের ঘরমুখো যাত্রী সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৬৯ লাখ ৮ হাজার।   

নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) ঈদ-পূর্ব যৌথ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পর্যবেক্ষণের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়। মূলত সরকারের বিভিন্ন প্রতিবেদন, গবেষক, সামাজিক সংগঠন প্রতিনিধি ও পরিবহনবিষয়ক সংস্থার বরাত দিয়ে ঈদে ঘরমুখো মানুষের এই সংখ্যাগত ধারণা  জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার ঈদের ছুটি বেশি হওয়ার কারণেও বেশি সংখ্যক মানুষ ঘরমুখো হবে। আগে ঈদের ছুটি তিন-চার দিন হতো। অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে এবারই প্রথম ঈদুল ফিতরের ছুটি দাঁড়াচ্ছে ৯ দিন। গতকাল রোববার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

প্রতিবেদন যা বলছে

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের মতো জনবহুল শিল্প ও বাণিজ্যিক শহরের ৫০ শতাংশ এবং জেলার অন্যান্য স্থানের ২০ শতাংশ মানুষ আবাসস্থল ছেড়ে যায়। এ হিসাবে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার (জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ) মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে। উল্লেখিত পাঁচ জেলার অন্যান্য স্থান থেকে যাবে আরও ২০ লাখ ২০ হাজার (জনসংখ্যার ২০ শতাংশ)। ঈদযাত্রায় সড়কে এবারও জনভোগান্তি ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনাগুলো ইতিবাচক। সরকার নির্বিঘ্ন ঈদ যাতায়াতের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। এসব নির্দেশনা কার্যকর হলে জনভোগান্তি ও দুর্ঘটনা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

যদিও প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্য শতভাগ সঠিক নাও হতে পারে বলে স্বীকার করেছে সংগঠন দুটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপুল সংখ্যক মানুষকে মাত্র এক সপ্তাহে সুশৃঙ্খলভাবে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা সড়ক পরিবহন খাতের নেই। দূরপাল্লার অনেক সড়কের কোনো কোনো স্থানের এখনও বেহাল দশা। সারাদেশে সড়কে পাঁচ শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।

৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন

ঈদুল ফিতরের পর ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা হওয়ায় আরও তিন দিন যুক্ত হয়েছে ঈদের ছুটির তালিকায়। কারণ, এর পরের দু’দিনই শুক্র ও শনিবার। সেই হিসাবে এবার ঈদ ঘিরে টানা ৯ দিনের অবকাশ যাপনের সুযোগ পাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। তবে এ ছুটি ১১ দিনও সম্ভব হতে পারে। ২৯ ও ৩০ মার্চ এবং ১ ও ২ এপ্রিল ছুটি থাকছে নির্বাহী আদেশে। তার আগে ২৮ মার্চ পড়েছে শুক্রবার। ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে ছুটি। পরের দু’দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি। এ ছাড়া ঈদের আগের বৃহস্পতিবার ছুটি মিললে এবার টানা ১১ দিনের ছুটি কাটানো যাবে।

রাষ্ট্রপতির আদেশে রোববার জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ছুটিতে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি দপ্তর বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিষেবা যেমন– বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ-সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন। এ ছাড়া হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতায় পড়বেন না। চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্মী, ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবেন। জরুরি কাজে সম্পৃক্ত দপ্তরগুলোও এই ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
       
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ