সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, পছন্দ, ভালো লাগার নানা অনুভূতিতে প্রকাশিত ‘প্রেম’ এক অসাধারণ ভাবাবেগ। তার বহিঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে চিঠি এক দুর্দান্ত মাধ্যম। এখনকার ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ বা স্ন্যাপের যুগেও প্রেমপত্রের আবেদন একেবারেই হারিয়ে যায়নি। ভালোবাসার মানুষকে উদ্দেশ করে বাংলা ভাষায় লেখা পাঠকের এমন কয়েকটি চিঠি কিছু আলো নীল পাতায় প্রকাশ করা হলো.
ভাগ্যিস কবিতা
লিখতাম তখন...
প্রিয় যাহরা
তুমি বলেছ, গত ক’দিন ধরে লেখায় শুধু বিষাদ ছড়াচ্ছি। কী করব বল? দুঃখ-বিলাসিতায় ভাসতে ইচ্ছে হয়। চারপাশে আনন্দের এত উপকরণ, তবুও। বন্ধুরা সবাই কোনো না কোনো কাজে জড়িয়ে পড়েছে। আমি একাই রয়ে গেছি কর্মহীন। একা থেকে শুধু একা হয়ে পড়ছি ক্রমে।
একা হয়ে পড়েছি আসলে তা নয়। নিজেকে একা করে ফেলেছি আমি বরং। নিজেকে অনেক গুটিয়ে নিয়েছি নিজের ভেতর। বন্ধুদের আড্ডা এড়িয়ে চলি। খরচের ভয়ে? তোমার সঙ্গে দেখা করতে পারি না। তোমার খরচের লজ্জায়? টাকার কাছে কি এতই ছোট হয়ে গেছি আজকাল? টিউশনিগুলো নতুন বছরে নবায়িত হলো না। ছেলেমেয়েগুলো আমার কাছে রেজাল্ট খারাপ করে। অথচ আমি যখন কথা বলি, তখন সব হাঁ করে গেলে। তোমাকে বলেছিলাম এক ছাত্রের কথা? দশম শ্রেণিতে ফেল করেছিল। আমি আর পড়াব না বলতেই এত বড় ছেলের সেকি কান্না! বড় কোথায়, ছোটই তো। আমি নিজে যখন দশম শ্রেণিতে ছিলাম, মনে হতো কত বড়ই না হয়েছি। এখন মনে হয়, ওটা হয়তো শৈশবের শেষ চৌকাঠ ছিল। শৈশব তো বটেই।
কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়েছি। তুমি আমার বাঁশি শুনে, কবিতা পড়ে কাছে এসেছিলে, ভাবতেও ভালো লাগে। ভাগ্যিস কবিতা লিখতাম তখন। তা না হলে জীবনের এ অবলম্বনটুকু, জীবনে আসবার পথ খোলা ছিল? তুমি হাসছ। হাসলেও, কথা মিথ্যে নয়। তুমি তো জীবনে এসেই গেছ। এখন তাই কবিতা লেখার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। একটা যুক্তি দাঁড় করানো গেল, কী বল।
কবিতার জন্য চাই কাব্যিক শব্দভান্ডার। সে শব্দভান্ডার জোগাতে হলে অনেক কবিতা পড়া চাই। কবিতা পড়াই ছেড়ে দিয়েছি। কবিতাগুলো, আজকাল কেমন যেন কৌতুকের মতো ঠেকে। দোষ কবিতার কিংবা কবিদের নয়। দোষ আমার নিজের। কবিতার নৌকা তরতর করে এগোনোর জন্য একটি নদী চাই। সে নদীর জল শুকিয়েছে। তুমি যদি প্রশ্ন করে বস কেন– তো ভারি বিপদে পড়ে যাব। উত্তর যে জানা নেই। যে ভালোবাসা দিয়ে, প্রেম দিয়ে তুমি আমাকে ঘিরে রেখেছ, তার মধ্যে কি সে নদীর জল নেই? উত্তর– আছে। জলগুলো খরতাপে বাষ্প হয়ে উড়ে চলে যাচ্ছে না তো? আমি কৃতকার্য, সে তো শুধু তোমার কাছে। যদিও বাকি পৃথিবী বলছে ভিন্ন কথা। বলুক না। খরতাপ কমে আসবে। নদীতে জল আবার তরঙ্গায়িত হবে। কবিতার নৌকাবাইচ উৎসব হবে দেখে নিও। হা হা হা।
বহুদিন হলো ছবি আঁকছি না। তোমাকে আর কত হতাশার কথা শোনাব। এগুলোকে এক ধরনের জবাদিহি হিসেবে নাও। ছবি আঁকছি না। খুব সহজ ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, নতুন কোনো দৃশ্য চোখে দেখছি না। ঘরে বন্দি হয়ে বসে আছি। আমি তো আর ভিনসেন্ট নই। হলে, ঘরে বিষণ্ন বসে থেকে, বিষণ্নতার কালজয়ী কোনো এক ছবি এঁকে ফেলতাম। আমি তো তোমার কাছে ভিনসেন্ট থেকেও অনেক বেশি। কারণ, তুমি আমাকে ভালোবাস। ভালোবাসার চেয়ে মোক্ষম রঙিন চশমা দ্বিতীয়টি আর নেই। তোমার অভ্রছোঁয়া প্রত্যাশাও আমাকে বিব্রত করে বারবার। ছবি না আঁকলেও, মাঝে মধ্যে পুরোনো স্কেচ খাতা তুলে নিই, পেন্সিলগুলো নাড়াচাড়া করি, মানুষের শরীরের মাপজোখগুলো মনে রাখি আর লুকিয়ে দেখি, কোনো এক ফাঁকে করা তোমার একটি জলরঙের পোর্ট্রেইট। তুমি আর তোমার কল্পনা মিলে হয়তো ওটাকে অসাধারণ শিল্পোত্তীর্ণ কোনো ছবি হিসেবে দেখবে। তবু তোমার প্রত্যাশার কাছে নগণ্য হয়ে যাই এই ভেবে, শেষ পর্যন্ত তোমাকে আর দেওয়া হয়নি ওটা। নেবে তুমি?
মিম
মিরপুর, ঢাকা
বিনিদ্র নিশিযাপন
আদিবা
তুমি কি জানো, আমার সব কাজিনের মধ্যে কেবল তোমাকেই আমি ‘তুমি’ বলে ডাকি। তোমাকে প্রথম দেখার পর বুকের পাঁজরে ভালোবাসার ফাগুন হাওয়া বয়ে না গেলেও, সেদিনের পর থেকে একটা দিনও আমার পৃথিবী ‘তুমিহীন’ ছিল না। মিথ্যে কথার জঞ্ঝালে ভরা এ শহরে রোদ-মেঘ-বৃষ্টি না ভেবেই ঠুনকো প্রতিশ্রুতিতে কারও হাত ধরা খুব সহজ। কিন্তু বারবারই যেন সেই ‘তুমি’তেই আটকে গিয়েছি আমি। তোমার প্রচণ্ড শান্ত, স্থির আর লাজুক চাহনিতে অদ্ভুত মায়া। শ্রাবণ দুপুরের অঝোর বৃষ্টি, শরতের গোধূলির স্নিগ্ধতা আর মাঘের কুয়াশাজড়ানো সকাল– এই তিনের মেলবন্ধন আমার আদিবা। আমি বলব না, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’, শুধু বলব ‘আদিবা, তোমাকে ভালোবাসতে চাই’। তোমার ঘুমের ঘোরে মায়াবী মোহে ডুব দিতে চাই। অপলকে চেয়ে বিনিদ্র নিশিযাপনে তোমার ভালোবাসার স্রোতে মিশে যেতে চাই আমৃত্যু। বাঁধন ছিঁড়ে হারিয়ে গেলে নবরূপে দেব ধরা, ওই দু’বাহু বাড়িয়ে আগলে রেখো বিশ্বাসে। তটিনীর বুকে চাঁদের প্রতিবিম্ব হয়ে শুক্ল তিথি মিশে যাবে তোমার সোহাগের পূর্ণতায়। কৃষ্ণপক্ষের ধ্রুবতারার মাঝেও সুখ খুঁজে পাবে নির্ঝঞ্ঝাট।
আদিবা, চলো না, আমাদের অদেখা পৃথিবীটা একসাথে দেখি। জীবনের বাকি পথটা একসাথে হাঁটি। দু’জনের অব্যক্ত কথাগুলো বলতে বলতে একসাথে বৃদ্ধ হই। ভাবনার অন্তরালে সাজানো স্বপ্নের হাসি, কান্না, অভিমানের অনুভবে হই দু’জন দু’জনের পূর্ণতা।
ইতি
তোমার কাজিন
ভালোবাসার অভিযোগনামা
প্রিয়
ভালোবাসা জীবনে এতই কষ্ট দিয়েছে, আমি দারুণভাবে এই শব্দটিকে ভয় পাই। কিন্তু করুণ সত্যি হলো– এত ভয়ের পরও আমার মাঝে মধ্যে খুব ইচ্ছা করে আবার একটু প্রেমে পড়ি! আবার সেই অনন্য শিহরণ আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়ে যাক।
শুনেছি, বিয়েই নাকি ভালোবাসার শেষ পরিণতি! ভুল শুনেছি। ভালো থাকা, ভালোবাসতে থাকা যদি না হয়, আগের মতো প্রেমাতুর দৃষ্টি যদি সারাটাক্ষণ দু’জনের মধ্যে স্পন্দন সৃষ্টি করতে না পারে, তবে বিয়ে কোনোভাবেই শেষ পরিণতি হতে পারে না।
অনেক ভেবে আমি খুঁজে পেয়েছি অন্য এক বাস্তব ভালোবাসার সংজ্ঞা। এখন আমার মনে হয়, ভালোবাসা নামক জিনিস পুরোটাই হলো হরমোনের খেলা। হৃদয়ঘটিত যে ভালোবাসাকে আমরা বিশাল, মহৎভাবে আখ্যায়িত করি– শরীর ছাড়া তার কোনো অস্তিত্বই নেই। আজ আমি মরে গেলে কাল তুমি সঙ্গী খুঁজে নেবে, তুমি মারা গেলে আমি।
আমরা রুহ দিয়ে, প্রাণ দিয়ে নাকি ভালোবাসি? তবে দেখ, শরীরটা ছাড়া রুহ ভালোবাসা প্রকাশ করতেও পারে না। তাই দেহে প্রাণ থাকতেই আমার মাঝে মধ্যে খুব ইচ্ছা করে ভালোবাসাটা আবার ছুঁয়ে দেখি। আমাদের মাত্র সাত বছরে মনে হয় যেন সত্তর বছরের সংসার। ছয় মাসও আমার সুদিন ছিল না। প্রেমের বিষয়ে আমি এতটাই হীনকপাল।
এক মুরব্বিকে বলেছিলাম, স্বামীকে আর ভালোবাসি না। তিনি বলেছেন, বিয়ের পর ভালোবাসা থাকুক বা না থাকুক, স্বামীর সংসার আঁকড়ে ধরে হেঁটে যাওয়াই হলো এক গভীর ভালোবাসার নিদর্শন; যা এক সৌরজগৎ সমান। কিন্তু অভাগা স্বামীর দৌড় শুধু পৃথিবীর জমিনে। তাই ওই জগৎ সে আবিষ্কার করতে পারে না।
ভয়ে আছি, বেশি কঠিন চিঠি হয়ে গেলে কিনা। রাগ করো না প্রিয়। চিঠিটা একদম সিরিয়াসলি নিও না। যেমনটা আমায় নাওনি কখনও।
ইতি
তোমার গলার কাঁটা
নিদ্রা সুলতানা বাড্ডা, ঢাকা
কিছু অনুভূতি
কখনও ম্লান হয় না
প্রিয় ফুল
তোমাকে বহুদিন থেকে চিনি, অথচ একবারই দেখা হয়েছিল। একবারই মাত্র কিছু মুহূর্তের জন্য! সেই মুহূর্ত যেন এক জীবনসমান। আমি জানি না তুমি তখন টের পেয়েছিলে কিনা– আমি কী গভীর মনোযোগে তোমাকে দেখেছি!
তোমার কোমলতা, বাতাসে দোল খাওয়া মৃদু উপস্থিতি– সবই হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল। অথচ সেই সময়, সেই সুযোগ, কত ক্ষণস্থায়ী ছিল।
তুমি কি জান, তোমার সেই একবারের উপস্থিতি কতটা অমর? হয়তো তুমি ভুলে গেছ, হয়তো তোমার মনে নেই। আমার হৃদয়ে তোমার সেই দেখা আজও অমলিন। ঠিক যেন কোনো নরম বিকেলের আলো কিংবা হালকা বৃষ্টির পর ভিজে ওঠা মাটির ঘ্রাণ। যে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, শুধু অনুভব করা যায়। জানি না, তোমাকে আবার কখনও দেখার সৌভাগ্য হবে কিনা। হয়তো কোনো এক বসন্তের সকালে, হয়তো কোনো এক নির্জন রাতে, হয়তো কখনোই নয়। তুমি কি জান, তোমাকে দেখার অপেক্ষা আমি কখনোই ছাড়িনি? যদি কখনও আবার দেখা হয়, আমি কি তখন তোমাকে ঠিক সেদিনের মতোই অনুভব করতে পারব, নাকি সেই অনুভূতি আরও গভীর হবে? যত দূরেই থাক, আমার হৃদয়ে তুমি রয়ে গেছ, রয়ে যাবে। কারণ কিছু দেখা হারিয়ে যায় না, কিছু অনুভূতি কখনও ম্লান হয় না।
অগাধ ভালোবাসা রইল।
তোমার অপেক্ষায় থাকা মুগ্ধ পথিক
আসাদুজ্জামান রনি
ঢাকা
একটুখানি সুযোগ
প্রিয় ইভা
সিঁড়িতে তোমার সঙ্গে প্রথম দেখা। প্রথম দেখাতেই আমি প্রেমে পড়ে গেছি। কী মায়াভরা মুখখানি তোমার। হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে। লম্বা চুল যেন সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল। অদ্ভুত মায়াভরা দুটি চোখ। এই মায়ায় যে কেউ নিমেষেই হারিয়ে যেতে পারে। সাধারণ মনে হলেও তোমার তাকানোতে যেন কিছু একটা ছিল। যার জন্য এতকাল অপেক্ষায় ছিলাম। হাতে চুড়ি, পায়ে নূপুরের রিনিঝিনি শব্দ আমাকে ব্যাকুল করে তুলছিল। প্রেমে পড়লে বুঝি এমনই হয়! লজ্জা আর রাজ্যের জড়তা আমায় জেঁকে ধরেছিল। যেন আমি আর আমি নেই; তোমাতে হারিয়ে গিয়েছি। তুমি কি আমার ব্যাকুলতা বুঝেছিলে সেদিন?
সরাসরি হাঁটু গেড়ে বসে গোলাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলার মতো অবস্থা আমার নেই। তাই চিঠিতেই বলছি। ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি তোমাকে। তোমার বুকে একটুখানি আশ্রয় দাও। একটুখানি পাশে বসার সুযোগ দাও। না হয় একটা আইসক্রিম ভাগাভাগি করেই খেলাম। হোক না এক প্লেট ফুচকা ভাগাভাগি। লুকিয়ে তোমার আঁচলে না হয় একটুখানি মুখই মুছলাম। পূর্ণিমা থাক বা না থাক। হাত ধরাধরি করে হাঁটলাম। তুমি পাশে থাকলে অন্ধকার বলে কিছু মনেই হয় না আমার। দাও না একটুখানি সুযোগ আমায় পাশাপাশি হাঁটার। পাশাপাশি থাকার। পাশাপাশি বসার। কোলে মাথা রেখে একটুখানি আকাশ দেখার।
ইতি
শফিকুর রহমান
বনানী, ঢাকা
সেই
চোখের মায়ায়
সুখু
আলো ঝলমলে ইট-পাথুরে আর যান্ত্রিক কোলাহলমুখর শহরের মেয়ে তুমি এখন। আজ থেকে বারো বসন্ত আগে তোমার খোলা ঘন কালো সুন্দর চুলে লুকিয়ে থাকত এক বিশাল রূপকথা। সেই কথার জাল উন্মোচন করার ক্ষমতা কারও সাধ্যে ছিল না। তোমার চুলের গন্ধ ছিল যেন বসন্তের ফুলের মতো মিষ্টি। তোমার চুলের মাঝেই আমার স্বপ্ন খুঁজে পেতাম। তোমার সেই খোলা চুলে, গোলাপি গালে, আর মায়াভরা চঞ্চলা হরিণী চোখ নিয়ে বসে থাকতে তুমি আমার চোখের বারান্দায়। সেই চোখের মায়ায় যে পড়েছে, তার অনুভূতি শুধু সেই বুঝতে পারে।
কালবোশেখির জন্য যেমন অপেক্ষা করে আকাশ-ধরণী আর শতবর্ষী অশত্থের ডানা, তেমনি আমার অপেক্ষা থাকত শুধু তোমার জন্য। শুভ্র শীতলতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত পৌষের রাতে ভিজেছে গোলাপ, ভিজেছে গাঁদা ফুল, ভিজেছে নদীপারের মফস্বল শহর শিশিরের মোহমায়ায়। এখনও সব একই রকম আছে। কিন্তু আজ আমার চোখের পৃথিবীতে তুমি নেই– আমার ভালোবাসার বাগানে তুমি নেই। আজ তুমি নেই বলে জীবন আর নেই আগের মতো। বকুলের গন্ধে ঘুম ভাঙে না এখন কোনো ভোরে। তুমি লিখেছ– তোমার বন্ধুদের নিয়ে একবার আসতে চাও। এসো তাহলে। তোমার এখনকার চুনকাম করা মুখ আর নকল চুল নিয়ে পুরোনো স্মৃতির জালে রেখে যাও– শুধু একবার। আমি তোমার বিপরীত অবস্থানে নিজেকে তলিয়ে দিয়ে তোমার ভালোবাসার পাখিগুলো উড়ে যেতে দেখি।
ইতি
সূর্য
অর্ধেকটা জীবন
তোমায় ঘিরে
আমার জেমিনি
অনেক বছর পর তোমাকে লিখছি। মোবাইলের যুগে লেখা হয়ে ওঠে না। ভালোবাসা এক অদ্ভুত অনুভূতি, যা মনের ভেতরে চিরজীবন বেঁচে থাকে। চিরসবুজ। এত বছর পরও তোমাকে ভাবলে সেই অতীতে ফিরে যাই। প্রথম দেখা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিরামহীন কথা বলা, সেই আনমনে দূরে তাকিয়ে থাকা। আসলেই বর্তমান প্রেমের চেয়ে সব আলাদা; কিন্তু আমার কাছে অনেক অর্থবহ। ভালোবাসা এক স্বর্গীয় সুখ; যা মনে ধারণ করতে হয়, বিশ্বাস করতে হয়। আজও ভালোবাসি– এই কথাটা অকপটে স্বীকার করতে পারা যে কত শান্তির, যেটা তুমিও মানো জানি।
তোমার কারণেই ভুলে ভরা ছন্দহীন কবিতা লিখতে শুরু করেছি। নিজের মাঝেও যে একটু রসবোধ আছে বিশ্বাস করতে শিখেছি।
কতদিন যে তোমাকে দূর থেকে তাকিয়ে দেখেছি কোনো কথা না বলে নিজেও জানি না।
মনে আছে, তুরাগের পারে সবাই মিলে আড্ডা দিতাম। হয়তো সেদিনই আমি তোমার প্রেমে পড়া শুরু করি। সত্যিকার অর্থে তোমাকে ছাড়া ওই দিনের কিছু আমার মনে পড়ে না! এখনও সেই দিনটিতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। সেই হাসিটা, কচুরিপানার ফুল তোলা– সব যেন এক অবিশ্বাস্য অনুভূতি। কেন যে শব্দচয়নে এত দুর্বল আমি। মনের ভাব হয়তো ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারছি না!
মাঝে মাঝেই মনে হয়, বড্ড বেশি তাড়াহুড়ো হয়ে গেছে, চুটিয়ে প্রেমই করা হয়নি। যুগের চেয়ে পিছিয়ে পড়া আমাদের প্রেমই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ, বিশুদ্ধ, পবিত্র। দু’জনের প্রতি দু’জনের বিশ্বাস, শ্রদ্ধা-সম্মান অনেক। তাই হয়তো পূর্ণতাও এসেছে সাবলীলভাবে; সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে।
গল্পে গল্পে জমেছে খেলা
একটু আধটু ছলাকলা
আমার তোমার ভালোবাসা
সীমাহীন ওই আকাশটা...
ভাবতেই ভালো লাগে, প্রায় অর্ধেক জীবন কেটে গেছে তোমায় ঘিরে, তোমায় নিয়ে। বাকি জীবনটা যেন কেটে যায় তোমায় ভালোবেসে তোমায় ঘিরে। আজও ছোট ছোট খণ্ড খণ্ড খুনসুটি সুখের উপলক্ষ হয়ে আসে, সব ক্লান্তি-হতাশার বিনাশ তোমার মাঝে।
হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়া
সব সুখ-দুঃখ ভাগ করা
এ নয় শুধু ভালোবাসা
থেকো সাথে থেকো পাশে
দেব পাড়ি উত্তাল সাগর
তুমি আমার শুধু আমার
হোক ইহকাল বা পরকাল।
এই ছোট্ট পত্রটি আমার ভালোবাসা প্রকাশের একটু অবিশ্বাস্য প্রয়াসই শুধু নয়; প্রতিদিন নতুন করে বারবার প্রেমে পড়ার একটি প্রমাণও বটে।
ভালো থেকো বেশি বেশি ভালোবেসো।
তোমার দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ
কবিরাজ
রাজন
হলুদ খামের চিঠি
তোমার থেকে দূরে সরে গিয়ে বহুদিন একা আছি। ভেবেছিলাম তোমার হাতে লেখা একটি চিঠি পাব হলুদ খামের চিঠি। যে চিঠিতে লেখা থাকবে তোমার-আমার ভালোবাসার কথা। অথচ অপেক্ষার প্রহর গুনে গেছি, আজও পেলাম না হলুদ খামের চিঠি। পিয়ন এসে বলে না চিঠি! চিঠি! বসন্ত আসে, কোকিল ডাকে, ফাগুন আসে, ফুল ফুটে, ভ্রমরেরা গুঞ্জন করে। দেয়ালে টানানো পঞ্জিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে দিন যায়, মাস যায়– তবু আসে না হলুদ খামের চিঠি। তবে কি তুমি আমায় ভুলে গেছ? আমি যে তোমায় ভুলিনি; তোমার স্মৃতিগুলো জড়িয়ে আজও বেঁচে আছি শুধু তোমার জন্য।
কাজী আবুল কাসেম রতন
নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
তোমার জন্য একটি চিঠি
প্রিয় নোমি
আশা করি তুমি ভালো আছ। আমি জানি, হয়তো এই চিঠি পাঠানোটা অপ্রত্যাশিত, কিন্তু কিছু কথা ছিল যেগুলো তোমার সঙ্গে শেয়ার করতে চাচ্ছি।
তুমি যখন আমার কাছে ছিলে, তখন তোমার হাসি ছিল যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। তোমার কথা ছিল, যেন আমার হৃদয়ের প্রতিটি অনুভূতিকে ছুঁয়ে যাওয়া এক মিষ্টি সুর। আমি জানতাম, তুমি যে আমার পাশে থাকবে, আমার কষ্ট, আমার সুখ– সব কিছুই তুমি বুঝবে। তবে এখন, তোমার শূন্যতা অনুভব করতে করতে প্রতিটি দিন যেন একেকটি অমাবস্যা হয়ে গেছে।
তুমি চলে যাওয়ার পর আমি বারবার নিজেকে প্রশ্ন করি– কী ছিল আমার মধ্যে, যা তোমাকে আটকাতে পারল না? আমি কি যথেষ্ট ভালো ছিলাম না? না কি আমি শুধু তোমার কাছে সেই মুহূর্তগুলো চেয়েছিলাম, যেগুলো তোমার জন্য ছিল না? তোমার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি হাসি, প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি যেন এখন মনে হয় অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। তবুও আমি জানি, এ শূন্যতাকে আমি কেবল তোমার উপস্থিতিতে পূর্ণ করতে পারব।
আমার জীবনে তুমি ছিলে। এখন তোমার অনুপস্থিতি অনুভব করে কাটে প্রতিটি দিন। তবুও আমি তোমার প্রতি অনুভূতি হারাইনি; বরং আমি বিশ্বাস করি, ভালোবাসার কোনো সময়সীমা বা জায়গা নেই। জানি তোমার জীবনে অনেক কিছু ঘটছে এবং তুমি নিজের জন্য সিদ্ধান্ত নিচ্ছ। আমি চাই না তুমি এই সময়ে একা থাক। যদি কখনও তোমার পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আসে, আমি সেখানে থাকব। তুমি আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ নোমি। আমি জানি, তুমি হয়তো ফিরে আসবে না; তবে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনও কমবে না। আমি শুধু চাই তুমি যেখানে আছ, সুখে থাক, শান্তিতে থাক। তুমি ছাড়া কিছুই আর একে অপরের মতো হবে না। তোমার শূন্যতাকে আমি নিজের হৃদয়ে ধারণ করেছি; সেই শূন্যতা কখনোই আমার ভালোবাসাকে কমাতে পারে না।
এটা বলতে চাই, আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি। সম্ভবত কোনোদিন পারব না। তুমি ছাড়া কিছুই যেন পূর্ণতা পায় না। তুমি যদি কখনও ফিরে আস, আমি তোমাকে স্বাগত জানাব। আমি জানি যে তোমার পথ তোমার নিজের। যদি কখনও তুমি আমাকে মনে কর, আমি সবসময় তোমার পাশে থাকব।
তুমি থাক না থাক, আমার ভালোবাসা তোমার জন্য চিরকালই থাকবে নোমি।
ইতি তোমারই
বিনি
ফাতেমাতুজ জোহুরা তানিয়া
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হল দ খ ম র চ ঠ আম র ভ ল ব স ত ম র জন য প রথম দ খ আম র ক ছ একট খ ন আম র হ অন ভ ত শ ন যত ই আম র আম র ম আম র স ন আম র বসন ত একব র র একট
এছাড়াও পড়ুন:
নারীর প্রতিবাদের ভাষা শক্তি ও সাহসের প্রতীক
‘দ্রৌপদীর কালো শরীর আরো কাছে আসে। দ্রৌপদী দুর্বোধ্য, সেনানায়কের কাছে একেবারে দুর্বোধ্য এক অদম্য হাসিতে কাঁপে। হাসতে গিয়ে ওর বিক্ষত ঠোঁট থেকে রক্ত ঝরে এবং সে রক্ত হাতের চেটোতে মুছে ফেলে দ্রৌপদী কুলকুলি দেবার মত ভীষণ আকাশচেরা, তীক্ষ্ণ গলায় বলে, কাপড় কি হবে, কাপড়? লেংটো করতে পারিস, কাপড় পরাবি কেমন করে? মরদ তু?’
মহাশ্বেতা দেবীর ‘দ্রৌপদী’ গল্পে একটি চরিত্র আমাদের চোখে ধরা দেয়, যা নারীর প্রতিবাদের এক অনন্য রূপ। এই উদ্ধৃতিতে আমরা দেখতে পাই, দ্রৌপদী তার নিজের শরীরকেই প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। মহাভারতের দ্রৌপদীর মতো সে কোনো দৈবী শক্তির সাহায্য চায় না। বরং সে নিজেই তার অধিকারের জন্য লড়াই করে। এই চরিত্রের মাধ্যমে মহাশ্বেতা দেবী ‘পুরুষ নারীর রক্ষক’ এই প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। নারীর প্রতিবাদের ভাষা শুধু শব্দে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি বহুমাত্রিক প্রকাশ, যা সমাজের গভীরে প্রভাব ফেলে। যেমনটা দেখা যায় মহাশ্বেতা দেবীর দ্রৌপদী মেঝেন– আদিবাসী এক সাঁওতাল নারী তার শরীরকেও প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এই ধরনের প্রতিবাদ শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী উপায়। বর্তমান সমাজে নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্র– যেমন শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র, রাজনীতিতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে। এই লড়াই শুধু তাদের নিজেদের জন্য নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্য একটি সুস্থ ও সমতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে।
বাংলাদেশ তার অর্ধশত বছর অতিক্রম করলেও নারীর জন্য পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ক্রুর থেকে ক্রুরতর হয়েছে। রাষ্ট্র, সমাজ বিনির্মাণ কালে নারীকে পাশে চায়, কিন্তু নারীর অধিকার নিশ্চিন্তকরণের বেলায় নারীকে তখন ‘শরীর’, ‘অপর’ করে তোলার প্রক্রিয়াও দেখা যায়। একাত্তর থেকে চব্বিশ– সংগ্রামে নারীর অংশগ্রহণ থাকলেও ফলভোগী হয়ে উঠতে চায় পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোটি। এই পদ্ধতি কাজ করে নারীকে বেশ্যাকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, অমানবিকীকরণের ভেতর দিয়ে; কেননা মানুষ শব্দের সমার্থক হয়ে ওঠে শুধু একা পুরুষ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এক নারী শিক্ষার্থীকে ‘হানি ট্র্যাপ’ বলেছেন। নারীর প্রতিবাদের স্বরকে বন্ধ করতে তার শরীরকে সামনে নিয়ে আসা হয়। তাকে অসম্মান করার হাতিয়ার হিসেবে তার যৌনাঙ্গকে বেছে নেওয়া হয়। অতীতের দিকে ফিরে তাকালে দেখতে পাব নারীকে পুলিশ কর্মকর্তা ‘রাতের রানী’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। ভালো নারীরা রাতে বাইরে থাকে না, কেননা তাদের একটি যৌনাঙ্গ আছে, ভালো নারীরা রাতে বাইরে থাকে না, কেননা তাদের স্তন আছে কিন্তু তাদের মগজ দেখা যায় না, মেধা দেখা যায় না। কারণ পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো দেখতে দিতে চায় না। সে ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি নারীর প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে পাল্টা ডিসকোর্স দিয়ে নয়, বরং নারী ঘুরে দাঁড়িয়ে দৃঢ় গলায় বলতে পেরেছে– হ্যাঁ আমিই রাতের রানী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় উঠেছে ‘রাতের রানী; স্লোগানে। শুধু উচ্চারণে নয়, নারীর প্রতিবাদ প্রকাশ পায় তাদের চোখের দৃষ্টিতে, তাদের কণ্ঠস্বরের দৃঢ়তায়, তাদের পদক্ষেপের শক্তিতে। এটি প্রকাশ পায় তাদের সাহসে, তাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান কালপর্বে আমরা দেখেছি মধ্যরাতে হলের গেট ভেঙে বেরিয়ে এসেছে নারী শিক্ষার্থীরা। বাহবা জুটেছে কিন্তু অভ্যুত্থান পেরিয়ে যখন সমতার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে তারা, তখন এসে নারীকে শুনতে হচ্ছে ‘হাফ প্যান্ট পরে ফুটবল খেলা যাবে না’, ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন গোপনীয় বস্তু’। অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে হাজার হাজার সেমিনার-সিম্পোজিয়াম অথচ নারীশূন্য মঞ্চ, কোথাও বা টোকেন নারী বক্তা। অথচ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। এটি প্রমাণ করে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নারীরা সমানভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
বর্তমান সমাজে নারীর প্রতিবাদের ভাষা বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পাচ্ছে। ইরানে মাশা আমিনির মৃত্যুর পর নারীরা হিজাব খুলে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এটি শুধু একটি পোশাক খোলার ঘটনা নয়, এটি একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। নারীরা তাদের শরীরের ওপর নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছে। কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নারীরা ঘর ছেড়ে রাতের রাস্তা দখল করেছে। যে রাতের রাস্তা তাদের জীবনে সান্ধ্য আইন বয়ে নিয়ে এসেছিল তাকেই তারা দখল করে নিতে চাইল। প্যারাডাইম শিফটের ভেতর দিয়ে রাতকে করে নিতে চাইল নিজের করে, এটাই তাদের প্রতিবাদ।
নারী তার প্রতিবাদের ভাষা শুধু কথার মধ্যেই সীমিত করে রাখতে চায় না। এটি তাদের কর্মে, তাদের সাহসে এবং তাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে প্রকাশ পায়। নারীর প্রতিবাদের ভাষা বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পেতে পারে। কখনও তা হতে পারে একটি কবিতা, কখনও একটি চিত্রকর্ম, কখনও একটি গান, আবার কখনও একটি মিছিল। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর মূল উদ্দেশ্য একটাই– সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
নারীর প্রতিবাদের ভাষা শুধু বর্তমানের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও। প্রতিটি প্রতিবাদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল পথ তৈরি করে। যাতে তারা একটি সমতাপূর্ণ সমাজে বেড়ে উঠতে পারে। এ ভাষা কখনও হিংসাত্মক নয়, বরং এটি সৃজনশীল ও রচনাত্মক। এটি ধ্বংসের নয়, নির্মাণের। এটি ঘৃণার নয়, ভালোবাসার। এটি বিভেদের নয়, ঐক্যের। নারীর প্রতিবাদের ভাষা একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এটি পরিবর্তনের বাহক। এটি সমাজকে নাড়া দেয়, চিন্তা করতে বাধ্য করে। এটি প্রশ্ন তোলে, চ্যালেঞ্জ করে প্রচলিত ধারণাগুলোকে।
শেষ পর্যন্ত নারীর প্রতিবাদের ভাষা হলো স্বাধীনতার ভাষা, মুক্তির আহ্বান। এটি সমতার দাবি, ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা, মানবাধিকারের ঘোষণা। নারীর প্রতিবাদের ভাষা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রতিটি নারী একজন মানুষ, তার নিজস্ব পরিচয় আছে, তার স্বপ্ন আছে, তার আকাঙ্ক্ষা আছে। সে শুধু কারও মা, বোন, স্ত্রী বা কন্যা নয়– সে নিজের অধিকারে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ। তাই যখনই কোনো নারী প্রতিবাদ করে, তখন সে শুধু নিজের জন্য নয়, সমগ্র নারী সমাজের জন্য কথা বলে। তার প্রতিবাদের ভাষা হয়ে ওঠে সকল নারীর কণ্ঠস্বর। এই প্রতিবাদের ভাষা ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে, ব্যাপক হচ্ছে। এটি এখন আর থামানো যাবে না। কারণ এটি শুধু একটি ভাষা নয়, এটি একটি আন্দোলন– একটি বিপ্লব। নারীর প্রতিবাদের ভাষা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে এবং আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এটি এখন শুধু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রকাশ নয়, বরং একটি সামষ্টিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। সামাজিক মাধ্যম, শিল্পকলা, সাহিত্য, খেলাধুলা, রাজনীতি– সব ক্ষেত্রেই নারীরা তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরছে। এই প্রতিবাদের ভাষা শুধু অন্যায়ের বিরুদ্ধে নয়, এটি একটি নতুন, ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনের আহ্বান। প্রতিটি প্রতিবাদ তা যতই ছোট হোক না কেন, একটি বৃহত্তর পরিবর্তনের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।
লেখক
চলচ্চিত্রকার
লেখক ও শিক্ষক