Samakal:
2025-03-29@11:44:03 GMT

ফাগুনের চিঠি

Published: 21st, February 2025 GMT

ফাগুনের চিঠি

সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, পছন্দ, ভালো লাগার নানা অনুভূতিতে প্রকাশিত ‘প্রেম’ এক অসাধারণ ভাবাবেগ। তার বহিঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে চিঠি এক দুর্দান্ত মাধ্যম। এখনকার ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ বা স্ন্যাপের যুগেও প্রেমপত্রের আবেদন একেবারেই হারিয়ে যায়নি।  ভালোবাসার মানুষকে উদ্দেশ করে বাংলা ভাষায় লেখা পাঠকের এমন কয়েকটি চিঠি কিছু আলো নীল পাতায় প্রকাশ করা হলো.

..

ভাগ্যিস কবিতা
লিখতাম তখন...

প্রিয় যাহরা 
তুমি বলেছ, গত ক’দিন ধরে লেখায় শুধু বিষাদ ছড়াচ্ছি। কী করব বল? দুঃখ-বিলাসিতায় ভাসতে ইচ্ছে হয়। চারপাশে আনন্দের এত উপকরণ, তবুও। বন্ধুরা সবাই কোনো না কোনো কাজে জড়িয়ে পড়েছে। আমি একাই রয়ে গেছি কর্মহীন। একা থেকে শুধু একা হয়ে পড়ছি ক্রমে। 
একা হয়ে পড়েছি আসলে তা নয়। নিজেকে একা করে ফেলেছি আমি বরং। নিজেকে অনেক গুটিয়ে নিয়েছি নিজের ভেতর। বন্ধুদের আড্ডা এড়িয়ে চলি। খরচের ভয়ে? তোমার সঙ্গে দেখা করতে পারি না। তোমার খরচের লজ্জায়? টাকার কাছে কি এতই ছোট হয়ে গেছি আজকাল? টিউশনিগুলো নতুন বছরে নবায়িত হলো না। ছেলেমেয়েগুলো আমার কাছে রেজাল্ট খারাপ করে। অথচ আমি যখন কথা বলি, তখন সব হাঁ করে গেলে। তোমাকে বলেছিলাম এক ছাত্রের কথা? দশম শ্রেণিতে ফেল করেছিল। আমি আর পড়াব না বলতেই এত বড় ছেলের সেকি কান্না! বড় কোথায়, ছোটই তো। আমি নিজে যখন দশম শ্রেণিতে ছিলাম, মনে হতো কত বড়ই না হয়েছি। এখন মনে হয়, ওটা হয়তো শৈশবের শেষ চৌকাঠ ছিল। শৈশব তো বটেই। 
কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়েছি। তুমি আমার বাঁশি শুনে, কবিতা পড়ে কাছে এসেছিলে, ভাবতেও ভালো লাগে। ভাগ্যিস কবিতা লিখতাম তখন। তা না হলে জীবনের এ অবলম্বনটুকু, জীবনে আসবার পথ খোলা ছিল? তুমি হাসছ। হাসলেও, কথা মিথ্যে নয়। তুমি তো জীবনে এসেই গেছ। এখন তাই কবিতা লেখার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। একটা যুক্তি দাঁড় করানো গেল, কী বল। 
কবিতার জন্য চাই কাব্যিক শব্দভান্ডার। সে শব্দভান্ডার জোগাতে হলে অনেক কবিতা পড়া চাই। কবিতা পড়াই ছেড়ে দিয়েছি। কবিতাগুলো, আজকাল কেমন যেন কৌতুকের মতো ঠেকে। দোষ কবিতার কিংবা কবিদের নয়। দোষ আমার নিজের। কবিতার নৌকা তরতর করে এগোনোর জন্য একটি নদী চাই। সে নদীর জল শুকিয়েছে। তুমি যদি প্রশ্ন করে বস কেন– তো ভারি বিপদে পড়ে যাব। উত্তর যে জানা নেই। যে ভালোবাসা দিয়ে, প্রেম দিয়ে তুমি আমাকে ঘিরে রেখেছ, তার মধ্যে কি সে নদীর জল নেই? উত্তর– আছে। জলগুলো খরতাপে বাষ্প হয়ে উড়ে চলে যাচ্ছে না তো? আমি কৃতকার্য, সে তো শুধু তোমার কাছে। যদিও বাকি পৃথিবী বলছে ভিন্ন কথা। বলুক না। খরতাপ কমে আসবে। নদীতে জল আবার তরঙ্গায়িত হবে। কবিতার নৌকাবাইচ উৎসব হবে দেখে নিও। হা হা হা। 
বহুদিন হলো ছবি আঁকছি না। তোমাকে আর কত হতাশার কথা শোনাব। এগুলোকে এক ধরনের জবাদিহি হিসেবে নাও। ছবি আঁকছি না। খুব সহজ ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, নতুন কোনো দৃশ্য চোখে দেখছি না। ঘরে বন্দি হয়ে বসে আছি। আমি তো আর ভিনসেন্ট নই। হলে, ঘরে বিষণ্ন বসে থেকে, বিষণ্নতার কালজয়ী কোনো এক ছবি এঁকে ফেলতাম। আমি তো তোমার কাছে ভিনসেন্ট থেকেও অনেক বেশি। কারণ, তুমি আমাকে ভালোবাস। ভালোবাসার চেয়ে মোক্ষম রঙিন চশমা দ্বিতীয়টি আর নেই। তোমার অভ্রছোঁয়া প্রত্যাশাও আমাকে বিব্রত করে বারবার। ছবি না আঁকলেও, মাঝে মধ্যে পুরোনো স্কেচ খাতা তুলে নিই, পেন্সিলগুলো নাড়াচাড়া করি, মানুষের শরীরের মাপজোখগুলো মনে রাখি আর লুকিয়ে দেখি, কোনো এক ফাঁকে করা তোমার একটি জলরঙের পোর্ট্রেইট। তুমি আর তোমার কল্পনা মিলে হয়তো ওটাকে অসাধারণ শিল্পোত্তীর্ণ কোনো ছবি হিসেবে দেখবে। তবু তোমার প্রত্যাশার কাছে নগণ্য হয়ে যাই এই ভেবে, শেষ পর্যন্ত তোমাকে আর দেওয়া হয়নি ওটা। নেবে তুমি? 

মিম
মিরপুর, ঢাকা
 

বিনিদ্র নিশিযাপন

আদিবা
তুমি কি জানো, আমার সব কাজিনের মধ্যে কেবল তোমাকেই আমি ‘তুমি’ বলে ডাকি। তোমাকে প্রথম দেখার পর বুকের পাঁজরে ভালোবাসার ফাগুন হাওয়া বয়ে না গেলেও, সেদিনের পর থেকে একটা দিনও আমার পৃথিবী ‘তুমিহীন’ ছিল না। মিথ্যে কথার জঞ্ঝালে ভরা এ শহরে রোদ-মেঘ-বৃষ্টি না ভেবেই ঠুনকো প্রতিশ্রুতিতে কারও হাত ধরা খুব সহজ। কিন্তু বারবারই যেন সেই ‘তুমি’তেই আটকে গিয়েছি আমি। তোমার প্রচণ্ড শান্ত, স্থির আর লাজুক চাহনিতে অদ্ভুত মায়া। শ্রাবণ দুপুরের অঝোর বৃষ্টি, শরতের গোধূলির স্নিগ্ধতা আর মাঘের কুয়াশাজড়ানো সকাল– এই তিনের মেলবন্ধন আমার আদিবা। আমি বলব না, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’, শুধু বলব ‘আদিবা, তোমাকে ভালোবাসতে চাই’। তোমার ঘুমের ঘোরে মায়াবী মোহে ডুব দিতে চাই। অপলকে চেয়ে বিনিদ্র নিশিযাপনে তোমার ভালোবাসার স্রোতে মিশে যেতে চাই আমৃত্যু। বাঁধন ছিঁড়ে হারিয়ে গেলে নবরূপে দেব ধরা, ওই দু’বাহু বাড়িয়ে আগলে রেখো বিশ্বাসে। তটিনীর বুকে চাঁদের প্রতিবিম্ব হয়ে শুক্ল তিথি মিশে যাবে তোমার সোহাগের পূর্ণতায়। কৃষ্ণপক্ষের ধ্রুবতারার মাঝেও সুখ খুঁজে পাবে নির্ঝঞ্ঝাট।
আদিবা, চলো না, আমাদের অদেখা পৃথিবীটা একসাথে দেখি। জীবনের বাকি পথটা একসাথে হাঁটি। দু’জনের অব্যক্ত কথাগুলো বলতে বলতে একসাথে বৃদ্ধ হই। ভাবনার অন্তরালে সাজানো স্বপ্নের হাসি, কান্না, অভিমানের অনুভবে হই দু’জন দু’জনের পূর্ণতা।

ইতি
তোমার কাজিন
 

ভালোবাসার অভিযোগনামা

প্রিয়
ভালোবাসা জীবনে এতই কষ্ট দিয়েছে, আমি দারুণভাবে এই শব্দটিকে ভয় পাই। কিন্তু করুণ সত্যি হলো– এত ভয়ের পরও আমার মাঝে মধ্যে খুব ইচ্ছা করে আবার একটু প্রেমে পড়ি! আবার সেই অনন্য শিহরণ আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়ে যাক।
শুনেছি, বিয়েই নাকি ভালোবাসার শেষ পরিণতি! ভুল শুনেছি। ভালো থাকা, ভালোবাসতে থাকা যদি না হয়, আগের মতো প্রেমাতুর দৃষ্টি যদি সারাটাক্ষণ দু’জনের মধ্যে স্পন্দন সৃষ্টি করতে না পারে, তবে বিয়ে কোনোভাবেই শেষ পরিণতি হতে পারে না।
অনেক ভেবে আমি খুঁজে পেয়েছি অন্য এক বাস্তব ভালোবাসার সংজ্ঞা। এখন আমার মনে হয়, ভালোবাসা নামক জিনিস পুরোটাই হলো হরমোনের খেলা। হৃদয়ঘটিত যে ভালোবাসাকে আমরা বিশাল, মহৎভাবে আখ্যায়িত করি– শরীর ছাড়া তার কোনো অস্তিত্বই নেই। আজ আমি মরে গেলে কাল তুমি সঙ্গী খুঁজে নেবে, তুমি মারা গেলে আমি।  
আমরা রুহ দিয়ে, প্রাণ দিয়ে নাকি ভালোবাসি? তবে দেখ, শরীরটা ছাড়া রুহ ভালোবাসা প্রকাশ করতেও পারে না। তাই দেহে প্রাণ থাকতেই আমার মাঝে মধ্যে খুব ইচ্ছা করে ভালোবাসাটা আবার ছুঁয়ে দেখি। আমাদের মাত্র সাত বছরে মনে হয় যেন সত্তর বছরের সংসার। ছয় মাসও আমার সুদিন ছিল না। প্রেমের বিষয়ে আমি এতটাই হীনকপাল।
এক মুরব্বিকে বলেছিলাম, স্বামীকে আর ভালোবাসি না। তিনি বলেছেন, বিয়ের পর ভালোবাসা থাকুক বা না থাকুক, স্বামীর সংসার আঁকড়ে ধরে হেঁটে যাওয়াই হলো এক গভীর ভালোবাসার নিদর্শন; যা এক সৌরজগৎ সমান। কিন্তু অভাগা স্বামীর দৌড় শুধু পৃথিবীর জমিনে। তাই ওই জগৎ সে আবিষ্কার করতে পারে না।
ভয়ে আছি, বেশি কঠিন চিঠি হয়ে গেলে কিনা। রাগ করো না প্রিয়। চিঠিটা একদম সিরিয়াসলি নিও না। যেমনটা আমায় নাওনি কখনও।

ইতি
তোমার গলার কাঁটা
নিদ্রা সুলতানা বাড্ডা, ঢাকা

 

কিছু অনুভূতি
কখনও ম্লান হয় না

প্রিয় ফুল
তোমাকে বহুদিন থেকে চিনি, অথচ একবারই দেখা হয়েছিল। একবারই মাত্র কিছু মুহূর্তের জন্য! সেই মুহূর্ত যেন এক জীবনসমান। আমি জানি না তুমি তখন টের পেয়েছিলে কিনা– আমি কী গভীর মনোযোগে তোমাকে দেখেছি!
তোমার কোমলতা, বাতাসে দোল খাওয়া মৃদু উপস্থিতি– সবই হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল। অথচ সেই সময়, সেই সুযোগ, কত ক্ষণস্থায়ী ছিল।
তুমি কি জান, তোমার সেই একবারের উপস্থিতি কতটা অমর? হয়তো তুমি ভুলে গেছ, হয়তো তোমার মনে নেই। আমার হৃদয়ে তোমার সেই দেখা আজও অমলিন। ঠিক যেন কোনো নরম বিকেলের আলো কিংবা হালকা বৃষ্টির পর ভিজে ওঠা মাটির ঘ্রাণ। যে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, শুধু অনুভব করা যায়। জানি না, তোমাকে আবার কখনও দেখার সৌভাগ্য হবে কিনা। হয়তো কোনো এক বসন্তের সকালে, হয়তো কোনো এক নির্জন রাতে, হয়তো কখনোই নয়। তুমি কি জান, তোমাকে দেখার অপেক্ষা আমি কখনোই ছাড়িনি? যদি কখনও আবার দেখা হয়, আমি কি তখন তোমাকে ঠিক সেদিনের মতোই অনুভব করতে পারব, নাকি সেই অনুভূতি আরও গভীর হবে? যত দূরেই থাক, আমার হৃদয়ে তুমি রয়ে গেছ, রয়ে যাবে। কারণ কিছু দেখা হারিয়ে যায় না, কিছু অনুভূতি কখনও ম্লান হয় না।
অগাধ ভালোবাসা রইল।

তোমার অপেক্ষায় থাকা মুগ্ধ পথিক
আসাদুজ্জামান রনি
ঢাকা
 

একটুখানি সুযোগ

প্রিয় ইভা
সিঁড়িতে তোমার সঙ্গে প্রথম দেখা। প্রথম দেখাতেই আমি প্রেমে পড়ে গেছি। কী মায়াভরা মুখখানি তোমার। হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে। লম্বা চুল যেন সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল। অদ্ভুত মায়াভরা দুটি চোখ। এই মায়ায় যে কেউ নিমেষেই হারিয়ে যেতে পারে। সাধারণ মনে হলেও তোমার তাকানোতে যেন কিছু একটা ছিল। যার জন্য এতকাল অপেক্ষায় ছিলাম। হাতে চুড়ি, পায়ে নূপুরের রিনিঝিনি শব্দ আমাকে ব্যাকুল করে তুলছিল। প্রেমে পড়লে বুঝি এমনই হয়! লজ্জা আর রাজ্যের জড়তা আমায় জেঁকে ধরেছিল। যেন আমি আর আমি নেই; তোমাতে হারিয়ে গিয়েছি। তুমি কি আমার ব্যাকুলতা বুঝেছিলে সেদিন?
সরাসরি হাঁটু গেড়ে বসে গোলাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলার মতো অবস্থা আমার নেই। তাই চিঠিতেই বলছি। ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি তোমাকে। তোমার বুকে একটুখানি আশ্রয় দাও। একটুখানি পাশে বসার সুযোগ দাও। না হয় একটা আইসক্রিম ভাগাভাগি করেই খেলাম। হোক না এক প্লেট ফুচকা ভাগাভাগি। লুকিয়ে তোমার আঁচলে না হয় একটুখানি মুখই মুছলাম। পূর্ণিমা থাক বা না থাক। হাত ধরাধরি করে হাঁটলাম। তুমি পাশে থাকলে অন্ধকার বলে কিছু মনেই হয় না আমার। দাও না একটুখানি সুযোগ আমায় পাশাপাশি হাঁটার। পাশাপাশি থাকার। পাশাপাশি বসার। কোলে মাথা রেখে একটুখানি আকাশ দেখার।

ইতি
শফিকুর রহমান
বনানী, ঢাকা

 

সেই
চোখের মায়ায়

সুখু
আলো ঝলমলে ইট-পাথুরে আর যান্ত্রিক কোলাহলমুখর শহরের মেয়ে তুমি এখন। আজ থেকে বারো বসন্ত আগে তোমার খোলা ঘন কালো সুন্দর চুলে লুকিয়ে থাকত এক বিশাল রূপকথা। সেই কথার জাল উন্মোচন করার ক্ষমতা কারও সাধ্যে ছিল না। তোমার চুলের গন্ধ ছিল যেন বসন্তের ফুলের মতো মিষ্টি। তোমার চুলের মাঝেই আমার স্বপ্ন খুঁজে পেতাম। তোমার সেই খোলা চুলে, গোলাপি গালে, আর মায়াভরা চঞ্চলা হরিণী চোখ নিয়ে বসে থাকতে তুমি আমার চোখের বারান্দায়। সেই চোখের মায়ায় যে পড়েছে, তার অনুভূতি শুধু সেই বুঝতে পারে। 
কালবোশেখির জন্য যেমন অপেক্ষা করে আকাশ-ধরণী আর শতবর্ষী অশত্থের ডানা, তেমনি আমার অপেক্ষা থাকত শুধু তোমার জন্য। শুভ্র শীতলতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত পৌষের রাতে ভিজেছে গোলাপ, ভিজেছে গাঁদা ফুল, ভিজেছে নদীপারের মফস্বল শহর শিশিরের মোহমায়ায়। এখনও সব একই রকম আছে। কিন্তু আজ আমার চোখের পৃথিবীতে তুমি নেই– আমার ভালোবাসার বাগানে তুমি নেই। আজ তুমি নেই বলে জীবন আর নেই আগের মতো। বকুলের গন্ধে ঘুম ভাঙে না এখন কোনো ভোরে। তুমি লিখেছ– তোমার বন্ধুদের নিয়ে একবার আসতে চাও। এসো তাহলে। তোমার এখনকার চুনকাম করা মুখ আর নকল চুল নিয়ে পুরোনো স্মৃতির জালে রেখে যাও– শুধু একবার। আমি তোমার বিপরীত অবস্থানে নিজেকে তলিয়ে দিয়ে তোমার ভালোবাসার পাখিগুলো উড়ে যেতে দেখি। 

ইতি
সূর্য

 

অর্ধেকটা জীবন
তোমায় ঘিরে

আমার জেমিনি
অনেক বছর পর তোমাকে লিখছি। মোবাইলের যুগে লেখা হয়ে ওঠে না। ভালোবাসা এক অদ্ভুত অনুভূতি, যা মনের ভেতরে চিরজীবন বেঁচে থাকে। চিরসবুজ। এত বছর পরও তোমাকে ভাবলে সেই অতীতে ফিরে যাই। প্রথম দেখা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিরামহীন কথা বলা, সেই আনমনে দূরে তাকিয়ে থাকা। আসলেই বর্তমান প্রেমের চেয়ে সব আলাদা; কিন্তু আমার কাছে অনেক অর্থবহ। ভালোবাসা এক স্বর্গীয় সুখ; যা মনে ধারণ করতে হয়, বিশ্বাস করতে হয়। আজও ভালোবাসি– এই কথাটা অকপটে স্বীকার করতে পারা যে কত শান্তির, যেটা তুমিও মানো জানি। 
তোমার কারণেই ভুলে ভরা ছন্দহীন কবিতা লিখতে শুরু করেছি। নিজের মাঝেও যে একটু রসবোধ আছে বিশ্বাস করতে শিখেছি।
কতদিন যে তোমাকে দূর থেকে তাকিয়ে দেখেছি কোনো কথা না বলে নিজেও জানি না।
মনে আছে, তুরাগের পারে সবাই মিলে আড্ডা দিতাম। হয়তো সেদিনই আমি তোমার প্রেমে পড়া শুরু করি। সত্যিকার অর্থে তোমাকে ছাড়া ওই দিনের কিছু আমার মনে পড়ে না! এখনও সেই দিনটিতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। সেই হাসিটা, কচুরিপানার ফুল তোলা– সব যেন এক অবিশ্বাস্য অনুভূতি। কেন যে শব্দচয়নে এত দুর্বল আমি। মনের ভাব হয়তো ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারছি না!
মাঝে মাঝেই মনে হয়, বড্ড বেশি তাড়াহুড়ো হয়ে গেছে, চুটিয়ে প্রেমই করা হয়নি। যুগের চেয়ে পিছিয়ে পড়া আমাদের প্রেমই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ, বিশুদ্ধ, পবিত্র। দু’জনের প্রতি দু’জনের বিশ্বাস, শ্রদ্ধা-সম্মান অনেক। তাই হয়তো পূর্ণতাও এসেছে সাবলীলভাবে; সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে।
গল্পে গল্পে জমেছে খেলা
একটু আধটু ছলাকলা 
আমার তোমার ভালোবাসা 
সীমাহীন ওই আকাশটা...
ভাবতেই ভালো লাগে, প্রায় অর্ধেক জীবন কেটে গেছে তোমায় ঘিরে, তোমায় নিয়ে। বাকি জীবনটা যেন কেটে যায় তোমায় ভালোবেসে তোমায় ঘিরে। আজও ছোট ছোট খণ্ড খণ্ড খুনসুটি সুখের উপলক্ষ হয়ে আসে, সব ক্লান্তি-হতাশার বিনাশ তোমার মাঝে।
হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়া 
সব সুখ-দুঃখ ভাগ করা
এ নয় শুধু ভালোবাসা
থেকো সাথে থেকো পাশে
দেব পাড়ি উত্তাল সাগর
তুমি আমার শুধু আমার
হোক ইহকাল বা পরকাল।
এই ছোট্ট পত্রটি আমার ভালোবাসা প্রকাশের একটু অবিশ্বাস্য প্রয়াসই শুধু নয়; প্রতিদিন নতুন করে বারবার প্রেমে পড়ার একটি প্রমাণও বটে। 
ভালো থেকো বেশি বেশি ভালোবেসো।

তোমার দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ
কবিরাজ
রাজন
 

 

হলুদ খামের চিঠি

তোমার থেকে দূরে সরে গিয়ে বহুদিন একা আছি। ভেবেছিলাম তোমার হাতে লেখা একটি চিঠি পাব হলুদ খামের চিঠি। যে চিঠিতে লেখা থাকবে তোমার-আমার ভালোবাসার কথা। অথচ অপেক্ষার প্রহর গুনে গেছি, আজও পেলাম না হলুদ খামের চিঠি। পিয়ন এসে বলে না চিঠি! চিঠি! বসন্ত আসে, কোকিল ডাকে, ফাগুন আসে, ফুল ফুটে, ভ্রমরেরা গুঞ্জন করে। দেয়ালে টানানো পঞ্জিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে দিন যায়, মাস যায়– তবু আসে না হলুদ খামের চিঠি। তবে কি তুমি আমায় ভুলে গেছ? আমি যে তোমায় ভুলিনি; তোমার স্মৃতিগুলো জড়িয়ে আজও বেঁচে আছি শুধু তোমার জন্য।

কাজী আবুল কাসেম রতন
নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
 

তোমার জন্য একটি চিঠি

প্রিয় নোমি 
আশা করি তুমি ভালো আছ। আমি জানি, হয়তো এই চিঠি পাঠানোটা অপ্রত্যাশিত, কিন্তু কিছু কথা ছিল যেগুলো তোমার সঙ্গে শেয়ার করতে চাচ্ছি।
তুমি যখন আমার কাছে ছিলে, তখন তোমার হাসি ছিল যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। তোমার কথা ছিল, যেন আমার হৃদয়ের প্রতিটি অনুভূতিকে ছুঁয়ে যাওয়া এক মিষ্টি সুর। আমি জানতাম, তুমি যে আমার পাশে থাকবে, আমার কষ্ট, আমার সুখ– সব কিছুই তুমি বুঝবে। তবে এখন, তোমার শূন্যতা অনুভব করতে করতে প্রতিটি দিন যেন একেকটি অমাবস্যা হয়ে গেছে।
তুমি চলে যাওয়ার পর আমি বারবার নিজেকে প্রশ্ন করি– কী ছিল আমার মধ্যে, যা তোমাকে আটকাতে পারল না? আমি কি যথেষ্ট ভালো ছিলাম না? না কি আমি শুধু তোমার কাছে সেই মুহূর্তগুলো চেয়েছিলাম, যেগুলো তোমার জন্য ছিল না? তোমার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি হাসি, প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি যেন এখন মনে হয় অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। তবুও আমি জানি, এ শূন্যতাকে আমি কেবল তোমার উপস্থিতিতে পূর্ণ করতে পারব।
আমার জীবনে তুমি ছিলে। এখন তোমার অনুপস্থিতি অনুভব করে কাটে প্রতিটি দিন। তবুও আমি তোমার প্রতি অনুভূতি হারাইনি; বরং আমি বিশ্বাস করি, ভালোবাসার কোনো সময়সীমা বা জায়গা নেই। জানি তোমার জীবনে অনেক কিছু ঘটছে এবং তুমি নিজের জন্য সিদ্ধান্ত নিচ্ছ। আমি চাই না তুমি এই সময়ে একা থাক। যদি কখনও তোমার পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আসে, আমি সেখানে থাকব। তুমি আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ নোমি। আমি জানি, তুমি হয়তো ফিরে আসবে না; তবে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনও কমবে না। আমি শুধু চাই তুমি যেখানে আছ, সুখে থাক, শান্তিতে থাক। তুমি ছাড়া কিছুই আর একে অপরের মতো হবে না। তোমার শূন্যতাকে আমি নিজের হৃদয়ে ধারণ করেছি; সেই শূন্যতা কখনোই আমার ভালোবাসাকে কমাতে পারে না।
এটা বলতে চাই, আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি। সম্ভবত কোনোদিন পারব না। তুমি ছাড়া কিছুই যেন পূর্ণতা পায় না। তুমি যদি কখনও ফিরে আস, আমি তোমাকে স্বাগত জানাব। আমি জানি যে তোমার পথ তোমার নিজের। যদি কখনও তুমি আমাকে মনে কর, আমি সবসময় তোমার পাশে থাকব।
তুমি থাক না থাক, আমার ভালোবাসা তোমার জন্য চিরকালই থাকবে নোমি।

ইতি তোমারই
বিনি
ফাতেমাতুজ জোহুরা তানিয়া
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হল দ খ ম র চ ঠ আম র ভ ল ব স ত ম র জন য প রথম দ খ আম র ক ছ একট খ ন আম র হ অন ভ ত শ ন যত ই আম র আম র ম আম র স ন আম র বসন ত একব র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

বনলতা সেনের সন্ধানে

জীবনানন্দ দাশ এ রকম কবি ছিলেন না যে তার কবিতা আস্বাদন করার জন্য জীবনী কিংবা আত্মজীবনীর সাহায্য নিতে হয়। তবু দু’একটি বিষয়ে তার ব্যক্তিজীবন ও আত্মদর্শন প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। এর একটি হলো ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতায় প্রতিফলিত মানুষের আত্মহননেচ্ছা। একবার আলোচনাক্রমে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মন্তব্য করেছিলেন যে ‘জীবনানন্দ দাশের আত্মঘাতী ক্লান্তি থেকে কবি রামেন্দ্র দেশমুখ্য মুক্ত’। ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতাটির নিরিখেই তিনি জীবনানন্দ’র বিরূদ্ধে ‘আত্মঘাতী ক্লান্তি’র অভিযোগ এনেছিলেন। 
জীবনানন্দ দাশ এহেন অভিমত উপেক্ষা ক’রে লিখেছিলেন, ‘আত্মঘাতী ক্লান্তি’ আমার কবিতার প্রধান আবহাওয়া নয়, কোনোদিনই ছিল বলে মনে পড়ে না।’ তিরি আরও লিখেছিলেন, ‘কবিতাটি সাবজেকটিভ নয়, একটা ড্রামাটিক রিপ্রেজেন্টেশন মাত্র; কবিতাটি পড়লেই তা বোঝা যায়। হ্যামলেট, কিং লিয়ার বা ম্যাকবেথের ‘আত্মঘাতী ক্লান্তি’র সঙ্গে শেক্সপিয়রের যা সম্পর্ক, ও কবিতার ক্লান্তির সঙ্গে লেখকের সম্পর্কটুকুও সেই রকম। কবিতাটিতে  সাবজেক্টিভ নোট শেষের দিকে ফুটেছে; কিন্তু সে তো লাশ-কাটা ঘরের ক্লান্তির বাইরে─অনেক দূরে─প্রকৃতির প্রাচুর্য ও ইতিহাসের প্রাণশক্তির সঙ্গে একাত্ম ক’রে আনন্দিত ক’রে রেখেছে কবিকে।’ তিনি অভিযোগের সুরে লিখেছিলেন, ‘নীরেনবাবু লাশ-কাটা ঘরের নায়ককে নায়কের স্রষ্টার সঙ্গে ওতপ্রোত ক’রে না জড়িয়ে কবিতাটি আস্বাদ করতে পারেন না মনে হয়।’ 
‘আট বছর আগের একদিন’ লিখেছিলেন ১৯৩৫ সালে। অন্য দিকে অবস্থার বিপাকে ১৯৪৭-৪৮ সালের দিনপঞ্জীর খাতায় জীবনানন্দের আত্মহননেচ্ছা বারংবার উচ্চারিত হয়েছে। তবু জীবনানন্দকে হতাশায় নিমজ্জিত কবি ব’লে মনে হতে পারে এরকম কবিতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। 
২.
এই দীর্ঘ ভূমিকা এ জন্যে যে ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি প্রসঙ্গে আবার জীবনানন্দের ব্যক্তিজীবনের অতলে নাক গলাতে হচ্ছে। আবার সেই বিখ্যাত প্রশ্ন নিয়ে পড়তে হচ্ছে ‘কে এই বনলতা সেন’ যা ১৯৪০ এর দশক থেকে কবিতারসিকদের ভাবিয়ে এসেছে। জীবনানন্দের মতো আমাদেরও প্রতীতি এ কবিতার রসাস্বদনের জন্য বনলতা সেনের পরিচয় জানার কোনো প্রয়োজন নেই: ‘অন্য খোঁজে কী দরকার?’
বাংলা কবিতায় কাল্পনিক নারীচরিত্র ব্যবহারের প্রবণতা সৃষ্টির জন্য প্রখ্যাত সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস জীবনানন্দকেই দায়ী করেছিলেন। “কবিতা” পত্রিকার চৈত্র ১৩৪৩ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘বেড়াল’ কবিতাটির আলোচনা প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “এই প্রতিভাবান কবিদের আর একটি কৌশল─কবিতা লিখিতে লিখিতে অকস্মাৎ অকারণে এক-একজন ভদ্রলোকের মেয়ের নাম করিয়া আমাদিগকে উৎসুক ও উৎসাহিত করিয়া তোলেন। ‘ইকনমিক্স’ লিখিতে লিখিতে শ্রীযুক্ত বুদ্ধদেব বসু অকারণে ‘রানি’কে টানিয়া আনিয়াছেন, জাতক-এ শ্রীজ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র ‘সুরমা’ নামীয়া একটি ভদ্রমহিলাকে অত্যন্ত লজ্জা দিয়াছেন; এবং ‘বসন্তের গান’-এ শ্রীসমর সেন ‘মালতী রায়’ নামক কোনও কামিনীর ‘নরম শরীর’ লইয়া যাহা করিবার নয় তাহাই করিয়াছেন। ইহার সূত্রপাত হইয়াছে নাটোরের ‘বনলতা সেন’কে লইয়া।...” 
জীবনানন্দ’র কাল্পনিক নারীদের আমরা চিনি: নানা নামে তারা জীবনানন্দের কবিতায় এসেছে। নানাভাবে নারীকে উপস্থাপন করেছেন জীবনানন্দ তাঁর কবিতায়। ‘সুরঞ্জনা’ কবিতায় লিখেছেন: ‘সুরঞ্জনা, আজও তুমি আমাদের পৃথিবীতে আছ/ পৃথিবীর বয়সিনী তুমি এক মেয়ের মতন/ কালো চোখ মেলে ঐ নীলিমা দেখেছ/ গ্রীক-হিন্দু-ফিনিশিয় নিয়মের রূঢ় আয়োজন শুনেছ ফেনিল শব্দে তিলোত্তমা-নগরীর গায়ে/ কী চেয়েছে? কী পেয়েছে?-গিয়েছে হারায়ে।’ 
‘লোকেন বোসের জর্নাল’ কবিতায় লিখেছেন: ‘সুজাতাকে ভালোবাসতাম আমিÑ/ এখনো কি ভালোবাসি?/ সেটা অবসরে ভাববার কথা,/ অবসর তবু নেই; / তবু একদিন হেমন্ত এলে অবকাশ পাওয়া যাবে; / এখন শেল্ফে চার্বাক ফ্রয়েড প্লেটো পাভ্লভ্ ভাবে / সুজাতাকে আমি ভালোবাসি কি না।’
লিখেছেন: ‘শ্যামলী, তোমার মুখ সেকালের শক্তির মতন।’ লিখেছেন: ‘সবিতা, মানুষজন্ম আমরা পেয়েছি মনে হয় কোনো এক বসন্তের রাতে।’ আরো লিখেছেন, ‘মনে পরে কবেকার পাড়াগাঁর অরুণিমা সান্যালের মুখ’ এবং ‘হীরের প্রদীপ জ্বেলে শেফালিকা বোস যেন হাসে হিজল ডালের পিছে অগণন বনের আকাশে’।

‘বনলতা সেন’ কবিতাটি প্রসঙ্গে প্রথম প্রশ্নটি হচ্ছে: বনলতা সেন কি ‘সুরঞ্জনা’, ‘শ্যামলী’, ‘সুজাতা’, ‘অরুণিমা সান্যাল’, ‘সুচেতনা’, ‘সরোজিনী’ প্রমুখের মতো আরেকজন কল্পিত নারী? 
৩.
ভারতের জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রে কবি জীবনানন্দ দাশের যে ৪৮টি কবিতার পাণ্ডুলিপির খাতা সংরক্ষিত আছে তার মধ্যে ৮ সংখ্যক খাতার সম্মুখ পৃষ্ঠায় কবির নিজের হাতে লেখা নেই কখন এবং কোথায় কবিতাগুলি রচিতহয়েছিল, নেই তার স্বাক্ষর। এ খাতাতেই রয়েছে ‘বনলতা সেন’। নানাদিক বিবেচনা ক’রে অনুমান করা হয়েছে এ কবিতাগুলি ১৯৩৪-এ লেখা। ভূমেন্দ্র গুহ, সুচরিতা দাশ বা অন্য কেউ─ হতে পারে তিনি গ্রন্থাগারের কোনো বিবেচক কর্মচারী─বড় অক্ষরে লিখে রেখেছেন: “কবিতা (৮) ১৯৩৪”।  
জীবনানন্দ দাশ ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি প্রকাশ করেছিলেন কবি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত “কবিতা” পত্রিকার পৌষ, ১৩৪২ সংখ্যায় (১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে প্রকাশিত)। সাত বছর পর ১৯৪২ সালের ডিসেম্বর মাসে (১৩৪৯) ক্ষুদ্রায়তন কাব্যগ্রন্থ “বনলতা সেন” প্রকাশিত হয়। এটি জীবানানন্দর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। ‘বনলতা সেন’ এ কাব্যের প্রথম কবিতা হিসাবে গ্রন্থর্ভূত হয়েছিল। অন্য ১১টি কবিতা হলো: ‘কুড়ি বছর পরে’, ‘ঘাস’, ‘হাওয়ার রাত’, ‘আমি যদি হতাম’, ‘হায় চিল’, ‘বুনোহাঁস’, ‘শঙ্খমালা’, ‘নগ্ন নির্জ্জন হাত’, ‘শিকার, ‘হরিণেরা’ এবং ‘বিড়াল’।
বনলতা সেন যদি কল্পনার নারী না-হয়ে বাস্তবের কোনো নারী হয়ে থাকেন, তবে তার সঙ্গে জীবনানন্দ দাশের পরিচয় হয়েছিল ১৯৩৪ এর আগে, কোনো এক সন্ধ্যাবেলায়।
৪.
গোপালচন্দ্র রায়ের জন্ম ১৯১৬ সালে। তিনি জীবনানন্দ’র প্রথম জীবনীকারদের মধ্যে সর্বাগ্রেগণ্য। তার ‘জীবনানন্দ’ গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে (১৩৭৮)। মাসিক ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৩ সালের শুরুর দিকে জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ডায়মণ্ড হারবার ফকির চাঁদ কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক পদে চাকুরীর জন্য আবেদন করেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। তাকে ইন্টারভিউ দিতে ডাকা হয়। সেদিন সিলেকশন বোর্ডের সদস্য হিসাবে গোপালচন্দ্র রায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছিলেন জীবনানন্দ’র কবিতার একনিষ্ঠ পাঠক ও ভক্ত। তার হস্তক্ষেপে জীবনানন্দের চাকরি হয়ে যায়। ১৮৩, ল্যান্সডাউন রোড থেকে ডায়মণ্ড হারবার─অনেক দূরের পথ। শেষ পর্যন্ত জীবনানন্দ’র পক্ষে এ কলেজে চাকুরী করা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু তিনি জেনে গিয়েছিলেন যে গোপালচন্দ্র তার পরম হিতৈষীদের একজন। হাওড়া গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ বিজয়কৃষ্ণ ভট্টাচার্য গোপালচন্দ্র রায়ের বিশেষ পরিচিত ছিলেন। তার সুপারিশে হাওড়া গার্লস কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে জীবনানন্দ দাশের চাকুরী হয়ে যায়। ১৯৫৩ সালের ১লা জুলাই তিনি এ কলেজে যোগ দেন। মৃত্যু অবধি এ কলেজেই তিনি কাজ করেছেন। 
অন্যান্য অনেকের মতো বনলতা সেনকে নিয়ে গোপালচন্দ্র রায়ের কৌতূহল ছিল। তিনি লিখেছেন, ‘এই কবিতাটি নিয়ে আমি একদিন জীবনানন্দকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম বনলতা নামে তার পরিচিতা কোনো মহিলা ছিল বা আছে কি-না। উত্তরে সেদিন তিনি কিছু না বলে শুধু মুচকি মুচকি হেসেছিলেন।’
কবি-পত্নী লাবণ্য দাশ মনে করতেন তিনিই কবিতায় উল্লেখিত বনলতা সেন─তিনিই কবিকে দু’ দণ্ডের শান্তি দিয়েছিলেন!
প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ ও চিন্তক ড. আকবর আলী খান ভেবেছিলেন: ‘বনলতা সেন’ কবিতায় নাটোর শহরের নামোল্লেখের সূত্রানুসন্ধান করা দরকার। শেষপর্যন্ত তিনি প্রস্তাব করেছিলেন নাটোর শহরে বনলতা সেন নামে একজন গণিকা ছিলেন যার সঙ্গে জীবনানন্দ দাশের সাক্ষাৎ হয়েছিল। এই প্রস্তাবের জন্য আকবর আলী খানকে অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে বর্তমান লেখকের কাছে তিনি বলেছিলেন: ‘বনলতা সেন একজন গণিকা ছিলেন তা প্রতিপন্ন করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। তবে ‘দু দণ্ডের শান্তি’ একটি বিশেষ ইঙ্গিতবহ শব্দসমষ্টি ব’লে মনে করা অন্যায্য হবে না।’   
‘দু দণ্ডের শান্তি’ যে বিশেষ ইঙ্গিতবহন ক’রে সে বিষয়ে অনেকেই একমত।  প্রশ্ন হচ্ছে: জীবনানন্দ কি দু দণ্ডের শান্তির প্রত্যাশী ছিলেন? গণিকাগমন কি  দু দণ্ডের শান্তি?
‘সহজ’ শিরোনামীয় কবিতায় জীবনানন্দ লিখেছিলেন:
নিঃসঙ্গ বুকের গানে
নিশীথের বাতাসের মতো
একদিন এসেছিলে,
দিয়েছিলে এক রাত্রি দিতে পারে যত। 
কে সেই নারী যিনি এক রাত্রিতে যতটুকু পারা যায় ততটুকু দিয়েছিলেন জীবনানন্দকে? হয়তো তার প্রকৃত নাম বনলতা সেন নয়, হয়তো তিনি নাটোরের কেউ নন─অন্য কোনো ঠিকানার অধিবাসিনী। কিন্তু তিনি রক্তমাংসের বাস্তব মানবী, যার সঙ্গে জীবনানন্দের ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। জীবনানন্দ তার প্রেমে পড়েননি। প্রেমে পড়বার সুযোগ ছিল না। কিন্তু তার তৃষ্ণা মিটেছিল। এ ক্ষণিকের সান্নিধ্য ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি লেখার আগে: ১৯৩৪ সালের আগে। এ সময় জীবনানন্দ বেকার। বরিশালে থাকছেন। আবার কলকাতায়ও যাচ্ছেন ও থাকছেন। 
এই নারী কি কাকা অতুলানন্দ দাশের কিশোরী কন্যা শোভনা দেবী? 
৫.
১৯৪৮ সালে লেখা দিনলিপিতে তিনি চার শ্রেণীর নারীর কথা উল্লেখ করেছেন─হেরোডিয়াসের কন্যারা, বনলতা সেন, কাল্পনিক নারী এবং বাসে দেখা কামিনীরা─যাদের কথা অবিস্মরণীয়। জীবনানন্দের জীবনে বনলতা সেন অবিস্মরণীয় এক নারী।
যৌবনের শুরু থেকেই যাদের ভালবাসা তিনি কামনা করতেন ডায়রীতে তাদের দুজনের নাম পাওয়া যায়। একজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে ইংরেজি বর্ণমালায় ‘জেওয়াই’ লিখে, অন্যজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে ওয়াই (কখনও বিওয়াই) লিখে। ভূমেন্দ্র গুহ আমাদের জানিয়ে গেছেন এই ওয়াই আর কেউ নয়, কাকা অতুলানন্দ দাশের কন্যা শোভনা যার ডাক নাম বেবী (বিএবিওয়াই)। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে লাবণ্য দাশকে বিয়ের আগেই এই বালিকার প্রতি জীবনানন্দ গভীর অনুরাগ অনুভব করেছিলেন। একটি উপন্যাসে শচী নামেও তাকে দেখতে পাওয়া যায়। শোভনাকে (ওয়াই) নিয়ে জীবনানন্দের অনুরাগ উন্নীত হয়েছিল নিগূঢ় প্রেমে; লাবণ্য দাশের সঙ্গে দাম্পত্য জীবন আদৌ সুখকর না-হওয়ায় এই প্রেম ক্রমশঃ একপ্রকার অভিভূতিতে পর্যবসিত হয়েছিল। বিয়ে পরবর্তীকালে, ১৯৩০-এর মার্চের ১০ তারিখে দিনলিপিতে লিখেছেন: ‘─Dreams about Y : hwo difficult to crush & smother associations & seek an anodzne in L. : yet I am to do! : the harrowings of morns ─’এখানে ওয়াই হলো শোভনা বা বেবী এবং এল হলো স্ত্রী লাবণ্য। 
কিন্তু জেওয়াই-এর পরিচয় আজও অনশ্চিত রয়ে গেছে। ১৯৪৭ সালের দিনলিপিতে জীবনানন্দ আক্ষেপ ক’রে লিখেছেন, জেওয়াই-এর কথা স্মরণ করে অবিরল স্বকাম তাকে দ্রুত বার্ধক্যের পথে নিয়ে গেছে। এই জেওয়াই কি জয়শ্রী সেন যার কথা আমরা শুনেছি? প্রদ্যুম্ন মিত্র জানিয়েছেন: নাটোরের মেয়ে জয়শ্রী সেনের বিয়ে হয়েছিল বরিশালে। পরে তিনি কলকাতায় স্থায়ী হয়েছিলেন। 
জেওয়াই এবং ওয়াইকে হেরোডিয়াসের কন্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন জীবনানন্দ। এ দু’জনকে নিয়ে তার অভিভূতি ছিল। এরা দু’জন তার অনতিক্রম্য মানসিক যন্ত্রণার গভীর সূত্র।
হেরোডিয়াসের (সার্কা খৃষ্টপূর্ব ১৫ থেকে ৩৯ খৃস্টাব্দ) কন্যা ছিল একজন, বাইবেলে (নিউ টেস্টামেণ্ট) তার নাম অনুল্লেখিত। কিন্তু মানুষ তাকে সালোমে ব’লে চিহ্নিত করেছে। সেইন্ট জনের হত্যায় সালোমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। জীবনানন্দের সালোমে দুইজন─একজন ওয়াই অর্থাৎ বেবী বা শোভনা। অপরজন জেওয়াই (ঔু)। জেওয়াই প্রকৃতপক্ষে কে তা জানা না গেলেও ঘনিষ্ঠ কেউ─যার নিয়মিত আসাযাওয়া ছিল ল্যান্সডাইন রোডের বাসায়। এদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে গেলে কবির জীবন আরও তিক্ত হয়ে ওঠে: মরে যেতে ইচ্ছে করে। একদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে জীবনানন্দ তাঁর জীবনের পরিব্যাপ্ত হতাশার আটটি কারণ উল্লেখ করেছেন; যার মধ্যে একটি হলো নারী─যাদের মধ্যে হেরোডিয়াসের কন্যারা অন্যতম।  
জীবানানন্দ স্মরণ করেছেন হেরোডিয়াসের কন্যাদের সঙ্গে সম্পর্ক কত না নিষ্ফলা এবং অর্থহীন, অথচ একদিন এরা তার মন ও চেতনা দখল ক’রে রেখেছিল: আগের বছর সেপ্টেম্বর কি অক্টোবরের এক রাত্রিতে যখন অন্য সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল সোফার ওপরে বসে জেওয়াই  স্টাইনবেক পড়তে পড়তে এক সময় উঠে গেল। জেওয়াই উঠে যাওয়ার পর ওর কথা ভেবে হস্তমৈথুন করেছিলেন।  জীবনানন্দ অনুতাপ ক’রে লিখেছেন, ‘আজ জানুয়ারী এবং ফেব্রুয়ারীর প্রেক্ষাপটে কত না অপচয় বলে মনে হয়।’ 
জীবনানন্দ’র ১৮৩ ল্যান্সডাউন রোডের বাসায় জেওয়াই আসে কিন্তু কখনও স্বামী (বা ছেলেকে) সঙ্গে না-নিয়ে আসে না। কিন্তু কেন সে একা আসে? জীবনানন্দ’র প্রতি সেই পুরোনো শীতলতা দেখিয়ে পাগলের মতো সে বারবার ছোট ভাই ভেবুলের (অশোকানন্দ) কথা শুধাতেই থাকে।─হেরোডিয়াসের কন্যাদের কারণে মাঝে মাঝে তার জীবন বিষিয়ে ওঠে। তিনি অসহায় বোধ করেন। 
কবিতায় উল্লেখিত বনলতা সেন কোনো কল্পিত নারী নন। তিনি বাস্তবের শোভনা (বেবী) বা জয়শ্রী নন। তিনি লাবণ্য দাশ নন। তিনি অন্য কেউ।
৬. 
জীবনের প্রৌঢ় প্রহরে একটি কবিতায় জীবনানন্দ দাশ তিনি লিখেছেন: 
কোনো কোনো অঘ্রানের পথে পায়চারি করা শান্ত মানুষের
হৃদয়ের পথে ছাড়া মৃতেরা কোথাও নেই বলে মনে হয়
তাহলে মৃত্যুর আগে আলো অন্ন আকাশ নারীকে 
কিছুটা সুস্থিরভাবে পেলে ভালো হত। (‘১৯৪৬-৪৭’)
আমাদের মনে হয় মৃত্যুর আগে অন্ন-নারী কোনোটিই জীবনানন্দ’র ভাগ্যে জোটেনি। বনলতা সেনকে তিনি পেয়েছিলেন, অল্প সময়ের জন্য হলেও। সেই মিলন অমিলন সুখস্মৃতি হিসেবে জীবনানন্দ লালন করেছেন।
স্বকাম তথা হস্তমৈথুনকে জীবনানন্দ তার দিনপঞ্জীতে কখনও কখনও করাপশান ব’লে উল্লেখ করেছেন। বিবাহিত জীবন সত্বেও স্বাভাবিক যৌনাকাক্সক্ষা পূরণ করেছেন স্বকমের মাধ্যমে। স্বকামের মধ্য দিয়ে যে যৌনতৃপ্তি ঘটে তা নারীসঙ্গমের বিকল্প হতে পারে না। সক্ষম পুরুষ নারীসঙ্গ কামনা করে। জীবনানন্দ দাশের শারীরবৃত্তি এর ব্যতিক্রম ছিল না। অথচ তার দাম্পত্য জীবনের গোড়ার দিকেই জীবনানন্দ একা হয়ে গিয়েছিলেন কারণ স্ত্রী লাবণ্য দাশের সঙ্গে তার স্বাভাবিক দাম্পত্য গড়ে ওঠেনি। ফলে স্বকামই ছিল তার যৌনসন্তুষ্টি লাভের একমাত্র পথ। 
যারা জীবনানন্দকে দেবতূল্য ব’লে মনে করেন তাদের বিরূদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে জীবনানন্দর আত্মকথন। দিনপঞ্জীতে তিনি অবারিত করেছেন তার যৌনাকাক্সক্ষার স্বরূপ এবং অভিজ্ঞতার পরিধি। 
দিনপঞ্জী থেকে আমরা জানি তিনি বিয়ের আগে, দিল্লী থাকার সময় নারীসঙ্গের জন্য পতিতালয়ে গিয়েছিলেন। বিবাহ বহির্ভূত নারীসঙ্গ নিয়ে তারা কোনো ইনহিবিশন ছিল না। এমনকি পতিতাগমনের আকাঙ্খাও তার নীতিবোধের কাছে পরাজিত হয়ে যায় নি। বদল্যেরের তন্নিষ্ঠ পাঠকের জন্য তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমরা জানি ১৯৪০ দশকের শেষভাগে তিনি কখনও কাউকে কিছু না ব’লে, ব্রজমোহন কলেজের প্রিন্সিপাল বা সহকর্মী কাউকে না-জানিয়ে ৩-৪ দিনের জন্য বরিশাল থেকে উধাও হয়ে যেতেন। ফিরে আসার পর প্রশ্ন করলে জবাব না দিয়ে মুচকি হাসতেন। রহস্যময় সেই হাসি।
যখন তার বয়স পঞ্চাশ তখন যৌনমিলনের জন্য উদগ্রীব ছিলেন। দিনপঞ্জীতে জীবনের অচরিতার্থতার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি আক্ষেপের সুরে লিখেছেন: ‘নারী নেই, ভালোবাসা নেই।’  বাসে চড়তে এ রকম অনেক নারী তিনি দেখেছেন যাদের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে পাওয়া সম্ভব; কিন্তু তাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং সম্পর্ক গড়ে তোলার পথ তার জানা ছিল না।─উপরন্তু তার যৌবনে ভাঁটার টান। পকেটের অবস্থাও ভালো নয়। অর্থের বিনিময়ে দু’ দণ্ডের শান্তি কেনা হয়ে ওঠে না আর।
হেরোডিয়াসের কন্যারা আসে, থাকে, চ’লে যায়। জেওয়াই কেন একা আসে না? কোনো কোনো জীবনানন্দের ইচ্ছে ক’রে তিনিও ওদের কারো বাসায় গিয়ে কিছু সময় কাটিয়ে আসেন। কিন্তু তার মন হয় আগের রাতে আত্মমৈথুনের কারণে তার চেহারা খারাপ হয়ে গেছে। যাওয়ার চিন্তা তিনি বাদ দিয়ে দেন। ডায়েরীতে লেখেন: ‘এমন যদি কোনো নারীকে পেতাম যার কাছে নিয়মিত যাওয়া যায় এবং সময় কাটানো যায়, তবে ওদের (জেওয়াই. ওয়াই) আমি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতাম: কিন্তু  কোথায় সেই নারী? বাসের ভীড়ে এদের আমি অনেক দেখি কিন্তু কীভাবে যোগাযোগ করবো?’ জীবনানন্দের জীবনে আর কোনো বনলতা সেন দেখা দেয়নি। v
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিস্তায় চীনকে আমন্ত্রণ
  • বনলতা সেনের সন্ধানে
  • উপন্যাসে পটভূমির সঙ্গে বোঝাপড়া প্রয়োজন
  • প্রিয় শিল্পী প্রিয় সিনেমা
  • শুটিংয়ের অন্দরে
  • একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়নের ডাকে পালিত স্বাধীনতা দিবস