ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

যৌক্তিক ও বাস্তবানুগ সিদ্ধান্তে আসতে হবে

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিশেষায়িত চরিত্র অক্ষুণ্ন রাখার বিষয়ে কেউ দ্বিমত করবেন না। কেননা, বিশেষায়িত দক্ষ স্নাতক ডিগ্রিধারী তৈরির উদ্দেশ্য নিয়েই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক। সেখনে মানবিক, সমাজবিজ্ঞান, কৃষি ও ব্যবসায় শিক্ষার মতো বিষয়েও পড়ানো ও ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের বাইরের বিষয়ের শিক্ষার্থী অর্ধেকের মতো। সে ক্ষেত্রে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পার্থক্যই থাকল না।

সম্প্রতি উপাচার্যদের চিঠি দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (স্টিম)-সংশ্লিষ্ট সাধারণ বিষয় ছাড়া অন্য কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। যেসব বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান, সেসব বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম যুক্তিসংগতভাবে ন্যূনতম সময়ের মধ্যে সীমিত অথবা বন্ধ করতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত—সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে কিছু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত প্রকৃতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, এমন বিষয়েও শিক্ষা কার্যক্রম চলমান আছে।

বর্তমানে সারা দেশে ৫৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৬। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৮টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ওপরের চিত্রে আমাদের শিক্ষার মালিক-মোক্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এসব বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের প্রক্রিয়ার সঙ্গে কারা জড়িত ছিলেন, সেটাও দেখার বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ খোলার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন নিতে হয়। তারাই–বা কীভাবে অনুমোদন দিল?

বিভিন্ন সরকারের সময় কখনো রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে, কখনো পদাধিকারীদের দল ভারী করতে নতুন নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে, যা বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্র নষ্ট করেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত জ্ঞানের বাইরের শিক্ষকদের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে আপত্তি উঠলেও আমলে নেওয়া হয়নি। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে আমরা সমাজবিজ্ঞান বা কলা বিভাগের কোনো শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারি না। একই কথা প্রযোজ্য শাহজালাল বা নোয়াখালী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা একই চরিত্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পর্কেও।

আমরা মনে করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথার্থই সমস্যাটি চিহ্নিত করেছে। প্রশ্ন হলো সমাধান করা যাবে কী করে? দীর্ঘদিন ধরে যেসব বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ে অবিশেষায়িত বিভাগ খোলা হয়েছে, হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। দিলে শিক্ষক-কর্মচারীরা বিপদে পড়বেন। তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থানের কথাও সরকারকে ভাবতে হবে। 

এই জটিল সমস্যাটি চিঠি কিংবা নির্দেশনা দিয়ে সমাধান করা যাবে না। আমরা আশা করব, শিক্ষা উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন, ইউজিসির সঙ্গে কথা বলবেন। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষাবিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন। আলোচনার মাধ্যমে একটি  যৌক্তিক সমাধানে আসতে হবে। 

বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব অবিশেষায়িত বিষয় আছে, সেগুলো মেজর না হলেও মাইনর বিষয় হিসেবে থাকতে পারে। প্রথম ও দ্বিতীয় বছরের শিক্ষার্থীদের জন্য যা বাধ্যতামূলক। ভবিষ্যতে যাতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ স্বেচ্ছাচারীভাবে বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে না পারে, সে বিষয়েও ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ