রাউজানে দুটি কারে চড়ে আসে অস্ত্রধারীরা, দোকানিকে গুলি
Published: 21st, February 2025 GMT
চট্টগ্রামের রাউজানে দুটি ব্যক্তিগত গাড়িতে (কারে) করে সাত থেকে আটজনের একদল অস্ত্রধারী এসে এক দোকানিকে গুলি করে এবং অপর একজনকে তুলে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের গশ্চি ধরের টেক এলাকায়।
ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি হলেন একই ইউনিয়নের গরিব উল্লাহ পাড়ার মোহরম আলীর ছেলে ডেকোরেশন ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ (৪২)। এ ছাড়া তাঁর ভাগনে মুহাম্মদ জামশেদ (২৫) তুলে পেটানো হয়। তাঁদের মধ্যে সালেহ আহমদের কপালে এবং পায়ে ছররা গুলি লাগে। তিনি স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর ভাগনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ দুটি কারে চড়ে ঘটনাস্থলে আসে সাত থেকে আটজন সন্ত্রাসী। এরপর সালেহ আহমদকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এরপর তাঁর ভাগনে জামেশেদকে তুলে নিয়ে যায় তারা। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
হামলার শিকার দোকানমালিক সালেহ আহমদ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী তিনি। তাঁদের ওপর একই দলের প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করেন। বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী যুবদল নামধারী মুহাম্মদ আরাফাত মামুন দুটি গাড়িতে করে সাত থেকে আটজন লোক নিয়ে এসে তাঁর দোকান লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন।
হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে যুবদল নেতা আরফাত মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এলাকায় থাকেন না। আর তিনি কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করেন।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরপর সেখানে তিনি পুলিশ পাঠিয়েছেন। তুলে নেওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে ততক্ষণে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। আহত ব্যক্তিরা মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তিলধারণের ঠাঁই ছিল না
গতকাল একুশে ফেব্রুয়ারির ছুটির দিনের বিকেলে অমর একুশে বইমেলার মাঠে তিলধারণের স্থান ছিল না। তবে অগুনতি মানুষের এই ভিড় আশা জাগাতে পারেনি প্রকাশকদের। বিক্রির ভাটা কাটেনি এই দিনেও। অধিকাংশ মানুষই এসেছিলেন বেড়াতে বা ছবি তুলতে। সকাল থেকে শুরু হলেও একেবারে নির্জন ছিল একুশের সকালের মেলা। অনন্যা প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক যেন তাই ক্ষোভ নিয়েই বললেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে এত কম বিক্রি আগে কোনো দিন হয়নি। সবাই আসছে যেন মেলা দেখতে।’ এখন ফেসবুককেন্দ্রিক লেখার জোয়ার চলছে অভিযোগ করে তিনি প্রশ্ন করলেন, মেলার ভেতরে আগে কোনো দিন এমন ছোট ছোট খাবারের দোকান দেখেছেন?
একুশে ফেব্রুয়ারি, তার ওপর শুক্রবার। তাই মেলায় ছিল শিশুপ্রহরের আয়োজনও। শিশুদের বই প্রকাশনী ময়ূরপঙ্খির বিক্রয়কর্মী চন্দনা মণ্ডল বললেন, ‘বাচ্চাদের বই করা কঠিন। শিল্পীদের কাজের ওপর নির্ভরশীল। এত যত্নের বই বিক্রি না হলে হয়?’ মেলার মাঠের ভেতর অলিগলি দিয়ে কোনোমতে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে দেখা গেল উপকথা প্রকাশনীর সামনে জটলা। সেখানে সোনার বাংলা সার্কাস ব্যান্ডের একজন ভোকালিস্টের বই এসেছে।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কালি ও কলম পত্রিকার স্টলে যামিনী রায়ের আঁকা নিয়ে প্রকাশিত বই খুঁজতে এসেছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী রিশতা মাহজাবীন। প্রথম আলোকে বললেন, এই শিল্পীর কাজ রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায় ছবি আঁকার সময়। ইন্টারনেটে অনেক ছবি থাকলেও বইয়ের পাতায় আঁকাগুলো হয় বিস্তারিত। তাই হয়তো শিল্পীরা জয়নুল বা যামিনীর কাছে ফিরে যান এখনো।
এই অতীতে ফিরে যাওয়ার রেশ পাওয়া যাবে অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত কবি ফরিদ কবিরের নীল মাকখির চোখ–এ। এ উপন্যাসে আছে পুরোনো ঢাকার বংশাল, নারিন্দা, জমাদার লেন বা চকবাজারের রহস্যময় গলিতে পাঠকের প্রবেশের পথ। আরও আশা জাগল পাঠক সমাবেশে গিয়ে। সেখানে এসেছে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের পদার্থ বিজ্ঞানের দর্শন অনুবাদ বইটি। এ বইয়ের অনুবাদক আমিনুল ইসলাম ভুইয়া প্রথম আলোকে বললেন, তরুণ যাঁরা বিজ্ঞান পড়েন, তাঁদের বিজ্ঞানের দর্শনটাও পড়া উচিত বলে এই বই অনুবাদ করা। আলাপের সূত্রে তিনি শোনালেন, সৈয়দ মুজতবা আলীর খাইবার গিরিপথ অতিক্রমের একটি রম্যগল্পও।
ফিরতি পথে সেই অসম্ভব ভিড় ঠেলে টিএসসির গেটের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ত্রাহি অবস্থা। এর মধ্যে এক শিশু মাটিতে আছাড় খেল, আরেকজনের চশমার কাচ ভাঙল। প্রথমার স্টলে কেউ এসে খুঁজলেন মির্জা গালিবের গজলের অনুবাদ। গণিত অলিম্পিয়াড ১০১ সমস্যা ও সমাধান, সৈয়দ আবুল মকসুদের সংগ্রহ ও সম্পাদনায় প্রকাশিত ভাসানীর ঐতিহাসিক অভিভাষণ ভালো চলছে বলে জানালেন বিক্রয়কর্মীরা।
একুশের বইমেলা শুরু হয়েছিল সকাল আটটায়। স্বরচিত কবিতাপাঠে দেড় শতাধিক কবি কবিতা পাঠ করেছেন সকালের সাংস্কৃতিক আয়োজনে। বিকেলে মূলমঞ্চে ছিল অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৫।
১৯৭১: কলকাতা কোন্দল১৯৭১ সালে যুদ্ধ না বাধলে শেখ মুজিবুর রহমানই হতেন পাকিস্তানের সরকারপ্রধান। তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর দল এলোমেলো হয়। দেখা যায়, কলকাতায় বসে নেতারা নানান ইস্যুতে কোন্দল করছেন। সব ছাপিয়ে তখন গুরুত্বপূর্ণ হয়েছিল—ভারত সরকারের পরিকল্পনায় সমর্পিত হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষা, নাকি একটা আশু নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে, সে প্রসঙ্গ।
দেখা গেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে ফয়সালার জন্য কেউ ঝুঁকেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। এ নিয়েই প্রবাসী সরকারে বিরোধ ও কোন্দল, যার কেন্দ্রে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ। প্রবাসী সরকার ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নও তখন ভারতের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করে। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ হয়ে পড়ে দুই পরাশক্তির ছায়াযুদ্ধের ক্ষেত্র। তাজউদ্দীন-মোশতাক দ্বন্দ্ব ছিল এরই প্রতিফলন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বুঝতে হলে দুই পরাশক্তির মধ্যকার দ্বন্দ্ব বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। মহিউদ্দিন আহমদের ১৯৭১ কলকাতা কোন্দল বইয়ে পাওয়া যাবে বিষয়গুলো।