২১ ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড়
Published: 21st, February 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দেখা গেছে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। ফাল্গুনের উষ্ণ রোদ আর সন্ধ্যার শীতল হাওয়ার স্পর্শ নিতে গতকাল শুক্রবার যেন তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না সৈকতে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ দিন অন্তত তিন লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে।
পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় ১৫ দিন আগেই কক্সবাজারের সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্টের কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে যায়। এসব হোটেল-রিসোর্টে দেড় লাখ মানুষের রাতযাপনের সুযোগ রয়েছে। সেই হিসাবে অর্ধেক মানুষের থাকার স্থান সংকুলান হওয়ার কথা নয়। এতে যারা বুকিং দিয়ে যাননি তারা দুর্ভোগে পড়তে পারেন।
হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, এবার একুশে ফেব্রুয়ারির ছুটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে পড়ায় পর্যটক কম হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে কক্সবাজারে হোটেল-মোটেলের ধারণক্ষমতার বেশি লোকসমাগম হয়েছে। যারা কক্ষ বুকিং দিয়ে আসেননি তারা কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।
এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সদস্য। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে এবং সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষায় প্রস্তুত রয়েছেন লাইফ গার্ড কর্মীরা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, পর্যটকদের সেবা দিতে কক্সবাজারে প্রশাসন সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে। সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্যকেন্দ্র। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে রয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ২১ ফ ব র য় র
এছাড়াও পড়ুন:
পর্যটনে সাতছড়ি উদ্যানের হাতছানি
পর্যটক আকষর্ণে ভূমিকা রাখছে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। উদ্যানের রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ। বছরের পর বছর ধরে উদ্যানটি পর্যটকদের মন জয় করে চলেছে। ঈদ, বর্ষবরণ ও পূজায় বৃদ্ধি পায় পর্যটক সমাগম।
এ উদ্যানের ভেতরে রয়েছে অন্তত ২৪টি আদিবাসী পরিবারের বসবাস। রয়েছে বন বিভাগের লোকজন। পর্যটকদের জন্য চালু আছে প্রজাপতি বাগান, ওয়াচ টাওয়ার, হাঁটার ট্রেইল, খাবার হোটেল, রেস্ট হাউস, মসজিদ, রাত যাপনে স্টুডেন্ট ডরমিটরি।
উদ্যানে দুই শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধা জারুল, আওয়াল, মালেকাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তুর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৬ প্রজাতির উভচর রয়েছে।
আরও আছে প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখি। রয়েছে লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, উল্লুক, ভাল্লুক, চশমাপরা হনুমান, শিয়াল, কুলু বানর, মেছো বাঘ, মায়া হরিণের বিচরণ। সরীসৃপের মধ্যে আছে নানা জাতের সাপ। কাও ধনেশ, বন মোরগ, লাল মাথা ট্রগন, কাঠঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলদে পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাসস্থল এই উদ্যান।
এ উদ্যান ছাড়াও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে জেলার মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, বিভিন্ন চা বাগান, শাহাজিবাজার রাবার বাগান। চুনারুঘাট উপজেলার মুড়ারবন্দের সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (র.) এর মাজার, কালেঙ্গা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য, বিভিন্ন চা ও রাবার বাগান।
বানিয়াচং উপজেলার সাগরদিঘী, লক্ষ্মীবাওড় জলাবন, বিথঙ্গল আখড়া। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উচাইল শংকরপাশা শাহী মসজিদ ও বাহুবল উপজেলার দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন হাওড় এলাকা। জেলা ছাড়া দেশের নানা প্রান্তের পর্যটকরা এসব স্থানে অতি সহজে যেতে হলে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় আসতে হবে। পরে এ স্থান থেকে গাড়ি করে দর্শনীয় স্থানগুলোকে ভ্রমণ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা মাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, “বর্তমানে পর্যটকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানই। এ উদ্যানে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পর্যটকদের অবস্থান লেগেই থাকে। কারণ, এখানে সহজেই আসা যায়। উদ্যানের গভীর অরণ্যে দেখা যাচ্ছে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণি। আশেপাশে রয়েছে চা বাগান। পাশেই তেলিয়াপাড়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ। উদ্যানে রয়েছে থাকা-খাওয়ার সু-ব্যবস্থা। রয়েছে নিরাপত্তা।”
তিনি বলেন, “সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পাশাপাশি রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্যে পর্যটক সমাগম বাড়ছে। ঈদে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সাজানো হয়েছে উদ্যানে অবস্থিত দোকানগুলো।”
সাতছড়ি উদ্যানের কাউন্টার দায়িত্বে থাকা সন্ধ্যা রাণী দেববর্মা বলেন, “ঈদে পর্যটক বরণে পুরোপুরি প্রস্তুত সাতছড়ি উদ্যান। এ লক্ষে কাজ করা হয়েছে। রয়েছে নিরাপত্তা।”
সাতছড়ি বন্যপ্রাণি রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, “সাতছড়িতে প্রচুর বন্যপ্রাণি রয়েছে। রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। মনোরম প্রাকৃতি পরিবেশে ঘুরে পর্যটকরা আনন্দিত। ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তা মনিটরিং করা হবে। পরিস্কার করা হয়েছে বসার আসনগুলো।”
কলেঙ্গার রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, “কালেঙ্গায় পর্যটকরা আসছে। তবে সাতছড়ির ন্যায় পর্যটক কালেঙ্গায় আসে না। আমরা পর্যটক আকর্ষণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।”
হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল বলেন, “উন্নত মানের চায়ের কথা মনে পড়তেই যেকয়টি জেলার নাম চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তারমধ্যে হবিগঞ্জ অন্যতম। এ জেলার উত্তরে সুনামগঞ্জ ও সিলেট, পূর্বে মৌলভীবাজার, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। ৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ জেলার এক পাশে হাওড়। অপর পাশে পাহাড়ি এলাকা। মাঝে শিল্পাঞ্চল, গ্রাম ও শহর। এরমধ্যে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান পর্যটক আকর্ষণে বিরাট ভূমিকা পালন রাখছে।”
জানা গেছে- সাতছড়িতে প্রতিদিন ৩০০ থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত পর্যটক আসেন। উদ্যানে প্রবেশে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকিট ১১৫ টাকা ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৬০ টাকা। বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১ হাজার ১৫০ টাকা। শুটিংয়ের জন্য ১৩ হাজার ৮০০ টাকা। পিকনিক পার্টির জন্য জনপ্রতি ২৩ টাকা। পার্কিংয়ের জন্য ছোট গাড়ির ফি ১১৫ টাকা ও বড় গাড়ি ফি ২৩০ টাকা।
একইভাবে কালেঙ্গায় টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয়। তবে দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে সবাই প্রবেশ করতে পারেন না। এখানে যাদের অঢেল টাকা রয়েছে, তারা সেখানে ভ্রমণ করতে পারেন। অবশ্য হবিগঞ্জের অন্য দর্শনীয় স্থানগুলোতে টিকিট করার নিয়ম চালু হয়নি।
প্রায় ১৬ হাজার একরজুড়ে অবস্থিত রেমা-কালেঙ্গার বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য মূলত তরফ পাহাড় সংরক্ষিত বনভূমির অংশ, যা দেশের অবশিষ্ট পার্বত্য বনভূমির মধ্যে সর্ববৃহৎ। অভয়ারণ্যটি চুনারুঘাট উপজেলার অন্তর্গত গাজীপুর ও রানীগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বরাবর বিস্তত। অপেক্ষাকৃত দুর্গম স্থানে অবস্থিত বলে এই সমৃদ্ধ মিশ্র চিরহরিৎ বনটি এখনো টিকে রয়েছে। অভয়ারণ্যটির আশেপাশে রয়েছে ৩টি চা-বাগান।
রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্যে ৩৭ প্রজাতির স্তণ্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, ৭ প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ত্রিপুরা, সাঁওতাল ও উড়ংরা এই বনভূমির আশেপাশে এবং অভ্যন্তরে বসবাস করছে।
ঢাকা/এস