দক্ষিণ এশিয়ায় সংস্কারের চাপ ভেতরের চেয়ে বাইরের বেশি, সানেমের সম্মেলনে বক্তারা
Published: 21st, February 2025 GMT
বাণিজ্য, অর্থনীতিসহ রাজনৈতিক পর্যায়ে দক্ষিণ এশিয়ায় যেসব সংস্কার হওয়া প্রয়োজন, বিভিন্ন কারণে তা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দক্ষিণ এশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে সংস্কার হয় না। যেসব কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী আছে, তারা নিজেদের স্বার্থে সংস্কার হতে দেয় না।
অনেক ক্ষেত্রে সংস্কারের চাহিদা বা চাপ বাইরে থেকে যতটা আসে, ভেতর থেকে ততটা আসে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতাকাঠামো অনেকটা মধ্যবাম ঘরানার, সে কারণে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী যেসব সংস্কার অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে হওয়া দরকার, তা হয় না।
শুক্রবার সন্ধ্যায় গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের অষ্টম বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা ভার্চ্যুয়ালি এসব কথা বলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিপাদ্য ছিল ইমপ্লিকেশনস ফর জিওইকোনমিক ফ্র্যাগমেন্টশন ফর সাউথ এশিয়া (দক্ষিণ এশিয়ায় ভূ–অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার প্রভাব)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা পেশ করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও ফান্সিসকো ডি ওহনসোর্জ। তিনি মূলত দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য উদারীকরণ ও বাজার উন্মুক্ত করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ভূরাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার কারণে বিভিন্ন দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমছে। দক্ষিণ এশিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলোর নিজেদের মধ্যকার সংযোগ অতটা না থাকলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তারা বিনিয়োগ পাচ্ছে। বাণিজ্যও করছে অনেক দেশের সঙ্গে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে এর পরিমাণ অতটা বেশি নয় যে পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা থেকে এ অঞ্চলের দেশগুলো তেমন কোনো সুবিধা নিতে পারে।
ফান্সিসকোর পরামর্শ, এ বাস্তবতায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত যত বেশি বাজার উন্মুক্ত করা যায়, তত বেশি উন্মুক্ত করা। কখন কে শত্রু হয়ে যায়, তা বলা যায় না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আছে; কিন্তু একই সঙ্গে বিষয়টি বহুপক্ষীয় সহযোগিতার আবরণে দেখতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলো যথাযথ পরিমাণে অর্থায়ন পাচ্ছে কি না এবং তাদের অভিযোগ-আপত্তি ঠিকঠাক আমলে নেওয়া হচ্ছে কি না, তা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বক্তব্য, এ উপস্থাপনায় বহুপক্ষীয় কাঠামোর বিষয়টি আসেনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, সহযোগিতা কেবল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়, সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উদীয়মান দেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি। তা না করে কেবল বাণিজ্য–সহযোগিতা বৃদ্ধি করলে যদি দেখা যায়, সেই দেশ শেষমেশ আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে, তাহলে লাভ নেই।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আইসিআরআইইআরের পরিচালক দীপক মিশ্র পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার তুলনা করেন। বলেন, পূর্ব এশিয়ার সব কটি দেশের সঙ্গে চীনের কমবেশি সীমান্তবিরোধ আছে; কিন্তু প্রতিটি দেশের সঙ্গেই চীনের অবাধ বাণিজ্য আছে, অর্থাৎ তারা রাজনীতিকে অর্থনীতি থেকে আলাদা করতে পেরেছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার বেলায় ঘটছে ঠিক তার বিপরীত, এখানে রাজনীতি মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। তাঁর পরামর্শ, দক্ষিণ এশিয়ার নীতিপ্রণেতাদের আরও বেশি নমনীয় ও গতিশীল হতে হবে। একই সঙ্গে নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক মনোভাবের রাশ টেনে ধরে উদ্যোক্তার মনোভাব নিতে হবে।
আরেকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন দীপক মিশ্র, সেটি হলো বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙে পড়ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে বহুপক্ষীয় সংস্থাগুলো থেকে সরে যাচ্ছে বা তার ঘোষণা দিয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বাণিজ্যের সম্ভাবনা আরও বাড়াতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সান্তাইয়ানান দেবরাজন বলেন, চীন ও তাইওয়ান পরস্পরের শত্রু। তারপরও দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাধা নেই। এমনকি চীন তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী, অর্থাৎ তারাও অর্থনীতিকে রাজনীতি থেকে আলাদা করতে পেরেছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আপেক্ষিক স্বাধীনতা ভোগ করছে; যদিও একটা সময় তারা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। অর্থাৎ অর্থনীতিকে যে রাজনীতি থেকে আলাদা করা সম্ভব, তার নজির আছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
তিন দিনব্যাপী সানেমের এই অর্থনীতিবিদ সম্মেলন ২৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক অন ষ ঠ ন আরও ব
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের আগে তসবি–আতর–টুপির দোকানে ভিড়
‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’, কাজী নজরুল ইসলামের এই গানের মতো রোজা শেষে ঈদের দিনে বাঙালি মুসলমানের খুশির যেন শেষ নেই। আর ঈদ উপলক্ষে নতুন জামা–জুতোর সঙ্গে কেনাকাটার প্রধান অনুষঙ্গ সুগন্ধি, আতর, তসবি, টুপি ও জায়নামাজ। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসে পাঞ্জাবির সঙ্গে মিলিয়ে টুপি ও পছন্দের সুবাস গায়ে মাখাতে আতর ও টুপির দোকানে যেন ভিড় আরও বাড়ে। মুসল্লিরা বাহারি টুপি, নকশা ও কারুকাজ করা জায়নামাজের সঙ্গে খুঁজে নেন পছন্দের আতর। এবারও ঈদুল ফিতরের দরজায় দাঁড়িয়ে শনিবার বায়তুল মোকারম মসজিদ মার্কেটে তরুণ–বৃদ্ধ সববয়সী মুসল্লিদের তসবি–আতর–টুপির দোকানে কেনাকাটায় ভিড় দেখা গেছে।
সরেজমিনে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, দেশে বানানো টুপির পাশাপাশি মার্কেটের দোকানগুলোতে আছে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও দুবাইয়ের টুপি। মালয়েশিয়ার তৈরি ভেলবেট মাহতির টুপি, ইন্ডিয়ান বুরি টুপি, সৌদির বুগিস টুপি। এসব টুপির দাম ৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত। পাকিস্তানি টুপি ২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এর মধ্যে পাথরের কাজ করা পাকিস্তানি টুপি ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মোটামুটি ভালো মানের একেকটি গোলটুপির দাম রাখা হচ্ছে ১০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে, একটু উন্নত টুপির দাম পড়ছে ২৫০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।
বরকতি আতর হাউসের কর্ণধার সমকালকে বলেন, ‘২০ রমজানের পর থেকে টুপির বাজারে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। আতর-টুপি বেশি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা দেশি আতরের পাশাপাশি বিদেশি আতর-টুপি ও তসবি এনেছি।’
সুগন্ধি লাগানো মহানবীর (সা.) সুন্নত। তিনি সুগন্ধি লাগিয়ে ঈদগাহে যেতেন। তাই সব শ্রেণির মুসল্লি সুগন্ধি লাগিয়ে ঈদগাহে অথবা মসজিদে যান। ঈদের দিন সদ্য ভাজ ভাঙা পাঞ্জাবিতে আতরের সুবাস, নতুন টুপি আর হাতে জায়নামাজ মুসলমানদের চিরচেনা রুপ। দেশের বাজারে দেশীয় আতরের সঙ্গে মিসর, পাকিস্তান, ফ্রান্সসহ মধ্যপ্রাচ্যের নানা ব্র্যান্ডের আতর পাওয়া যায়। এসব আতরের মধ্যে রয়েছে হাটকরা উদ, স্টাইল উদ, হোয়াট উদ, আগর, আম্বার, রোজ আইটেম, দরবার, জান্নাতুল ফেরদৌস ইত্যাদি। ১ মিলিগ্রাম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আতর পাওয়া যাচ্ছে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে।
লালবাগ থেকে হোসেন আলীর সঙ্গে টুপি আতর কিনতে মার্কেটে এসেছেন ছেলে রেজোয়ান আহমেদ। সমকালকে রেজোয়ান বলেন, ‘ঘরের সবার জন্য জামা-কাপড়সহ অন্যান্য সব কেনাকাটা শেষ। তবে ঈদের জন্য নতুন করে টুপি এবং আতর কেনা বাকি ছিল। বাবাকে নিয়ে আতর–টুপি কিনতে এসেছি। বাবার পছন্দ কড়া সুবাসের আতর। আমি নেব হালকা সুবাসের। এরপর পছন্দমতো টুপি আর জায়নামাজ কিনব।’
রমজানের শুরু থেকেই আতর টুপির সঙ্গে তসবি কেনা শুরু হয়। অন্যসময় টুকটাক বিক্রি হলেও রমজানে আতর–তসবির দোকানে ভিড় বাড়ে। নানা পদের তসবি আছে বাজারে। কাঠের তৈরি, পাথরের তৈরি ও ক্রিস্টালের তৈরি তসবিও আছে বাজারে। এসবের দাম পড়বে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকা। ইউজার পাথরের তৈরি তসবি দাম পড়বে ৬ হাজার টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে ক্রিস্টাল ১০০ থেকে ২০০ টাকা, চন্দন দেড় হাজার, জয়তুন ১২০০, টাইগর তসবিহ দুই হাজার, কাঠের তৈরি তসবিহ ৫০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা।
ঈদের নামাজের অন্যতম অনুষঙ্গ বৈচিত্র্যময় নকশা ও কারুকাজ করা জায়নামাজ। বাজারে তুরস্ক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বেলজিয়াম থেকে আসা বিদেশি জায়নামাজের চাহিদাই বেশি। এসব জায়নামাজের দাম পড়ছে সাড়ে ৩০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত।