ঢাকা–রাজশাহী রুটে একটি চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানিসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

শুক্রবার দুপুরে তাকে থানার দায়িত্ব থেকে অবমুক্ত হয়ে জেলা পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত হতে বলা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন। 

পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাওয়া মাত্র তাকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে জেলা পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ডাকাতি ঘটনার চার দিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় ৮-৯ জনকে আসামি করে মামলাটি করেছেন ভুক্তভোগী বাসযাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী। 

আজ মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মির্জাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা, তৎসহ ৩৯৫ ও ৩৯৭ পেনাল কোড ১৮৬০ আইনের ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।’

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত সোমবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে বাদী ও তাঁর সঙ্গে থাকা সোহাগ হোসেন ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস বাসে ওঠেন। ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আরও ১০-১২ যাত্রীকে ওঠান চালক। রাত ১টার দিকে গাজীপুরের চন্দ্রা বাইপাস এলাকায় এসে চা-বিরতির জন্য বাসটি দাঁড় করানো হয়। প্রায় ১৫ মিনিট পর সেখান থেকে আরও তিন-চারজন নতুন যাত্রী উঠিয়ে বাসটি চলতে থাকে। দেড়টার দিকে গাজীপুর হাই-টেক সিটি পার্ক এলাকা অতিক্রমের সময় হঠাৎ ৮-৯ জন হাতে চাকু ও চাপাতি নিয়ে তাদের সিট থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে এবং চুপ থাকতে বলে।

এতে বলা হয়, কথা বললে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ সময় ডাকাত দলের তিন সদস্য গিয়ে চালককে টেনেহিঁচড়ে সিট থেকে ফেলে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ছয়-সাত ডাকাত চাকু ও চাপাতি দেখিয়ে হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোদের কাছে টাকা-পয়সা যা কিছু আছে সব দিয়ে দে।’ ডাকাতরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোনসেট, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিস কেড়ে নেয়। এ সময় দুই-তিন ডাকাত বাসে থাকা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। রাত আনুমানিক ৪টার দিকে ডাকাতরা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬০০ টাকার মালপত্র ডাকাতি করে নন্দন পার্কের সামনে নেমে যায়। 

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, যাত্রীরা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনা জানার পর পুলিশ তাদের মির্জাপুর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে যাত্রীরা মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসারের সঙ্গে দেখা করে ডাকাতির বিষয়ে আবহিত করেন। পুলিশ অপেক্ষা করতে বললে কয়েক মিনিট পর চলে যান তারা। নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌঁছার পর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বড়াইগ্রাম থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান যাত্রীরা। পুলিশ গিয়ে বাসের চালক, সুপারভাইজার এবং হেলপারকে আটক করে।

জানা গেছে, বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ বুধবার তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন দেন। 

বাদী ওমর আলী বলেন, ‘ডাকাতরা অনেক যাত্রীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। যার কাছে যা ছিল, সব নিয়েছে। আমার ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। বাসে ৪০ বছরের একজন ও ২০-২১ বছরের এক নারী ছিলেন। তাদের টেনেহিঁচড়ে সবকিছু নিয়েছে ডাকাতরা। এ ছাড়া তারা তাদের শরীরে হাত দিয়েছে।’

বড়াইগ্রাম ও নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমীন নেলী বলেন, ঘটনাটি যেহেতু টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা এলাকায় ঘটেছে, সে কারণে মির্জাপুর থানায় মামলা রুজু হয়েছে। যাত্রীদের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুরে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ, মুক্তিপণ নেওয়ার সময় পুলিশ সদস্যসহ চারজন আটক

শরীয়তপুরের ডামুড্যায় দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে আটক করে পিটুনি দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। পরে তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ডামুড্যা বাসস্টান্ড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

আটক ব্যক্তিরা হলেন বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার গারফা এলাকার কৌশিক আহমেদ (৩০), শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধুলকুড়া এলাকার কাউসার তালুকদার (২৯), মাগুরা জেলার বাসিন্দা রুবায়েত মীর (২৭) ও কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার আমৌদা এলাকার শরীফ হোসেন (৩৫)। রুবায়েত মীর চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য, কৌশিক ও কাউসার পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম।

এ সম্পর্কে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি চক্র দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছিল। মুক্তিপণ আদায় করার সময় জনতার হাতে ওই চক্রের চারজন ধরা পড়েন। তখন পুলিশ তাঁদের আটক করে। ওই চারজনের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। আর পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা এখানে কীভাবে এসেছিলেন, কোথায় কর্মরত আছেন, তা–ও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ হেফাজতে তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।’

পুলিশ ও ডামুড্যা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকরকান্দি এলাকার জুয়েল সরদার ও ফয়সাল সরদার ডামুড্যা বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী। গতকাল রাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ওই দুজন বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডামুড্যার দারুল আমান বাজার এলাকায় কয়েকজন ওই দুই ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। অপহরণকারী দুই ব্যবসায়ীর কাছে সারা দিনে কাপড় বিক্রির টাকা চান। তবে ওই দুজনের কাছে কোনো টাকা ছিল না। তখন অপহরণকারী ব্যক্তিরা মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা চান। দুই ব্যবসায়ী ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। তখন অপহরণকারী ব্যক্তিরা ওই দুই ব্যবসায়ীকে নিয়ে মাদারীপুর শহরের লেকের পাড়ে যান। সেখানে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণকারী ব্যক্তিরা চার লাখ টাকা আদায় করেন।

বাকি ছয় লাখ টাকা আদায় করার জন্য দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁরা ওই দুজনকে নিয়ে ডামুড্যা বাসস্টান্ড এলাকায় যান। সেখানে দুই ব্যবসায়ী গাড়ির ভেতর থেকে চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। তখন স্থানীয় লোকজন ডাকাত বলে চিৎকার দেন। তখন অপহরণকারী ব্যক্তিরা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। স্থানীয় লোকজন অপহরণকারী চারজনকে আটক করে পিটুনি দেন। পরে ডামুড্যা থানার পুলিশ সদস্যরা এসে তাঁদের উদ্ধার করেন। ওই গাড়িতে থাকা আরও চারজন পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে জয় পোদ্দার নামে আরেক পুলিশ সদস্য ছিলেন।

আটক হওয়ার পর অপহরণকারী দলের সদস্য রুবায়েত মীর বলেন, ‘কাউসার তালুকদার আমাদের এখানে এনেছেন। তিনি এই মিশনে আমাদের বস। অপহরণের সময় যেই টাকা পেয়েছিলাম, তা কাউসারের কাছে। আমি আর কিছু জানি না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ