চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনায় বড়াইগ্রাম থানার ওসিকে প্রত্যাহার
Published: 21st, February 2025 GMT
ঢাকা–রাজশাহী রুটে একটি চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানিসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে তাকে থানার দায়িত্ব থেকে অবমুক্ত হয়ে জেলা পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত হতে বলা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাওয়া মাত্র তাকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে জেলা পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ডাকাতি ঘটনার চার দিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় ৮-৯ জনকে আসামি করে মামলাটি করেছেন ভুক্তভোগী বাসযাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী।
আজ মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মির্জাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা, তৎসহ ৩৯৫ ও ৩৯৭ পেনাল কোড ১৮৬০ আইনের ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।’
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত সোমবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে বাদী ও তাঁর সঙ্গে থাকা সোহাগ হোসেন ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস বাসে ওঠেন। ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আরও ১০-১২ যাত্রীকে ওঠান চালক। রাত ১টার দিকে গাজীপুরের চন্দ্রা বাইপাস এলাকায় এসে চা-বিরতির জন্য বাসটি দাঁড় করানো হয়। প্রায় ১৫ মিনিট পর সেখান থেকে আরও তিন-চারজন নতুন যাত্রী উঠিয়ে বাসটি চলতে থাকে। দেড়টার দিকে গাজীপুর হাই-টেক সিটি পার্ক এলাকা অতিক্রমের সময় হঠাৎ ৮-৯ জন হাতে চাকু ও চাপাতি নিয়ে তাদের সিট থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে এবং চুপ থাকতে বলে।
এতে বলা হয়, কথা বললে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ সময় ডাকাত দলের তিন সদস্য গিয়ে চালককে টেনেহিঁচড়ে সিট থেকে ফেলে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ছয়-সাত ডাকাত চাকু ও চাপাতি দেখিয়ে হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোদের কাছে টাকা-পয়সা যা কিছু আছে সব দিয়ে দে।’ ডাকাতরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোনসেট, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিস কেড়ে নেয়। এ সময় দুই-তিন ডাকাত বাসে থাকা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। রাত আনুমানিক ৪টার দিকে ডাকাতরা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬০০ টাকার মালপত্র ডাকাতি করে নন্দন পার্কের সামনে নেমে যায়।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, যাত্রীরা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনা জানার পর পুলিশ তাদের মির্জাপুর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে যাত্রীরা মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসারের সঙ্গে দেখা করে ডাকাতির বিষয়ে আবহিত করেন। পুলিশ অপেক্ষা করতে বললে কয়েক মিনিট পর চলে যান তারা। নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌঁছার পর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বড়াইগ্রাম থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান যাত্রীরা। পুলিশ গিয়ে বাসের চালক, সুপারভাইজার এবং হেলপারকে আটক করে।
জানা গেছে, বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ বুধবার তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন দেন।
বাদী ওমর আলী বলেন, ‘ডাকাতরা অনেক যাত্রীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। যার কাছে যা ছিল, সব নিয়েছে। আমার ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। বাসে ৪০ বছরের একজন ও ২০-২১ বছরের এক নারী ছিলেন। তাদের টেনেহিঁচড়ে সবকিছু নিয়েছে ডাকাতরা। এ ছাড়া তারা তাদের শরীরে হাত দিয়েছে।’
বড়াইগ্রাম ও নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমীন নেলী বলেন, ঘটনাটি যেহেতু টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা এলাকায় ঘটেছে, সে কারণে মির্জাপুর থানায় মামলা রুজু হয়েছে। যাত্রীদের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘ডেভিল হান্টে’ ধরা আরও ৫৩২ জন
অপারেশন ‘ডেভিল হান্টে’ এক দিনে আরও ৫৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। গতকাল বুধবার পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ও অন্যান্য অপরাধে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল একই সময় পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১ হাজার ৫৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে অপারেশন ডেভিল হান্টে ৫৩২ জন এবং অন্যান্য মামলা ও ওয়ারেন্ট থাকা ১ হাজার ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, চাপাতি, ছুরি ও কিরিচ উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য বলছে, বগুড়ার আদমদীঘিতে বিএনপি অফিসে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ-সংক্রান্ত মামলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাপ প্রামাণিককে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় একই রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উজানচর ইউনিয়ন মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি নাজমা বেগমকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ডা. খোকন আচার্য ও পরিমল চক্রবর্তী নামে দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে। ডা. খোকন উপজেলার বিদ্যাকুট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং পরিমল দলটির ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। একই রাতে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার করা হয় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আবিদ আল হাসান সৈকতকে।
গত ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী দেশব্যাপী অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’ শুরু করে। এই বিশেষ অভিযানে গত ১০ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি মোট ৪ হাজার ৫০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে প্রথম দিন ৯ ফেব্রুয়ারি ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তারের আলাদা কোনো পরিসংখ্যান দেয়নি পুলিশ সদরদপ্তর। ওই দিন সারাদেশে সামগ্রিকভাবে ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানা গেছে।