কাশ্মীর বলতে দুনিয়া আসলে কাশ্মীর উপত্যকাকেই জানে। অথচ কাশ্মীরের ভৌগোলিক অবস্থান আরো বিস্তৃত। বিভিন্ন সময়ে কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে বর্তমান মানচিত্রে এসে উপনীত হয়েছে কাশ্মীর। জম্মু এবং কাশ্মীর নামক দুটি আলাদা দেশীয় রাজ্য মিলে একটা ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছিল ১৯ শতকে।

হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুতে, দেশভাগের পর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা কাঠুয়া, রাজৌরি এবং পুঞ্চে গণহত্যা চালিয়ে বদলে দেওয়া হয়েছে জনমিতি। ১৯৪১-এর দিকে ৪১% মুসলিম অধ্যুষিত জম্মুতে এখন মুসলমানদের সংখ্যা নেমে এসেছে ১১%-এ। 

অথচ সেখানে হিন্দুরা অক্ষত থেকেছে। আর কাশ্মীর উপত্যকায় মুসলিমদের ওপর কোনো জুলুম নেমে এসেছে তা আর নতুন করে বয়ান করবার প্রয়োজন নেই। মনে মনে খালিদ ভাবল, এই পৃথিবীতে শুধু মুসলিমরা ব্যতীত সবাই মানবিক অধিকার পাওয়ার হকদার। কেননা শুধু কাশ্মীর নয়-ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তানে এখনো দলে দলে মৃত্যুবরণ করছে মুসলমানরা।

এটা ফ্ল্যাপের লেখা। লেখক সাদিক হাসানের প্রথম উপন্যাস ‘আজাদির মুসাবিদা’। বইমেলায় প্রকাশিত এই বইটি কাশ্মীরের ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান, এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর বিশ্লেষণধর্মী লেখা উপস্থাপন করা হয়েছে। 

ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত উপন্যাসটি বইমেলায় ২৮ নম্বর প্যাভিলিয়ন পাওয়া যাবে। এ বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন নাওয়াজ মারজান। বইয়ের মূল্য ৭০০ টাকা টাকা, ২৫ শতাংশ ছাড়ে বইটি ৫২৫ টাকায় পাওয়া যাবে। পাশাপাশি রকমারি, ওয়াফিলাইফেও পাওয়া যাবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘মুক্তপ্রদীপের মতো’ জ্বলে আছে বরুণের ফুল

ভোরের আলো ফুটেছে অনেক আগেই। সেই অর্থে মানুষের জেগে ওঠার সরবতা তখনো ছড়িয়ে পড়েনি। চারপাশে সুনসান স্তব্ধতা গা এলিয়ে আছে। ছিটেফোঁটা দু-চারজন করে বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে বের হয়ে আসছেন, পথে হাঁটছেন। মনু নদের পাড়টি আরও নীরব, জনমানবহীন শান্ত একটুকরা নির্মল হাওয়ার ভূমি হয়ে আছে। তখন ‘সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ/ সেখানে বারুণী থাকে গঙ্গাসাগরের বুকে, সেখানে বরুণ...।’

জীবনানন্দ দাশের নাটার রঙের মতো রাঙানো সূর্যের জেগে ওঠার এই মুহূর্তে একফালি মনু নদ কি আর গঙ্গাসাগরের মতো কোনো উপমার সঙ্গে সমান হতে পারে, চলতে পারে! তা না-ই হলো, তবু সেখানে গঙ্গাসাগরের বুকের কাছে যেমন বরুণ থাকে, তেমনই এখানেও এই মনু নদের পাড়ে চুপি চুপি, শাখায় শাখায় ফুলের বন্যা নিয়ে জেগে আছে বরুণের গাছ।

বসন্তের সকাল, মৃদু বাতাসে তখনো কিছুটা ঠান্ডার মতো ভাব আছে। সময় উড়ছে সকালের নরম রোদের পালকে। এ রকম একটা সময়ে পথ চলতে চলতে মৌলভীবাজার শহরের ফরেস্ট অফিস সড়কের ভৈরব থলির কাছে পৌঁছেই দেখা হয়ে যায় তার সাথে, তাহাদের সাথে। ‘বাসা তোমার সাতসাগরের ঘূর্ণী হাওয়ার বুকে!/ ফুটছে ভাষা কেউটে ঢেউয়ের ফেনার ফণা ঠুকে!/ প্রায়ণ তোমার প্রবালদ্বীপে, পলার মালা গলে/ বরুণরানি ফিরছে যেথা, মুক্তপ্রদীপ জ্বলে।’ অনেকটা তা–ই, গাছের শাখায় শাখায় সবুজ পাতার ফাঁকে মুক্তপ্রদীপের মতো জ্বলে আছে সাদা, গোলাপি, সবুজের মিশ্রণে অসংখ্য বরুণ ফুল।

ফুলটির পোশাকি নাম বরুণ হলেও আরও অনেক নাম আছে। যেমন: বৈন্যা, শ্বেতপুষ্প, কুমারক, সাধুবৃক্ষ, শ্বেতদ্রুম।

বছর ঘুরে বরুণ রানির ফেরাটা এ রকমই মনে হয় রাজকীয়, এ রকমই জাঁকজমকের। গাছজুড়ে ফুটে আছে ফুল। দু-চারটা শালিক, ঘুঘু পাখি উড়ে আসছে, ফুলের ওপর বসছে। এদিক-ওদিক তাকিয়ে আবার ফিরে যাচ্ছে। ফোটা ফুলের পাপড়িরা বাতাসের আহ্লাদে টুকটুক করে ঝরে পড়ছে গাছের নিচে। পাপড়ির নকশিকাঁথা যেন কেউ বিছিয়ে রেখেছে ঘাসের ওপর। বেশ বড়সড় ঝাঁকড়া মাথার গাছ। ডালগুলোও চারদিকে ডানা মেলে আছে। পাশেই মনু নদ। হয়তো কোনো একদিন এই নদের পানিতে ভেসে এসেছিল এই বরুণগাছের ফল। সেই পাকা ফলটি চরের মতো জেগে থাকা পাড়ের মাটিতে আশ্রয় পেয়ে গাছ হয়ে মাথা তুলেছে। তারপর বসন্তের মাঝামাঝি এলেই ডালে ডালে ফুলের জলসা বসছে।

ওখানেই, বরুণগাছটির কাছে এই সাতসকালে দেখা শহরের সৈয়ারপুর এলাকার বাসিন্দা সাংস্কৃতিক সংগঠক শৈলেন রায়ের সঙ্গে। তিনি জানালেন, গাছটি বেশ অনেক বছর ধরে দেখছেন। তবে গাছে যে এত ফুল ফোটে এবং এই গাছের নাম যে বরুণ, তা আগে সেভাবে খেয়াল করেননি। গাছটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর বা এর আশপাশে হতে পারে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, গাছটি এখানে কেউ রোপণ করেননি, গাছটি এমনিতেই গজিয়ে উঠেছে। গাছটি কারও হাতে কাটা পড়েনি বলে এখনো ফুলে ফুলে সাজতে পারছে।

বরুণ গাছের সবচেয়ে পছন্দের আবাসই হচ্ছে জলাভূমি এলাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ