জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্য রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদুর রহমানের ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্ট নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। তাঁকে এনসিটিবির কমিটি থেকে বহিষ্কার করে বিচার করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে হেফাজতের দুই নেতা বলেন, ‘আমরা হতবাক হয়ে গেছি, এনসিটিবির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে দায়িত্বরত একজন সদস্য কীভাবে এমন অসভ্য, কুরুচিপূর্ণ ভাষায় ইসলাম অবমাননা করতে পারে! ইসলামের একটি মর্যাদাপূর্ণ নফল ইবাদত তাহাজ্জুদ এবং আল্লাহ সম্পর্কে তার শব্দচয়ন ও ভাষা অসভ্যতার সব সীমা ছাড়িয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার দায়ে রাখাল রাহাকে এনসিটিবির কমিটি থেকে দ্রুত বহিষ্কার করে বিচারের মুখোমুখি করতে সরকারের কাছে দাবি জানান হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ দুই নেতা।

বিবৃতিতে বলা হয়, সংখ্যালঘুর ধর্ম কিংবা সংখ্যাগুরুর ধর্ম হোক, কোনো ধর্মের অবমাননাই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কারও ভিন্নমত থাকতেই পারে, গঠনমূলক ভাষায় তা প্রকাশ করতে কোনো বাধা নেই। গঠনমূলক সমালোচনা ও মতবিনিময় বরং একটি সমাজের সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক মনোকাঠামোর উন্নতির জন্য সহায়ক। কিন্তু গালাগাল, কটূক্তি ও অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার সভ্যতার মাপকাঠির মধ্যে পড়ে না।

হেফাজতের দুই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘ঘৃণা ছড়ানো বাক্‌স্বাধীনতা নয়। বাক্‌স্বাধীনতার সীমা-পরিসীমাগুলোও সবার জানা থাকা জরুরি। কিন্তু এ দেশে মূলত ব্যক্তিগত হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে নাস্তিকতা, মুক্তমনা ও প্রগতিশীলতা চর্চার নামে ইসলাম, রাসুল (সা.

) ও মুসলমানদের নিয়ে জনপরিসরে কটূক্তি ও ঘৃণার চর্চা দেখা যায়। এটা রোধ করার দায়িত্ব সরকারের।’ তাঁরা বলেন, বিশেষত দিল্লির যোগসাজশে অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নতুন অস্থিরতা তৈরি করার উদ্দেশ্যে কিছু স্বার্থান্বেষী প্রগতিশীল লোক তৌহিদি জনতাকে একের পর এক উসকানি দিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা সরকারকে অবিলম্বে এ সব উসকানিদাতাকে থামাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

পৃথক বিবৃতিতে রাখাল রাহার ধর্ম অবমাননার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী। তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার দায়ে রাখাল রাহাকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনস ট ব র ইসল ম র র কম ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আগামী ঈদ আরাকানে, আশা রোহিঙ্গাদের

দেশব্যাপী ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে আজ। মিয়ানমার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত শরণার্থী শিবিরগুলোতে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসব উদযাপন করেছেন রোহিঙ্গারা। তবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে শিশুদের আনন্দ চোখে পড়লেও, বড়রা কাটিয়েছেন বিষাদে। তারা আশা করছেন, আগামী ঈদ আরাকানে কাটাবেন।

আজ সোমবার সকালে ৮টার পর উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা। তাদের রাখাইনে মিয়ানমার সেনাদের চালানো নির্যাতনের বিভীষিকা আর অভাবের দাপটে এই উৎসবের রঙ সেখানে অনেকটাই বিবর্ণ।

রোহিঙ্গা শিবিরে ঈদের নামাজ আদায়ের পর কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন ইমাম ও মুসল্লিরা। মোনাজাতে অংশ নেওয়া মুসলিমরা নির্যাতনের বিচার চেয়ে ও বাংলাদেশে সরকার-জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। 

এদিকে সম্প্রতি ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা যেন আগামী ঈদ নিজেদের মাতৃভূমিতে উদযাপন করতে পারে-এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া গতকাল সকালে নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে ঈদের শুভেচ্ছা জানান ইউনূস। 

এ বিষয়ে টেকনাফের লেদা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘ঈদ আসলেও আমাদের মাঝে তেমন আনন্দ নেই। কেননা নিজ দেশে ঈদ উদযাপন আর ভিনদেশে ঈদ পালন করা অনেক ভিন্ন। সেদেশে (মিয়ানমারের) আমাদের বাপ-দাদার কবর রয়েছে। যুগ যুগ ধরে সেখানে থাকা অবস্থায় ঈদের নামাজ শেষ করে তাদের কবর জিয়ারত করতাম। কিন্তু এখন সেটা সম্ভব না। এর চেয়ে কষ্ট কি আর হতে পারে।’ 

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্প পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গা যেন আগামী ঈদ নিজেদের মাতৃভূমিতে উদযাপন করতে পারে-এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, সেটা শুনে আমাদের মাঝে নিজ দেশে ফেরার স্বপ্ন আলোর মুখ দেখছে বলে আশা করছি। বিশেষ করে ঈদের নামাজে দোয়া চেয়েছি; এ ঈদ যেন শেষ ঈদ হয় এ দেশে (বাংলাদেশ)। আগামীতে যেন আমাদের ঈদ আরাকানে হয়; এমন প্রত্যাশা আমাদের।’

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনা নির্যাতনের ফলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা এসেছিল। পুরানোসহ উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।

শরণার্থী জীবনে ‘টাকা-পয়সা নাই, চলাফেরার সুযোগ নাই’, মন্তব্য করে মংডু থেকে আসা টেকনাফের জাদিমুড়া ক্যাম্পের বসবাসকারী রশিদ আহমেদ (৭২) বলেন, ‘আমরা দেশে যেভাবে ঈদ করতাম, এখানে সেভাবে ঈদ করতে পারিনি। কারণ, সবকিছুর পরও এটা আমাদের দেশ না। এই জন্য আমাদের কোনো আনন্দ নেই। কোথাও বের হতে ভয় লাগে। বিশেষ করে; সেদেশে (মিয়ানামারে) আমাদের শৈশবের অনেক স্মৃতি রয়েছে। সেখানে আছে বাপ-দাদাসহ স্বজনদের কবর।’ 

আজ ঈদের দিন উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবির ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই সেজেগুজে শিশুরা, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে মেতে উঠেছে তারা।

শিশুদের জন্য টেকনাফের লেদা-জাদিমুড়াসহ কয়েকটি জায়গায় নাগরদোলা, চড়কিসহ মিনি মেলা বসেছে। এর আয়োজক নুর কামাল বলেন, এই মেলা কমপক্ষে তিন দিন থাকবে। এখানে শিশুরা এসে খুব আনন্দ উপভোগ করছে।

টেকনাফের জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ নুর বলেন, অনেক আনন্দের ঈদ ছিল মিয়ানমারে। কিন্তু বাংলাদেশে সে খুশির ঈদ হয় না। এখানে মেহমান হিসেবে আছি। দেশে (মিয়ানমারে) ঈদ করে মা বাবার কবর জিয়ারত করতে পারতাম, নিজ মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারতাম। সেটি এখানে সম্ভব হচ্ছে না। নিজ দেশে চলাচল করতে ভয় ছিল না। 

তিনি বলেন, ‘১৪ মার্চ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইফতার মাহফিলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী ঈদ নিজ দেশে উদযাপন করতে পারবে; তাদের এমন কথা শুনে আমাদের মন কেঁদে উঠে আরাকানের জন্য। আশা করছি ,তাদের এমন আশ্বাস আমাদের সাহস জোগায়। কেননা আমাদের খাদ্যসহায়তা সংকট নিয়ে বড় সমস্যা ছিল। কিন্তু তারা (প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস) যাওয়ার পর পরই সমাধান হয়েছে। তাই দেশে ফেরা নিয়ে তাদের কথা বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি খুব।’ 

রোহিঙ্গাদের মতে, কক্সবাজারের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ১৩৫০টি মসজিদ ও ৯৫০টি নূরানি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মত্তব) রয়েছে। এসব মসজিদ ও নূরানি শিক্ষাপ্রতিষ্টানে (আজ) ঈদের নামাজ আদায় করেছেন শরণার্থী রোহিঙ্গারা।

জানতে চাইলে ১৬- এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি কাউসার সিকদার বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ সম্পন্ন হয়েছে। ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা ঈদ উদযাপনে মেতে উঠেছেন। তবে কেউ যাতে ক্যাম্প থেকে বাইরে না যায়, সেজন্য তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্যাম্পে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেখানে নজরদারি রাখা হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ