দেড় দশক পর সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবকে ঘিরে তাঁর জন্মস্থান বরিশালের গৌরনদীতে সরকারিভাবে পালিত হলো ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। এদিন তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। গৌরনদী উপজেলা প্রশাসন ও গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.

আবু আবদুল্লাহ খানের নেতৃত্বে গৌরনদী লাখেরাজ কসবা গ্রামে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবের কবর জিয়ারত করেন সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতারা।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপনের নেতৃত্বে বিএনপি নেতা-কর্মীরা গোলাম মাহবুবের কবর জিয়ারত করেন। এ সময় জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ভাষা আন্দোলনের এক অবিস্মরণীয় নাম কাজী গোলাম মাহবুব। তিনি ছিলেন একজন নিরেট দেশপ্রেমী ও সংগ্রামী। ১৯৫২ সালে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সূচনা বিকাশ ও সফল পরিণতিতে যেসব ভাষাসৈনিকের নাম ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো প্রজ্বলিত, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কাজী গোলাম মাহবুব। ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের কারণে তাঁকে জেল–জুলুমসহ বহু কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে তাঁর নামটি তাই অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত।

ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১৫ বছর ধরে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবের স্মরণে সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত চত্বর ও দুটি তোরণ ভেঙে ফেলা হয়। ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।
জহুরুল ইসলাম আরও বলেন, ১৫ বছর পর এবারই প্রথম ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবকে স্মরণ করে স্বাধীনভাবে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় গোলাম মাহবুব চত্বর পুনর্নির্মাণ ও শহীদ মিনার সংস্কার করে উপজেলা সদরে কেন্দ্রীয়ভাবে শহীদ দিবস পালন করা হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে ‘ভাষা আন্দোলন ও ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সভায় অংশ নেন কাজী গোলাম মাহবুবের মেয়ে মহুয়া মাহবুব খান, ভাষা আন্দোলন মিউজিয়ামের পরিচালক লিপি মাহবুব, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজীব হোসেন, গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইউনুস মিয়া, ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, বিএনপির উপজেলা সদস্যসচিব জহীর সাজ্জাত হান্নান ও বিএনপি নেতা এস এম মনিরুজ্জামান। আলোচনা সভা শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির একাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন গোলাম মাহবুব। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, গোলাম মাহবুবের স্মৃতি রক্ষায় স্থানীয় লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গৌরনদী উপজেলা প্রশাসন ২০০২ সালে উপজেলা পরিষদের প্রধান সড়কের মুখে ‘ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব তোরণ’ নির্মাণ করে। একই সঙ্গে তোরণ থেকে ২৫০ মিটার দূরে প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন মাঠে ‘ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর’ নির্মাণ করে সেখানে তাঁর ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। তার দক্ষিণ পাশেই নির্মাণ করা হয় গৌরনদী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

গৌরনদী উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় গৌরনদী উপজেলা চত্বরকে ‘ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর’ করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০০৭ সালের ৮ মে এর অনুমোদন দেয়।

কাজী গোলাম মাহবুবের পরিবারের অভিযোগ, ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে কাজী গোলাম মাহবুবের নাম মুছে ফেলতে পাঁয়তারা শুরু হয়। ২০১৫ সালে উপজেলা প্রশাসনিক ভবন চারতলা করার সময় তোরণটি ভেঙে ফেলে উপজেলা প্রশাসন। ওই বছরই কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সেখানে নির্মাণ করা হয় একটি মিলনায়তন। একই সঙ্গে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্মিত শহীদ মিনারটিও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর উপলক ষ ব এনপ স মরণ উপজ ল সরক র গ রনদ

এছাড়াও পড়ুন:

‘এক দামের’ নামে ক্রেতা ঠকানোর ফাঁদ

১৫ রমজানের পর থেকে বাজার জমলেও বিক্রি নিয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা। এটি নোয়াখালী জেলার ঈদবাজারের চিত্র। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকানে প্রচুর লোকজনের সমাগম হলেও বেচাবিক্রি কম। বিক্রি গত বছরের তুলনায় অর্ধেক। এর জন্য দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অস্থিরতাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
কলেজছাত্রী সাবিনা আক্তার, রুবিনা আক্তার, আফরোজ, গৃহবধূ ফারজানা ইয়াছমিন, শিক্ষিকা আকলিমা আক্তারসহ অনেক ক্রেতা অভিযোগ করেন, অভিজাত শপিং সেন্টারের মালিকরা এক দামের নামে (ফিক্সড রেট) ক্রেতাকে  ঠকাচ্ছেন। প্রতিটি শাড়ি ও থ্রি-পিসে তারা দ্বিগুণ মুনাফা করছেন। এটি প্রতারণা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন যথাযথ তদারকি করলে ক্রেতা উপকৃত হবেন।  
শপিং মল বিশাল সেন্টারের মালিক শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর ২০ রমজানে দোকানে ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় ছিল। প্রচুর বেচাকেনা হয়েছিল। এ বছর অর্ধেক বিক্রিও নেই। ঈদ উপলক্ষে দোকানে দেড় কোটি টাকার পোশাক তোলা হলেও বিক্রি নেই।’ তিনি বলেন, যাদের হাতে টাকা রয়েছে তারা সবাই পলাতক ও আত্মগোপনে থাকায় কেনাকাটা কম, তাই ব্যবসায় মন্দা চলছে।’
কোলকাতা বাজারের ম্যানেজার মো. আলা উদ্দিন বলেন, ‘আগামী ২৩ মার্চ সরকারি কর্মকর্তাদের মার্চ মাসের বেতনভাতা হবে। এর পর বিক্রি বাড়তে পারে।’ নোয়াখালী সুপারমার্কেট 
ব্যবসায়ী পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসরাম রায়হান বলেন, ‘অন্যান্য বছর ৫-৬ রমজানের পরই বেচাকেনার ধুম পড়ে যায়। কিন্তু এবার ২০ রমজান পেরিয়ে গেলেও কাঙ্খিত বেচা বিক্রি নেই।’
আল মদিনা ক্লথ ষ্টোরের ব্যবস্থাপক মোঃ আসাদুজ্জামান তারেক বলেন, এবার ঈদে জর্জেট ২২০০ থেকে ৫০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিশাল সেন্টারের মো. সোহেল বলেন, পাকিস্তানি সাদা বাহার, সারারা, ভারতীয় গাউনের চাহিদা বেশি। এছাড়া কিশোরিদের সারারা, গাউন, লেহেঙ্গা ও পার্ট ফ্রগ বেশী ছলছে। এসব পোশাকের দাম ৫ থেকে ৯ হাজার টাকা।  
দেশী পোশাক বেনারশী কিংবা জামদানি শাড়ির খ্যাতি দেশজুড়ে থাকলেও ঈদ বাজারে তারা প্রতিফলন নেই। ক্রেতারা বিচিত্র নামের ও বাহারি ডিজাইনের পাকিস্তানি ও ভারতীয় শাড়ির প্রতি ঝুঁকছেন। প্রতিটি দোকানে ৫ হাজার থেকে ২৭ হাজার টাকা দামের ভারতীয় ও পাকিস্তানী শাড়ি রয়েছে। এবার পাকিস্তানী পোশাকের কাছে দেশীয় তৈরি ও ভারতীয় পোশাক কিছুটা মার খেয়েছে। 
নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্যাহ আল ফারুক বলেন, ‘রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ক্রেতা সাধারণ ও ঈদে ঘরমুখী মানুষের নিরাপত্তায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।’
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত শপিং সেন্টারে একদামের নামে (ফিক্সড রেট) ক্রেতা ঠকানোর বিষয়টি তার জানা ছিল না। ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সমম্বয়ে গঠিত ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে। ’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মহান স্বাধীনতা উদযাপনে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
  • সমকালের ঈদসংখ্যা প্রকাশ উপলক্ষে প্রীতি সম্মিলন
  • মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে সরকার
  • মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ
  • বিশ্ব পানি দিবসে ওয়ালটন বাজারে আনল অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওয়াটার পিউরিফায়ার 
  • ৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন, আওতার বাইরে যাঁরা
  • ঈদে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা
  • পাকিস্তানে ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের ভাড়া কমল ২০ শতাংশ
  • ঈদের আগে ও পরের তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক,লরি, কাভার্ড ভ্যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
  • ‘এক দামের’ নামে ক্রেতা ঠকানোর ফাঁদ