বগুড়ার শিবগঞ্জে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফেরার পথে নাগরিক ঐক্যের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলাকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত শিবগঞ্জ উপজেলা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হামলার এই ঘটনায় শহীদুল ছাড়াও উপজেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্য এনামুল হক আহত হয়েছেন। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদিকে হামলার ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করেছে নাগরিক ঐক্য। শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাবের নেতৃত্বে বিএনপি, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা–কর্মীরা এই হামলা চালান বলে অভিযোগ করেছে দলটি। তবে বিএনপি নেতারা হামলার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলছেন, নাগরিক ঐক্যের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে হামলা হতে পারে।

হামলাকারীদের ছুরিকাঘাতে উপজেলা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলামের বাঁ চোখ ও কোমরে জখম হয়েছে। তবে বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত রয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফিরছিলেন। উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংকসংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পিতভাবে দুর্বৃত্তরা এ হামলা করে।

হামলার খবর পেয়ে রাতেই শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিয়াউর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.

তাসনিমুজ্জামান, শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুজ্জামান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। তাঁরা জড়িতদের গ্রেপ্তারে আশ্বাস দেন। শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কমর্কর্তা (ওসি) মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফেরার পথে শহীদুল ইসলাম ছুরিকাহত হন। এ ব্যাপারে এখনো কারও বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেননি।

নাগরিক ঐক্যের প্রতিবাদ

নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এবং সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার। এই হামলার জন্য বিএনপি ও যুবদল নেতা-কর্মীদের দায়ী করে আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ৫ আগস্ট–পরবর্তী পরিবর্তিত বাংলাদেশে এই ধরনের হামলা কেবল কাপুরুষদের দ্বারাই সম্ভব। এই হামলা নারকীয় এবং পৈশাচিক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে যাওয়া নাগরিক ঐক্যের নেতা–কর্মীদের ওপর এই হামলা সভ্যতা ও মানবিক মূল্যবোধের চরম বিরোধী, রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ।  

অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এসব সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে। হামলার বিষয়ে আগামীকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিক ঐক্যের নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব আছে। আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিবের নেতৃত্বে উপজেলার নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত। এর জেরে তাঁরা নিজেরাই এই হামলার ঘটনা ঘটাতে পারেন। উপজেলা বিএনপি কোনোভাবেই হামলার সঙ্গে জড়িত নয়।

সংগঠনে কোন্দল থাকার কথা স্বীকার করলেও হামলার সঙ্গে নিজেরা জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন উপজেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্যসচিব আব্দুল বাসেদ। তিনি বলেন, আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম গুটিকয় নেতা–কর্মী নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে বিএনপির লোকজন তাঁর ওপর এই হামলা চালিয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ম দ র ফ র র পথ শ বগঞ জ উপজ ল ব এনপ র ওপর প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা বর্বর হামলা অব্যাহত

ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। গত ২৪ ঘণ্টায় নারী-শিশুসহ ৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে পশ্চিম তীরেই প্রাণ গেছে ২২ জনের। বরাবরের মতোই দখলদার বাহিনী বেসামরিক লোকজনকে টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতি সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে দখলদাররা উপেক্ষা করেছে।

একজন হামাস নেতাকে হত্যা করতে প্রয়োজনে তারা ১০০ সাধারণ মানুষকে হত্যা করবে বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহুর সংসদ বিচারক নিয়োগের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে আইনও পাস করেছে। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে ইসরায়েলের নাগরিকরা।   

ইসরায়েলি হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ২০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছে অন্তত ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১০ জন। ইসরায়েলের বর্বর আচরণ বন্ধ করে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস।  

আলজাজিরা জানায়, গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি ব্যস্ত বাজারে ইসরায়েলি হামলায় সাত ফিলিস্তিনি নিহত হন। এতে করে গত এক দিনে এই যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় নিহতের সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছে, গাজায় হাজার হাজার মানুষ তীব্র ক্ষুধা ও অপুষ্টির মুখোমুখি। টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কোনো মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে পারেনি। মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য খাদ্য মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।

এদিকে মিসরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ অবরুদ্ধ গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েল। আকস্মিক এই হামলায় নিহত হয় সাত শতাধিক মানুষ।

একদিকে হামলা অন্যদিকে জোর করে বসতি স্থাপন চালিয়ে যাচ্ছে দখলদাররা। পবিত্র রমজানে বহু ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে। প্রায়ই তারা দখলদার ইসরায়েলিদের হামলার শিকার হয়েছে। বাড়িঘর থেকে উৎখাত করা হয়েছে। এমনকি ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর জোর করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।  

গাজায় দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে সতর্কতা দিয়েছে জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। তারা বলছে, সহায়তা তহবিল কমানো হলে গাজায় মানুষের জীবন খাদ্যাভাবে বিপন্ন হবে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, গত বছরের তুলনায় এবার সহায়তা তহবিল ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে।   

দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের মোহাম্মদ এলমাসরি বলেন, বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তু করা ইসরায়েলের সামরিক মতবাদের অংশ। হামলার ভয়ে সাহায্য সংস্থা ও কর্মীরা ফিলিস্তিনি ছিটমহল ছেড়ে চলে যাচ্ছে।  

এদিকে লেবানন থেকে গতকাল শুক্রবার সকালে ইসরায়েলে আঘাত হানে দুটি রকেট। এতে ইসরায়েল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৈরুতে বিমান হামলার হুমকি দেন এবং একটু পরই বিমান হামলা করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল লেবাননে জোর করে যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে। গত নভেম্বরে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো হামলা করা হলো।   

ইয়েমেনে হুতিদের ৪০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সানাসহ ইয়েমেনজুড়ে হুতিদের এসব ঘাঁটি বিদ্যমান। হামলায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, বৈরুতে ইসরায়েলি হামলা অগ্রহণযোগ্য। এটা যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন। লেবাননের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন বলেছেন, বৈরুতে হামলার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখল ইসরায়েল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ