জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা রাষ্ট্রে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাই না। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যদি খেলে, তাহলে আমরা কারও দাবার ঘুঁটি হব না। কেউ আমাদের সঙ্গে খেলবেন, তা পছন্দ করি না। শুধু আমাদের সঙ্গে না, এ দেশের একজন নাগরিকের সঙ্গেও যেন কেউ খেলাধুলা না করে। আমরা ফ্যাসিস্ট আমলে একটা কথা শুনতাম—খেলা হবে। ওই খেলা আর দেখতে চাই না।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

শফিকুর রহমান বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে জামায়াতের প্রয়াত নেতা গোলাম আজমকে মুছে ফেলা হয়েছে। তার যতটুকু অবদান, ততটুকু দিতে অসুবিধা কোথায়? বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী ভাষা আন্দোলনের স্মারকের ড্রাফট করেছিলেন, তাকে কোথাও স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না কেন? তমদ্দুন মজলিশ ইতিহাস থেকে বিলীন কেন? যার যেখানে জায়গা, তাকে সেখানে জায়গা করে দিতে হবে। তাহলে এ জাতির মধ্যে বারবার বীর জন্ম নেবে। বীরদের স্বীকৃতি না দিলে সুবিধাবাদী কাঙাল জন্ম নেবে, যারা গরিবের ধন লুটে খাবে।

জামায়াত আমির বলেন, চব্বিশের নিহত ও আহতদের রক্ত, জীবন, ইজ্জত ও আবেগকে অপমানিত করবেন না। কিন্তু আমরা দেখছি, কতিপয় কাজ এখনও বন্ধ হচ্ছে না। আমরা দেশবাসীকে আহ্বান জানাব। আমরা বারবার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এ আহ্বান কেয়ামত পর্যন্ত জানাব না। কারণ জুলুমটা পুরো জাতির ওপর হচ্ছে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন হলেও এখনও চাঁদাবাজি-দখলদারি বন্ধ হয়নি। ঘাটে ঘাটে যে চাঁদাবাজি হয়, এর কারণে দ্রব্যমূল্য বহুগুণ বেড়ে যায়। এর চাপ দেশের সব মানুষের ওপর পড়ে। আমরা কেন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব, নীরবে সহ্য করব? এ ব্যাপারে আমাদের সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধ করতে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, জাতিকে সামনে এগিয়ে যেতে দিন। আবার যেন ফ্যাসিবাদের নতুন ধারা, অধ্যায় তৈরি না হয়, তার থেকে ফিরে আসুন। ফিরে না এলে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।

ভুল করলে সমালোচনা করার অনুরোধ জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, জোর করে আমাদের নামে কেউ কোনো ভুল তৈরি করলে তা মানব না। আমরা যেটা করি না, মানি না, সেটা যদি আমাদের নামে চালান দেওয়া হয়, তার প্রতিবাদ করা দায়িত্ব। আমাদের আপনার ভাষায় সমালোচনা করুন কিন্তু সেটাতে সত্যতা, যথার্থতা থাকতে হবে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের ওপর আওয়ামী লীগ সরকার জুলুম করেছে, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ‘ক্যাঙারু কোর্টে’ তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন দলটির আমির।

তিনি বলেন, পট পরিবর্তনের সপ্তম মাসে আমরা আছি, এখনও কেন তাকে হাজতে থাকতে হবে? মনের কষ্ট থেকে বলেছি, আমার এখন বাইরে থাকার কোনো সার্থকতা নেই। প্রতিবাদে আমি স্বেচ্ছায় জেলে যেতে চাই। লাখো কর্মী আমার সঙ্গে জেলে যাওয়ার কথা বলেছেন। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের বলছি, লাখো লাগবে না। আমি একাই যাব। এই জমিন ঠিক করার জন্য আমার সহকর্মীদের বাইরে থাকতে হবে। সবাই বাইরে থেকে জঞ্জাল পরিষ্কার করুক, আমি মজলুমের প্রতীক হিসেবে জেলে থাকি।

শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘বিভিন্ন মহল থেকে আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে, অনেক ধৈর্য ধরেছেন, আর একটু ধৈর্য ধরুন।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম ড শ ফ ক র রহম ন আম দ র স

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়াক্ফ আইন ইস্যুতে থমথমে মুর্শিদাবাদ, আতঙ্ক 

ভারতে ওয়াক্ফ আইনের বিতর্কিত সংস্কারের প্রতিবাদে সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাজ্যের অপর এলাকা শমসেরগঞ্জে এখনও শান্তি ফেরেনি। শনিবার রাতেও এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তত দেড়শ জনকে। নতুন হামলার শঙ্কায় ও গ্রেপ্তার এড়াতে বহু মানুষ ঘরছাড়া।

হাইকোর্টের নির্দেশে গত শনিবারই মুর্শিদাবাদে ভারতের কেন্দ্রীয় বাহিনী (আধা সেনা) মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু জনমনে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। সূত্র জানায়, শনিবার রাতে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় বিএসএফ গুলি চালায়। আহত সামশের নাকাব নামের ওই যুবকের বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানে। গতকাল রোববার সকালে ‘রোড মার্চ’ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। গ্রেপ্তার আতঙ্কে বহু মানুষ ঘরছাড়া। তাদের আশ্বস্ত করে ঘরে ফেরাতে পথে নেমেছেন জনপ্রতিনিধিরা। এলাকায় শান্তি ফেরাতে রাজ্য পুলিশের ডিজিপি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। 

সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রে থাকা বিজেপি সরকার সংসদের দু’কক্ষে ওয়াক্ফ আইনের সংশোধনী পাস করে। এর মাধ্যমে মুসলমানদের সম্পত্তিবিষয়ক ওয়াক্ফ বোর্ডে অন্য ধর্মের প্রতিনিধি রাখার আইনি বৈধতা দেওয়া হয়। ভারতের মুসলমানরা এটাকে চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, হিন্দু ও শিখদের ধর্মীয় বিষয়ে অন্য ধর্মের প্রতিনিধি না থাকলেও মুসলমানদের বেলায় তা করা হচ্ছে। অনেকে সংস্কার ওয়াক্ফ আইনকে ভারতের মুসলোনদের ভূমি ছিনিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি মুসলিমবিদ্বেষী দল হিসেবে পরিচিত। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকলেও তাদের কোনো মুসলমান সংসদ সদস্য নেই। 

এ আইন পাস নিয়েই ভারতজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা ঘটেছে। সহিংসতা ঠেকাতে শমসেরগঞ্জে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করা হয়। সেখানে থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে বন্ধ রয়েছে সব দোকানপাট। 

এক সপ্তাহ ধরে পশ্চিমবঙ্গে এ সহিংসতা চলছে। ইতোমধ্যে তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেছে একজনের। বাড়িতে ঢুকে দুষ্কৃতির তাণ্ডবে নিহত হয়েছেন বাবা-ছেলে। অনেক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে লুটপাট করা হয়েছে। ফারাক্কা আসনের বিধায়কের ওপর হামলা হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে দোকানে দোকানে। মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্ট। 

উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর সেখানে পৌঁছান রাজ্যের ডিজিপি রাজীব কুমার। তিনি বিএসএফ সদস্যদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। পরে জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নেমে ‘রোড মার্চ’ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সহিংসতা ঠেকাতে রাজ্য পুলিশের ব্যর্থতার অভিযোগ উঠছে। তবে জঙ্গিপুরের সংসদ সদস্য খলিলুর রহমান বলেছেন, রাজ্য পুলিশের প্রচেষ্টায় এলাকায় শান্তি ফিরছে। মুখ্যমন্ত্রী সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ায় তাঁকে ধন্যবাদ। 

রোববার সকালে শমসেরগঞ্জে যান মালদহ দক্ষিণের সংসদ সদস্য ইশা খান চৌধুরী। মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছেন রানাঘাটের বিজেপি সংসদ সদস্য জগন্নাথ সরকার। এক ধাপ এগিয়ে মুর্শিদাবাদে ‘আফস্পা’ দাবি করেছেন পুরুলিয়ার বিজেপি সংসদ সদস্য জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো।

রাজনৈতিক দলের রশি টানাটানির মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হলেও সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কাটেনি। আতঙ্ক ও আস্থার অভাবে লোকজন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, তা নিয়ে কেউ এখনও নিশ্চিত নন।

অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে গত শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন অনেকে। ধুলিয়ান ফেরিঘাট পার হয়ে ৫০০ শতাধিক নারী-পুরুষ আশ্রয় নেন পার্শ্ববর্তী মালদার কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর হাইস্কুলে। প্রশাসনের তরফে সেখানে খাবার বিতরণ চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনুশোচনা নেই, প্রতিটি অভিজ্ঞতা ছিল একটি শিক্ষা: বাঁধন
  • বাইরে জীবন সহজ কিন্তু ভেতরে নীরবে ভাঙাগড়া চলে: বাঁধন
  • ওয়াক্ফ আইন ইস্যুতে থমথমে মুর্শিদাবাদ, আতঙ্ক 
  • গাজা সিটির একমাত্র সচল হাসপাতালে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
  • মায়ামির মায়া ছাড়তে পারছেন না মেসি
  • গাজায় হাসপাতালে মিসাইল ছুড়েছে ইসরায়েল, আইসিইউ ও অস্ত্রোপচার বিভাগ ধ্বংস
  • গাজার হাসপাতালে মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • অবিরাম কাজ করেও যারা কোনো নাম-দাম পান না
  • ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির ঘোষণাপত্রে যা বলা হলো
  • চেন্নাই প্লে’অফ খেলবে, দাবি ব্যাটিং কোচের