কারাবন্দী নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের পর এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে ‘গণ-অবস্থান’ কর্মসূচি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

দলটি জানিয়েছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এই ‘গণ-অবস্থান’ হবে। কর্মসূচিতে দলের আমির শফিকুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের মিথ্যা ও সাজানো মামলায় ১৩ বছরের অধিক সময় কারাগারে আটক আছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা-কর্মী মুক্তি লাভ করেছেন। দেশবাসী আশা করেছিল, চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার আজহারুল ইসলামও স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে মুক্তি লাভ করবেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় সাড়ে ছয় মাস অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও এ টি এম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পাননি। এতে দেশবাসী হতবাক ও বিস্মিত।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান নিজের ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেন, এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে তিনি (শফিকুর রহমান) স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হওয়ার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত প্রাঙ্গণে থাকবেন। তিনি লেখেন, ‘আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সময়মতো আমাকে যথাস্থানে পাবে, ইনশা আল্লাহ।’

এই ঘোষণার পরদিন জামায়াত তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে ‘গণ-অবস্থান’ কর্মসূচির ঘোষণা দিল। এর আগে এ টি এম আজহারুলের মুক্তির দাবিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে জামায়াত।

ওই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির সরকারকে ‘ধৈর্যের পরীক্ষা’ না নিতে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা ভদ্র, বোকা নই। ভদ্রতাকে কেউ যেন দুর্বলতা মনে না করেন। জামায়াত সাড়ে ১৫ বছর কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি। জীবন দিয়েছে, কিন্তু আপস করেনি।’

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে তিনি ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এই আবেদন শুনানির দিন ধার্য ছিল ২০ ফেব্রুয়ারি; কিন্তু শুনানি হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

তুচ্ছ ঘটনার জেরে এনসিপি–বিএনপির সংঘর্ষ, ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

রাজধানীর রূপনগরে তুচ্ছ ঘটনার জেরে সংঘর্ষে জড়িয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সোমবার রাতের এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে ২১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ৫০–৬০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকাম্মেল হক সমকালকে বলেন, মিরপুরের বিইউবিটির এক ছাত্রীর সঙ্গে উত্তরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অনিকের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তরুণী তার এক সহপাঠী আশিকের সহায়তা চান। এরপর সোমবার রাত ৮টার দিকে তরুণী রূপনগর আবাসিক এলাকার ১২ নম্বর সড়কের ঝিলপাড় এলাকায় তার প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে যান। ওই সময় আশিক সেখানে উপস্থিত হয়ে অনিককে গালমন্দ করেন। এ নিয়ে দুজন বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়ান। 

ওসি আরও বলেন, আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে মারধরের কারণ জানতে চাইলে তাদের সঙ্গেও বিতণ্ডায় জড়ান আশিক। একপর্যায়ে রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক টুটুল মিয়াসহ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হন। অন্যদিকে খবর পেয়ে আশিকের পক্ষের লোকজনও সেখানে যান। এ সময় ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে করা মামলার আসামিরা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।

এদিকে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে শেখ মাহিন আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। 

এজাহারে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কর্মী অনিককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য থানায় সংবাদ দেয়। ওই সময় টুটুল মিয়াসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৫০–৬০ জন এসে ছাত্রলীগ কর্মীকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে টুটুলসহ তার লোকজনের কথা কাটাকাটি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আমি সেখানে উপস্থিত হই। তখন টুটুল আমাকে দেখে বলেন, এটাই সেই মাহিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এরপর তারা লাঠিসোঁটা, ধারালো চাকু, রাম দা, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প নিয়ে আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে আমাকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করে। আমাকে রক্ষার জন্য অন্যরা এগিয়ে গেলে তাদেরও মারধর ও ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মারধর ও ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার পর দুই পক্ষই মিছিল নিয়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে থানার সামনে জড়ো হয়। এ নিয়ে দীর্ঘ সময় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ