রাজ্জাক, সুচন্দারা সেদিন শহীদ মিনারেই শুটিং করেছিলেন
Published: 21st, February 2025 GMT
পরাধীন পাকিস্তানে ১৯৬৫ সালে জহির রায়হান নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন একুশ নিয়ে চলচ্চিত্র। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এ ধরনের সিনেমা নির্মাণের অনুমতি দেয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জহির রায়হান যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে হয়তো এই আক্ষেপে পুড়তে হতো না। তবে ১৯৭০ সালে ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে জহির রায়হান একুশে ফেব্রুয়ারির দৃশ্য সংযোজন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ ব্যবহার করেছিলেন। এ ছাড়া ব্যবহার করেছেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটিও। ছবির একটি অংশে প্রভাতফেরি ও শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার দৃশ্যও রয়েছে।
১৯৭০ সালে একুশের মিছিলের দৃশ্য সরাসরি ক্যামেরাবন্দী করে জহির রায়হান গণ–আন্দোলনের পটভূমিতে নির্মিত তাঁর ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে সংযোজন করেন। সেই দিনের শুটিংয়ের গল্প বিভিন্ন সময়ে স্মৃতিচারণা করেছিলেন প্রয়াত চিত্রনায়ক রাজ্জাক, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেন, সুচন্দাসহ সংশ্লিষ্ট শিল্পীরা।
এক স্মৃতিচারণায় রাজ্জাক বলেছিলেন সেদিনের কথা। রাজ্জাকের বক্তব্য ছিল এমন, ‘১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০। এফডিসিতে শুটিং করছিলাম। অনেক রাত পর্যন্ত শুটিং হলো। শুটিং শেষে জহির ভাই আমাদের ডেকে বললেন, আগামীকাল ২০ ফেব্রুয়ারি আমরা সকালের শিফটের শুটিং করব। এরপর রাত ১২টার পর শুটিং ইউনিট চলে যাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। লাইভ শুটিং হবে। জহির ভাইয়ের কথা প্রথমে বুঝতে পারলাম না। পরে তিনি বুঝিয়ে বললেন, আমার “জীবন থেকে নেয়া” ছবিতে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর যে দৃশ্যটি আছে, তা আমরা শহীদ মিনারেই করব।
‘জহির রায়হান বলেই হয়তো সেদিন এমন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন। বাংলা ভাষায় এখন পর্যন্ত যত ছবি হয়েছে, তার মধ্যে “জীবন থেকে নেয়া” ছবিটিই একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করেছিল দারুণভাবে। পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল শিফটের শুটিং শেষে আমরা সব শিল্পী জহির ভাইয়ের কাছ থেকে কস্টিউম সম্পর্কে জেনে নিয়ে বাড়ি চলে গেলাম। রাত আটটার মধ্যেই ফিরে এলাম এফডিসিতে। আমি ছাড়াও সেদিন শুটিংয়ে অংশ নিলেন আনোয়ার হোসেন, সুচন্দা, রোজী আফসারীসহ ছবির অন্য শিল্পীরা। জহির ভাইকে একজন জিজ্ঞেস করলেন, লাইটের কী ব্যবস্থা থাকবে? তিনি বললেন, ওসব আগে থেকেই ভেবে রেখেছি। আমাদের কয়েকজনের গাড়ির হেডলাইটের আলোয় শুটিং হবে। ক্যামেরাম্যান আগেই চলে যাবেন। আর আমাদের শিল্পীদের বললেন, না বলা পর্যন্ত কেউ গাড়ি থেকে বের হবে না।
‘আমরা রাত ১২টার পর রওনা হলাম শহীদ মিনারের উদ্দেশে। তাঁর কথামতো আমরা গাড়ি নিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষায় থাকলাম। চারদিক থেকে লোকের ঢল নামতে শুরু করল। বুঝতে পারছিলাম না, ক্যামেরা আসলে কোথায়। জহির ভাই বললেন, সে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ক্যামেরাই তোমাদের খুঁজে নেবে। কিছুক্ষণ পর জহির ভাই আবার এসে বললেন, যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে একটি মিছিল আসছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র জ বন থ ক কর ছ ল বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজ্জাক, সুচন্দারা সেদিন শহীদ মিনারেই শুটিং করেছিলেন
পরাধীন পাকিস্তানে ১৯৬৫ সালে জহির রায়হান নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন একুশ নিয়ে চলচ্চিত্র। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এ ধরনের সিনেমা নির্মাণের অনুমতি দেয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জহির রায়হান যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে হয়তো এই আক্ষেপে পুড়তে হতো না। তবে ১৯৭০ সালে ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে জহির রায়হান একুশে ফেব্রুয়ারির দৃশ্য সংযোজন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ ব্যবহার করেছিলেন। এ ছাড়া ব্যবহার করেছেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটিও। ছবির একটি অংশে প্রভাতফেরি ও শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার দৃশ্যও রয়েছে।
১৯৭০ সালে একুশের মিছিলের দৃশ্য সরাসরি ক্যামেরাবন্দী করে জহির রায়হান গণ–আন্দোলনের পটভূমিতে নির্মিত তাঁর ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে সংযোজন করেন। সেই দিনের শুটিংয়ের গল্প বিভিন্ন সময়ে স্মৃতিচারণা করেছিলেন প্রয়াত চিত্রনায়ক রাজ্জাক, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেন, সুচন্দাসহ সংশ্লিষ্ট শিল্পীরা।
এক স্মৃতিচারণায় রাজ্জাক বলেছিলেন সেদিনের কথা। রাজ্জাকের বক্তব্য ছিল এমন, ‘১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০। এফডিসিতে শুটিং করছিলাম। অনেক রাত পর্যন্ত শুটিং হলো। শুটিং শেষে জহির ভাই আমাদের ডেকে বললেন, আগামীকাল ২০ ফেব্রুয়ারি আমরা সকালের শিফটের শুটিং করব। এরপর রাত ১২টার পর শুটিং ইউনিট চলে যাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। লাইভ শুটিং হবে। জহির ভাইয়ের কথা প্রথমে বুঝতে পারলাম না। পরে তিনি বুঝিয়ে বললেন, আমার “জীবন থেকে নেয়া” ছবিতে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর যে দৃশ্যটি আছে, তা আমরা শহীদ মিনারেই করব।
‘জহির রায়হান বলেই হয়তো সেদিন এমন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন। বাংলা ভাষায় এখন পর্যন্ত যত ছবি হয়েছে, তার মধ্যে “জীবন থেকে নেয়া” ছবিটিই একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করেছিল দারুণভাবে। পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল শিফটের শুটিং শেষে আমরা সব শিল্পী জহির ভাইয়ের কাছ থেকে কস্টিউম সম্পর্কে জেনে নিয়ে বাড়ি চলে গেলাম। রাত আটটার মধ্যেই ফিরে এলাম এফডিসিতে। আমি ছাড়াও সেদিন শুটিংয়ে অংশ নিলেন আনোয়ার হোসেন, সুচন্দা, রোজী আফসারীসহ ছবির অন্য শিল্পীরা। জহির ভাইকে একজন জিজ্ঞেস করলেন, লাইটের কী ব্যবস্থা থাকবে? তিনি বললেন, ওসব আগে থেকেই ভেবে রেখেছি। আমাদের কয়েকজনের গাড়ির হেডলাইটের আলোয় শুটিং হবে। ক্যামেরাম্যান আগেই চলে যাবেন। আর আমাদের শিল্পীদের বললেন, না বলা পর্যন্ত কেউ গাড়ি থেকে বের হবে না।
‘আমরা রাত ১২টার পর রওনা হলাম শহীদ মিনারের উদ্দেশে। তাঁর কথামতো আমরা গাড়ি নিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষায় থাকলাম। চারদিক থেকে লোকের ঢল নামতে শুরু করল। বুঝতে পারছিলাম না, ক্যামেরা আসলে কোথায়। জহির ভাই বললেন, সে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ক্যামেরাই তোমাদের খুঁজে নেবে। কিছুক্ষণ পর জহির ভাই আবার এসে বললেন, যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে একটি মিছিল আসছে।