ডাকসুর নামফলক থেকে গোলাম আযমের নাম মুছে ফেলা হয়েছে: হামিদুর রহমান
Published: 21st, February 2025 GMT
ডাকসুর জিএসদের নামফলক থেকে অধ্যাপক গোলাম আযমের নাম মুছে ফেলা হয়েছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তার নাম সন্নিবেশিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনের কাউন্সিল হলে জামায়াত ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।
এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “ভাষা আন্দোলনের কথা আসলে ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি কথা উঠলেও এর পেছনেও রয়েছে অনেক অজানা ইতিহাস। রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রথম দাবি ওঠে বৃটিশ শাসনামলে ১৯১১ সালে। মূলত, রংপুর শিক্ষা সম্মেলনে নওয়াব আলী চৌধুরী বৃটিশ সরকারের কাছে প্রথম এ দাবি উপস্থাপন করেন। এরপর ১৯১৮ সালে শান্তি নিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন। ড.
আরো পড়ুন:
আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নই: জামায়াত আমির
আজহারের মুক্তি দাবি
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান করবে জামায়াত
ভাষা আন্দোলনে শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযমের অবদানের কথা উল্লেখ করে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন ভাষা আন্দোলনের সন্মুখসারির নেতা। তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ডাকসুর নির্বাচিত জিএস হিসাবে লিয়াকত আলী খানের কাছে স্মারক লিপিও পেশ করেছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে বারবার গ্রেপ্তার, কারাবরণ ও কলেজের চাকরি হারিয়েছিলেন। কিন্তু হীনমন্যতার কারণে তাকে মূল্যায়ন করা হয়নি বরং ডাকসুর জিএসদের নামফলক থেকে তার নাম মুছে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ফলক থেকে নাম মুছে ফেলেই দেশ, জাতি ও ভাষা আন্দোলনে তার অবদান মুছে ফেলা যাবে না।”
তিনি হীন্যমনতা পরিহার করে সরকারকে অধ্যাপক গোলাম আযমের প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার আহ্বান জানান।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ ও জাতি নতুন দিশা পেলেও দেশ এখনো বৈষম্যমুক্ত হয়নি দাবি করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, “এমন দিশা আমরা ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর পেয়েছিলাম। সেদিন সিপাহী-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে আধিপত্যবাদ মুক্ত করেছিলো। কিন্তু সে ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। বিগত প্রায় সাড়ে ১৫ বছর দেশ ও জাতির ঘাড়ে আওয়ামী স্বৈরাচারের জগদ্দল পাথর চেপে বসেছিলো। দেশকে পরিণত করা হয়েছিলো জুলুম-নির্যাতন, খুন-ধর্ষণ এবং দুর্নীতি-লুটপাটের অভয়ারণ্যে। কথিত বিচারের নামে প্রহসন করে জাতীয় নেতাদের একের পর এক হত্যা করা হয়েছিলো।কিন্তু আগস্ট বিপ্লবের পরও আজও বৈষম্য দূর হয়নি। সব রাজবন্দি মুক্তি লাভ করলেও অসুস্থ জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন।”
তিনি অবিলম্বে জননেতা এটি এম আজহারুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় দুর্বার গণআন্দোনের মাধ্যমে জনগণ দাবি আদায় করেই ছাড়বে।”
হামিদ আযাদ বলেন, “আওয়ামী-ফ্যাসীবাদীরা পতনের আগের রাষ্ট্রের সব অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের আগে কোন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে অর্জিত বিপ্লব ও বিজয় ব্যর্থ হবে। তাই সবার আগে দরকার রাষ্ট্রীয় সংস্কার এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন। একই সাথে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে হবে। বিশ্বের ৬২টি দেশে এ পদ্ধতি চালু আছে এবং তারা এর সুফল পাচ্ছে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে দক্ষ সাংসদের মাধ্যম সংসদ সমৃদ্ধ হবে।”
তিনি সুখী, সমৃদ্ধ, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপশাসন ও দুঃশাসন মুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে একদফায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিস শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন, মোস্তাফিজুর রহমান ও প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।
মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, “স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম হলেও তাকে অবমূল্যায়ন করে ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে ‘২১ পদক থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে।”
তিনি সব ধরনের হীনমন্যতা পরিহার করে শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযমকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার আহ্বান জানান।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ন দ র য় মজল স ম দ র রহম ন ক গ ল ম আযম সদস য ও ঢ ক গ ল ম আযম র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের কোথাও শেখ পরিবারের নামফলক থাকতে পারবে না: অলি আহমদ
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, দেশের কোথাও শেখ পরিবারের নামফলক থাকার সুযোগ নেই, কারণ তারা দেশদ্রোহী। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করার অধিকারও হারিয়েছে।
অলি আহমদ আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবার যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। তারা গণহত্যাকারী দল। দ্রুত তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।
আজ সোমবার দুপুরে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার সুপরামর্শ গ্রহণ করছে না, এমন অভিযোগ করে অলি আহমদ বলেন, ‘অতীতে আমরা ১২৭টি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা জানি না, প্রধান উপদেষ্টা এগুলো দেখেছিলেন কি না, না দেখলে দেখার অনুরোধ করব। আমাদের পরামর্শ এলডিপি কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নয়; বরং এটা জনগণের ভালোর জন্য।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে এলডিপির শীর্ষ নেতা বলেন, সরকার গঠনের আট মাস পরে এখনো টাকায় মুজিবের ছবি কেন? মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো অবদান নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দেশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে তাঁদের অনৈতিক সুবিধাগুলো অনতিবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানান অলি আহমদ। তাঁরা জনগণের করের টাকায় অবৈধ সুবিধা কেন নেবেন, এমন প্রশ্ন তুলে তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানান।
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার ‘পালিত খুনি বাহিনীর’ কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, ‘অভিযুক্ত ডিসি ওসিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাঁদের শাস্তি হচ্ছে না কেন?’ তিনি মনে করেন, গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে।
দেশের ইতিহাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান পৃথক অস্তিত্ব বহন করে উল্লেখ করে এলডিপির সভাপতি বলেন, একাত্তর ও চব্বিশ দুটো এক জিনিস এক নয়। অনেকে দুটি প্রেক্ষাপটকে একীভূত করে বিবেচনা করছেন। কিন্তু এটা পাগলামির শামিল। দুই ইতিহাসের কোনোটিকে হেয়প্রতিপন্ন করার সুযোগ নেই।
দেশ গড়তে প্রবীণদের ভূমিকা উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, নবীনদের মেধা ও যোগ্যতার সঙ্গে প্রবীণদের অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করতে হবে। স্বপ্নের দেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত গাড়ির তালিকা তৈরি, বিচার বিভাগের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, রাস্তার ওপর বসানো হাটবাজার উচ্ছেদ, দুর্নীতি বন্ধে অনলাইনে টেন্ডার আয়োজন, মানুষকে উন্নত সেবা দিতে বিশেষায়িত একাধিক হাসপাতাল স্থাপন এবং দেশের উন্নয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান অলি আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয় এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নেয়ামূল বশির, আওরঙ্গজেব বেলাল, কে কিউ সাকলায়েন ও অধ্যাপক ওমর ফারুক। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন এলডিপির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মো. মাহবুবুর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজি।