রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং স্বৈরাচারী সরকারের অনুগতদের সহায়তা করে আন্দোলন দমনে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ উঠেছে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ওই ১৮ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন— হুমায়ুন কবির (ডেপুটি রেজিস্ট্রার), মোশাররফ হোসেন (অতিরিক্ত পরিচালক- বহিরাঙ্গন), মোস্তফা কামাল রিপন (সাবেক জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক), শহিদুল ইসলাম (ডেপুটি রেজিস্ট্রার), ইব্রাহিম খলিল (ডেপুটি রেজিস্ট্রার), ইলিয়াছুর রহমান এবং শামসুল হক সাগর।

যেসব কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তারা হলেন—পলাশ কান্তি, শ্যামল চন্দ্র, জামান সরকার, আরিফুল ইসলাম, আলামিন, রুবেল, লুৎফর রহমান, কামাল, জমিরউদ্দীন এবং সঞ্জিত সিংহ।

শেকৃবির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, উল্লিখিত ব্যক্তিরা দলীয় আনুগত্যের কারণে প্রশাসনের সহায়তায় আন্দোলন দমন ও শিক্ষার্থীদের ভয় দেখিয়েছিলেন। তদন্ত কমিটি আরো কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।

একই সভায় ১২ জন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাবেক উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য জুলাই আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান এবং কার্যক্রমের তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। 

তদন্তে ১০০ জন শিক্ষক, ৩০ জন কর্মকর্তা এবং আন্দোলনে সম্পৃক্ত শতাধিক শিক্ষার্থীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি, ২০ জন শিক্ষক, ১৫ জন কর্মকর্তা ও ৩৫ জন শিক্ষার্থীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ চূড়ান্তভাবে যাচাই করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.

বেলাল হোসেন বলেছেন, “সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটির সুপারিশক্রমে ১২ জন শিক্ষক, ৭ কর্মকর্তা ও ১১ জন কর্মচারীকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিন্ডিকেট থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে, তাদের চূড়ান্ত তদন্তের পর ওই সিদ্ধান্ত স্থায়ীভাবে কার্যকর করা হবে।”

ঢাকা/মামুন/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জন শ ক ষ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুরে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ, মুক্তিপণ নেওয়ার সময় পুলিশ সদস্যসহ চারজন আটক

শরীয়তপুরের ডামুড্যায় দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে আটক করে পিটুনি দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। পরে তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ডামুড্যা বাসস্টান্ড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

আটক ব্যক্তিরা হলেন বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার গারফা এলাকার কৌশিক আহমেদ (৩০), শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধুলকুড়া এলাকার কাউসার তালুকদার (২৯), মাগুরা জেলার বাসিন্দা রুবায়েত মীর (২৭) ও কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার আমৌদা এলাকার শরীফ হোসেন (৩৫)। রুবায়েত মীর চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য, কৌশিক ও কাউসার পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম।

এ সম্পর্কে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি চক্র দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছিল। মুক্তিপণ আদায় করার সময় জনতার হাতে ওই চক্রের চারজন ধরা পড়েন। তখন পুলিশ তাঁদের আটক করে। ওই চারজনের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। আর পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা এখানে কীভাবে এসেছিলেন, কোথায় কর্মরত আছেন, তা–ও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ হেফাজতে তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।’

পুলিশ ও ডামুড্যা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকরকান্দি এলাকার জুয়েল সরদার ও ফয়সাল সরদার ডামুড্যা বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী। গতকাল রাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ওই দুজন বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডামুড্যার দারুল আমান বাজার এলাকায় কয়েকজন ওই দুই ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। অপহরণকারী দুই ব্যবসায়ীর কাছে সারা দিনে কাপড় বিক্রির টাকা চান। তবে ওই দুজনের কাছে কোনো টাকা ছিল না। তখন অপহরণকারী ব্যক্তিরা মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা চান। দুই ব্যবসায়ী ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। তখন অপহরণকারী ব্যক্তিরা ওই দুই ব্যবসায়ীকে নিয়ে মাদারীপুর শহরের লেকের পাড়ে যান। সেখানে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণকারী ব্যক্তিরা চার লাখ টাকা আদায় করেন।

বাকি ছয় লাখ টাকা আদায় করার জন্য দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁরা ওই দুজনকে নিয়ে ডামুড্যা বাসস্টান্ড এলাকায় যান। সেখানে দুই ব্যবসায়ী গাড়ির ভেতর থেকে চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। তখন স্থানীয় লোকজন ডাকাত বলে চিৎকার দেন। তখন অপহরণকারী ব্যক্তিরা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। স্থানীয় লোকজন অপহরণকারী চারজনকে আটক করে পিটুনি দেন। পরে ডামুড্যা থানার পুলিশ সদস্যরা এসে তাঁদের উদ্ধার করেন। ওই গাড়িতে থাকা আরও চারজন পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে জয় পোদ্দার নামে আরেক পুলিশ সদস্য ছিলেন।

আটক হওয়ার পর অপহরণকারী দলের সদস্য রুবায়েত মীর বলেন, ‘কাউসার তালুকদার আমাদের এখানে এনেছেন। তিনি এই মিশনে আমাদের বস। অপহরণের সময় যেই টাকা পেয়েছিলাম, তা কাউসারের কাছে। আমি আর কিছু জানি না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ