আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নই: জামায়াত আমির
Published: 21st, February 2025 GMT
“মানুষ কিংবা দল হিসেবে আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নই। তাই আমাদের ভুল হলে আলোচনার মাধ্যমে সমালোচনা করবেন।”
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পল্টনে জামায়াতে ইসলামীর ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের বিষয়ে জামায়াত আমির বলেন, “আজ সামান্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে ভাষাশহীদদের স্মরণ করা হচ্ছে। এতে তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বায়ান্ন শেখায়, যেখানে অন্যায় সেখানে প্রতিবাদ। আর যেখানে সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদ সেখানেই প্রতিরোধ।”
আরো পড়ুন:
আজহারের মুক্তি দাবি
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান করবে জামায়াত
আমরা খুনের ছাত্ররাজনীতি চাই না: শিবির সভাপতি
ভাষাশহীদরা শ্রদ্ধার পাত্র। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বাঙালি জাতির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন তারা। তাদের ভুলে গেলে শহীদদের অবমাননা করা হবে উল্লেখ করে ডা.
“যারা ৫২-এর আন্দোলন করেছিলেন তারা প্রতিষ্ঠিত সরকার এবং বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। একদিকে নিজের মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে নিরস্ত্র মানুষ, আরেকদিকে জনগণের টাকায় কেনা সশস্ত্র, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। কিন্তু আন্দোলনকারীরা পিছু হটেননি,” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, “চব্বিশের আন্দোলনেও আমরা একজন ছোট বোনকে দেখেছি, সম্ভবত তিনি বলেছিলেন- পেছনে পুলিশ সামনে স্বাধীনতা। আরো বলেছিলেন লড়েই যাব, মরেই যাব, মেরেই যাব। বোনটার নাম সানজিদা চৌধুরী। স্যালুট বোন তোমাকে, স্যালুট। তোমার মধ্যে বায়ান্ন এবং একাত্তরের তেজ আছে। তোমার মতো বোন ও ভাইদের অনেক প্রয়োজন।”
তরুণদের অবদান ভোলার নয় উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “এরা একেকজন এক একটি জীবন্ত ইতিহাস। এ সৌভাগ্য সবার হয় না। সেই ইতিহাসকে স্মরণ করা যেমন দায়িত্ব, তেমনি এখান থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিপ্লবী হওয়ার শিক্ষা নেওয়াও কর্তব্য।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আলোচনা সভা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকিরের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরীর সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরীর নায়েবে আমির ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মো. দেলাওয়ার হোসেন, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মো. কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান, শামসুর রহমান প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আনন্দ শোভাযাত্রায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-মীর মশাররফ-লালন, মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রায় দেখা মিলেছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলা সাহিত্যের অমর কথা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, ফকির লালন সাঁই, মুঘল সম্রাট আকবর, গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথসহ অন্তত ৩৮ জন বিখ্যাত মনীষীর। তবে তারা আসল নয়, ডামি। ডামি হলেও তাদের মাধ্যমে দারুণভাবে ফুটেছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের চেহারা ও অবয়ব। তাদের দেখে মুগ্ধ নতুন প্রজন্মের দর্শনার্থীরা।
এছাড়াও শোভাযাত্রায় বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের সচিত্র দেখা গেছে।
সোমবার সকালে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এমন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষ্যে সোমবার সকাল সাগে ৯টায় কুমারখালী শিল্পকলা একাডেমি থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে উপজেলা প্রশাসন। আনন্দ শোভাযাত্রাটি হলবাজার, গণমোড়, থানামোড়, গোলচত্বর, উপজেলা সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় আবুল হোসেন তরুণ অডিটোরিয়ামে চত্বরে শেষ হয়। পরে সেখানে দই চিড়া খাওয়া, সাংস্কৃতিক অনু্ষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কুমারখালী শিল্পকলা একাডেমীর ১২৫ জন সংগীত ও নৃত্যশিল্পী নেন এবং শোভাযাত্রায় কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে কুমারখালী সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রুহিনা ইসলাম প্রজ্ঞা বলেন, বৈশাখী শোভাযাত্রায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পিয়ারী সুন্দরী, কাজী মিয়াজান, মীর মশাররফ হোসেনসহ অসংখ্য মনীষীদের দেখেছি। খুব ভালো লেগেছে।
কলেজ ছাত্র শুভ মোল্লা বলেন, প্রত্যাশার চেয়েও বেশি জাঁকজমক হয়েছে আয়োজন। বন্ধুরা মিলে খুবই আনন্দ করছি।
সুবর্ণা খাতুন নামের এক শিশু জানায়, পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানে নৃত্য করেছি। দই চিড়া খেয়েছি। খুবই ভালো লাগছে।
প্রায় ১৮ ধরে বৈশাখের শোভাযাত্রায় মীর মশাররফ হোসেনের ডামি চরিত্রে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান মানু। তিনি বলেন, প্রতি বৈশাখে একই চরিত্রে থাকি। নিজের কাছে খুবই ভালো লাগে। যতদিন বাঁচি, এ চরিত্রেই থাকতে চাই।
আধুনিকতার বাইরে এসে যেন বাংলা সংস্কৃতি ধরে রাখতে পারি। সেজন্য সম্রাট আকবরের ডামি সেজেছিলাম। কথাগুলো বলছিলেন চয়ন শেখ।
পরিচয় জানতেই 'বল বীর, বল উন্নত মম শির! শির নেহারি আমারই নত শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!' কবিতার কয়েকটি লাইন বলতে থাকেন পান্টি এলাকার মিলন হোসেন। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ডামি ছিলেন।
নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালির ইতিহাস ঐহিত্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের পরিচিত করতে রবীন্দ্রনাথ, মশাররফ, কাঙাল, বাঘা যতীনসহ ৩৮টি ডামি চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা, ২৪ এর গণ অভ্যর্থান, প্যালেস্টাইনের চিত্র দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বলে জানান ডামি পরিচালক কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাস।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাস বলেন, আনন্দ শোভাযাত্রায় বিখ্যাত ব্যক্তি ও মনীষীদের চরিত্র দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। তা দেখে মুগ্ধ সব শ্রেণি পেশার মানুষ। ডামি ছাড়াও চিড়া দই খাওয়া, সাংস্কৃতিক অনু্ষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে।