অস্ট্রেলিয়ার প্রেক্ষাগৃহে ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমা
Published: 21st, February 2025 GMT
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিনেমা ‘জীবন থেকে নেয়া’ প্রদর্শিত হচ্ছে দেশটির প্রেক্ষাগৃহে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার দর্শকদের দেখানো হচ্ছে কালজয়ী নির্মাতা জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমাটি।
ইংরেজি সাবটাইটেলসহ ‘টু-কে’ (স্বচ্ছ রেজ্যুলেশন) সংস্করণে সিনেমাটি দেখাচ্ছেন পরিবেশনা সংস্থা বঙ্গজ ফিল্মসের প্রতিষ্ঠাতা তানিম মান্নান।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সিডনিতে হয়টস ওয়েদারিল পার্কের হয়েটস সিনেমা হলে এবং রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ডুমারেস্ক স্ট্রিট সিনেমা হলে ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমার দু’টি প্রদর্শনী রয়েছে।
চিরচেনা পারিবারিক কাহিনির আবহে, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত এই সিনেমা। একটি দেশ, একটি সংসার, চাবির গোছা আর আন্দোলন- এই সিনেমার মূল উপজীব্য বিষয়।
তরুণ প্রজন্মকে ঐতিহাসিক চলচ্চিত্রের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী করতেই ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমাটি দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন মান্নান। কিন্তু বিষয়টি তার জন্য এত সহজ ছিল না। ৫৫ বছর আগে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি দেখাতে গিয়ে কী কী চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, তা জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।
তিনি বলেন, ‘সিনেমাটি দেখানোর ইচ্ছা তৈরি হয়েছে প্রায় তিন বছর আগে, আমি তো এখানে নিয়মিত বাংলা সিনেমা দেখাই, অর্ধশতাধিক সিনেমা দেখানো হয়ে গিয়েছে। একদিন মনে হল কমার্শিয়াল সিনেমা তো দেখানো হচ্ছে যদি কালচারাল সিনেমাগুলো নিয়ে কোনো আয়োজন করা যায়। একজন প্রযোজককে বললাম জহির রায়হানের সিনেমাটি দেখাতে চাই। কিন্তু তিনি জানালেন, নির্মাতার পরিবার থেকে অনুমতি পাওয়া সম্ভব হবে না। আমিও দমে গেলাম। কিন্তু কোনোভাবেই দেখানোর ইচ্ছাটা বাদ দিতে পারছিলাম না।’
জহির রায়হানের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় রাষ্ট্রের অধিকার আদায়ের গল্পের 'জীবন থেকে নেয়া' মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৭০ সালে। সিনেমাটি ইউটিউবে দেখা গেলেও সিনেমার ভিজ্যুয়াল ও অডিও এবং দৃশ্য স্পষ্ট নয়।
পরিবারের অনুমতি নিয়ে বিনামূল্যে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে সিনেমাটি প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে।
আনিস ফিল্মস করপোরেশনের পরিবেশনায় এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন রওশন জামিল, খান আতাউর রহমান, শওকত আকবর, রাজ্জাক, রোজী সামাদ, সুচন্দা প্রমূখ।
এই সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’, ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’, ‘কারার ওই লৌহকপাট’এর মতো কালজয়ী কিছু গান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ বন থ ক ন য় জ বন থ ক এই স ন ম
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন।