তখন দিবাগত রাত একটা। চট্টগ্রাম নগরের জাকির হোসেন সড়কের একটি ব্যাংকের কার্যালয়ের বাইরে মানুষের ভিড়। সেখানে প্রবেশের ফটকেও তালা। উপস্থিত ব্যক্তিরা বলছেন, ভেতরে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আটকে রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত এমন বেশ কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোয় বলা হয়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খুলশী শাখায় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আটকে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে নারী কর্মীদেরও বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। বাইরে তাঁদের স্বজনেরা উৎকণ্ঠায় আছেন। আরেকটি ভিডিওতে বলা হয়, ভেতরে এক কর্মকর্তা আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন।

ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ব্যাংকটির চট্টগ্রামের আঞ্চলিক শাখা, খুলশী শাখা ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানা যায়, মূলত এক কর্মকর্তা তাঁর বদলি আদেশ মানতে রাজি ছিলেন না। বদলি প্রত্যাহার করা না হলে তিনি শাখা থেকে বের হবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাঁকেসহ রাত আড়াইটার দিকে সব কর্মকর্তা বের হন।  

ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ওই কর্মকর্তার নাম মো.

আবদুল কাদের। তিনি ব্যাংকটির খুলশী শাখায় বিনিয়োগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁর বদলি আদেশ পাঠায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়। তাঁকে সৈয়দপুরে বদলি করা হয়েছে। তাঁকে জানানোর পর থেকে বিষয়টি মানতে রাজি হননি এবং বদলি আদেশ প্রত্যাহার করতে বলেন।

এরপর মো. আবদুল কাদের রাত ১০টার দিকে ফেসবুক লাইভে আসেন। তিনি অক্ষত থাকলে, তাঁর ওপর হামলা না হলে কিছুক্ষণ পর লাইভে আবার আসবেন জানিয়ে তিনি চলে যান। এরপর অবশ্য তিনি আর লাইভে আসেননি। পরে রাতে সেখানে চটগ্রাম অঞ্চলের (উত্তর) ঊর্ধতন কর্মকর্তারা আসেন। শাখার ব্যবস্থাপক ও অন্য কর্মকর্তারাও আসেন।

এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বদলির আদেশ আসার পর উনি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে খুলশী শাখায় কর্মরত তিনি। ফলে বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি সহজে। চট্টগ্রামের দুজনকে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনি একজন। তবে ফেসবুকে ছড়ানো বিষয়গুলো সত্য নয়। যাচাই না করেই এসব ছড়ানো হচ্ছে।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি, এটি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এক কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন, কিন্তু তিনি যেতে চাইছেন না। বিষয়টি সমাধানের পর আমরা চলে এসেছি।’

জানতে চাইলে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খুলশী শাখার ব্যবস্থাপক মো. নবীনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অঞ্চল ও শাখার কর্মকর্তারা তাঁকে সঙ্গে নিয়েই রাতে বের হয়েছেন। দুজন সহকর্মী রাতে তাঁর সঙ্গে পাঠানো হয়েছে নিরাপত্তার জন্যে। তাঁরা রাতে তাঁর সঙ্গেই ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনয়ন পেলেন ইমরান খান

পাকিস্তানের কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রচারে তার প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। 

২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ইমরান খানের নাম প্রস্তাব করেছে পাকিস্তান ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স (পিডব্লিউএ) এবং নরওয়ে ভিত্তিক সংগঠন পার্টিয়েট সেন্ট্রাম। খবর আনাদোলু এজেন্সির।

শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে পার্টিয়েট সেন্ট্রাম বলেছে, “আমরা আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, মনোনয়নের অধিকারী এমন একজনের সঙ্গে (পাকিস্তান ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স) জোটবদ্ধ হয়ে, আমরা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে তার কাজের জন্য নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করেছি।” 

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানকে বিধ্বস্ত করে সিরিজ জিতল নিউ জিল্যান্ড

পাকিস্তানে ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের ভাড়া কমল ২০ শতাংশ

বিবৃতিতে গণতন্ত্রের সংগ্রামে পিটিআই প্রধান ইমরান খানের নেতৃত্ব, মানবাধিকারের প্রতি তার অবস্থান ও পাকিস্তানিদের সমস্যা সমাধানে তার নিষ্ঠার প্রশংসা করা হয়েছে। 

এর আগে, ২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার জন্য ইমরান খানকে নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। সেবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য ইমরান খানের নাম মনোনীত করেছিল মার্কিন পত্রিকা ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর।

প্রতি বছর, নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শত শত মনোনীতদের নাম পায়, যার পরে তারা দীর্ঘ আট মাসের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিজয়ী নির্বাচন করে।

 

পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত একটি মামলায় তাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এটি চতুর্থ বড় মামলা যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁস এবং বেআইনি বিবাহ সম্পর্কিত তিনটি দোষ উচ্চ আদালত কর্তৃক বাতিল বা স্থগিত হয়েছে।

২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের পর ইমরান খান ক্ষমতা হারান। তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন, এগুলোকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ