চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার উপকূলে বালু তোলার প্রতিবাদ করায় মারধর করে সাগরে ফেলে দেওয়ার পাঁচ দিন পর রাম দাস নামে এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে সীতাকুণ্ড সমুদ্র এলাকা থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পূর্ব জোন (চট্টগ্রাম) কোস্টগার্ডের কুমিরা ক্যাম্পের কমান্ডার শওকত আকবর। তিনি জানান, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার গুলিয়াখালী সি বিচ-সংলগ্ন সমুদ্র এলাকা থেকে এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। 

জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপকূলে অবৈধভাবে বালু তোলার প্রতিবাদ করায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাম দাসকে মারধর করে সাগরে ফেলে দেয় বালুদস্যুরা। এ সময় তাঁর ভাই লিটন দাসকে অপহরণ করে তারা। খবর পেয়ে আট ঘণ্টা পর নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ এলাকা থেকে লিটন দাসকে উদ্ধার ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে নৌ-পুলিশ। 
জানা গেছে, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ চ্যানেলে ৫টি স্থানে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বালু উত্তোলন করলেও গত ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর বিএনপি-জামায়াত নেতারা এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। সাগর থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের কবলে পড়ছে বেড়িবাঁধ। ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা ও তা পরিবহনে বাল্কহেডের চলাচলের কারণে আশপাশের এলাকায় জেলেদের জালে তেমন মাছও পড়ছে না। 

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার সৈয়দপুর, মুরাদপুরের গুলিয়াখালী, বাড়বকুণ্ডের মাদারীতোলা, বাঁশবাড়িয়ার আকিলপুর, সোনাইছড়ি, কুমিরাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার সন্দ্বীপ চ্যানেলে রাত-দিন ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। গত কয়েক মাস যাবত টানা বালু উত্তোলন করা হলেও নীরব ভূমিকায় উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় জেলেপাড়ার সর্দার প্রদীপ দাস বলেন, চার মাস ধরে সাগর উপকূলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বেপরোয়াভাবে বালু তোলার ফলে জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাগরে বসানো জেলেদের জালগুলো তারা কেটে নিয়ে গেছে। দাদনদারদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কেনা এসব জাল হারিয়ে পথে বসেছেন জেলেরা। হামলার শিকার হওয়া দুই জেলে সহোদরের দেড় লক্ষাধিক টাকার জাল কেটে দিয়েছে এসব বালুখেকো দুর্বৃত্তরা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সীতাকুণ্ড উপকূলে সাগর থেকে বালু তোলা হচ্ছে। উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নিয়ে অভিযোগও করেছেন তিনি। কিন্তু বালু তোলা বন্ধ হয়নি।

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত বাল্কহেড ও ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে ২০টি মামলা রুজু হয়েছে জানিয়ে কুমিরা নৌ-পুলিশের ইনচার্জ ওয়ালি উদ্দীন আকবর বলেন, এনভি নাবিল ফারহান নামক একটি বাল্কহেডের লোকজন জেলে লিটন দাসকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত ছিল। এ ঘটনায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। অপর জেলের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম বলেন, সাগর থেকে অবৈধভাবে বালু তোলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র উপক ল

এছাড়াও পড়ুন:

উদ্ধার হওয়া খুলি-হাড় নিখোঁজ শিশু সাদিয়ার, দাবি পরিবারের

কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় প্রায় ৯ মাস আগে নিখোঁজ হয় ৫ বছরের শিশু হালিমাতুছ সাদিয়া। এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রোববার সাদিয়ার বাড়ির পাশে শুকিয়ে যাওয়া একটি দিঘির খাদ (গর্ত) থেকে শিশুর মাথার খুলি ও চারটি হাড় উদ্ধার করে পুলিশ। বাবা আকতার হোসেন ও মা আয়েশা ছিদ্দিকার দাবি, উদ্ধার হওয়া মাথার খুলি ও হাড় তাদের মেয়ে সাদিয়ার। তবে মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই ও পুলিশ বলছে, ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় করতে হবে। 

রোববার উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের মধ্যম ছিলোনিয়া গ্রামের এক বাসিন্দা দিঘির গর্তে মাছ খুঁজতে গিয়ে শিশুর মাথার খুলি ও চারটি হাড় পান। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় লালমাই থানার ওসি মো. শাহ আলম ঘটনাস্থল গিয়ে হাড় ও খুলি উদ্ধার করেন। এ সময় শিশু সাদিয়ার বাবা আকতার হোসেন ও মা আয়েশা ছিদ্দিকা উপস্থিত ছিলেন।

আয়েশা ছিদ্দিকা বলেন, গত বছরের ১৫ জুলাই আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। তখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে পুলিশি কার্যক্রম তেমন ছিল না। মেয়েকে উদ্ধারে তখন পুলিশের কোনো সহায়তা পাইনি। থানায় শুধু নিখোঁজের একটি ডায়েরি (জিডি) করেছি। গত বছরের নভেম্বরে আমি বাদী হয়ে কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে প্রতিবেশী হারুনুর রশিদ ও নুরুন্নাহারের নামে অপহরণের একটি মামলা করি। তাদের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। 

মামলার পর হারুনুর রশিদ ও নুরুন্নাহার পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

পেরুল উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এনায়েত উল্যাহ বলেন, শিশুটি নিখোঁজের খবর পেয়ে গত বছরের ১৫ জুলাই সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত লাকসামের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দিঘিসহ গ্রামের তিনটি পুকুরে সন্ধান করেন। ওই সময় দিঘির পাড়ে শিশুটির পায়ের জুতা পাওয়া গিয়েছিল। এখন দিঘির একটি অংশের খাদে শিশুর মাথার খুলি ও হাড় পাওয়া গেছে। পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন করবে, এটাই আমাদের দাবি।

মঙ্গলবার লালমাই থানার ওসি মো. শাহ আলম বলেন, উদ্ধার করা খুলি ও হাড় সোমবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। পরিচয় শনাক্তের জন্য ওই শিশুর বাবা-মায়ের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। 

ওসি আরও বলেন, শিশুটি অপহরণের অভিযোগে যেহেতু আদালতের একটি মামলা পিবিআইয়ের তদন্তাধীন, সেহেতু আমরা নতুন করে এখনই কোনো মামলা নেব না।

পিবিআই কুমিল্লার এস আই মো. ইব্রাহিম সমকালকে জানান, গত বছরের নভেম্বরে শিশুটি অপহরণের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়। অপহরণের বিষয়ে একটি অডিও রেকর্ডের সূত্র ধরে আদালতের নির্দেশে রোববার সকালে খাদিজা জাহান রিয়া নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার খাদিজা একই উপজেলার ভুশ্চি গ্রামের ইমাম হোসেনের স্ত্রী এবং নিখোঁজ সাদিয়ার বড় বোন ফাতেমার প্রাক্তন স্বামীর বড় বোন। অপহরণ ঘটনার বিষয়ে আসামিদের সঙ্গে তার কথোপকথনের অডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে। তবে উদ্ধার হওয়া কঙ্কালগুলো নিখোঁজ ওই শিশুর কি-না, তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চবির ৫ শিক্ষার্থীর অবস্থান শনাক্ত, বিশেষ অভিযান চলছে: সেনাবাহিনী
  • আপন মামার হাতে খুন রোহিঙ্গা কিশোর, মুক্তিপণ দিয়েও রক্ষা হয়নি
  • গোবিন্দগঞ্জে স্কুলছাত্র সাব্বির হত্যার বিচারের দাবিতে মহাসড়কে অবস্থান
  • ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে চবির ৫ শিক্ষার্থী অপহরণের অভিযোগ
  • বেড়ানোর কথা বলে অপহরণ, মুক্তিপণ না পেয়ে মামার হাতে ভাগনে খুন
  • উদ্ধার হওয়া খুলি-হাড় নিখোঁজ শিশু সাদিয়ার, দাবি পরিবারের
  • সড়কের গাছ কাটলেন বিএনপির দুই নেতা
  • আনন্দ শোভাযাত্রায় দেখা মিলল রবীন্দ্রনাথ নজরুল লালনের
  • ফেনীতে বাজারের ইজারা নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০
  • মানববন্ধন শেষে আসামির বাড়িতে হামলা-অগ্নিসংযোগ