ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে হাজির বিদেশি ১০ নারী-পুরুষ। শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। এরপর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে পাঠ করেন নিজ নিজ ভাষায় কবিতা। মাতৃভাষায় ব্যক্ত করেন ভাষা নিয়ে নিজেদের অভিব্যক্তিও। আজ শুক্রবার সকালে কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ফটকে নির্মিত জেলার প্রথম শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দেখা যায় এমন দৃশ্য।

বিদেশি এসব নাগরিকেরা জাপান, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, কাজাখস্তান, সিরিয়াসহ ১০টি দেশের। সবাই কক্সবাজারে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তাঁদের নিয়ে কবিতা পাঠের এই আয়োজন করে কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের (কসউবি) প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংগঠন—কসউবি ছাত্র পরিষদ।

‘সার্ধশতকে একুশের দ্রোহ’ শিরোনামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জাপানের নাগরিক মাছিকো ফুকোমারা বলেন, ‘নিজের ভাষায় কথা বলতে পারাটা অনেক আনন্দের। এই স্কুল দেখে আমার নিজের স্কুল ও সেই শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল।  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নিজের দেশ, বাড়ি, প্রিয়জন ও নিজের ভাষাকে মনে পড়ছে।’

নাইজেরিয়ার নাগরিক হাওয়া হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ অনেক আন্তরিক। কসউবির এই উদ্যোগের কারণে আমরা বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ এক জায়গায় বসে একসঙ্গে ভাষাশহীদদের স্মরণ করতে পেরেছি, এটা অনেক আনন্দের।’

ফিলিপাইনের নাগরিক হেলেন বাংলাদেশে আছেন কয়েক বছর ধরে। বিভিন্ন ভাষাভাষীর নাগরিকদের সঙ্গে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে পেরে বেশ খুশি তিনি। হেলেন বলেন, ‘মাতৃভাষায় কথা বলতে পারার স্বাধীনতা অনেক বড় বিষয়। অনেক আনন্দের। ভাষার জন্য যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, তাঁদের ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না।’

কলম্বিয়ার নাগরিক ইসাবেল সুয়োরাজ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঢোকে ছাত্রদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠেন। তখন বিদ্যালয়ের মাঠে মহান একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের কবিতা আবৃত্তি ও ছবি আঁকা চলছিল। ইসাবেল সুয়োরাজ বলেন, এই আয়োজন তাঁকে শৈশবের কথা মনে করিয়ে দিল।

কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে জেলার প্রথম শহীদ মিনারটি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭২ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি। ওই বছর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের স্মরণ করেছিলেন বিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক এম এন সিরাজুল ইসলাম, শিক্ষক বদর আলম, সৈয়দ আহমদসহ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী।

কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক এম এম সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ের গৌরবময় ১৫০ বছর পূর্তির ধারাবাহিকতায় বিদেশিদের নিয়ে মহান একুশের এই আয়োজন করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে স্থাপিত শহীদ মিনারটি জেলার প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে স্বীকৃত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষকদের অবদান গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে খালেদ মোশাররফ, যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন, তাঁর নেতৃত্বে কক্সবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্ররা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন।

বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক রাম মোহন সেন বলেন, ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়ের মাঠে জেলার প্রথম শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। একই সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রথম ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের স্মরণ করেন।

কসউবি প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সংগঠক শেখ আশিকুজ্জামান বলেন, ভৌগোলিকসহ নানা দিক থেকে কক্সবাজার এখন আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির প্রতিষ্ঠার কারণে এখানে কয়েক হাজার বিদেশি নাগরিক অবস্থান করেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের আনন্দ অনেক এবং যথার্থ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ঙ গণ ন বল ন আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানে ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের ভাড়া কমল ২০ শতাংশ

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেলপথে ভ্রমণে ২০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। মূলত ঈদের তিন দিনে সারাদেশে চলমান সব ট্রেনের ভাড়ায় ২০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে পাকিস্তান রেলওয়ে। শনিবার (২২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আরব নিউজ।

প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের তিন দিনে সারাদেশে সব ট্রেনের ভাড়ায় ২০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান রেলওয়ে। আগামী ৩১ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত টিকিট কাউন্টারগুলোতে এই ছাড় দেওয়া হবে। এ ছাড়া যেসব যাত্রী আগাম টিকিট বুকিং করবেন, তারাও এ সুবিধা পাবেন।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের তিন দিনে পাকিস্তান রেলওয়ের ইকোনমি ক্লাস, এসি পার্লার, এসি স্লিপার, এসি বিজনেস এবং এসি স্ট্যান্ডার্ড ক্লাসে ভ্রমণের সময় ২০ শতাংশ ছাড় উপভোগ করতে পারবেন যাত্রীরা। এই ছাড় সব মেইল এক্সপ্রেস, যাত্রীবাহী এবং আন্ত নগর ট্রেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

আরো পড়ুন:

হাসানের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে কিউইদের উড়িয়ে দিল পাকিস্তান

তরুণদের প্রতি আস্থা রাখার আকুতি রাউফের 

তবে ঈদ উপলক্ষে চালানো বিশেষ ট্রেনগুলোতে এই ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে না। 

 

পাকিস্তান রেলওয়ের সাতটি বিভাগের বিভাগীয় সুপারিনটেনডেন্ট এবং বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে।

প্রতি বছর লাখ লাখ পাকিস্তানি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য দূর-দূরান্তের শহর ও বিদেশ থেকে বিমান, ট্রেন, বাসে তাদের নিজ শহরে যাতায়াত করেন। পাকিস্তান রেলওয়ে যাত্রীদের সুবিধার্থে উভয় ঈদেই বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বীর সন্তানদের শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে জাতি
  • বেরোবিতে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
  • মহান স্বাধীনতা উদযাপনে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
  • সমকালের ঈদসংখ্যা প্রকাশ উপলক্ষে প্রীতি সম্মিলন
  • মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে সরকার
  • মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ
  • বিশ্ব পানি দিবসে ওয়ালটন বাজারে আনল অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওয়াটার পিউরিফায়ার 
  • ৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন, আওতার বাইরে যাঁরা
  • ঈদে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা
  • পাকিস্তানে ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের ভাড়া কমল ২০ শতাংশ