ডলারের বিকল্প ভাবলে ব্রিকসকে ১৫০ শতাংশ শুল্কের হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
Published: 21st, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
বিশ্ববাজারে ডলারের আধিপত্য ধরে রাখতে ব্রিকস জোটের দেশগুলোকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডলারের বিকল্প অন্য কোনো মুদ্রা চালুর কথা চিন্তা করলেই ১৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে ব্রিকস সদস্যদের সঙ্গে কোনো ধরনের বাণিজ্য করবেন না বলেও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির রিপাবলিকান গভর্নরের অ্যাসোসিয়েশন এক সভায় এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ব্রিকস ডলারের বাজার ধ্বংসের চেষ্টা করছে। তারা একটি নতুন মুদ্রার প্রচলন করতে চায়। সম্ভবত, চীনা ইউয়ান ব্যবহারে আগ্রহী তারা।
অবশ্য, ট্রাম্পের এ হুঁশিয়ারির পর এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো।
পশ্চিমা বলয় থেকে নিষ্কৃতি পেতে ২০২৩ সালে ডলারের পরিবর্তে নতুন অভিন্ন মুদ্রা প্রচলনের প্রস্তাব করেন ব্রিকসের সদস্য দেশ ব্রাজিল, চীন, ভারত, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা। আর সেখান থেকেই সূত্রপাত ব্রিকস ও যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি দ্বন্দ্বের।
শুধু ব্রিকসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ক্ষান্ত হননি ট্রাম্প। টিপ্পনি কাটেন কানাডাকেও। তিনি বলেন, অটোমোবাইল, তেল, গ্যাসসহ পুরো দেশের ৯৫ শতাংশ পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে নেয় কানাডা। সে হিসেবে কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে গেছে। কানাডার বাসিন্দারা তাদের জাতীয় সংগীত পছন্দ করেন। এ বিষয়ে সামনে আমরা একটি চুক্তি করব। আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্যের জাতীয় সংগীত হিসেবেও কানাডা গানটা আমরা রাখতে পারি।
একইদিন মার্কিন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও কথা বলেন ট্রাম্প। নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং সুইডেনের মত যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক ভালো হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
বিএইচ
.উৎস: SunBD 24
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ হউক বহুপক্ষীয়
বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা নহে; জাতিসত্তা রক্ষার আন্দোলনেও অমর দিবসরূপে দেদীপ্যমান। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বুকের তাজা রক্ত ঢালিয়া দিয়া ভাষাশহীদগণ কেবল দেশপ্রেমের অনন্য উদাহরণই সৃষ্টি করেন নাই; দিবসটি বাংলা ছাপাইয়া সকল ভাষার মর্যাদার স্মারক হইয়া উঠিয়াছে। একুশের চেতনা দেশ-কাল-পাত্রভেদে অধিকার আদায়ে প্রেরণার উৎসরূপে ক্রিয়াশীল। আমরা দেখিয়াছি, অধিকার আদায়ে বাঙালি ভাষা আন্দোলনের যেই সংগ্রাম রচনা করিয়াছিল, সেই পথপরিক্রমায়ই সূচিত হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। অকুতোভয় বাঙালি জনগোষ্ঠী এই ভূখণ্ডের অপরাপর জাতিগোষ্ঠীকে লইয়া দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জন করে স্বাধীনতা। স্বাধীনতার পরও যুগ যুগ ধরিয়া আন্দোলনের প্রেরণা হইয়া রহিয়াছে ভাষা আন্দোলন। এমনকি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানও উহার বাহিরে নহে। বায়ান্নতে ছাত্র-জনতা মুখের ভাষা রক্ষায় সোচ্চার হইয়া আন্দোলনে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও তাহারা প্রেরণা হইয়া উঠিয়াছিল। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দেয়ালে দেয়ালে মায়ের ভাষায় লিখিত গ্রাফিতি মানুষকে উজ্জীবিত করিয়াছিল। মাতৃভাষায় উচ্চারিত স্লোগান যে কতটা শক্তিশালী হইয়া উঠিতে পারে; যুগে যুগ দাবি আদায়ের আন্দোলনে উহা প্রমাণিত। যেই কারণে ঐতিহাসিক দিবসটি সাত দশক অতিক্রম করিলেও উহার চেতনা চিরঅমলিন।
আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রধান দুইটি দাবি ছিল– রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন। ১৯৫৪ সালেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় তৎকালীন পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা রাষ্ট্রভাষারূপে স্বীকৃতির মাধ্যমে প্রথম দাবি পূরণ হইলেও দ্বিতীয় দাবিটি এখনও প্রত্যাশিত মাত্রায় পূরণ হয় নাই। সর্বত্র বাংলা প্রচলনের প্রশ্নটা আমরা ফি বৎসরই করিয়া আসিতেছি। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিটা পর্যায়ে, প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাদের মাতৃভাষার প্রচলন কতটা হইয়াছে? যেই জাতির মানুষ ভাষার তরে জীবন দিয়াছে, সেই জাতির কোটি কোটি মানুষের পড়িতে ও লিখিতে না পারিবার বিষয় বেদনাদায়কই বটে। একই সঙ্গে মাতৃভাষা এখনও আমাদের সর্বত্র শিক্ষার বাহন হইয়া উঠিতে পারে নাই। উচ্চশিক্ষার পুস্তকসহ অনেক বিষয় আমরা এখনও বাংলায় করিতে পারি নাই। মাতৃভাষারূপে বাংলার দাপ্তরিক ব্যবহার বৃদ্ধি পাইয়াছে সত্য, কিন্তু আদালতের কর্মকাণ্ড এখনও ইংরাজিনির্ভর।
তবে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঘোষণায় বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার ভাবমূর্তিই কেবল উজ্জ্বল হয়নি, একই সঙ্গে বিশ্বের সব মাতৃভাষাই বিশেষ মর্যাদা ও মনোযোগ লাভ করিয়াছে। জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষারূপে বাংলাও আবির্ভূত হউক। আমরা বিশ্বাস করি, সকলের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করিবার বিষয়ও একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা। অমর একুশে আমাদের জাতিসত্তা রক্ষার আন্দোলনরূপেও দেখিয়া আসিয়াছি। আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইহা প্রেরণার বাতিঘরস্বরূপ ক্রিয়াশীল। তজ্জন্য দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটেও পথ দেখাইতে পারে একুশের চেতনা।
আমরা জানি, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমাদের চ্যালেঞ্জ দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ। তজ্জন্য অবাধ-সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করিয়াছেন। এখন প্রয়োজন নির্বাচন ও অন্যান্য সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য। বিশেষত রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ঐকমত্য জরুরি।
আমরা প্রত্যাশা করিব, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দেশবাসী বায়ান্ন সালের ন্যায় দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হইবে। আমরা জানি, একুশে ফেব্রুয়ারি মানে বহুপাক্ষিকতা ও সকলের যথাযোগ্য মর্যাদার প্রশ্ন। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যেই পথ আমাদের সম্মুখে উন্মুক্ত, উহা সকলের জন্য অবারিত হউক।