Prothomalo:
2025-03-28@22:13:17 GMT

ভাষা ও সাহিত্যচর্চা ইবাদত

Published: 21st, February 2025 GMT

মানুষ ও প্রাণিকুলের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য হলো বাক বা ভাষা। কোরআন কারিমের বর্ণনা, ‘দয়াময় রহমান আল্লাহ! কোরআন পাঠ শেখালেন; মানুষ সৃষ্টি করলেন। তাকে ভাষা বয়ান শেখালেন।’ (সুরা-৫৫ আর রাহমান, আয়াত: ১-৪)

শুদ্ধ ভাষা ও সুন্দর বর্ণনার প্রভাব অনস্বীকার্য। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) ছিলেন ‘আফসাহুল আরব’ তথা আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী। বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলা নবীজি (সা.

)–এর সুন্নত। আল্লাহ তাআলা কিতাব নাজিল করেছেন ও নবী–রাসুলদের পাঠিয়েছেন তাঁদের স্বজাতির ভাষায়। কোরআন মাজিদে এসেছে, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।’ (সুরা-১৪ ইব্রাহিম, আয়াত: ৪)

মহাগ্রন্থ আল–কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করার কারণ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইহা আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায় কোরআন, যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পারো।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২)

হজরত মুসা (আ.)–কে নবী ও রাসুল হিসেবে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করলে তিনি বললেন, ‘“আমার ভাই হারুন আমার চেয়ে বাগ্মী। অতএব তাকে আমার সাহায্যকারী রূপে প্রেরণ করুন, সে আমাকে সাহায্য করবে। আমি আশঙ্কা করি, তারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে।” আল্লাহ বললেন, “আমি তোমার ভাইয়ের দ্বারা তোমার হাত শক্তিশালী করব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করব। তারা তোমাদের নিকট পৌঁছাতে পারবে না, তোমরা ও তোমাদের অনুসারীরা আমার নিদর্শনবলে তাদের ওপর প্রবল হবে।”’ (সুরা-২৮ কাসাস, আয়াত: ৩৪-৩৫)

নবী কারিম (সা.) মদিনা মুনাওয়ারায় বদর যুদ্ধের বন্দীদের মধ্যে যাঁরা লেখাপড়া জানা শিক্ষিত, তাঁদের মুক্তিপণের বিনিময়ে অর্থসম্পদ না নিয়ে এর পরিবর্তে তাঁদের মুসলিম শিশুদের লেখাপড়া ও ভাষাশিক্ষার শিক্ষকরূপে নিয়োজিত করেছিলেন এবং ১০ সাহাবি সন্তানকে ভাষাশিক্ষাদানের বিনিময়ে তাঁদের একেকজনকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সাহাবিকে বিভিন্ন বিদেশি ভাষা শিখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর যাঁরা বিভিন্ন ভাষা জানেন, তাঁদের প্রশংসা করেছিলেন।

ভাষা হলো ভাব প্রকাশের মাধ্যম। ভাষার অলংকৃত রূপ হলো সাহিত্য। সাহিত্যের বিশেষায়িত পর্ব হলো কাব্য। যিনি কাব্য করেন, তিনি হলেন ‘কবি’। মুসলমানদের হাতেই রচিত হয় আরবি ভাষার ব্যাকরণ। অনারবদের কোরআন পড়তে সমস্যা হতো বিধায় হজরত আলী (রা.) তাঁর প্রিয় শিষ্য হজরত আবুল আসওয়াদ দুওয়াইলি (রহ.)–কে নির্দেশনা দিয়ে আরবি ভাষাশাস্ত্র প্রণয়ন করান, যা ‘ইলমে নাহু’ ও ‘ইলমে ছরফ’ নামে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে উচ্চতর ভাষাতত্ত্ব ‘ইলমে বায়ান’, ‘ইলমে মাআনি’ ও ‘ইলমে বাদি’র উন্মেষ ঘটে।

আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘হে নবী (সা.)! আমি আপনার প্রতি সর্বসুন্দর কাহিনি বর্ণনা করেছি।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২) প্রিয় নবীজি (সা.) নিজে কাব্য করতেন। বিখ্যাত সাহাবি হজরত হাসসান বিন সাবিত (রা.) কাব্য রচনা করতেন। হজরত আয়িশা (রা.) কাব্যচর্চা করতেন। এভাবে ইসলামের সব যুগেই বিভিন্ন ভাষায় সাহিত্যচর্চা চলে আসছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

কোরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াতের শুরুতে আল্লাহ তাআলা বলেন ‘ইকরা’ মানে পড়ো। (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ১) কিয়ামতের দিনে হাশরের ময়দানে বিচার দিবসে আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তুমি তোমার কিতাব (আমলনামা) পাঠ করো, আজ তোমার হিসাবের জন্য তুমিই যথেষ্ট।’ (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ১৪)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বমানবতার স্বাধীনতার মাস রমজান

ইসলাম সব মানুষকে ব্যক্তিস্বাধীনতা, পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক শৃঙ্খলা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা লাভের অধিকার দিয়েছে। মানবতার মুক্তির সনদ আল–কোরআন আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি নাজিল হয়েছে পবিত্র রমজান মাসে। রমজান মাসেই রাসুলুল্লাহ (সা.) আত্মার স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন, মানুষের গোলামি বা দাসত্ব থেকে মুক্তি ঘোষণা করলেন, জালিম শাহি ও জুলুমের জিঞ্জির থেকে মুক্তির ঘোষণা দিলেন। তাগুতি শাসন ও শোষণ থেকে এবং সব শয়তানি শক্তির বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করার স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন।

‘রহমাতুল লিল আলামিন’ বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘হজের বা আরাফাতের দিবস যেমন সম্মানিত, মক্কা নগর যেমন পবিত্র, কাবা ঘর যেমন মর্যাদাপূর্ণ; সব মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান তেমনি সম্মানিত ও সুরক্ষিত।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া) 

ইসলাম ব্যক্তিস্বাধীনতার পাশাপাশি মানবাধিকার সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। ব্যক্তিস্বাধীনতার সীমানা অন্যের অধিকারের প্রাচীর দ্বারা সীমাবদ্ধ।

রমজান মাস ইসলামি দর্শনে যেমনি স্বাধীনতার মাস, তেমনি বিজয়েরও মাস। ইসলামের প্রথম জয় বদর বিজয় হয়েছিল দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসের ১৭ তারিখেই। ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ জয় মক্কা বিজয় হয়েছিল অষ্টম হিজরিতে ১৯ রমজানে।

শুধু জাগতিক স্বাধীনতা ও বিজয় নয়; বরং আত্মিক মুক্তি ও বিজয় সম্ভব এই রমজান মাসেই। যার জন্য প্রয়োজন যথাযথ উপায়ে সিয়াম সাধনা। তাকওয়া, সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতাও বিজয়ের পূর্বশর্ত। আত্মা বা নফস মোহমুক্ত ও স্বাধীন হলেই প্রকৃত অর্থে দুনিয়ার বিজয় বা সফলতা এবং পরকালে মুক্তি বা জীবনের সার্থকতা লাভ হয়। 

মনোজগতে মুক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য, সংযম এবং নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসাই মানুষকে সব ক্ষেত্রে সফলতা এনে দেয়। 

কোরআন মজিদে এ বিষয় বোঝাতে স্বৈরাচারী জালুতের বিপুল সৈন্যর সঙ্গে হজরত তালুতের স্বল্পসংখ্যক মুজাহিদ বাহিনীর সফলতা ও বিজয়ের কাহিনি উল্লেখ করা হয়েছে। ‘অতঃপর তালুত যখন সৈন্যবাহিনীসহ অভিযানে বের হলো, সে তখন বলল, “আল্লাহ একটি নদী দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করবেন। যে তা থেকে পানি পান করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। আর যে এর স্বাদ গ্রহণ করবে না, সে আমার দলভুক্ত। এ ছাড়া যে এক আঁজলা পরিমাণ পানি গ্রহণ করবে, সে–ও আমার দলভুক্ত থাকবে।” অতঃপর অল্পসংখ্যক ব্যতীত তারা তা (নদী) থেকে পান করল। সে (তালুত) এবং তার সঙ্গী ইমানদারেরা যখন তা (নদী) অতিক্রম করল, তখন তারা বলল, জালুত ও তার সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো শক্তি আজ আমাদের নেই। কিন্তু যাদের দৃঢ়প্রত্যয় ছিল আল্লাহর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবে, তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে। 

‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। তারা যখন যুদ্ধার্থে জালুত ও তার সৈন্যবাহিনীর সম্মুখীন হলো, তখন তারা বলল, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ধৈর্য দান করুন, আমাদের দৃঢ়পদ ও অবিচল রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।” সুতরাং তারা আল্লাহর হুকুমে তাদের পরাভূত করল, দাউদ (আ.) জালুতকে হত্যা করলেন, আল্লাহ তাকে রাজত্ব ও হিকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন, তা তাকে শিক্ষা দিলেন। 

‘আল্লাহ যদি মানবজাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ জগৎসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল। এসব আল্লাহর আয়াত, আমি তোমার কাছে তা যথাযথভাবে উপস্থাপন করছি; আর নিশ্চয়ই তুমি রাসুলদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৪৯-২৫৩)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আল কুদস দিবস ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতায় করণীয়
  • শবে কদরের কেন এত কদর
  • পণতীর্থ মহাবারুনী গঙ্গাস্নান শুরু
  • বিশ্বমানবতার স্বাধীনতার মাস রমজান