মানুষ ও প্রাণিকুলের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য হলো বাক বা ভাষা। কোরআন কারিমের বর্ণনা, ‘দয়াময় রহমান আল্লাহ! কোরআন পাঠ শেখালেন; মানুষ সৃষ্টি করলেন। তাকে ভাষা বয়ান শেখালেন।’ (সুরা-৫৫ আর রাহমান, আয়াত: ১-৪)
শুদ্ধ ভাষা ও সুন্দর বর্ণনার প্রভাব অনস্বীকার্য। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) ছিলেন ‘আফসাহুল আরব’ তথা আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী। বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলা নবীজি (সা.
মহাগ্রন্থ আল–কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করার কারণ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইহা আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায় কোরআন, যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পারো।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২)
হজরত মুসা (আ.)–কে নবী ও রাসুল হিসেবে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করলে তিনি বললেন, ‘“আমার ভাই হারুন আমার চেয়ে বাগ্মী। অতএব তাকে আমার সাহায্যকারী রূপে প্রেরণ করুন, সে আমাকে সাহায্য করবে। আমি আশঙ্কা করি, তারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে।” আল্লাহ বললেন, “আমি তোমার ভাইয়ের দ্বারা তোমার হাত শক্তিশালী করব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করব। তারা তোমাদের নিকট পৌঁছাতে পারবে না, তোমরা ও তোমাদের অনুসারীরা আমার নিদর্শনবলে তাদের ওপর প্রবল হবে।”’ (সুরা-২৮ কাসাস, আয়াত: ৩৪-৩৫)
নবী কারিম (সা.) মদিনা মুনাওয়ারায় বদর যুদ্ধের বন্দীদের মধ্যে যাঁরা লেখাপড়া জানা শিক্ষিত, তাঁদের মুক্তিপণের বিনিময়ে অর্থসম্পদ না নিয়ে এর পরিবর্তে তাঁদের মুসলিম শিশুদের লেখাপড়া ও ভাষাশিক্ষার শিক্ষকরূপে নিয়োজিত করেছিলেন এবং ১০ সাহাবি সন্তানকে ভাষাশিক্ষাদানের বিনিময়ে তাঁদের একেকজনকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সাহাবিকে বিভিন্ন বিদেশি ভাষা শিখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর যাঁরা বিভিন্ন ভাষা জানেন, তাঁদের প্রশংসা করেছিলেন।
ভাষা হলো ভাব প্রকাশের মাধ্যম। ভাষার অলংকৃত রূপ হলো সাহিত্য। সাহিত্যের বিশেষায়িত পর্ব হলো কাব্য। যিনি কাব্য করেন, তিনি হলেন ‘কবি’। মুসলমানদের হাতেই রচিত হয় আরবি ভাষার ব্যাকরণ। অনারবদের কোরআন পড়তে সমস্যা হতো বিধায় হজরত আলী (রা.) তাঁর প্রিয় শিষ্য হজরত আবুল আসওয়াদ দুওয়াইলি (রহ.)–কে নির্দেশনা দিয়ে আরবি ভাষাশাস্ত্র প্রণয়ন করান, যা ‘ইলমে নাহু’ ও ‘ইলমে ছরফ’ নামে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে উচ্চতর ভাষাতত্ত্ব ‘ইলমে বায়ান’, ‘ইলমে মাআনি’ ও ‘ইলমে বাদি’র উন্মেষ ঘটে।
আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘হে নবী (সা.)! আমি আপনার প্রতি সর্বসুন্দর কাহিনি বর্ণনা করেছি।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২) প্রিয় নবীজি (সা.) নিজে কাব্য করতেন। বিখ্যাত সাহাবি হজরত হাসসান বিন সাবিত (রা.) কাব্য রচনা করতেন। হজরত আয়িশা (রা.) কাব্যচর্চা করতেন। এভাবে ইসলামের সব যুগেই বিভিন্ন ভাষায় সাহিত্যচর্চা চলে আসছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
কোরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াতের শুরুতে আল্লাহ তাআলা বলেন ‘ইকরা’ মানে পড়ো। (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ১) কিয়ামতের দিনে হাশরের ময়দানে বিচার দিবসে আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তুমি তোমার কিতাব (আমলনামা) পাঠ করো, আজ তোমার হিসাবের জন্য তুমিই যথেষ্ট।’ (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ১৪)
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
সৌদি আরব থেকে ফিরে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার ফেনী পৌরসভা কাউন্সিলর খালেদ
ফেনীতে জুলাই অভ্যুত্থানে গত ৪ আগস্ট ছাত্র হত্যা মামলার পলাতক আসামি ও ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর খালেদ খানকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ফেনীর আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে সোমবার দুপুরে সৌদি আরব থেকে ঢাকা ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে বিমানবন্দর থানা-পুলিশ।
গ্রেপ্তার খালেদ খান ফেনী শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ড পাঠানবাড়ি এলাকার সেলিম খানের ছেলে। পুলিশ জানায়, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার মহিপালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের কাশিমপুর এলাকার শিক্ষার্থী ওয়াকিল আহমেদ। ওই ঘটনায় তাঁর মা মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার ১৩০ নম্বর আসামি সাবেক কাউন্সিলর খালেদ খান।
সরকার পরিবর্তনের পর সৌদি আরব যান খালেদ খান। সোমবার দুপুরে তিনি সৌদি আরব থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ফেনী পুলিশের একটি দল আজ মঙ্গলবার ভোরে তাঁকে ফেনী থানায় নিয়ে আসে।
ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইকবাল হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে আসামি খালেদ খানের বিরুদ্ধে একটি হত্যা ও একটি হত্যাচেষ্টার মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। বিকেলে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, গ্রেপ্তার খালেদ খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।