Prothomalo:
2025-02-22@08:50:18 GMT

ভাষা ও সাহিত্যচর্চা ইবাদত

Published: 21st, February 2025 GMT

মানুষ ও প্রাণিকুলের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য হলো বাক বা ভাষা। কোরআন কারিমের বর্ণনা, ‘দয়াময় রহমান আল্লাহ! কোরআন পাঠ শেখালেন; মানুষ সৃষ্টি করলেন। তাকে ভাষা বয়ান শেখালেন।’ (সুরা-৫৫ আর রাহমান, আয়াত: ১-৪)

শুদ্ধ ভাষা ও সুন্দর বর্ণনার প্রভাব অনস্বীকার্য। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) ছিলেন ‘আফসাহুল আরব’ তথা আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী। বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলা নবীজি (সা.

)–এর সুন্নত। আল্লাহ তাআলা কিতাব নাজিল করেছেন ও নবী–রাসুলদের পাঠিয়েছেন তাঁদের স্বজাতির ভাষায়। কোরআন মাজিদে এসেছে, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।’ (সুরা-১৪ ইব্রাহিম, আয়াত: ৪)

মহাগ্রন্থ আল–কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করার কারণ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইহা আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায় কোরআন, যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পারো।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২)

হজরত মুসা (আ.)–কে নবী ও রাসুল হিসেবে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করলে তিনি বললেন, ‘“আমার ভাই হারুন আমার চেয়ে বাগ্মী। অতএব তাকে আমার সাহায্যকারী রূপে প্রেরণ করুন, সে আমাকে সাহায্য করবে। আমি আশঙ্কা করি, তারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে।” আল্লাহ বললেন, “আমি তোমার ভাইয়ের দ্বারা তোমার হাত শক্তিশালী করব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করব। তারা তোমাদের নিকট পৌঁছাতে পারবে না, তোমরা ও তোমাদের অনুসারীরা আমার নিদর্শনবলে তাদের ওপর প্রবল হবে।”’ (সুরা-২৮ কাসাস, আয়াত: ৩৪-৩৫)

নবী কারিম (সা.) মদিনা মুনাওয়ারায় বদর যুদ্ধের বন্দীদের মধ্যে যাঁরা লেখাপড়া জানা শিক্ষিত, তাঁদের মুক্তিপণের বিনিময়ে অর্থসম্পদ না নিয়ে এর পরিবর্তে তাঁদের মুসলিম শিশুদের লেখাপড়া ও ভাষাশিক্ষার শিক্ষকরূপে নিয়োজিত করেছিলেন এবং ১০ সাহাবি সন্তানকে ভাষাশিক্ষাদানের বিনিময়ে তাঁদের একেকজনকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সাহাবিকে বিভিন্ন বিদেশি ভাষা শিখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর যাঁরা বিভিন্ন ভাষা জানেন, তাঁদের প্রশংসা করেছিলেন।

ভাষা হলো ভাব প্রকাশের মাধ্যম। ভাষার অলংকৃত রূপ হলো সাহিত্য। সাহিত্যের বিশেষায়িত পর্ব হলো কাব্য। যিনি কাব্য করেন, তিনি হলেন ‘কবি’। মুসলমানদের হাতেই রচিত হয় আরবি ভাষার ব্যাকরণ। অনারবদের কোরআন পড়তে সমস্যা হতো বিধায় হজরত আলী (রা.) তাঁর প্রিয় শিষ্য হজরত আবুল আসওয়াদ দুওয়াইলি (রহ.)–কে নির্দেশনা দিয়ে আরবি ভাষাশাস্ত্র প্রণয়ন করান, যা ‘ইলমে নাহু’ ও ‘ইলমে ছরফ’ নামে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে উচ্চতর ভাষাতত্ত্ব ‘ইলমে বায়ান’, ‘ইলমে মাআনি’ ও ‘ইলমে বাদি’র উন্মেষ ঘটে।

আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘হে নবী (সা.)! আমি আপনার প্রতি সর্বসুন্দর কাহিনি বর্ণনা করেছি।’ (সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ২) প্রিয় নবীজি (সা.) নিজে কাব্য করতেন। বিখ্যাত সাহাবি হজরত হাসসান বিন সাবিত (রা.) কাব্য রচনা করতেন। হজরত আয়িশা (রা.) কাব্যচর্চা করতেন। এভাবে ইসলামের সব যুগেই বিভিন্ন ভাষায় সাহিত্যচর্চা চলে আসছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

কোরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াতের শুরুতে আল্লাহ তাআলা বলেন ‘ইকরা’ মানে পড়ো। (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ১) কিয়ামতের দিনে হাশরের ময়দানে বিচার দিবসে আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তুমি তোমার কিতাব (আমলনামা) পাঠ করো, আজ তোমার হিসাবের জন্য তুমিই যথেষ্ট।’ (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ১৪)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ থেকে মুক্তির জন্য যে আমল করবেন

আর্থিক দুরবস্থায় পড়লে মানুষ ঋণ নিতে বাধ্য হয়। ঋণের টাকায় প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করে। তবে সাধ্যের বাইরে ঋণ দেওয়া-নেওয়া দুটিই ইসলাম নিষেধ করেছে। কারণ, তাতে সময়মতো ঋণ পরিশোধের সম্ভাবনা কমে যায়। এর ফলে ঋণদাতাকে যেমন হতাশাগ্রস্ত হয়, ঋণগ্রহীতার আত্মমর্যাদাও ক্ষতির শিকার হয়।

মহানবী (সা.) আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন যাতে তিনি ঋণে জড়িয়ে না পড়েন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) নামাজের পরে দোয়া করতেন—হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে গুনাহ ও ঋণ থেকে পানাহ চাচ্ছি। এক প্রশ্নকারী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি ঋণ থেকে বেশি পানাহ চান কেন? রাসুল (সা.) জবাব দিলেন, মানুষ ঋণগ্রস্ত হলে মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা ভঙ্গ করে। (বুখারি, হাদিস: ২,৩৯৭)

হাদিসে ঋণ থেকে মুক্তির আরও কয়েকটি দোয়া রয়েছে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল-আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আউজুবিকা মিন দ্বালায়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমনপীড়ন থেকে। (বুখারি, হাদিস: ২,৮৯৩)

আরও পড়ুনবদলে দিতে পারে জীবনে চলার ধরন সুরা লোকমানের উপদেশগুলো০৯ জানুয়ারি ২০২৪

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কাসালি, ওয়াল হারামি, ওয়াল মাছামি, ওয়াল মাগরামি।’ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে অলসতা, অধিক বার্ধক্য, গুনাহ এবং ঋণ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (বুখারি, হাদিস: ৬,০০৭)

হজরত আনাস (রা.)–এর বরাতে একটি হাদিস জানা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়াল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া দ্বালায়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ, নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমনপীড়ন থেকে। (বুখারি, হাদিস: ২৮৯৩)

একজন বিশ্বাসী লোকের কাছে ঋণের বোঝার চেয়ে ভারি কিছু নেই। কারণ, ঋণ বান্দার হক। ক্ষমা না পেলে ঋণ থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই। তাই কেউ ঋণ মাফ করে দিলে ওই ব্যক্তির জন্য আখিরাতে অনেক বড় পুরস্কারের ঘোষণা এসেছে হাদিসে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু রবিআ আল-মাখযুমি (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী করিম (সা.) হুনাইন যুদ্ধের সময় তাঁর কাছ থেকে ৩০ বা ৪০ হাজার দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন। নবী (সা.) যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তাঁর পাওনা পরিশোধ করেন। এরপর নবী করিম (সা.) তাঁকে দোয়া করে বললেন, ‘আল্লাহ–তাআলা তোমাকে তোমার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। নিশ্চয়ই ঋণের প্রতিদান হলো, তা পরিশোধ করা ও প্রশংসা করা।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)

আরও পড়ুনআবু জাহেলের মা ছিলেন সাহাবি০১ নভেম্বর ২০২৩

একবার এক লোক ঋণ পরিশোধের জন্য ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)–এর কাছে কিছু সাহায্য চাইলেন। আলী (রা.) তাঁকে বললেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে কয়েকটি শব্দ শিখিয়ে দিয়েছিলেন, আমি কি তোমাকে সেটা শিখিয়ে দেব? সেটা পড়লে আল্লাহ তোমার ঋণমুক্তির দায়িত্ব নেবেন। তোমার ঋণ যদি পর্বতপ্রমাণ হয়, তাহলেও।’ এরপর আলী (রা.) ওই ব্যক্তিকে কথাগুলো শিখিয়ে দিলেন, ‘আল্লাহুম্মাক ফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ, হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারও মুখাপেক্ষী কোরো না এবং তোমার অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে সচ্ছলতা দান করো। (তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫৬৩; মুসনাদে আহমদ: ১,৩২১)

আরও পড়ুনআত্মীয়তা ভাঙতে রাসুল (সা.)–এর সতর্কতা১৯ জুন ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঋণ থেকে মুক্তির জন্য যে আমল করবেন
  • নবীজি (সা.)-এর অন্তিম সময়
  • সাত দিবস ও বিভিন্ন মাসের নফল নামাজ
  • বইমেলায় মোজাফ্‌ফর হোসেনের দুইটি বই
  • কালিমা শাহাদাত সত্য সাক্ষ্য