গত ১২ জানুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তেলেগু ভাষার নতুন সিনেমা ‘ডাকু মহারাজ’। সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন দক্ষিণী সিনেমার বরেণ্য অভিনেতা নান্দামুরি বালাকৃষ্ণা। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রূপায়ন করেছেন বলিউড অভিনেত্রী উর্বশী রাউতেলা।

সিনেমাটির ‘দাবিডি ডিবিডি’ শিরোনামের গানে ৩৪ বছরের ছোট উর্বশীর সঙ্গে নেচেছেন নান্দামুরি বালাকৃষ্ণা। সিনেমা মুক্তির আগেই গানটির অংশবিশেষ নিজের ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করেন উর্বশী। তারপরই শুরু হয় কড়া সমালোচনা। রীতিমতো বিতর্কে জড়ান নান্দামুরি-উর্বশী। নেটিজেনরা উর্বশী-নান্দামুরির নাচকে ‘অশ্লীল’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ নিয়ে এখনো সমালোচনা বন্ধ হয়নি।

এবার জানা গেল, ‘ডাকু মহারাজ’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়েছেন উর্বশী। ইটি নাউয়ের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এ সিনেমায় উর্বশীর ৩ মিনিটের পারফরম্যান্সের জন্য ৩ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার বেশি) পারিশ্রমিক নিয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি মিনিটের জন্য ১ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার বেশি) পারিশ্রমিক নিয়েছেন এই অভিনেত্রী।

আরো পড়ুন:

সেই প্রেমিককে বিয়ে করলেন নার্গিস ফাখরি?

৪১৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে ভিকি-রাশমিকার সিনেমার আয়

গত ১২ জানুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর ‘ডাকু মহারাজ’ সিনেমা বক্স অফিসে বেশ সাড়া ফেলে। স্যাকনিল্কের তথ্য অনুসারে, ৩৮ দিনে ‘ডাকু মহারাজ’ বক্স অফিসে আয় করেছে ১২৫.

৫৯ কোটি রুপি। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) থেকে নেটফ্লিক্সে দেখা যাবে পূর্ণাঙ্গ সিনেমাটি।

অ্যাকশন-থ্রিলার ঘরানার ‘ডাকু মহারাজ’ সিনেমা পরিচালনা করেছেন ববি কোলি। উর্বশী-নান্দামুরি ছাড়াও সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন— ববি দেওল, প্রজ্ঞা জয়সওয়াল, রবি কৃষাণ, ঋষি, রাও রমেশ প্রমুখ।

২০১৫ সালে ‘মিস ডিভা ইউনিভার্স’ খেতাব জেতেন উর্বশী। এরপর সেই বছর ‘মিস ইউনিভার্স’ আসরে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। এখন পর্যন্ত সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি বিজয়ী হওয়ার রেকর্ড রয়েছে তার।

পাশাপাশি বলিউডের ‘সিং সাব দি গ্রেট’, ‘সনম রে’, গ্রেট গ্র্যান্ড মাস্তি’, ‘হেট স্টোরি ফোর’, ‘পাগলপান্তি’ প্রভৃতি সিনেমায় অভিনয় করেছেন উর্বশী। বর্তমানে তেলেগু ও হিন্দি ভাষার তিনটি সিনেমার কাজ তার হাতে রয়েছে।

ঢাকা/শান্ত

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘নিশি ট্রেনের ভূত’ উপন্যাসে যা বলে গেল ভূত

ঘটাং ঘট, রাতের ট্রেন। ছুটে চলছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম। কেবিন–যাত্রী শিশির মোড়ল, সহযাত্রী সে কি ভূত! মধ্যরাতে আঁধার কেবিনে সহযাত্রীর হঠাৎ প্রশ্ন, ‘আপনি কখনো ভূত দেখেছেন?’ আচমকা প্রশ্নে বিরক্ত শিশির মোড়ল।

অনেক ভূতের গল্প শুনেছি দাদি, নানি, নানার মুখে। দারোগাভূত, গেছোভূত, বাঁশভূত, ব্যাঙভূত, চ্যাংভূত আরও কত নামের ভূত! ছড়া কেটেছি বন্ধুরা তালে তালে, ‘তেঁতুলগাছের তলা/ রাত্রিদুপুর বেলা/ ভূতে মারে ঠেলা।’ কিন্তু ‘নিশি ট্রেনের ভূত’ উপন্যাসের লেখক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক আমাদের, মানে পাঠকদের জন্য নিয়ে এসেছেন এক প্রাপ্তবয়স্ক ভূতের জীবনভিত্তিক এক তরজমা। লেখকের এই ভূত বাংলা নিয়ে লেখাপড়া করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। জীবনটা শুরু হয়েছিল তার স্বপ্ন বুনে। বিয়ে করে ব্যবসায় থিতু হয়েছিল গল্পপটু এই ভূত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আনুকূল্যে গল্পবন্ধুও জুটে গিয়েছিল মেসেঞ্জারে। তা-ও আবার এই নারীবন্ধুর স্বামী থাকে প্রবাসে। বেশ সময় কাটত মেসেঞ্জারে গল্প বলে অবসরে। বউয়ের সন্দেহের তালিকায়ও নাম উঠেছিল। রাতের ট্রেনের আঁধার কেবিনে বসে এই ভূতপ্রেম, নীতিনৈতিকতা, সন্তানবাৎসল্য, শিশুমনের স্বপ্ন, লড়াকু জীবন আর নেতা নামের নির্মম লেবাসের আড়ালের ক্রূরতার গল্প বলে যায়। নিষ্ঠুরতার আগুন কী করে নিমেষে সব স্বপ্নের যবনিকাপাত ঘটিয়ে দেয়, তার মর্মস্পর্শী বর্ণনা কাঁদিয়ে দেয় সামাজিক বিবেককে। ভূতটি যখন মানুষ ছিল, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিল ব্যবসার কাজে। সেই সঙ্গে আকাঙ্ক্ষাও ছিল মেসেঞ্জার-প্রেমিকার সঙ্গে মধুর সময় কাটানোর। শিশির মোড়ল গল্পের মধ্যে এতটাই লীন হয়ে গিয়েছিলেন যে তাঁর তাড়া ছিল গল্পের যবনিকায় পৌঁছানোর, কিন্তু ভূত নামের আত্মাটি সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে বলে যেতে থাকে পরতের পর পরত তার দেখা মানুষজীবনের গল্প। শিশির মোড়লের তাগাদার পরিপ্রেক্ষিতে ভূতটি ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায় ছাপা হওয়া এক রসাত্মক ধারাবাহিক উপন্যাসের কিয়দংশের অবতারণা করে। ওই অংশ ছিল এমন: ‘নায়ক ও নায়িকা ঘরে ঢুকল। তারা দরজা বন্ধ করল। রাতের বেলা। তারা বাতি বন্ধ করল। বিছানায় গিয়ে বসল দুজন পাশাপাশি।’ তারপর লেখা: ‘বাকি অংশ পরের লেখায়।’ পরের সংখ্যায় লেখা শুরু হলো, ‘নায়িকা গোসল সেরে এসেছে। তার চুল বেয়ে পানি ঝরছে। সে একটি গামছা দিয়ে চুলে বেণি বানাচ্ছে।’ এরপর পাঠকদের কাছ থেকে প্রচুর চিঠি আসতে লাগল, ‘দুই সংখ্যার মধ্যবর্তী সময়ে কী হলো?’ উপায়ান্তর না দেখে সম্পাদক নোট দিলেন, ‘এই দুই সংখ্যার মধ্যবর্তী সময়ে কী ঘটিয়াছে, তাহার জন্য সম্পাদক দায়ী নহেন।’ ভূতের জবানিতে গুরুগম্ভীর একটি লেখা লিখতে গিয়ে পাঠকদের এমন একটি রসাত্মক অনুষঙ্গ উপহার দেওয়া কি সব লেখকের পক্ষে সম্ভব!

আসলে ট্রেনে আগুন কারা দেয়? কে তাদের নির্দেশ দেয়? কী লাভ তাদের? যাঁরা আমাদের এই সমাজকে চালান; স্কুলে বা কোনো অনুষ্ঠানে যাঁরা শিশুদের সুন্দর সুন্দর উপদেশ দেন; তারাই যদি রাতের আঁধারে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী কিংবা দলীয় স্বার্থে অগ্নিসন্ত্রাস চালান বিপথগামী কিছু তরুণকে সামান্য কিছু টাকার লোভ দেখিয়ে, তাহলে দেশ-সমাজ-রাষ্ট্র কে চালায়? মানুষ, নাকি ভূত?

যে শিশুর স্বপ্ন ছিল পাইলট কিংবা অ্যাস্ট্রোনট হবে, হিংসার আগুন তাকে মুহূর্তে বোকা বানিয়ে দেয়। যে শিশুটি ট্রেনের দুলুনির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছবি এঁকে চলে, নিমেষে সে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, ভেবেছিল কি শিশুটি, কিংবা তার মা-বাবা-স্বজন! কষ্ট মোচড় দিয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, শিশুটি মারা গেলেও তার স্কুলব্যাগটি অক্ষত রয়েছে। হয়তো সে পুড়ে মরার আগে ব্যাগটি ছুড়ে ফেলেছিল দূরে।

আসলে ট্রেনে আগুন কারা দেয়? কে তাদের নির্দেশ দেয়? কী লাভ তাদের? যাঁরা আমাদের এই সমাজকে চালান; স্কুলে বা কোনো অনুষ্ঠানে যাঁরা শিশুদের সুন্দর সুন্দর উপদেশ দেন; তাঁরাই যদি রাতের আঁধারে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী কিংবা দলীয় স্বার্থে অগ্নিসন্ত্রাস চালান বিপথগামী কিছু তরুণকে সামান্য কিছু টাকার লোভ দেখিয়ে, তাহলে দেশ-সমাজ-রাষ্ট্র কে চালায়? মানুষ, নাকি ভূত? কে দেবে এর জবাব? এই প্রশ্নটা দেহ থেকে আত্মা আলাদা হয়ে যাওয়ার আগের ভূতের, নাকি আপনার, আমার—সবার?

আনিসুল হক

সম্পর্কিত নিবন্ধ