শিক্ষার্থীরা চাইলেন এক হলের নাম পরিবর্তন, প্রশাসন বদলাল ৮ হলের
Published: 21st, February 2025 GMT
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) আটটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করেছে প্রশাসন। ‘বৈষম্যবিরোধী চেতনায় উজ্জীবিত শিক্ষার্থীদের জোরালো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে’ এসব নাম বদলানো হয়েছে বলে এক পরিপত্রে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও তিন মাস আগে শিক্ষার্থীরা শুধু একটি হলের নাম পরিবর্তনের আবেদন করেছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো.
পরিপত্রে দেখা যায়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হল-১–এর নাম বদলে শহীদ জিয়াউর রহমান হল-১, শের-ই-বাংলা হল-২–এর নাম বদলে শহীদ জিয়াউর রহমান হল-২, কবি বেগম সুফিয়া কামাল হলের নাম বদলে চাঁদ সুলতানা হল, মূল ক্যাম্পাসে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম বদলে কবি বেগম সুফিয়া কামাল হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম বদলে বিজয়-২৪ হল, বরিশাল ক্যাম্পাসে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম বদলে জুলাই-৩৬ হল নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন দুটি হলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন ছাত্র হলের নাম শের-ই-বাংলা হল ও নতুন ছাত্রী হলের নাম তাপসী রাবেয়া হল দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১৮ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে বিজয়-২৪ হল নামকরণের আবেদন করেছিলেন। তবে পবিপ্রবি প্রশাসন গতকাল আটটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করে। এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আফিফ মাহামুদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসের হলগুলোতে যদি এভাবে রাজনৈতিক নামকরণ করা হয়, তবে শিক্ষাঙ্গনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যখন যে দল ক্ষমতায় বসবে, তখন তাদের নামে হলের নামকরণ হবে। এটা ঠিক নয়। আমাদের এ চিন্তাভাবনা থেকে বের হওয়া দরকার। এগুলো বন্ধ না হলে ক্যাম্পাসগুলোতে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা থাকে।’
এদিকে কবি বেগম সুফিয়া কামাল হলের নাম পরিবর্তন করে চাঁদ সুলতানা হল নামকরণ করায় গতকাল বৃহস্পতিবার হলের নারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ পবিপ্রবি প্রশাসনের সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদ জানান। পরে অবশ্য তাঁদের কেউ এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে কেউ রাজি হননি।
হলের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো. ইকতিয়ার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪–পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী চেতনায় উজ্জীবিত পবিপ্রবির ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটির মতামত নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলকে জানাই। পরবর্তী সময়ে রিজেন্ট বোর্ডকে জানিয়ে আটটি হলের নামকরণের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে।’
শিক্ষার্থীরা একটি হলের নাম পরিবর্তনের দাবি জানালেও আটটি হলের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে মো. ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘যেসব হলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে, তা আগে ছিল। বিগত সরকার ক্ষমতায় এসে নাম পরিবর্তন করেছে। সেগুলো পুনরায় পরিবর্তন করা হয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন মকরণ
এছাড়াও পড়ুন:
পরবর্তী সরকারকেও সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাত থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সরকারের মেয়াদেই পাচারকারীদের কয়েকজনের বিদেশের সম্পদ জব্দ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে পরবর্তী সরকার এই সংস্কার কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে না নিলে কোনো সুফল মিলবে না। রাজনৈতিক কারণে যেন এই প্রক্রিয়া থেমে না যায়।
আজ বৃহস্পতিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (আইআরএফ) আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া ও অ্যাঙ্গোলা পাচারের টাকা ফেরত পেয়েছে। কোনো দেশই পাচার করা টাকা পাঁচ বছরের আগে ফেরত নিতে পারেনি। আমরা চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করে যাব, পাচারকারীদের বিদেশের সম্পদ যেন জব্দ করে যেতে পারি। শুরুটা আমরা করে দিয়ে যাব।’
ঢাকার পল্টনে ইআরএফ মিলনায়তনে ‘সেমিনার অন বাংলাদেশ ম্যাক্রোইকোনমিক ল্যান্ডস্কেপ: চ্যালেঞ্জেস ইন দ্য ব্যাংকিং সেক্টর অ্যান্ড দ্য পাথ এহেড’ শীর্ষক এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফের সভাপতি দৌলত আকতার মালা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সহসাধারণ সম্পাদক মানিক মুনতাসির।
আলোচনায় পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী প্রস্তাব দেন, ৩৩ শতাংশ করে আমানতকারীর প্রতিনিধি, শেয়ারধারী প্রতিনিধি ও স্বতন্ত্র পরিচালক থাকলে ব্যাংকের জন্য ভালো হবে। স্বতন্ত্র পরিচালকদের মতো মনোনীত পরিচালকদের যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিলে তাঁরা ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন।
নমুনা হলেও কাজ করে দেখাতে হবে, যাতে পরবর্তী সরকার এসে বলতে না পারে ব্যাংক খাতের পাচার করা অর্থ ফেরানো সম্ভব নয়।মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডিব্যাংকে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব উল্লেখ করে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমানত, ঋণ, আমদানি, রপ্তানিসহ সব ধরনের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানলে ভালো হয়। কোন গ্রুপ কত টাকা ঋণ পাচ্ছে, কী ধরনের পণ্য আমদানির জন্য কত ঋণপত্র খোলা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিক জানতে পারলে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। ফলে জেনেশুনে কেউ কোনো প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত অর্থায়ন করবে না। আবার এটা জানতে পারলে চাহিদার বেশি পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হবে না। তিনি আরও বলেন, ‘এখন পালিয়ে যাওয়া কেউ বিদেশে থেকে হিসাব খুলে যেকোনো ধরনের লেনদেন করলে আমাদের ধরার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, কারা অপরাধী, আমাদের কাছে কোনো তথ্যভান্ডার নেই।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অর্থনীতি অনেক দিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে। তবে এত মাত্রায় চ্যালেঞ্জ কম এসেছে। ভবিষ্যৎ যেন অতীতের মতো না হয়, এ জন্য ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতন হয়েছে। এখন প্রত্যাশার চাপ আছে। অর্থনীতির পুঞ্জীভূত চাপের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নানা প্রভাবও রয়েছে অর্থনীতিতে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এখন সবচেয়ে বড় চাপ মূল্যস্ফীতির। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে জানলাম, তাদের পরীক্ষা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কারণ, মানুষ আগে খাদ্যের চাহিদা মেটাবে, এরপর স্বাস্থ্যের খরচ নির্বাহ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কাজ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। সুদহার বাড়ায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কম বাড়ছে। তবে এখনো অনেক বেশি। মূল সমস্যা, বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে না।’
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘বড় সমস্যা ব্যাংক খাত ও রাজস্ব আদায় নিয়ে। প্রত্যক্ষ কর বাড়িয়ে রাজস্ব ঘাটতি সামাল দিতে হবে, পরোক্ষ কর দিয়ে হবে না। জনগণ ব্যাংক খাতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চায়। ব্যাংক খাতের এত অনিয়মের সুবিধাভোগী বের করা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। নমুনা হলেও কাজ করে দেখাতে হবে, যাতে পরবর্তী সরকার এসে বলতে না পারে ব্যাংক খাত থেকে পাচার করা অর্থ ফেরানো সম্ভব নয়। আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ কোনো চ্যালেঞ্জ না, এটা সুযোগ। এখন সুশাসন, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ভালো সময়। এটা কাজে লাগাতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতিতে এত সমস্যা কোনো দেশে কখনো হয়নি। এসব সমস্যা এক বছরে সমাধান করা সম্ভব নয়। প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার মিল থাকতে হবে। অর্থনীতির বহিঃখাতে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। চলতি ও আর্থিক হিসাব দুটোই ইতিবাচক হয়ে এসেছে। বিদেশি ঋণ না আসার পরও রিজার্ভ বাড়ছে। প্রবাসী আয় বাড়ছে। কারণ, অর্থ পাচার কমে এসেছে। এখন ব্যাংকে ও খোলাবাজারে ডলারের দাম কাছাকাছি চলে এসেছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দুবাইয়ে খুব বেশি প্রবাসী না থাকার পরও সেখান থেকে সবচেয়ে বেশি আয় আসছে। কারণ, দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান অন্য দেশ থেকে ডলার কিনে বেশি দামে বিক্রির চেষ্টা করছে। আমরা তাতে সমর্থন দিচ্ছি না।’
গভর্নর বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসতে ৫-১১ মাস সময় লাগবে। আরও ৬ মাস সময় লাগতে পারে। নীতি ঠিক থাকলে তা কাজে দেয়, এটা বোঝা যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমে আসছে। আমানত প্রবৃদ্ধি বাড়ানো ও সরকারের ঋণ কম হলে বেসরকারি খাত ঋণ পাবে। আমরা কঠিন সময় পার করে এসেছি, সঠিক পথে এগোচ্ছি।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এক ব্যাংক থেকে একটি পরিবার ৮৭ শতাংশ অর্থ নিয়ে গেছে। ওই ব্যাংকের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা জানি না। আমরা ব্যাংক রেজল্যুশন আইন করছি। যেখানে ব্যাংক নিয়ে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকবে। সব আমানতকারী ব্যাংক থেকে শতভাগ টাকা ফেরত পাবেন। ইস্টার্ণ, পূবালী ও সিটি ব্যাংক যেমন সমস্যায় পড়া ব্যাংক থেকে উঠে এসেছে, এসব ব্যাংকও সেভাবে উঠে আসবে। ব্যাংক খাতে আস্থাই সবচেয়ে বড় শক্তি। এটি ধরে রাখতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ ব্যাংককে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হবে জানিয়ে গভর্নর বলেন, ‘এ জন্য প্রধান উপদেষ্টা থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। আমাদের সমস্যা হলো সক্ষম জনবলের ঘাটতি আছে। আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ হবে আর্থিক খাত প্রতিপালন, তদারকি ও বাস্তবায়ন করা। প্রতিষ্ঠানটি হবে স্বাধীন, সরকার দ্বারা অবদমিত হবে না।’