বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত ৯টার পর কোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। গত বুধবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে আয়োজিত একটি উন্মুক্ত কনসার্ট একদল শিক্ষার্থীর বাধায় পণ্ড হওয়ার পর এ নির্দেশনা জারি করা হলো।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রক্টর সোনিয়া খানমের সই করা একটি বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এ নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিকনিক ও খেলাধুলার আয়োজন গভীর রাত পর্যন্ত চলে, যা ক্লাস ও পরীক্ষার পরিবেশে বিঘ্ন ঘটায়। এ ছাড়া হলে থাকা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও নামাজের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এসব নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলা হলো। নির্দেশনায় বিভিন্ন বিভাগের অনুষ্ঠান, সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমসহ সব ধরনের আয়োজন রাত ৯টার মধ্যে সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক বলে উল্লেখ করা হয়।

অন্য নির্দেশনার মধ্যে আছে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে; অনুষ্ঠানটি অনুমতিপ্রাপ্ত নির্ধারিত স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে; বিকেল সাড়ে ৪টার আগে কোনো ধরনের শব্দযন্ত্র বাজানো যাবে না; একাডেমিক কার্যক্রম চলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শব্দযন্ত্র ব্যবহার করে যেকোনো অনুষ্ঠান করা থেকে বিরত থাকতে হবে; অন্য বিভাগের একাডেমিক কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটে, এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ ও হলগুলোর আজান-নামাজের সময়ের সঙ্গে মিল রেখে শব্দযন্ত্র ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে; শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে রাত ৯টার মধ্যে সব ধরনের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক এবং অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তার দায়দায়িত্ব আয়োজকদের বহন করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা জানান, গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক সংগঠন চারুকলা সংসদ (ববিচাস) একটি উন্মুক্ত কনসার্টের আয়োজন করে। এতে কৃষ্ণপক্ষ নামের একটি ব্যান্ড গান পরিবেশন করে। রাত ১টা পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান চলছিল। হঠাৎ শেরেবাংলা হল ও বিজয়-২৪ হলের একদল ছাত্র পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ তুলে হইচই শুরু করেন। একপর্যায়ে দুই হলের শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মুক্তমঞ্চের দিকে আসেন। এ সময় বেশ কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।

হামলার আশঙ্কায় কনসার্টের আয়োজক সংগঠনের সদস্যরা অনুষ্ঠানস্থল থেকে চলে যান। পরে রাত দেড়টার দিকে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সোনিয়া খানম ঘটনাস্থলে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী ইয়ামিন ইসলাম জানান, হলগুলোতে পড়াশোনার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষকে লিখিত আবেদন দিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের অবহেলার কারণে এত দিন এ দাবি বাস্তবায়িত হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

ডিসি হিলে বর্ষবরণে ছেদ, ৪৭ বছর আগে যেভাবে শুরু হয় এ আয়োজন

চট্টগ্রামে প্রথম বাংলা বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয় ১৯৭৩ সালে নগরের সার্সন রোডের ইস্পাহানি পাহাড়ে। পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীন প্রথম এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছিলেন। তিন বছর এখানেই ছোট পরিসরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়। ১৯৭৮ সাল থেকে নন্দনকাননের ডিসি হিলে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়।

কিন্তু এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপট। বর্ষবরণের আগের দিন গতকাল রোববার মিছিল নিয়ে এসে একদল লোক অনুষ্ঠান মঞ্চ ভাঙচুর করে চলে যায়। ফলে আয়োজকেরা অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অথচ ৪৭ বছরে চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের মেলায় রূপ নিয়েছে ডিসি হিলের বাংলা বর্ষবরণ উৎসব।

চট্টগ্রামের আগে ষাটের দশক থেকে ঢাকায় নববর্ষ বরণ শুরু হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। রাজধানীতে ১৯৬৭ সালে প্রথম রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সময় সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানট। সেই অনুষ্ঠানই মূলত নববর্ষ বরণের সাংস্কৃতিক উৎসবকে সারা দেশে বিস্তারিত হতে প্রেরণা সঞ্চার করেছে।

চট্টগ্রামের কবি–সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীরাও উৎসব আয়োজনের তাগিদ অনুভব করতে থাকেন। তত দিনে রক্তস্নাত একাত্তর পার করে মুক্তির সুবাতাস বইছে। আলোচনা থেকে এভাবে একসময় ১৯৭৩ সালে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ইস্পাহানি পাহাড়ে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নামে এই আয়োজনটি হয়েছিল। প্রথম ওই অনুষ্ঠানের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন ভাষাসৈনিক ও রাজনীতিক আতাউর রহমান খান কায়সার এবং তখনকার সাংস্কৃতিক সংগঠক সাংবাদিক সুভাষ দে।

পরে তা ডিসি হিলে স্থানান্তরিত হয়। চট্টগ্রামের ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখ আয়োজন উদ্যোগের পেছনে প্রধান ভূমিকা ছিল শিল্পী, সংগীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের। তিনি তখন চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক ডেইলি লাইফে যোগদান করেন। সেই সুবাদে চট্টগ্রামে থাকতেন। তিনি চট্টগ্রামের গণমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে উদ্যোগ নেন সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের।

শুরুর সেই সময়ে এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কাজী হাসান ইমাম, কবি অরুণ দাশগুপ্ত, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, নাট্যকর্মী মাহবুব হাসান, নির্মল মিত্র, সুভাষ দেসহ আরও কয়েকজন। শুরুর দিকে অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি ছিল সকালে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। পয়লা বৈশাখ অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন সভা হতো বর্তমান ফুলকি বিদ্যাপীঠে কিংবা এনায়েত বাজারে অরুণ দাশগুপ্তের বাসায়। ফুলকিতে তখন নিয়মিত একটা পাঠচক্র বসত। ওই পাঠচক্রের তরুণ কবি-সাহিত্যিক ও লেখকেরাও এই আয়োজনের তখন কর্মী।

আবুল মোমেন স্মৃতি হাতড়ে বললেন, ‘১৯৭৮ সালে ডিসি হিলে নববর্ষ বরণের উদ্যোগটা নিয়েছিলেন ওয়াহিদুল হক। আমরা সঙ্গে ছিলাম। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে ’৭৩ থেকে অনিয়মিত আয়োজন হতো। কখনো ইস্পাহানি পাহাড়ে, কখনো গ্রিনলেজ পাহাড়ে অনিয়মিত এই আয়োজন চলত। ডিসি হিলে অনুষ্ঠান আয়োজনে গানের দিক থেকে অন্যতম দায়িত্ব পালন করতেন মিহির নন্দী। তিনি শিল্পীদের নিয়ে অনুশীলন করাতেন। সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদ নামেই ডিসি হিলে নববর্ষ বরণের আয়োজনটি হয়ে আসছে। শুরুর দিকে উদীচী, আলাউদ্দিন ললিত কলা একাডেমি, অগ্রণী সংঘ, শিল্পী নিকেতনসহ নানা সংগঠন পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে অংশ নিত।’

সুভাষ দেও সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করলেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াহিদুল হক ও কাজী হাসান ইমামের আবৃত্তির মধ্য দিয়ে প্রথম দিকে অনুষ্ঠান শুরু হতো। তখন ডিসি হিল ছিল উঁচু পাহাড়। গাছপালাঘেরা। গাছের ফাঁকে ফাঁকে মাটি কেটে মানুষের বসার ব্যবস্থা করেছিলাম আমরা। এরপর আস্তে আস্তে অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে।’

সামরিক সরকারের আমলে ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখ আয়োজন শুরু হলেও তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি আয়োজকদের। ওয়াহিদুল হক চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও এই ধারা অব্যাহত ছিল। বরং ক্রমে বেড়েছে এর ব্যাপ্তি। আয়োজনকে ঘিরে ধীরে ধীরে কারুপণ্য এবং বইমেলা বসতে শুরু করে ডিসি হিল ঘিরে। আশির দশকের শেষ দিকে এটা দুদিনের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উৎসব। বের করা হতো শোভাযাত্রাও।

চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের জন্য নির্মিত মঞ্চ ভাঙচুর করেছে একদল লোক। আজ সন্ধ্যা সাতটায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুয়েট শিক্ষার্থীদের নামে মামলা ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
  • মাওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ
  • ডিসি হিলে বর্ষবরণে ছেদ, ৪৭ বছর আগে যেভাবে শুরু হয় এ আয়োজন