চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ড: ৩০ কোটি টাকার ৩০ পয়সাও পাননি ভুক্তভোগীরা
Published: 21st, February 2025 GMT
পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা। নামটির পরিচিতি ছিল না তেমন, তবে একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা জায়গাটির পরিচিতি এনে দেয়। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭১ জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক।
এ ঘটনায় পরদিন নিহত জুম্মনের ছেলে আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা করেন। তখন দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। আশ্বস্ত করা হয়, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে। এর কোনোটাই মেলেনি ভুক্তভোগী পরিবারের। উপরন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৩০ কোটি টাকা সহায়তা দেয় বিভিন্ন ব্যাংক। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এতো বড় আলোচিত ঘটনার বিচার তো দূরের কথা, ওই ৩০ কোটি টাকার ৩০ পয়সাও পাননি তারা।
এ দিকে চুড়িহাট্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলা তদন্ত করে তিন বছর পর ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল কাইউম।২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার কাজ শুরু হয়।
ঢাকার ৮ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শিহাবুল ইসলামের আদালতে মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। ওই দিন আসিফ উদ্দিন সিয়াম নামে এক ব্যক্তি সাক্ষ্য দেন। আগামি ১৩ এপ্রিল মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। এখন পর্যন্ত ১৬৭ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
মামলার বাদী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘‘আশায় আছি সুষ্ঠু বিচারের। কিন্তু দৃশ্যমান কিছু দেখছি না। অগ্নিকাণ্ডে আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। বুয়েটে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওয়াহেদ ম্যানশন চালু না করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই বিল্ডিং দাঁড়িয়ে গেছে। সাবেক মেয়র তাপস নিজে অনুমোদন দিয়ে ওই ভবন চালু করেছেন। অথচ ছয় বছরেও ন্যায়বিচার তিনি দিতে পারেননি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা সবসময় মজলুম। বলার কিছু নেই। বাদী হয়ে কোনো লাভবান হইনি। উল্টো হ্যারেজমেন্টের শিকার হয়েছি। অগ্নিকাণ্ডের পর বিভিন্ন ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩০ কোটি টাকা দিয়েছিল। আজ দিবে, কাল দিবে করে আর দেয়নি। সেই ৩০ কোটি টাকা ৩০ পয়সাও পাইনি।’’
আসিফ আহমেদ বলেন, ‘‘তখনকার মেয়র সাঈদ খোকন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে চাকরি দেবেন এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন। কত দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বসে ছিলাম। চাকরি দিতে পারেননি। দিয়েছেন মাস্টার রোলে চাকরি। অনার্স, মাস্টার্স করা একজন ছেলে মাস্টার রোল কাজ করতে পারে? আমাদের মতো ভুক্তভোগী পরিবারগুলো পথে বসে গেছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষমকে হারালে কী থাকে? তখনকার সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ঢাক-ঢোল পিটিয় সাংবাদিক এনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে ৫ হাজার টাকা দেন। এই হলো তাদের অবস্থা।’’
‘‘বর্তমান সরকারের প্রতি অনুরোধ, মামলার বিচারটা যেন সুষ্ঠু হয়। কিছুই তো হলো না। না পেলাম বাবাকে, না পেলাম বিচার। তবুও আশায় আছি সুষ্ঠু বিচারের।’’ বলেন আসিফ আহমেদ।
অগ্নিকাণ্ডে নিহত ওয়াশি উদ্দিনের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘‘অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কাউকে কোনো অনুদান দেয়া হয়নি। বিভিন্ন ব্যাংক ৩০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়েছিল, আমরা কেউ সেই টাকা পাইনি।’’
সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘এ মামলায় চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। আমরা নতুন জয়েন্ট করেছি। সব নথি দেখতে পারিনি। মামলাটা শেষ করা উচিত। যেহেতু দায়িত্ব পেয়েছি পালন করবো যেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ন্যায়বিচার পায়।’’
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘‘ এ ঘটনার মামলার বিচার দ্রুত শেষ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক মামলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এ মামলার বিচার নিয়ে তাদের মনোযোগ ছিল না। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা আন্তরিক। সাক্ষীদের দ্রুত আদালতে হাজিরের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ৭১ জন নিহত হন। দগ্ধ ও আহত হন অনেকে। এই ঘটনায় আসিফ চকবাজার মডেল থানায় ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে সোহেল ওরফে শহীদ ও হাসানসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, আসামিরা তাদের ৪র্থ তলা বসতবাড়ীর বিভিন্ন ফ্লোরে দাহ্য পদার্থ ক্রয়-বিক্রয়কারীদের নিকট হতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নির্মিত ফ্যামিলি বাসায় ফ্যামিলি ভাড়া না দিয়ে অবৈধ দাহ্য পদার্থ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের গোডাউন হিসেবে ভাড়া দেন।
মামলার আসামিরা হলেন, ভবনের মালিক দুই সহোদর হাসান ওরফে হাসান সুলতান, সোহেল ওরফে শহীদ ওরফে হোসেন, রাসায়নিকের গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল ইকবাল, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতিক, মো.
আসামি ইমতিয়াজ ও জাওয়াদের আইনজীবী শেখ আবু সাইদ বলেন, ‘‘মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আছে। ওরা কিছু জানে না। ঘটনাস্থলেও ছিল না। তারপরও তাদের আসামি করা হয়েছে।’’
ভবনের মালিক দুই ভাই হাসান ওরফে হাসান সুলতান, সোহেল ওরফে শহীদ ওরফে হোসেন আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনা করছেন আইনজীবী মোস্তফা পাঠান ফারুক। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তারা//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক ষ য গ রহণ চকব জ র ৩০ ক ট র জন য পর ব র আহম দ ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, সব পদে জয়ী বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি প্যানেলের বিরুদ্ধে আর কোনো প্রার্থী না থাকায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সব পদে বিজয়ী হতে যাচ্ছেন তারা। গতকাল শনিবার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে একক প্রার্থী হিসেবে বিএনপি-জামায়াতপন্থি প্যানেলের নাম ঘোষণা করা হয়। এখনও তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন।
গত ১০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র কেনার শেষ দিনে মনোনয়নপত্র কিনতে গিয়ে দুই দফায় বাধার মুখে পড়ে ফরম কিনতে পারেননি আওয়ামী লীগ ও বাম ঘরানার আইনজীবীরা। তারা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটি ও নির্বাচন কমিশনের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ দিলেও কোনো সমাধান হয়নি। আইনজীবী সমিতির ১৩২ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব ক’টি পদে নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা তারিক আহমদ বলেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ পদের বিপরীতে যাচাই-বাছাই শেষে ২১ জনের মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় একক প্রার্থী হিসেবে তাদের বিজয়ী বলা যায়। আগামী ১৬ এপ্রিল সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তার আর প্রয়োজন হবে না। তিনি আরও বলেন, বার লাইব্রেরিতে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া হয়েছে। রুমের বাইরে কী হয়েছে তা আমরা জানি না।
আওয়ামী লীগসমর্থিত সভাপতি প্রার্থী সাবেক মহানগর পিপি আবদুর রশীদ বলেন, ফরম বিক্রির শেষ দিন আমাদের দুই দফায় ফরম কিনতে বাধা দিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা। এ নিয়ে অ্যাডহক কমিটি ও নির্বাচন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। কয়েকজন ঐতিহ্যবাহী আইনজীবী সমিতির সোনালি ইতিহাস কলঙ্কিত করলেন। যারাই বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে ওই চেয়ারে বসবেন, তারা ওই চেয়ারকে কলুষিত করবেন।
বিএনপিপন্থি সভাপতি প্রার্থী সাবেক মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তারকে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী, সহসভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনূস, সহসাধারণ সম্পাদক ফজলুল বারী, অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফি বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক ম. মঞ্জুর হোসেন এবং তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুল জব্বার; ১১ নির্বাহী সদস্য– আহসান উল্ল্যাহ মানিক, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, হেলাল উদ্দিন, মেজবাহ উল আলম আমিন, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রুবাইয়াতুল করিম, শাহেদ হোসেন, মোহাম্মদ মোরশেদ, রাহিলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন।