ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে উপজেলা পরিষদ চত্বরের শহীদ মিনারে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের পেটুয়াজুরি এলাকার বেলাল (৩৮) ও ইছাপুরা ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের জীবন আলী (১৭)। তাঁরা বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপিসহ অঙ্গ–সহযোগী সংগঠন দুই ভাগে বিভক্ত। এর প্রভাব জেলার সব উপজেলা বিএনপিসহ অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের ওপর পড়েছে। এ কারণে কয়েক বছর ধরে দলটির সদস্যরা পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় বিএনপির একটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা জমির দস্তগীরকে বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও ইমাম হোসেনকে সদস্যসচিব মনে করেন। আরেকটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা মহসিন ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক ও শাহালম মিয়াকে সদস্যসচিব হিসেবে অনুসরণ করে। গতকাল রাত ১২টার পর উপজেলা পরিষদের শহীদ মিনারে প্রথমে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যান। জমির দস্তগীর ও ইমাম হোসেনের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপিসহ অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের একপক্ষ এবং মহসিন ভূঁইয়া ও শাহালম মিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিসহ অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের আরেক পক্ষ একই সঙ্গে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে এগিয়ে যান। আগে কোন পক্ষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে, তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে ধারালো খুরের আঘাতে বেলাল ও জীবন আহত হন।

এ বিষয়ে জানতে ইমাম হোসেন ও মহসিন ভূঁইয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলী প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব জয়নগর ব এনপ র স গঠন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গণহত্যার প্রতিবাদ করে গাজাবাসীর জন্য রাইখানদের প্রার্থনা

গণহত্যার প্রতিবাদ করে জালিম ইসরায়েলের আগ্রাসন থেকে মজলুম গাজাবাসীর মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছে পটুয়াখালীর রাখাইন সম্প্রদায়।

গাজায় গণহত্যা ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের শিকার ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর জন্য কুয়াকাটায় মাহা সাংগ্রাই জলকেলি উৎসবে এক মিনিট নীরাবতা পালন করে রাখাইন সম্প্রদায়।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শুক্রবার রাখাইন জলকেলি উৎসবের শুরুতে গাজায় গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনিদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ছবি: রাইজিংবিডি 

আরো পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব
বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে

অবশেষে জিম্বাবুয়ে সিরিজ সম্প্রচারকারী চ্যানেল পেলো বিসিবি

শুক্রবার দুপুরে (১৮ এপ্রিল) কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার-সংলগ্ন রাখাইন মাঠে জলকেলি উৎসবের প্রারম্ভে সবাই দাঁড়িয়ে এই নীরবতা পালন করেন।

রাখাইনদের অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গাজাবাসীর জন্য বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয় বলেও জানিয়েছেন সম্প্রদায়টির ধর্মগুরুরা।

গণহত্যা অভিযানে গাজা ও ফিলিস্তিন নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাখাইনদের এসব উদ্যোগ মানবতার জন্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন সেখানকার মানুষ।

রাখাইন জলকেলি উৎসব দেখতে আসা কলাপাড়ার আলীপুর এলাকার বাসিন্দা মো. হোসেন মিয়া বলেন, “আজ জলকেলি দেখতে রাখাইন মাঠে এসেছি। এখানে এসে একেবারেই অবাক হয়েছি। তারা অনুষ্ঠানের শুরুতেই গাজাবাসীর জন্য নীরবতা পালন করেছে।”

“নিপীড়িত গাজাবাসীর জন্য তাদের সহমর্মিতা আমাকে আপ্লুত করেছে,” বলেন হোসেন মিয়া।

মহিপুর থেকে আসা মো. আবদুস সালাম বলেন, “এমনিতেই রাখাইনদের সঙ্গে আমাদের একটি সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। আজ তারা গাজাবাসীর জন্য প্রার্থনা করেছে। তাদের প্রতি আমাদের সম্মান আরো বেড়ে গেল।”

মিশ্রীপাড়া সীমা বৌদ্ধবিহারের উপাধ্যক্ষ উত্তম মহাথের বলেন, “আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে গাজাবাসীর জন্য প্রায়ই বিশেষ প্রার্থনা করি। শুধু গাজাবাসীই নয়, পৃথিবীর সকল দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ যুদ্ধ বন্ধ হোক- এটাই আমাদের প্রার্থনা।”

“ আমরা মানুষ হিসেবে সবাইকে সবার প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের অনুরোধ জানাচ্ছি,” বলেন উত্তম মহাথের।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, “গাজাবাসীর প্রতি রাখাইন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এক মিনিট নীরবতার মাধ্যমে মানবতার সঙ্গে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্প্রীতি তারা দেখিয়েছেন, এ জন্য তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

“রাখাইন সম্প্রদায় ভিন্ন ধর্মালম্বী হলেও মানবতার ধর্ম সবার এক। তাই রাখাইন সম্প্রদায় এই নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে তাদের সম্প্রীতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করল।”

শুক্রবার পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী রাখাইন জলকেলি উৎসব, যাতে শামিল হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ, সেই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বিদেশিরাও।

উৎসব শুরুর দিন ঐতিহ্যবাহী জলকেলিতে মেতে উঠতে দেখা যায় রাখাইনদের। তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের আনন্দ করতে দেখা যায়। উৎসবে সহায়তা করছে স্থানীয় প্রশাসন।

ঢাকা/ইমরান/রাসেল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ