মাঠভরা শর্ষেখেত। গাছে গাছে হলুদ ফুলের সমারোহ। পাশ দিয়ে গেলে সবারই নজর কাড়ছে। এ চিত্র বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের হিজলতলা গ্রামের। এই গ্রামের অন্তত ৮০ জন কৃষক ৩৮ একর জমিতে বিনা উদ্ভাবিত উন্নত জাতের বিনা-৯ ও বিনা-১১ জাতের শর্ষে আবাদ করেছেন। এর মধ্যে বিনা-৯ জাতটি এবারই প্রথম চাষ করা হলো।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, আগে আমন মৌসুম শেষে মাঠের জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। সেই জমিতে এখন শর্ষে চাষ করা হয়েছে।

এই গ্রামের কৃষক সরোয়ার মল্লিক এবার তিন বিঘা জমিতে শর্ষের আবাদ করেছেন। খেতের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘দ্যাহেন, কত্তো সুন্দর খ্যাত। চউখ জুড়াইয়্যা যায় বাড়ন্ত গাছ আর ফুল দেইখ্যা। এইবার দুই বিঘা জমিতে শর্ষে দিছি। আশা করি, অনেক ভালো ফলন পামু। আমাগো দেহাদেহি আগামীতে এই এলাকার অনেক কৃষক শর্ষে আবাদ করার মনস্থির করছে।’

কৃষি বিভাগ জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকেরা আগে শর্ষের আবাদ করতেন কম। বছর পাঁচেক ধরে এই ফসলের আবাদ বাড়ছে। শর্ষে আবাদে উৎসাহ ও উদ্বুদ্ধ করতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হিজলতলা গ্রামে আয়োজন করা হয়েছিল মাঠ দিবস। এ উপলক্ষে শর্ষেখেতের পাশে বানানো হয়েছিল ছোট্ট মঞ্চ। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন মহাপরিচালক মো.

আবুল কালাম আজাদ।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শর্ষে থেকে উৎপাদিত তেল অত্যন্ত নিরাপদ। অথচ আমরা ভোজ্যতেল হিসেবে বেশি ব্যবহার করছি সয়াবিন, যা সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। দেশে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে ভোজ্যতেল আমদানিতে। তাই সরকারের লক্ষ্য হলো ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে শর্ষের আবাদ বাড়ানো। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে এমন জাত প্রয়োজন, যার জীবনকাল কম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ অঞ্চলে লবণাক্ততা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষি খাত হুমকির মুখে পড়েছে। এ থেকে উত্তরণে শস্যের নিবিড়তা আনয়নের বিকল্প নেই। সেই চেষ্টা অংশ হিসেবে বিনা জলবায়ুসহিষ্ণু বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাত হলো বিনা-৯ ও বিনা–১১, যা আমন ও বোরো ধানের মধ্যবর্তী সময়ে বরিশাল অঞ্চলে চাষ করা সম্ভব।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিনার গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুল আলম তরফদার, উপপ্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আশিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিনা বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছয়েমা খাতুন।

আঞ্চলিক কৃষি তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তা নাহিদ বিন রফিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বরিশাল সদরের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাসেল মনির, বিনা উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদ আল নূর, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফজলুর রহমান, কৃষক সরোয়ার হোসেন মল্লিক প্রমুখ।

কৃষকদের শর্ষে আবাদে উৎসাহ দিতে আয়োজন করা হয়েছে মাঠ দিবস। গতকাল দুপুরে বরিশাল সদর উপজেরার চাঁদপুরা ইউনিয়নের হিজলতলা গ্রামে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন প রকল প বর শ ল

এছাড়াও পড়ুন:

র‍্যাঙ্কিংয়েও সুখবর, ক্যারিয়ার-সর্বোচ্চ অবস্থানে নিগার, শারমিন ও রাবেয়া

ভালো খেলার স্বীকৃতি নগদেই পেলেন নিগার সুলতানা, শারমিন আক্তার ও রিতু মনি। পাকিস্তানে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ফিফটি করা অধিনায়ক নিগার ওয়ানডে ব্যাটারদের র‍্যাঙ্কিংয়ে ক্যারিয়ার–সেরা অবস্থানে উঠেছেন।

ক্যারিয়ার–সেরা অবস্থানে উঠেছেন থাইদের বিপক্ষে ৯০ ছাড়ানো শারমিনও। আইরিশদের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে রিতু মনিও সামনে এগিয়েছেন। আর বোলিংয়ে ক্যারিয়ার–সেরা অবস্থানে উঠেছেন রাবেয়া খান।

থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫২ রানের জুটি গড়েছিলেন নিগার ও শারমিন। নিগার করেছিলেন ১০১ রান। শারমিন অপরাজিত ৯৪ রান। এই দুজনের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশ করেছিল নিজেদের রেকর্ড ২৭১ রান। এরপর থাইল্যান্ডকে ৯৩ রানে অলআউট করে ১৭৮ রানে জেতে বাংলাদেশের মেয়েরা। রানের হিসাবে মেয়েদের ওয়ানডেতে বাংলাদেশের এটাই সবচেয়ে বড় জয়।

পরের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১ রান করা নিগার ১৬ ধাপ এগিয়ে উঠেছেন ১৭ নম্বরে। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪ করা শারমিন ১১ ধাপ এগিয়ে উঠেছেন ২৯ নম্বরে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৬৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলা রিতু ১৬ ধাপ এগিয়ে উঠেছেন ৮৮ নম্বরে। রিতু ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ ৫৭ নম্বরে উঠেছিলেন।

বোলিংয়ে বাংলাদেশের লেগ স্পিনার রাবেয়া খান সাত ধাপ এগিয়ে উঠেছেন ২৩ নম্বরে। এটিই তাঁর সেরা অবস্থান। তিন ধাপ এগিয়ে ৪৮ নম্বরে উঠেছেন আরেক লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুন। পেসার মারুফা আক্তার ৬ ধাপ এগিয়ে উঠেছেন ৬০ নম্বরে।

মেয়েদের ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বর ব্যাটার দক্ষিণ আফ্রিকার লরা ভলভার্ট, বোলার ইংল্যান্ডের সোফি একলেস্টোন ও অলরাউন্ডার অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশ গার্ডনার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ