যুবককে প্রকাশ্যে কোপানো হয় চাপাতি দিয়ে, দুজন গ্রেপ্তার
Published: 21st, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর এলাকায় চাপাতি দিয়ে এক যুবককে কোপানোর ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরের হিলভিউ রহমান নগর এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন মো. জুলহাস (১৯) ও মো. শাহীন আলম (১৯)। দুজনই নগরের বায়েজিদ এলাকার বাসিন্দা।
এর আগে গত বুধবার রাতে নগরের মুরাদপুর আতুরার ডিপো এলাকার আজিজ মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হয় মো.
এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, জুলহাস ও শাহীন মিলে আকাশকে ধরে একপাশে নিয়ে আসেন। পরে তাঁকে সেখানে চাপাতি দিয়ে কোপ দেন। আকাশের চিৎকারে সেখানে কয়েকজন দোকানি ও স্থানীয় বাসিন্দা জড়ো হলেও ভয়ে কেউ সামনে আসেননি। পরে জুলহাস ও শাহীন গলি থেকে বের হয়ে গেলে তাঁরা আকাশকে উদ্ধার করেন।
পুলিশ জানায়, স্থানীয় লোকজন আকাশকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বর্তমানে আকাশ জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান গণমাধ্যমকে জানান, এ ঘটনার অভিযোগ পেয়ে হিলভিউ রহমান নগর এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে মো. জুলহাস ও মো. শাহীন আলমকে গ্রেপ্তার করে তাঁদের কাছে থাকা চাপাতিটি উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার লোকজন খাজনা ওঠাবে, বাধা দিলে ভয়াবহ পরিণতি’
নীল পাঞ্জাবি পরা একজন সবার সামনে। তার পেছনে একদল লোক। তাদের মাথাসহ মুখ লাল গামছায় বাঁধা। কারও হাতে রামদা, কারও হাতে বাঁশের লাঠি। ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দিয়ে পাঞ্জাবি পরা লোকটির নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। আতঙ্কে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে সাধারণ মানুষ।
আজ শনিবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার এমসি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। অস্ত্রের মহড়ায় নেতৃত্বে দেওয়া নীল পাঞ্জাবি পরিহিত লোকটি শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। শুধু মহড়া নয়, প্রকাশ্যে বাজারের দোকানিদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা-পয়সা লুট করে তার লোকজন। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। এভাবে অস্ত্রের মহড়া ও চাঁদাবাজির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনা জানাজানির পর গতকালই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, শ্রীপুরের তেলিহাটী ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে তার নেতৃত্বে অর্ধশত সন্ত্রাসী এমসি বাজারে সশস্ত্র মহড়া দেয়। মাঝে মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শুনতে পাওয়া যায়। তখন আতঙ্কে সাধারণ মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে যান।
১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, মহাসড়কের ওপর চেয়ারে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইক নিয়ে কথা বলছেন জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। তাঁর লোকজনের ‘জাহাঙ্গীর ভাইয়ের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান থামলে তিনি বলেন, ‘প্রিয় দোকানদার ভাইয়েরা, আমি জেল থেকে এসে ঘোষণা দিয়েছিলাম, এমসি বাজারটাকে আমি আমার নিজস্ব লোক ও আপনাদের সহযোগিতার সুন্দরভাবে পরিচালনা করব। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য আমি পারি নাই। আজকে লোকজন নিয়ে এসেছি। আজকের পর থেকে আমি জাহাঙ্গীর যত দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তত দিন পর্যন্ত আমার নিয়ন্ত্রণে চলবে এমসি বাজার এবং আপনাদের দয়া করে বলছি, এখন এই মুহূর্তে আমার লোকজন খাজনা ওঠানো শুরু করবে। কেউ বাধা দেবেন না। বাধা দিলে ভয়াবহ পরিণতি হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের এক নেতা জানান, মহড়া দিয়ে পুরো এমসি বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে পিন্টু। অন্তত ১০০ দোকান থেকে চাঁদা আদায় করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের কাছে বিদেশি পিস্তলও ছিল। তবে গুলি ছোড়েনি।
আব্দুল লতিফ নামে বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, বিকেলে হঠাৎ লোকজন নিয়ে এসে বক্তব্য দেয় পিন্টু। এর কিছুক্ষণ পর রামদার ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। সন্ত্রাসীরা ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রের মহড়া দিল, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখলাম না।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু বলেন, ‘আমি টেহা পয়সা উঠাইনি। এগুলো আমাকে হেয় করার জন্য করা হয়েছে। যারা আমার বাড়ি ভাঙচুর করছিল, অফিস ভাঙচুর করছিল, তাদের খুঁজতে গেছিলাম। না পেয়ে চলে আসছি।’
জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লাহ সমকালকে জানান, ঘটনার পরপরই যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষরে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, যুবদল নেতার বক্তব্য ও মহড়ার ভিডিও পেয়েছি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।