দিনাজপুরে ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার
Published: 21st, February 2025 GMT
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমাবেশে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রলবোমা হামলার অভিযোগে করা মামলায় এক যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের রানীগঞ্জ বাজার থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর আলম প্রধান (৪৫) যুবলীগের ঘোড়াঘাট উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি উপজেলার বুলাকিপুর ইউনিয়নের কানাগাড়ি ভেলাইন গ্রামের আবদুল লতিফ প্রধানের ছেলে। গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক।
গত বছরের ৪ আগস্ট বিকেলে ঘোড়াঘাট পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ডে চারমাথা পাকা রাস্তা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২৪ আগস্ট ঘোড়াঘাট পৌর ছাত্রদলের সদস্য সহিদ শেখ বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় এ মামলা করেন। এতে উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান, দুজন সাংবাদিকসহ ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৭০–৮০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ৪ আগস্ট বিকেল চারটার দিকে ঘোড়াঘাট পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ডে চারমাথা পাকা রাস্তা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল। এ সময় সেলিম আখতার, মুরাদ হোসেন, আসাদুজ্জামান শিমুল, শেখ বদিউজ্জামান, শফিউল ইসলাম, বেলাল হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা লাঠি, রড, ধারালো ছুরি, রামদা ও পেট্রলবোমা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পথ রোধ করেন। এ সময় আসামি আসাদুজ্জামান শিমুল তাঁর হাতে থাকা পেট্রলবোমা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নিক্ষেপ করেন। এতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা আহত হন। এ সময় অন্য আসামিরা লাঠি ও রড দিয়ে সাধারণ ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও মারপিট করে তাঁদের আহত করেন। পরে আসামিরা মামলার বাদী সহিদ শেখ ও তাঁর সঙ্গে থাকা মো.
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সমাবেশে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রলবোমা হামলার অভিযোগে গত বছরের ২৪ আগস্ট থানায় একটি মামলা হয়। তদন্তের পর সংশ্লিষ্টতা আসায় গতকাল সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার লোকজন খাজনা ওঠাবে, বাধা দিলে ভয়াবহ পরিণতি’
নীল পাঞ্জাবি পরা একজন সবার সামনে। তার পেছনে একদল লোক। তাদের মাথাসহ মুখ লাল গামছায় বাঁধা। কারও হাতে রামদা, কারও হাতে বাঁশের লাঠি। ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দিয়ে পাঞ্জাবি পরা লোকটির নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। আতঙ্কে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে সাধারণ মানুষ।
আজ শনিবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার এমসি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। অস্ত্রের মহড়ায় নেতৃত্বে দেওয়া নীল পাঞ্জাবি পরিহিত লোকটি শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। শুধু মহড়া নয়, প্রকাশ্যে বাজারের দোকানিদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা-পয়সা লুট করে তার লোকজন। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। এভাবে অস্ত্রের মহড়া ও চাঁদাবাজির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনা জানাজানির পর গতকালই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, শ্রীপুরের তেলিহাটী ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে তার নেতৃত্বে অর্ধশত সন্ত্রাসী এমসি বাজারে সশস্ত্র মহড়া দেয়। মাঝে মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শুনতে পাওয়া যায়। তখন আতঙ্কে সাধারণ মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে যান।
১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, মহাসড়কের ওপর চেয়ারে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইক নিয়ে কথা বলছেন জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু। তাঁর লোকজনের ‘জাহাঙ্গীর ভাইয়ের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান থামলে তিনি বলেন, ‘প্রিয় দোকানদার ভাইয়েরা, আমি জেল থেকে এসে ঘোষণা দিয়েছিলাম, এমসি বাজারটাকে আমি আমার নিজস্ব লোক ও আপনাদের সহযোগিতার সুন্দরভাবে পরিচালনা করব। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য আমি পারি নাই। আজকে লোকজন নিয়ে এসেছি। আজকের পর থেকে আমি জাহাঙ্গীর যত দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তত দিন পর্যন্ত আমার নিয়ন্ত্রণে চলবে এমসি বাজার এবং আপনাদের দয়া করে বলছি, এখন এই মুহূর্তে আমার লোকজন খাজনা ওঠানো শুরু করবে। কেউ বাধা দেবেন না। বাধা দিলে ভয়াবহ পরিণতি হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের এক নেতা জানান, মহড়া দিয়ে পুরো এমসি বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে পিন্টু। অন্তত ১০০ দোকান থেকে চাঁদা আদায় করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের কাছে বিদেশি পিস্তলও ছিল। তবে গুলি ছোড়েনি।
আব্দুল লতিফ নামে বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, বিকেলে হঠাৎ লোকজন নিয়ে এসে বক্তব্য দেয় পিন্টু। এর কিছুক্ষণ পর রামদার ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। সন্ত্রাসীরা ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রের মহড়া দিল, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখলাম না।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু বলেন, ‘আমি টেহা পয়সা উঠাইনি। এগুলো আমাকে হেয় করার জন্য করা হয়েছে। যারা আমার বাড়ি ভাঙচুর করছিল, অফিস ভাঙচুর করছিল, তাদের খুঁজতে গেছিলাম। না পেয়ে চলে আসছি।’
জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লাহ সমকালকে জানান, ঘটনার পরপরই যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষরে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, যুবদল নেতার বক্তব্য ও মহড়ার ভিডিও পেয়েছি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।