‘চোখ বন্ধ কইরা থাকবি, তাকাইলে কানা করে দিবো’
Published: 21st, February 2025 GMT
ঢাকা-রাজশাহী রুটে মধ্যরাতে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালিয়ে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নেয় ডাকাতদল। এ সময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন বাসটিতে থাকা যাত্রীরা। এ ঘটনায় বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার আটক হলেও বর্তমানে তারা জামিনে আছেন। সেদিনের ঘটনার ভয়ংকর বর্ণনা দিয়েছেন বাসের যাত্রীরা।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে যেসব যাত্রী বাসটিতে ছিলেন, তাদের মধ্যে দুইজন তারা অভিযোগ করে বলেন, বাসটিতে অন্তত একজনকে ধর্ষণ করা হয়েছে সেই রাতে। আর বাসটি যেহেতু চলমান অবস্থায় ছিল, তাই এই ঘটনায় একাধিক স্থানের নাম উঠে আসে। সেগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো, নাটোরের বড়াইগ্রাম ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা। ওই দুই থানার পুলিশেরই ভাষ্য– সেই রাতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, এমন তথ্য তারা জানে না।
ঘটনার বর্ণনায় যাত্রী সোহাগ হাসান বলেন, ব্যবসার কাজে আমি এবং এলাকার পরিচিত ওমর আলী ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেদিন কাজ শেষ করতে দেরি হয়ে গেলে তাড়াহুড়ো করে ওই বাসে উঠে পড়ি। ওই গাড়ি যাত্রী বোঝাই থাকলেও গাড়ির চালক ও তার সহযোগীরা আরও সাত-আটজনকে মাঝপথে গাড়িতে তুলে এবং তারপর গাড়ির চালকের আসনে তাদেরই একজন বসে পড়ে। পরে ওই দলের বাকিরা তখন যাত্রীদের কাছে চলে আসে এবং গলায় চাকু ধরে। পাঁচ-ছয়জনকে ছুরিও মারে ওরা। এই ভয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। সবায় মাথা নিচু করে ছিল। ওরা বলছিল, ‘চোখ বন্ধ কইরা থাকবি। তাকাইলে কানা করে দিবো।’
তিনি বলেন, আমাদের কাছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ছিল। ডাকাতরা চাইলে শুরুতে ২০ হাজার টাকা দেই। কিন্তু গাড়ির চালক-সহযোগীরা ডাকাতদেরকে জানিয়ে দেয় আমাদের কাছে আরও টাকা আছে। আমি টাকা দিতে চাইনি বলে ওরা আমায় নিচে ফেলে আমার বুকের ওপর পাড়া দিয়ে রাখে, টাকা না দেওয়া পর্যন্ত। আর ওরা বাস থেকে না নামা পর্যন্ত আমায় নিচেই রাখে। এসময় আমরা কথা বলতে পারছিলাম না, মাথা উঁচু করতে পারছিলাম না, চোখ খুলতে পারছিলাম না। শুধুই বাসের দুই নারী যাত্রীর চিৎকার আর কান্নার আওয়াজ শুনছিলাম।
সোহাগ হাসান বলেন, ওই দুই নারীর সিট ছিল বাসের মাঝামাঝি। এক নারীর সাথে তার স্বামীও ছিলেন।
তিনি বলেন, ডাকাতরা প্রথমে ওই নারীর কাছে যা যা ছিল, সব নিয়ে নেয়। এরপর চিকন করে একজন ছেলে আমাদের সামনেই ওই নারীকে টানতে টানতে জোর করে পেছনের সিটে নিয়ে চলে যায়। ওর স্বামী বাধা দিতে গেলে স্বামীকে অনেক মারধর করে। পিছনে নিয়ে গেলে ওই নারী অনেক চিৎকার করছিল। ওদিকে আমাদের যেতে দিচ্ছিল না। আমরা শুধু চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। জোরে জোরে কাঁদছিল। কিন্তু ওখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না।
একটু থেমে তিনি আরও বলেন, ধর্ষণ না করলে কেউ এরকম চিৎকার করবে না।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলছেন, নারী যাত্রীদের নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনার কথা কেউ তাকে বলেননি। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
এ ঘটনায় বাসটি আটক করে পুলিশ। ওই বাসের যাত্রী সোহাগ হোসেন, ওমর আলী, মজনু আকন্দ (৭৩) এবং তাদের ব্যবসায়িক অংশীদার আবু হানিফ বাস আটকানোর পর থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বড়াইগ্রাম থানায় অবস্থান করছিলেন। তারা মামলা করতে চাইছেন। কিন্তু পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থল মির্জাপুর থানা এলাকা হওয়ায় সেখানেই মামলা হবে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার সময় ওমর আলী বলেন, নাটোরের পুলিশ সুপার তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে নিয়ে গেছেন। মির্জাপুর থানার পুলিশ বড়াইগ্রাম থানার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। খবর বিবিসি বাংলার
পরে এ ঘটনায় শুক্রবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় বাসযাত্রী ওমর আলী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত সোমবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে নাটোরের বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস্ পরিবহনের বাসে টিকিট কেটে বাসে উঠি, যার নম্বর ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬১। বাসটি রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ছাড়ার সময় বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিল।
রাত ১টার দিকে বাসটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে এসে চা পানের বিরতির দেয়। এ সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও ৩ থেকে ৪ জন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।
রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার ৫ থেকে ৬ মিনিট পর হঠাৎ বাসে ৮/৯ জন ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারাল চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলে। এর মধ্যে তিনজন বাসটির ড্রাইভারের গলায় ধারাল চাকু ধরে নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এক পর্যায়ে তারা ধারাল চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গাড়িতে থাকা সব যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার, রূপা নিতে থাকে। এ সময় ২ থেকে ৩ জন ডাকাত গাড়িতে থাকা অজ্ঞাতনামা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করে। পরে ডাকাতরা বাসটি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে সেখানে নামিয়ে দেয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড়ে ১ হাজার শয্যার হাসপাতালের দাবিতে ঢাকায় মানববন্ধন
চীনের অর্থায়নে প্রস্তাবিত এক হাজার শয্যার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পঞ্চগড়ে স্থাপনের দাবিতে ঢাকায় মানববন্ধন করেছে জেলার বাসিন্দারা। পঞ্চগড় জেলা সমিতির আয়োজনে শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকায় অবস্থানরত জেলাটির কয়েক শতাধিক বাসিন্দা মানববন্ধনে অংশ নেন।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পঞ্চগড় জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ ড. আব্দুর রহমান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, সমিতির সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আইনুল হক পিইঞ্জ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সফিউল আলম, আনজারুল হক, মুক্তার আলম, মাখদুম মাসুম মাশরাফি যুক্তি, মাসুদ, সরোয়ারসহ জেলা সমিতির অন্যান্য নেতারা।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পঞ্চগড় জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা
মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ঢাকা থেকে সবচেয়ে দূরের জেলা পঞ্চগড়। এই কারণে সম্ভবত পঞ্চগড়ের মানুষের আর্তনাদ আপনাদের কানে পৌঁছায় না। আপনারা ঢাকায় বসে অনুভব করতে পারবেন না, পঞ্চগড়ের ১২ লাখ মানুষের জন্য শুধু প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এর পরের চিকিৎসার জন্য পারি দিতে হয় রংপুর অথবা দিনাজপুর। পথেই অসংখ্য মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হয়।
তারা আরও বলেন, আমরা পঞ্চগড়ের মানুষ রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সে আর মৃত্যুবরণ করতে চাই না, চিকিৎসা নিয়ে নিজ মাটি পঞ্চগড়ে মৃত্যুবরণ করতে চাই। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে পঞ্চগড়ের অনেক এমপি, মন্ত্রী, স্পিকার দেখেছি, অনেক সরকার বাহাদুর দেখেছি। একটা উন্নত হাসপাতাল দেখি নাই। তাই ৫ আগস্ট এর পরের বৈষম্যহীন বাংলাদেশে বৈষম্যহীন সিদ্ধান্ত নিন, চীনা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল পঞ্চগড়ে স্থাপন করুন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশের উত্তর জনপদের সম্ভাবনাময় জেলা পঞ্চগড়। সমতল ভূমিতে বিস্তৃর্ণ চা-বাগান, পাথর-নদীতে সমৃদ্ধ জেলাটির ভৌগলিক অবস্থান পর্যটনের অপার সম্ভাবনার হাতছানি দেয়। পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা (স্থলবন্দর) থেকে নেপালের দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব মাত্র ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। অন্যদিকে হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পঞ্চগড়ে হলে ভুটান, নেপাল ও চীনের ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসবেন। চিকিৎসাসেবা নিতে আসবেন। পঞ্চগড়ের মানুষও বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা পাবেন।
দাবি না মানলে বড় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বক্তরা।