চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় সন্দ্বীপ চ্যানেলে অবৈধভাবে বালু তুলতে বাধা দেওয়ার জেরে পিটিয়ে সাগরের পানিতে ফেলে দেওয়া জেলে রাম জলদাসের (৩২) লাশ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ঘটনার চার দিন পর আজ শুক্রবার সকালে তাঁর লাশ সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত এলাকায় ভেসে আসে।

রাম জলদাসের বাড়ি উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মধ্যম মাহমুদাবাদ গ্রামের জেলেপাড়ায়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করার পর তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।

কুমিরা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক ওয়ালীউদ্দিন আকবর প্রথম আলোকে বলেন, জোয়ারের পানিতে গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে রাম জলদাসের লাশ ভেসে আসে। ভাটার সময় পানি নেমে যাওয়ায় কাদামাটিতে লাশটি পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় জেলেরা। পরে তাঁরা নিহত ব্যক্তির স্বজনদের খবর দেন। স্বজনদের কাছ থেকে খবর পেয়ে নৌ পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রাম জলদাসের লাশ উদ্ধার করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছোট ভাই লিটন জলদাসকে নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যান রাম জলদাস। এ সময় তাঁদের জালের খুব কাছ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে বাল্কহেড (বালুবাহী নৌযান) ভর্তি করছিলেন কয়েকজন ব্যক্তি। বাল্কহেডের প্রপেলারে জেলেদের একটি জাল পেঁচিয়ে যায়। জালটি কাটার সময় প্রতিবাদ করেন রাম জলদাস। এ সময়ে বালু তোলায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা ক্ষিপ্ত হয়ে রাম জলদাসের মাথায় আঘাত করেন। পরে পিটিয়ে তাঁকে সাগরের পানিতে ফেলে দেন। এরপর থেকে রাম জলদাস নিখোঁজ ছিলেন।

রাম জলদাসকে সাগরে ফেলে দেওয়ার পর তাঁর ছোট ভাই লিটন জলদাসকেও অপহরণ করে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চেয়ারম্যানঘাট এলাকায় নিয়ে যান বালু তোলায় জড়িত ব্যক্তিরা। পরে নৌ পুলিশের সদস্যরা লিটন জলদাসকে উদ্ধার করেন। রাম জলদাসের স্ত্রী কণিকা জলদাস এ ঘটনায় হত্যা ও অপহরণের মামলা করেছেন। নৌ পুলিশ ঘটনায় জড়িত ছয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মারধর করে সাগরে ফেলে দেওয়া জেলের মরদেহ উদ্ধার

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার উপকূলে বালু তোলার প্রতিবাদ করায় মারধর করে সাগরে ফেলে দেওয়ার পাঁচ দিন পর রাম দাস নামে এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে সীতাকুণ্ড সমুদ্র এলাকা থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পূর্ব জোন (চট্টগ্রাম) কোস্টগার্ডের কুমিরা ক্যাম্পের কমান্ডার শওকত আকবর। তিনি জানান, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার গুলিয়াখালী সি বিচ-সংলগ্ন সমুদ্র এলাকা থেকে এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। 

জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপকূলে অবৈধভাবে বালু তোলার প্রতিবাদ করায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাম দাসকে মারধর করে সাগরে ফেলে দেয় বালুদস্যুরা। এ সময় তাঁর ভাই লিটন দাসকে অপহরণ করে তারা। খবর পেয়ে আট ঘণ্টা পর নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ এলাকা থেকে লিটন দাসকে উদ্ধার ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে নৌ-পুলিশ। 
জানা গেছে, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ চ্যানেলে ৫টি স্থানে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বালু উত্তোলন করলেও গত ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর বিএনপি-জামায়াত নেতারা এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। সাগর থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের কবলে পড়ছে বেড়িবাঁধ। ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা ও তা পরিবহনে বাল্কহেডের চলাচলের কারণে আশপাশের এলাকায় জেলেদের জালে তেমন মাছও পড়ছে না। 

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার সৈয়দপুর, মুরাদপুরের গুলিয়াখালী, বাড়বকুণ্ডের মাদারীতোলা, বাঁশবাড়িয়ার আকিলপুর, সোনাইছড়ি, কুমিরাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার সন্দ্বীপ চ্যানেলে রাত-দিন ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। গত কয়েক মাস যাবত টানা বালু উত্তোলন করা হলেও নীরব ভূমিকায় উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় জেলেপাড়ার সর্দার প্রদীপ দাস বলেন, চার মাস ধরে সাগর উপকূলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বেপরোয়াভাবে বালু তোলার ফলে জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাগরে বসানো জেলেদের জালগুলো তারা কেটে নিয়ে গেছে। দাদনদারদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কেনা এসব জাল হারিয়ে পথে বসেছেন জেলেরা। হামলার শিকার হওয়া দুই জেলে সহোদরের দেড় লক্ষাধিক টাকার জাল কেটে দিয়েছে এসব বালুখেকো দুর্বৃত্তরা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সীতাকুণ্ড উপকূলে সাগর থেকে বালু তোলা হচ্ছে। উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নিয়ে অভিযোগও করেছেন তিনি। কিন্তু বালু তোলা বন্ধ হয়নি।

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত বাল্কহেড ও ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে ২০টি মামলা রুজু হয়েছে জানিয়ে কুমিরা নৌ-পুলিশের ইনচার্জ ওয়ালি উদ্দীন আকবর বলেন, এনভি নাবিল ফারহান নামক একটি বাল্কহেডের লোকজন জেলে লিটন দাসকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত ছিল। এ ঘটনায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। অপর জেলের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম বলেন, সাগর থেকে অবৈধভাবে বালু তোলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এ সপ্তাহের রাশিফল (২২-২৮ ফেব্রুয়ারি)
  • মারধর করে সাগরে ফেলে দেওয়া জেলের মরদেহ উদ্ধার
  • নৌকাসহ ১৯ মাঝিমাল্লাকে অপহরণ করল আরাকান আর্মি
  • নাফ নদী থেকে আবারও ১৯ জেলেকে অপহরণ করল আরাকান আর্মি
  • অসুস্থ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে বাসায় নিয়ে গেলেন ইউএনও, স্বজনদের যোগাযোগের অনুরোধ