বিশ্বে উদ্বেগজনক গতিতে গলছে হিমবাহ, কী হতে পারে
Published: 21st, February 2025 GMT
বিশ্বের হিমবাহগুলো দশক ধরে দ্রুতগতিতে গলেছে। এভাবে হিমবাহ গলার নজির আগে দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক গবেষক দলের নতুন এক গবেষণা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, আগামী বছরগুলোতে পূর্বানুমানের চেয়ে বেশি দ্রুতগতিতে হিমবাহ গলতে পারে এবং এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে।
গত বুধবার নেচার সাময়িকীতে এ–সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দশকে হিমবাহ গলার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০০০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে যে হারে হিমবাহ গলেছে, সে তুলনায় ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ৩৬ শতাংশ বেশি গলেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ছোট ছোট হিমবাহের অঞ্চলগুলোতে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। এমনটা চললে এ শতাব্দীতে হয়তো এসব হিমবাহের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে।
জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষণা প্রতিবেদনটির সহরচয়িতা মিশায়েল জেম্প বলেছেন, ‘আমরা এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ পূর্বধারণার চেয়ে বেশি মাত্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হব।’
হিমবাহের ক্ষয়ের কারণে মধ্য এশিয়া ও মধ্য আন্দিজ অঞ্চলে মিঠাপানি সরবরাহের ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন এই অধ্যাপক।
গবেষকেরা বলছেন, সব মিলে চলতি শতাব্দীতে হিমবাহগুলোর ৫ শতাংশ গলেছে। তবে অঞ্চলভেদে এ গলার হার কমবেশি, যেমন অ্যান্টার্কটিকায় ২ শতাংশ হিমবাহ গলেছে। আর ইউরোপীয় আল্পসে গলেছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিবছর গড়ে ২৭ হাজার ৩০০ কোটি টন বরফ গলছে, যা বিশ্ববাসীর ৩০ বছরে ব্যবহৃত পানির পরিমাণের সমান।
পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড গ্লেসিয়ার মনিটরিং সার্ভিস (ডব্লিউজিএমএস), এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আর্থওয়েভ সমন্বিতভাবে গবেষণাটি করেছে।
এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্টিন সিগার্ট গবেষণার ফলাফলকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ, এটি হিমবাহের আরও ক্ষয় হওয়ার আভাস দিচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত বরফের চাদরগুলো (আইস শিট) কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, সে আভাসও এ গবেষণা থেকে জানা যাবে।
আরও পড়ুনদ্রুত গলে যাচ্ছে সব হিমবাহ৩০ এপ্রিল ২০২১মার্টিন সিগার্ট বলেন, আইস শিটগুলো ক্রমবর্ধমান হারে ক্ষয় হচ্ছে, যা ৩০ বছর আগের তুলনায় ৬ গুণ।
জেম্প মনে করেন, বিশ্বের হিমবাহগুলো বাঁচাতে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে হবে।
আরও পড়ুনহিমবাহ গলে বদলে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের সীমানা১৭ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ মব হ র
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গা শিবিরে পানির সংকট তীব্র: এমএসএফ
কক্সবাজারে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১০ লিটার করে পানি পাচ্ছেন। এই পরিমাণ পানি জীবনধারণের প্রয়োজনের অর্ধেক। সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বলেছে, পানি সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে।
আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) টেকনাফে চলমান এই সংকটের কথা বলেছে। পাশাপাশি এমএসএফ জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এসএমএফ বলেছে, উদ্বেগজনক হারে সংরক্ষণব্যবস্থা কমে আসায় পানির সংকট আরও কঠিন হয়েছে। টেকনাফ মূলত মজুদকৃত পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই বছর আশঙ্কাজনক হারে মজুদকৃত পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে এমএসএফ-এর মিশন প্রধান আন্তোনিও কারাডোনা বলেন, ‘পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। টেকনাফে প্রতিদিন জনপ্রতি ১০ লিটার পানি পাওয়া যায়, যা একজন মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ক্যাম্পজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নানা রোগের ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব থেকেই এই সংকটের তীব্রতা স্পষ্ট।’
নূর আলম নামের একজন রোহিঙ্গা তাঁর কষ্টের কথা এমএসএফকে শুনিয়েছেন। নূর আলম বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে পানিসংকট তীব্র হতে দেখছি, এখানে সাহায্য–সহযোগিতাও অনেক সীমিত। অনেককেই বাধ্য হয়ে অনেক দূরে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনতে হয়, যা অনেক বেশি সময়সাপেক্ষও।’
এমএসএফ বলেছে, জরুরি সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চলমান থাকা, প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহব্যবস্থা আরও উন্নত ও দ্রুত করার সুযোগ আছে। কলেরার মতো পানিবাহিত রোগসহ নানাধরনের চর্ম রোগের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি হ্রাস এবং ক্রমবর্ধমান অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এমএসএফ একটি বোরহোল, একটি পানি সংরক্ষণ ও সরবরাহ সেবা শুরু করেছে এবং ক্যাম্পে ট্রাকের মাধ্যমে পানি সরবরাহ সেবা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এই জরুরি পদক্ষেপগুলো যদিও এ সংকটের সাময়িক সমাধান দেয়, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী ও পর্যাপ্ত নয়।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ও দাতাসংস্থাগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে টেকসই পানি সরবরাহে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এমএসএফ। পাশাপাশি দায়িত্বশীল অংশীদারদের কাছে জবাবদিহি ও সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা বলেছে তারা।