রমজানের আগে পর্যটকে মুখরিত কুয়াকাটা
Published: 21st, February 2025 GMT
আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। বিগত বছরগুলোতে রমজান মাসে পর্যটকশূন্য ছিল সমুদ্রকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের ধারণা, আগামী মাসের শুরু থেকেই পর্যটক আসা কমে যাবে। তার আগে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম এই পর্যটন কেন্দ্র।
সরকারি দুই দিনের ছুটিকে কেন্দ্র করেই পর্যটকদের আগমন ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকেই পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন।
আরো পড়ুন:
খুলছে দেবতাখুম ভ্রমণের দুয়ার
কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল, উৎসবের আমেজ
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, আগত পর্যটকরা সৈকতের নোনা জলে গাঁ ভাসিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতেছেন। অনেকে আবার প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে সৈকতের বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ঘোড়াসহ বিভিন্ন বাহনে চরে সৈকতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গেছে অনেককে। একসঙ্গে ঘুরতে আসা পর্যটকদের বনভোজন কিংবা খেলাধুলায় মেতে থাকতে দেখা যায়।
এদিকে, কুয়াকাটার হোটেল মোটেলের শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। বিক্রি বেড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। মৌসুমের শেষ সময়ে পর্যটকের এমন ভিড়ে উচ্ছ্বসিত ব্যবসায়ীরা। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিষ্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও নৌ-পুলিশের সদস্যরা তৎপর রয়েছেন।
ঢাকার গাজীপুর থেকে আসা মোশারেফ-পারভিন দম্পিতি জানান, আগামী সপ্তাহ থেকে রমজান মাস শুরু হবে। তাই আগে ভাগেই আমরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে কুয়াকাটায় বেড়াতে এসেছি। আজকে সৈকতে অনেক মানুষ। এতো মানুষ একসঙ্গে আর দেখিনি। কুয়াকাটার পরিবেশ সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউ আমাদের ভালোই লেগেছে।
উত্তরা থেকে আসা পর্যটক সোহান হোসেন বলেন, “আমরা এলাকার বন্ধুরা মিলে আজ (শুক্রবার) সকালে কুয়াকাটায় এসে পৌঁছেছি। গতকাল রওনা দেওয়ার আগে কুয়াকাটার কয়েকটি আবাসিক হোটেল যোগাযোগ করেছিলাম, কিন্তু কোথাও রুম পাইনি। কুয়াকাটায় পৌঁছে সোজা সৈকতে নেমে পড়েছি। বন্ধুরা মিলে সাঁতার কটেছি, অনেক মজা করেছি। সময় দারুন কাটছে। সন্ধ্যার মধ্যে যদি কোনো হোটেলে রুম খালি পাই তাহলে আজও থাকতে চাই। না পেলে রাতের গাড়িতে ঢাকায় চলে যাব।”
ট্যুর অপারেটর এ্যাসোসিয়েশন অফ কুয়াকাটা (টোয়াক) এর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন রাজু বলেন, “কুয়াকাটায় আজ প্রায় লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। সব হোটেল মোটেলের রুম বুকিং রয়েছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠাগুলোতে বিক্রি বেড়েছে। আমাদের সংগঠনের সদস্যরা পর্যটকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।”
কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশ রিজিয়নের ইন্সপেক্টর মো.
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপক ল র সদস য আম দ র রমজ ন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মিরে হামলা: যে ছবি হৃদয় নাড়িয়েছে
স্বামীর লাশের পাশে বসে আছেন নববধূ। হাতে শাখাপলা। বিয়ে হয়েছিলো মাত্র ৭ দিন আগে। নবদম্পতি কাশ্মীর গিয়েছিলেন হানিমুনে। কিন্তু নতুন জীবন শুরুর আগেই শেষ। বন্দুকধারীদের হামলায় আগামীর স্বপ্নগুলো ভেসে গেছে রক্তের রঙে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর অফিসার লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল। বিনয়ের লাশের পাশে নিস্তব্ধ হয়ে স্ত্রীর বসে থাকার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সে ছবি শেয়ার করেছেন অনেকে। লিখেছেন, সন্ত্রাসীদের কোনো জাত-ধর্ম হয় না।
ওই ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে কল্লোল মোস্তফা নামে একজন লিখেছেন, "এমন নৃশংস হত্যাকারীদের স্বাধীনতার যোদ্ধা বলে না। বলে জঙ্গী। এমন হত্যাকে স্বাধীনতার লড়াই বলে না। বলে মানবতাবিরোধী গণহত্যা। সাধারণ মানুষদের হত্যা করে জঙ্গিরা স্বাধীনতাকামী হাজার-হাজার শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করলো। সেই সাথে যুগ যুগ ধরে চলা কাশ্মীরের মুক্তির লড়াইকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে দিলো। সাধারণ মানুষদের হত্যা করে স্বাধীনতা আসে না। স্বাধীনতা দূর-অস্ত হয়ে যায়।”
বুধবার (২৩ এপ্রিল) এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিনয় নারওয়াল হরিয়ানার কারনালের বাসিন্দা। তিনি গত ১৬ এপ্রিল বিয়ে করেন। ১৯ এপ্রিল তার বিবাহের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। সদ্যবিবাহিত তরুণ এই অফিসার কাশ্মীরে গিয়েছিলেন হানিমুনে। পহেলগামের সন্ত্রাসী হামলায় মর্মান্তিকভাবে নিহত হন তিনি।
প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, বিনয় নারওয়াল মাত্র দুই বছর আগে নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। সন্ত্রাসী হামলায় তার মৃত্যুতে পরিবার, সম্প্রদায় এবং প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশী এবং স্থানীয়রা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার এক প্রতিবেশী নরেশ বনসাল বলেন, “কদিন আগে তার বিয়ে হলো। সবাই খুব খুশি ছিল। হঠাৎ আমরা খবর পেলাম যে, বন্দুকধারীরা তাকে হত্যা করেছে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে।”
এদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভয়াবহ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। এটি পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা বা এলইটি গোষ্ঠীর একটি ছায়া সংগঠন।
টিআরএফের উত্থান হয় ২০১৯ সালে। ওই বছরই বিজেপি সরকার সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে। যার ফলে জম্মু ও কাশ্মিরের ‘বিশেষ মর্যাদা’-র অবলুপ্তি হয়। এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে লস্কর-ই-তৈয়বার একটি ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। সেই সংগঠনেরই পাঁচ-ছ’জন মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়।
হামলার ঘটনার পর পহেলগাঁও উপত্যকায় নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মিরের অন্যান্য জায়গাও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার রাতেই কাশ্মিরে পৌঁছেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সৌদি আরব সফরসূচি কাঁটছাঁট করে বুধবার সকালে দিল্লি ফিরে এসেছেন। বিমানবন্দরেরই তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। দিল্লিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করবেন মোদি। তবে এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে নিরাপত্তাবাহিনী।
ঢাকা/ইভা