হাঁটার উপকারিতা বোঝাতে ও মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে নিজের জন্মদিনে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পথ হেঁটেছেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার এক যুবক। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে তিনি উপজেলার প্রতিমা বংকী এলাকা থেকে হাঁটা শুরু করেন। পথে কয়েকটি স্থানে বিশ্রাম নিয়ে প্রায় আট ঘণ্টা পর বেলা তিনটার দিকে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা রেলস্টেশনে পৌঁছান। এর মধ্য দিয়ে এ সফরের ইতি টানেন তিনি।

ওই যুবকের নাম বিপ্লব মল্লিক (২৮)। তিনি প্রতিমা বংকী গ্রামের বাসিন্দা ও অনলাইনে ব্যবসা করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর জন্মদিন ছিল।

বিপ্লব মল্লিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সকালে হাঁটার অভ্যাস আছে। আমার কাছে গ্রাম ও প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা সব সময়ই আনন্দের। হাঁটলে শরীর ও মন ভালো থাকে। সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস করা দরকার। হাঁটার উপকারিতা বোঝাতে এবং জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতেই লম্বা সময় ধরে হেঁটেছি।’

বিপ্লব আরও বলেন, নলুয়া-বাসাইল সড়ক হয়ে বাংড়া এলাকায় পৌঁছালে পায়ের তলায় ফোসকা পড়ে যায়। পরে দাপনাজোর রেললাইন ধরে পায়ের গোড়ালিতে ভর করে ধীরে ধীরে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা রেলস্টেশনে পৌঁছান। যাত্রাপথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুরা অনেকেই সঙ্গ দিয়েছেন ও উৎসাহ জুগিয়েছেন।

সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট শাহীনুর আলম বলেন, ‘একজন মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট হাঁটা উচিত। নিয়মিত হাঁটলে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। বিপ্লব মল্লিকের এ পদযাত্রা মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হবে। তাঁকে দেখে তরুণ প্রজন্ম সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটতে উদ্বুদ্ধ হবেন। হাঁটায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য অভিনন্দন জানাই।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তর্বর্তী সরকারকেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ দেখাতে হবে

খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের পথ দেখাতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই এই দায়িত্ব নেবে—এমন প্রত্যাশা করেন দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও লেখকেরা। তাঁরা অবশ্য এ–ও বলেন, আগামী ছয় মাসেই সব ঠিক হবে, এমন আশা প্রকাশ করাও ঠিক হবে না। তবে পথ দেখাবেন বর্তমান সরকারের নেতৃত্ব প্রদানকারীরা। বর্তমানে বৈষম্যহীন, সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদ আছে।

আজ শনিবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের গভর্নরের স্মৃতিকথা শীর্ষক বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। দৈনিক বণিক বার্তা বইটি প্রকাশ করেছে। রাজধানীর আইসিএবি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নতুন বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালে এ বইয়ের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়।

অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। মানসম্পন্ন জীবনযাত্রা দিতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘তৃতীয় সংস্করণে গভর্নরের স্মৃতি কথা থাকবে না। এখনকার বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে চাই। শপথ নিয়েছি তো, তাই অনেক কথা এখন বলতে পারি না।’

বইয়ের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘ছাত্রজীবনে আমি যে সংগঠনের রাজনীতি করতাম, লেখকও সেই ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। লেখকের রাজনীতিতে যেমন সংযোগ ছিল, তেমনি পড়াশোনায় সংযোগ ছিল।’

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে—এই বইয়ে সেই চিত্র উঠে এসেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বিকাশ কীভাবে ঘটেছে, সেই বিষয়েও এতে আলোকপাত করা হয়েছে।

লেখক ফারুক মঈনউদ্দীন বলেন, ব্যাংক খাত ঠিক করার সুযোগ এখন। কারণ, এখন রাজনৈতিক চাপ নেই। তিনি প্রবাসী শ্রমিকদের মর্যাদা দেওয়ার আহ্বান জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীরের মতে, বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদ আছে এই বইয়ে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশের গভর্নরকে পালিয়ে যেতে হয়। নীতিনির্ধারণের সময় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে হয়। খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখাবে বর্তমান সরকার, এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ষাটের দশকের রাজনীতির একটি চিত্র পাওয়া যায় গভর্নরের স্মৃতিকথা বইয়ে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, দেশকে উন্নত করতে হলে গ্রামের দিকে নজর দিতে হবে। আর গরিব মানুষকে দেখতে হলে বিনয়ী হতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক কাজী মারুফুল ইসলাম মনে করেন, ‘এত দিনের বাজার বন্দোবস্তে একটুও আঁচড় লাগেনি। সরকারের তরফেও কোনো উদ্যোগ দেখছি না।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ