একুশে ফেব্রুয়ারি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে: রিজভী
Published: 21st, February 2025 GMT
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে সাহস জুগিয়েছে। এই পথ ধরেই নব্বইয়ের অর্জন তৈরি করেছি। যদি আবার কখনো ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটে, কোনো ধরনের ডিক্টেটরের উত্থান ঘটে, ২১ ফেব্রুয়ারি এ দেশের দামাল ছেলেদের, এ দেশের মানুষদের আবারও রাজপথের লড়াইয়ে নামতে উদ্বুদ্ধ করবে।
শুক্রবার সকালে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এরশাদের মতো একজন ঘৃণ্য স্বৈরশাসকের পতন ঘটানো হয়েছে। এরই পথ ধরে এক ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা যে ১৭ বছর জনগণের কাঁধের ওপর অত্যাচার করে রাষ্ট্রক্ষমতায় দখলে ছিলেন, সেই রক্তপিপাসু আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জননী শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। এগুলোর সবকিছুতেই ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, উদ্বুদ্ধ করেছে, সংগ্রামের পথে শামিল করেছে।
তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে এক সুমহান প্রেরণার উৎসস্থল। দেশবাসী এদিনকে একদিকে যেমন দুঃখের দিন মনে করে, অন্যদিকে প্রেরণা ও গৌরবের দিন মনে করে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের সোপান বেয়েই দেশে ছাত্র আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।
নির্বাচন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বের বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং তার সঙ্গে আরও কিছু আনুষঙ্গিক কিছু কাজ আছে, বিভিন্ন সংস্কার আছে, যেটা প্রয়োজনীয় সংস্কার, সেটা আমার মনে হয় যে সময় আছে, সে সময়ের মধ্যে করা সম্ভব। কিন্তু জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে। দেশের জনগণ ও তরুণ প্রজন্ম আজ যাদের ১৮ বছর বয়স, যাদের ২১ বছর বয়স, তারা কেউ ভোট দিতে পারেনি। ভোট কী তারা জানে না।’
এ সময় বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, হাবিবুন নবী খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দীন, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন, বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও এর থানা কিংবা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা পর্যায়ক্রমে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে থাকেন। সর্বশেষ সাড়ে ৯টার দিকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমে কথা বলেন উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি নিরীক্ষা বিল কি গোপনীয় দলিল, প্রশ্ন টিআইবির
সরকারি নিরীক্ষা বা পাবলিক অডিট বিল-২০২৪–এর খসড়া নিয়ে গোপনীয়তার চর্চায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণের জন্য অবিলম্বে বিলটি উন্মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
সরকারি নিরীক্ষা বিল নিয়ে টিআইবি এক বিবৃতিতে আজ বৃহস্পতিবার এমনটিই জানিয়েছে। তারা বলেছে, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়সহ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান, একটি দাতা সংস্থা এবং বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের মধ্যে আবদ্ধ অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সরকারি নিরীক্ষা বিলের খসড়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
বিষয়টিকে অনভিপ্রেত উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দীর্ঘ প্রত্যাশিত অডিট বিলের খসড়া মতামতের জন্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংকের সম্পৃক্ততার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, হিসাব নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষণ কি শুধু সরকারি ও একটি প্রভাবশালী ঋণদাতা সংস্থার বিষয়? এই বিলটি রাষ্ট্রের জনগণের অর্থসম্পদ ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আইনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। ফলে এই বিলের বিষয়ে নাগরিক সমাজ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত গ্রহণের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। পাবলিক অডিট বিলের খসড়া জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণের জন্য অবিলম্বে উন্মুক্ত করতে আহ্বান জানাই।’
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ‘মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রককে (সিএজি) বাজেট, নিয়োগসহ সব বিষয়ে সাংবিধানিক স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করাসহ ২০ দফা সুপারিশ করেছিল টিআইবি।
সেটি উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিএজিকে শক্তিশালী করতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছি। গবেষণালব্ধ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আমরা সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছিলাম। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মাধ্যমে আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তাবিত নিরীক্ষা আইন, কাঠামো ও নিয়োগের বিধিমালা অনুমোদন এবং সিএজিকে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবের বাইরে আনার ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি প্রত্যাশা ছিল, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিএজিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু খসড়া অডিট বিল পর্যালোচনা শুধু সরকারি সংস্থাসমূহ এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ফলে এমন মনে হওয়া অমূলক নয় যে কর্তৃত্ববাদী সরকারের সময়ের মতো এখনো সিএজিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আমলাতন্ত্রের হাতে করায়ত্ত করে রাখার পাঁয়তারা চলছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সিএজি সরকারের বা কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দেশি-বিদেশি আমলাতন্ত্রের অধীন কোনো সংস্থা নয়, এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যার চূড়ান্ত মালিকানা জনগণের। তাই খসড়া আইনটি অবিলম্বে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আগ্রহী অংশীজনের মতামতের সুযোগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময়ের জন্য উন্মুক্ত করার আহ্বান জানাই।’